‘আমরা হাঁটছি’ কবিতায় বিশ্ববাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের অসহায়ত্ব, ক্লেদ, যন্ত্রণা বিবৃত হয়েছে। তবে চলমান এ পরিস্থিতির ভেতর দিয়েও আমার মনে হয়েছে, এ দৈন্য কাটিয়ে মানুষ একদিন ফিরে পাবে তার প্রাপ্য। যাকে আমি ‘আড়ালে আলোকের গোপনগর্ভ’ যা ‘গতিশীল বাস্তব’ বলে চিহ্নিত করার প্রয়াস পেয়েছি।
‘অলীক’ কবিতাটি রচিত হয়েছে কবি জীবনানন্দ দাশকে মনে রেখে। জীবনানন্দ দাশের প্রগাঢ় জীবনানুভব বিবৃত করার চেষ্টা করেছি আমার সময়ে দাঁড়িয়ে। কবির ‘অঘ্রাণের মাঠ’, ‘ফসলের মৃতরেণু’ সোনালি ময়ূরের অপার বিস্ময় হিসেবে অনুভবের চেষ্টা করেছি। এ কবিতাটিতেও জীবনের সম্পূরক উপস্থিতি, হতাশ্বাস, প্রকৃতির মোড়কে ভিন্নতর আবহে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।
‘লিলিথ, যদি জেগে ওঠো’ কবিতাটি নারী নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি শিল্পিত প্রতিবাদ। ‘লিলিথ’ সেই আদিম পৌরাণিক চরিত্র, যিনি সৃষ্টির শুরু থেকেই নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি চিন্তা করেছি, নির্যাতিত নারী যদি লিলিথের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন, তাহলে তাদের সেই দ্রোহে সময়ও পাশে থাকবে। কবিতাটিতে- ‘আসবো আবার, নির্জন দুয়ার খুলে/যৌথজন্মভূমে’ বলতে সেই সময়ের ইঙ্গিত রয়েছে।
হাঁটছি আমরা
সকাল হেঁটে যাচ্ছে—
কাঁধে কুয়াশাজর্জর শীতবস্ত্র; হাঁটছি আমরা
নগরীর বাহুল্যবাগান পেরিয়ে রাত্রি অভিমুখী;
নিখিলবিশ্বে নেচে ওঠা সেলফি উৎসব আরও রঙিন
দিকে দিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে শান্তিতামাশা,
সুরক্ষিত ভেতরমহল, রক্তআলোকে উজ্জ্বল!
আমরা হাঁটছি, পদশব্দে ভুলফুল; দেখি-
শাস্ত্রীয় উঠোন যেন পৃথিবীর সমস্ত আর্তচিৎকার
উপমিত হাসি আর মানবভস্মে গম্ভীর!
ভেতর-বাহির পোড়াগন্ধ, হাঁটছি আমরা—
হেঁটে চলেছে শীতবস্ত্র, গভীর রাত ও অগ্নি-তামাশা
আড়ালে আলোকের গোপনগর্ভ, গতিশীল বাস্তব
অলীক
(জীবনানন্দ দাশকে মনে রেখে)
অলীক তক্ষক ডাকে-ঘুমের ভেতর
বেজে ওঠে ছিন্ন খড়ের নূপুর, যেন-
অঘ্রাণের শূন্য মাঠে, ফসলের মৃতরেণু!
নুয়ে পড়া রাত, জেগে ওঠে ফের-ঘুমন্ত আঁধার
আমিও কী উঠিনি জেগে, একদিন—
ভালোবেসে ঝিনুকের সবুজ মুখোশ?
চূড়ায় উঠিনি কী, চোখে নিয়ে-অপার বিস্ময়!
হায়! তবু এই নগ্ন হাহাকার ফুঁড়ে
আঁধারের চুল বেয়ে নামে কেন-সোনালি ময়ূর!
লিলিথ, যদি জেগে ওঠো
পথ ছাড়া প্রতীক্ষা করে না কেউ—
আশ্বিনের ভোর, ভাঙা চাঁদ, চলে যায় সে-ও
ঋতুর অতলে;
লিলিথ, যদি জেগে ওঠো ফের
নিরঙ্কুশ প্রতিবাদে আবার দাঁড়াবো;
দৃষ্টিকটু ঘুম ছেঁকে-ছেনে—
কথা আর কবিতায়
হেঁটে হেঁটে মিশে যাবো দ্রোহে—
সমতা ও সময়রেখায়।
লিলিথ, যদি জেগে ওঠো শরৎ শয্যায়
শব্দরহিত মাঠে তুলে দিতে ফসলের সুর
আসবো আবার, নির্জন দুয়ার খুলে
যৌথজন্মভূমে
উজ্জ্বল দিনের প্রত্যাশায়;
কিছু নক্ষত্র অপেক্ষা করে দূরের আকাশে…