এক.
ঘন অন্ধকার। কোনোদিকে জনমানুষের সাড়া নেই। কয়েকটি ভয়াল বন্যপ্রাণীর ডাক শোনা যাচ্ছে থেকে থেকে। দুয়েকটি বাদুড় উড়ে যাচ্ছে মাথার ওপর দিয়ে। তাদের ডানা ঝাপটানির শব্দও শোনা যাচ্ছে মাঝে মাঝে। কোনোটি নদীর ওপার থেকে এপার আসছে। আবার এপার থেকে ওপারে যাচ্ছে কোনো কোনো পাখি। কোনোটির পা অথবা ঠোঁট থেকে টুপটাপ করে খসে পড়ছে সুন্দরী, কাঠ বাদাম অথবা ছৈলার ফল। ফলগুলো বেশ ওপর থেকে নদীর জলের ওপর পড়ায় ‘টুব্বুৎ’ করে শব্দ হচ্ছে তার। দূর থেকে কোনো নিশাচর পাখির গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসছে। তা শুনে গা ছমছম করে উঠছে তামজিদের। তবু সে চুপচাপ। কারণ এখানে কথা বলা নিষেধ। কোনো অবস্থাতেই মুখ খোলা যাবে না। যে কথা বলবে, তাকে নদীতে ফেলে দেওয়া হবে। এটাই নিয়ম।
রাত আনুমানিক দশটা। মেঘহীন আকাশে চাঁদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তামজিদ আজ নতুন এসেছে। একটা বড় ধরনের ডিঙি নৌকায় বসে আছে সে। আর আছে তাহের, মানিক, সুবল, নকাইআর হাসিব। আছে নৌকার মাঝি বা চালক জয়নাল। ডিঙি নৌকাটা বাইশ হাতি, গলুইয়ের হিসেবধরলেচব্বিশ হাতের কম হবে না। যদিও দিনের বেলায় বিশাল নদীতে এই নৌকাকে ছোট্ট একটা ঝিনুকের মতোই মনে হয়। নদীতে ভাটার টান ধরেছে। এই টান ক্রমশ বাড়ছে। নৌকার দুলুনিতে গাঢ় অন্ধকারেও তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আড় পাঙ্গাশিয়া নদীর একটি শাখা নদী এটি, কিছুটা শীর্ণ। সবাই বলে মালঞ্চ নদী। এখানে শীর্ণকায় নদীগুলোর স্রোত আরো বেশি অপ্রতিরোধ্য হয়।
তামজিদের মুখ কালো কাপড়ে বাঁধা। নাকের কাছে ছোট দুটো ছিদ্র, তবু যেন তার নিঃশ্বস নিতে কষ্ট হচ্ছে; দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। হাতে দোনলা বন্দুক। তামজিদ এখনও ভালোমতো এই বন্দুক চালনা করতে জানে না। তবু ওটা তাকে দেওয়া হয়েছে। আজ রাতটা ওর জন্য পরীক্ষার রাত। এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারলে দোনলা বন্দুক চালনার পদ্ধতি ওকে শিখিয়ে দেওয়া হবে। যাকে দিয়ে পার্টির কাজ হবে না, তাকে এই বিদ্যা শেখানো হয় না। তাহলে ওই বিদ্যার কুফল একসময় দলের দিকেই ফিরে আসে।
শুধু তামজিদ নয়, মানিক সবুল আর হাসিবের মুখও বাঁধা। তাদের হাতেও একটা করে দোনলা বন্দুক। ওগুলো গামছায় ঢাকা। শুধু তাহেরের মুখে কোনো মুখোশ নেই। একটা তোয়ালে দিয়ে ঘোমটার মতো করে মুখটা ঢেকে রেখেছে। সে-ই এই নায়ের সর্দার। নৌকার চালির নিচে আছে রাম দা, চাইনিজ কুড়াল আর ধারালো হাঁসুয়া, সুন্দরী কাঠের লাঠি। একটা সেভেন গিয়ার আছে, ওটি তাহেরের মাজায় গোঁজা থাকে সব সময়।
