হঠাৎ ছায়াটা নড়েচড়ে উঠল! কেঁপে উঠল বাঁশঝাড়। শ্যামল বাবু তখনো বসে ছিলেন তার কুঁড়েঘরের সামনে। কিছুক্ষণ আগেই তিনি মহাজনের বাড়ি থেকে ফিরেছেন। দু’কাঠার এই ভিটেটা পৈতৃকসূত্রে পাওয়া। পেশায় স্কুল মাস্টার শ্যামল বাবুর এই দু’কাঠাই সম্বল। সেটাই আজ বন্ধক রাখতে গিয়েছিলেন মহাজনের কাছে। ধূর্ত মহাজন দলিল রেখে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিতে চাইল!
তাতে কি আর হয়! মা-মরা মেয়েটার বিয়েতে কম করে হলেও কুড়ি হাজার টাকা লাগবে। টাকার জোগাড় না হলে বিয়েটাই যে ভেস্তে যাবে! এছাড়া এমন সুপাত্র কি সবসময় পাওয়া যায়! মেয়েটার জন্য বড় মায়া হয় তার। দরিদ্র স্কুল মাস্টার শ্যামল বাবুর বুকের ভেতরটায় কেমন হাহাকার করে ওঠে।
আবার নড়ে ওঠে বাঁশঝাড়ের ওই দিকটা। বেরিয়ে আসে একটা অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি। শ্যামল বাবু আকস্মিক উঠে দাঁড়ান। বিদ্যুৎ গতিতে ঘর থেকে হারিকেন নিয়ে এসে উঠোনে দাঁড়ান। হারিকেনের আবছা আলোয় মুখ লুকানোর আগেই ছায়ামূর্তিটাকে এক ঝলক দেখে নেন শ্যামল বাবু।
ছায়ামূর্তিটাও আর দেরি করে না মোটেই। অন্ধকারে একটি প্যাকেট ছুড়ে মারে শ্যামল বাবুর দিকে। তার পায়ের কাছে এসে পড়ে ওটা। এরপর ছায়াটা নিমিষেই মিলিয়ে যায় অন্ধকারে।
শ্যামল বাবু কৌতূহলে কুড়িয়ে নেন সেটা। একটা কাপড়ে মোড়ানো কুড়ি হাজার টাকা! দু’ফোটা নোনাজল শ্যামল বাবুর দুগণ্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। অস্ফুটস্বরে কেবল উচ্চারিত হয়, ‘মহাজনের ঘরেও তবে মানুষ জন্মায়!
মন্তব্য