বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতীয় দিবস রয়েছে|সেসব দিবসের বেশ কয়েকটিতে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। যেমন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি। আগে এসব দিবসে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকত। তেমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো না। পর্যায়ক্রমে এসব দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশ দেওয়ায় অনেকেই নাখোশ হন—তারা সরকারি ছুটি উপভোগ করতে পারেন না। তদুপরি সরকারি নির্দেশ পালন না করে উপায় নেই।
মার্চ মাসেই দুটি জাতীয় দিবস, যেমন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস এবং মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস। এদিবসগুলো উদযাপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান কী ধরনের অনুষ্ঠান উদযাপন করবে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। দুটি দিবস উদযাপনের জন্য রচনা প্রতিযোগিতা, র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দিবসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ রয়েছে। তবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্দেশিত বিষয়ের বাইরেও অনুষ্ঠান করে যেমন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কেক কাটা, কুইজ প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। মাদ্রাসায় হামদ-নাত, গজল, কুইজ প্রতিযোগিতা, দোয়া, আলোচনা ইত্যাদি অনুষ্ঠান করে। এসব অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, দেশের প্রতি দায়িত্বশীল করার পাশাপাশি তাদের সম্ভাবনাময় সৃজনশীল প্রতিভারও বিকাশ ঘটানো সম্ভব।
সরকারি নির্দেশের জন্যই হয়তো প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় দিবস উদ্যাপন করে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে এবং কোনো প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে উপজেলায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদের অনুষ্ঠানের সঙ্গে অনুষ্ঠান করে। এসব অনুষ্ঠানে নানা রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় ও পুরস্কারও দেওয়া হয়। এসব পুরস্কারের উপকরণগুলো আয়োজকদের বা আয়োজক প্রধানের ইচ্ছেমতো কেনা করা হয়। পুরস্কারের মধ্যে থাকে, ক্রেস্ট, বই, জ্যামিতি বক্স, কলম, প্লাস্টিক/চিনামাটির থালাবাটি, এমনকি প্লাস্টিকের বদনারও। এই প্রসঙ্গটি আমরা ভিন্নভাবে আলোচনা করতে চাই।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে—বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পঠনদক্ষতা (তৃতীয়-পঞ্চম) ২০%-২৫%-এর মতো। পঠনদক্ষতার আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী একটি শিশুকে প্রতি মিনিটে ৪৫-৬০টি শব্দ পড়ে তার অর্থ বুঝতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের তা শিশুদের নেই। এর পেছনের কারণ হলো শিশুদের ছোট থেকেই ‘পড়তে শেখার’ বই না দিয়ে ‘শেখার জন্য বই’ হাতে তুলে দেওয়া। শিক্ষাজীবনে পড়তে না পারার কারণে যত সমস্যার সৃষ্টি হয়। গুণগত মানের শিক্ষা অর্জনও সম্ভব হয় না শুধু পঠনদক্ষতা অভাবেই। শিশুদের পাঠ্যাভ্যাস বাড়াতে হলে তাদের হাতে ‘পড়তে শেখার’ সহজ ও আনন্দ পাওয়ার মতো বই হাতে দিতে হবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় দিবসের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে যদি শিশুদের পাঠের উপযোগী বই পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হতো এবং পড়তে উৎসাহিত করা হতো, তাহলে পঠনদক্ষতা হয়তো কিছুটা হলেও বাড়ানো সম্ভব হতো; যা পরবর্তী সময় জাতীয়জীবনে সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলতে পারত। এ কারণে, দিবস উদযাপনের জন্য প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে পুরস্কার হিসেবে বয়স অনুযায়ী সুখপাঠ্য বই দেওয়ার নির্দেশটি জুড়ে দিলে ভালোই হতো বলে আমরা মনে করি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টিও আকর্ষণ করি।.