খবর এসেছে দুপুরের দিকে। সমুদ্র থেকেআড় পাঙ্গাশিয়া হয়ে শিবসা নদীতে যেতে মালঞ্চ নদীতে বড় একটা ট্রলার ঢুকবে আজ। ভারত থেকে চোরাই মাল আসবে ওতে। ওরা ওই নৌকাটাডাকাতি করবে। টাকা-পায়সা যা পাওয়া যাবে, তার সব নিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে ওদের পায়ের নিচে গুলি করতে হবে। তবে তামজিদের গুলি করার নির্দেশ নেই। গুলিও তো নেই ওর বন্দুকে। ও শুধু বন্দুক উঁচিয়ে ভয় দেখাবে। পারলে, শত্রুকে দুর্বল করার জন্য হাসুয়া অথবা কুড়াল দিয়ে কোপ দেবে। এটুকুই ওর জন্য যথেষ্ট। শত্রু-নৌকার দুজন কি একজনকে বন্দী করেও রাখা লাগতে পারে। এইটাই আসল কাজ। একজকে আটকে রাখতে পারলে তিন লাখ টাকাও আদায় করে নেওয়া যাবে। কমপক্ষে তিন লাখ টাকার বুঝ না হলে তাকে একটা সফল অপারেশন বলা যায় না।
ভাটার টান বোধ হয় একটু কমে এসেছে। বাদুড়ের ওড়াউড়িও কমেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে বনের ভেতর থেকে বিকট সুরের গোঙানিটা থেমে থেমেই শোনা যাচ্ছে। রাতের নদীর জলেও একটা আভা আছে। সেই আভার শেষ প্রান্তে ওপারের বনরাজির কলো একটা রেখা চোখে পড়ে। তার ওপরে প্রকাণ্ড নিস্তব্ধ আকাশ। অসংখ্য তারা ঝলমলকরছে আকাশে। এতক্ষণ নদীর ঢেউ থেকে কুলকুল একটা ধ্বনি ভেসে আসছিল। এটাই বোধহয় নদীর ভাষা। সেটাওসামান্য কমে এসেছে। কমেছে নৌকার দুলুনিও। তামজিদ ভাবছে, আর কতক্ষণ এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে হবে তাদের?
এখন দুটো ইঞ্জিনই সচল। কিন্তু তা চালানো যাবে না। ইঞ্জিন চালালে শব্দ হবে। কোস্ট গার্ডের টহল টের পেয়ে যাবে। তাছাড়া তাদের টার্গেট যে নৌকা, তারাও সাবধান হয়ে যাবে।
কিছুক্ষণের মধ্যে তাহেরের গলা শোনা গেল। একটা মাত্র শব্দ উচ্চারণ করল সে, ‘কান’। এই কথার অর্থ তামজিদ জানে। অর্থ হলো, এখন থেকে সবার কান খাড়া রাখতে হবে। সমুদ্রে জোয়ার এলে নৌকা নদীতে ঢোকে।নইলে প্রচণ্ড স্রোতে নৌকা সামনের দিকে এগোতে পারে না। অনেক সময় তীব্র স্রোতের মুখে পড়ে গেলে নৌকাগুলোকে নিরাপদ জায়গা দেখে নদীর তীরবর্তী কোনো গাছে বেঁধে রাখা হয়। অথবা লম্বা কাছির নোঙর ফেলা হয়। ভাটার টান কমে যাওয়া মানে জোয়ারের সময় সন্নিকটে চলে আসা। এই সময় নদী ‘থম্’ মেরে থাকে। অর্থাৎ, নদীর স্রোত কোনো দিকেই যায় না। থেমে থাকে। আবার আস্তে আস্তে সেই স্রোত বিপরীত দিকে ছুটতে শুরু করে। জোয়ার আসে। জোয়ারে নদীর স্রোত উপকূলমুখী হয়। তখন সমুদ্রফেরত নৌকাগুলো স্রোতের অনুকূলে বন্দরের দিকে ফিরতে থাকে। সেজন্যই তাহের বলল, ‘কান’।
তাহেরের কথায় নৌকার সবাই আরো সচকিত হয়ে উঠল। কোথাও কোনো ইঞ্জিনের শব্দ শোনা যায় কি না, তা পরখ করতে লাগল। কিন্তু কিছুই শোনা গেলো না। প্রায় পাঁচ মিনিট তারা যেন নিঃশ্বাসও নিলো না। তাহের নদীর জলে হাত ডুবিয়ে দিল, তখনও নদীর জল সমুদ্রাভিমুখে। তার মানে ভাটার স্রোত কিছুটা হলেও আছে। তাহের বলল, জোয়ারের দেরি আছে।
তাহেরদের নৌকা ছেড়েছে দুপুরের দিকে। গেওয়াতলা গ্রাম থেকে আরো দুই কিলোমিটার বুনো পথ হেঁটে গিয়ে ওরা নৌকায় উঠেছে। কিছু পরোটা, পাউরুটি আর পানির জগ নিয়ে উঠেছিল ওরা। গন্তুব্যে যেতে যেতে তা খেয়ে নিয়েছে। এর বাইরেও ওদের নৌকায় চিড়া, মুড়ি, চিনি, পাটালি গুড় থাকে। থাকে চাল, কিছু গোল আলু, মিষ্টি আলু, পেঁয়াজ, নারকেল, কিছু তরকারি আর লবণ। তবে এসব খবার তারা মনে পড়লেই খায় না। শুকনো খাবার বিশেষ সময়ের জন্য মজুদ রেখে দেয়। কখানো কখনো হিসেবের চেয়ে এক কি দেড় মাসও তাদের গভীর বনের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে হয়। এসব খাবার তখনকার সম্বল। তামজিদের ক্ষুধা লেগেছে অনেক আগেই কিন্তু ক্ষুধার কথা সে বলার সাহস পাচ্ছে না। তামজিদের জানা আছে, এখন ক্ষুধায় তার পেটের নাড়ি ফুটো হয়ে গেলেও তারখাওয়ার উপায় নেই।
তাহের কথা বললো, ‘সবাই বৈঠা ধরো। সাধানে বৈঠা ফেলবা। আমি কিন্তু কোনো শব্দ শুনতি চাই না। জয়নাল, তুমি নাও মোহনার দিকে নিয়ে চলো। নৌকা নিবা কূলের ধার ঘেঁষে। দেখো, তাই বলে আবারবড় মামারমুখের সামনে দিয়ে নৌকা নিয়ো না। তাহলি কিন্তু সব শেষ।’
নৌকায় ডাবল শ্যালো ইঞ্জিন বসানো। একটা বিকল হলে আরেকটা চলবে। এখন দুটো ইঞ্জিনই সচল। কিন্তু তা চালানো যাবে না। ইঞ্জিন চালালে শব্দ হবে। কোস্ট গার্ডের টহল টের পেয়ে যাবে। তাছাড়া তাদের টার্গেট যে নৌকা, তারাও সাবধান হয়ে যাবে। ওরাও খালি হাতেযায় না। আত্মরক্ষার জন্য রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্রও সাথে করে নিয়ে যায়। আগে থেকে ওরা টের পেয়ে গেলে জীবনের ঝুঁকি। এই জন্য এখন এগোতে হবে বৈঠা বেয়ে বেয়ে। যাতে কোনো শব্দ না হয়। আরএতে ডিজেলেরও অপচয় হয় কম।
তাহের বসে আছে নৌকার মাঝখানে। পেছনে জয়নাল হাল ধরার মতো করে ধরে আছে সুন্দরী কাঠের বৈঠা। সামনের গলুইয়ে সুবল। ডান পাশে নকাই আর মানিক। বাম দিকে হাসিব আর তামজিদ। সুবল আর এই চারজনের হাতে সুপারি গাছের বৈঠা। এতে শব্দ কম হয়। বৈঠাও বিশেষভাবে তৈরি। এই বৈঠা পানিতে ফেলারও একটা কৌশল আছে। শব্দ হবে না, অথচ নৌকা এগোবে তরতর করে। সেটাই হচ্ছে। তবে, তামজিদের এখনও একটু সমস্যা রয়ে গেছে। ও পুরো কৌশল আয়ত্ত করতে পারেনি। তাই ও যখন বৈঠা ফেলছে, তখন ছপ ছপ শব্দ হচ্ছে। বৈঠা তালে তালেও ফেলতে পারছে না। তাহের হাত দিয়ে খোঁচা মেরে তামজিদকে বৈঠা চালনায় নিবৃত্ত করল। তামজিদ একটু মনোক্ষুণ্ন হলেও বৈঠাটা উঁচু করে ধরে রাখল। এখানে সর্দারের কথার এক চুলও বাইরে যাওয়ার উপায় নেই।
মিনিট বিশেক চলার পরে নৌকা মালঞ্চ নদী ছাড়িয়ে আড় পাঙ্গাশিয়া নদীতে গিয়ে পড়ল। তাহেরনদীর দক্ষিণ পারে একটা গাছের ডালে নৌকা বাঁধতে বলল। জয়নাল বলল, ‘ওস্তাদ, এখানে তো হেঁতালের ঝোপ আছে। এখানে নাও বাঁধা কি ঠিক হবে?’
আমি সংকেত দিলেই নদীতে বৈঠা ফেলবা। তামজিদ বৈঠা ফেলবা না। তুমি শুধু দেখাবা ওই নাওয়ের পেছনে আর কোনো নাও বা আলো দেখা যায় কিনা। সামনেও দেখবা আবার ওই মালঞ্চ নদীর দিকেও চোখ রাখবা।
তাহের বলল, ‘যা বলি তাই করো। এখানে হেঁতাল বনের কথা আমারও মনে আছে। কদিন আগে সুধীর বাওয়ালীরে দিয়ে বড় মামারে চালান দিয়ে দেওয়া হইছে। জানো না? এইখানে এখন আরবড় মামা আসবে কোহান দিয়ে?’
নৌকা বাঁধা হলো। তাহের জানাল,দশটা তেইশ বাজে। কিছুক্ষণ আগেই সে একটা স্পিড বোটের আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। তার মানে ফরেস্ট অফিসারের শেষ বোটটাও তাদের বাংলোয় ফিরে গেছে। এখন যে শব্দ পাওয়া যাবে, সেটাই হবে টার্গেট নৌকার শব্দ। ওটা আসতে আর বেশি দেরি নাই। এই বোটের পেছন পেছনই ওদের ফেরার কথা।
তামজিদের জন্য এ সবই নতুন অভিজ্ঞতা। এই দলে যোগ দেওয়া। মুখে কালো গালপাট্টা বেঁধে অপারেশনের জন্য অপেক্ষা করা। বন্দুক হাতে নিয়ে বসে থাকা, তাতে গুলি থাকুক আর না থাকুক। ওর মায়ের মুখখানা হঠাৎ মনে পড়ল। হয়তো গোলপাতার দোচালার ঘরে শুয়ে আছে গুলবদন বিবি। হাঁফানির শ^াস, কাশি আর তামজিদের চিন্তায় তার চোখে ঘুম নেই।
রাতের অন্ধকারে বন-বনানী ঘেরা নিশুতি নদীর মোহনার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে তামজিদ। যদিও ঘুমে তার চোখ ঢুলুঢুলু করছে। আবার উত্তেজনাও তার কম নয়। কী রহস্যময় এই অন্ধকার, কী ভয়ঙ্কর এই নীরবতা,সুসুপ্ত নদীর প্রাণচাঞ্চল্য, মাঝে মাঝে ভুঁস করে ভেসে উঠছে শুশুক। আবার তা ডুবে যাচ্ছে নিঃশব্দে।ওপরে অ্যালুমিনিয়ামের গামলারমতো উপুড় করা তারাভরা আকাশ। বন্য প্রাণির ডাক, নিশাচর পাখির পাখসাট। গায়ে শিহর লাগা ভেজা বাতাস, ঢেউ ভাঙার শব্দ—এইসববিস্ময় আর ক্লান্তিজনিত ঘুমের মধ্যে এতক্ষণ একটা লড়াই চলছিল তামজিদের। কিন্তু এখন যেন তার সেই বিস্ময়বোধ পরাজয় স্বীকার করে নিতে চাইছে নিদ্রাদেবীর কাছে। চোখের পাতা বুঁজে আসতে চাইছে ক্লান্তিতে। এমন সময় তাহের চাপা স্বরে বলে উঠল, ‘সাবধান! সবাই চুপ! নৌকা কাছে আইসে পড়ছে। সবাই রাইফেল শক্ত করে ধরো। জয়নাল, তোমার বাম বগলের নিচে থাকবে নৌকার হাল আর ডান হাতে থাকবে রাইফেল। ঠিক আছে সব?’
জয়নাল বলল, ‘জি সর্দার। সব ঠিক আছে। আল্লা ভরসা। নৌকা চালাই?’
তাহের বলল, ‘দাঁড়াও। ব্যস্ত হওয়ার কিছু নাই। একটু বুঝতি দাও।’
এর মধ্যে ঘটল অন্য এক ঘটনা। তাদের নৌকার কোল ঘেঁষে কী যেন বড় একটা প্রাণী ওদের নায়ের মলম (বাড়তি পানির চাপ সামলানোর জন্য নৌকার ডালির ওপ লাগানো অতিরিক্ত তক্তা) বেয়ে কিছু দূর উঠে থেমে গেল। তারপর মলমে পা বাঁধিয়ে ঝটকা দিয়ে সেটি নৌকার পাটাতনে ওঠার চেষ্টা করল। প্রথম কেউ টের না পেলেও এবার সবাই তা টের পেয়ে নড়েচড়ে উঠল। মানুষের অস্তিত্বের টের পেয়ে প্রাণিটিও আবার ঝুপ করে লাফ দিয়ে নদীতে গিয়ে পড়ল। ওর তাড়নায় জল ছলকে উঠল নায়ে। কেউ কেউ ভিজেও গেল। প্যান্টের ওপর থেকে পেছন দিকে লেজের বাড়ি অনুভব করল হাসিব। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটি নৌকা থেকে সরে খানিক দূরে গিয়ে আবার ভেসে উঠল। তারপর তড়পাতে তড়পাতে দ্রুতবেগে নদীর কূলের দিকে ঝোপের মধ্যেমিলিয়ে গেল। জয়নাল জিজ্ঞাসা করল, ‘কুমিরের বাচ্চা নাকি সর্দার?’
হাসিব বলল, ‘কুমিরই হবে। আমার মাজায় লেজের বাড়ি লাগছে।’
তাহের বোধহয় জয়নাল আর হাসিবের নির্বুদ্ধিতায় কিছুটা বিরক্ত হলো। সেবলল, ‘কুমির কি কখনো নৌকা বেয়ে ওঠে, শোনছ কোনো দিন? ওইটা গুঁইসাপ। তবে কুমিরের চেয়ে কম না। নদীতে জোয়ার আইসে গেছে। তাই এরা এখন খাবারের সন্ধানে বারাইছে।আমাদের নৌকায় চিড়া মুড়ি দই আাছে। তার গন্ধ পাইছে মনে অয়। তাছাড়া আমরাও পাথরের মতো বইসে ছিলাম। তাই ওইটা নাও বাইয়েউঠে আসতি চাইছিল। যাক মিয়া। ওসব বাদ দাও।ওই দেখো, নদীর মাঝখানে টর্চের আলো আইসে পড়তিছে। ভালোভাবেখেয়াল কইরে দেখো।’
জয়নাল ব্যস্তসমস্ত হয়ে বলল, ‘সর্দার তাহলি নৌকা চালাই?’
তাহের বলল, ‘সবাই হাতে বৈঠা নাও। আমি সংকেত দিলেই নদীতে বৈঠা ফেলবা। তামজিদ বৈঠা ফেলবা না। তুমি শুধু দেখাবা ওই নাওয়ের পেছনে আর কোনো নাও বা আলো দেখা যায় কিনা। সামনেও দেখবা আবার ওই মালঞ্চ নদীর দিকেও চোখ রাখবা। ওদিক থেকেও কোনো পার্টি আসতে পারে। নৌকা বা কোনো আলো দেখলেই আমারে বলবা। মনে রাখবা, আমি না বলার আগে কেউ নদীতে বৈঠা ফেলবা না। একটু ভুল হইলেই আমরা সবাই লাশ হয়ে বঙ্গোপসাগরে ভাইসে যাব। কারুর মা-বাপ আমাদের লাশের খবরও জানতি পারবে না।’
জলমানুষ
চাণক্য বাড়ৈ
প্রকাশক: ভাষাচিত্র
অমর একুশে বইমেলা ২০২০