গোপালের প্রবেশ।সঙ্গে একটি ছাতা ও বাজারের থলে।প্রবেশ করেই গিন্নিকে ডাকতে শুরু করে।
গোপাল: গিন্নি গিন্নি ও গিন্নি!
গিন্নির আওয়াজ ভেসে আসে নেপথ্যে। ‘কে এলি মদনা!’
গোপাল: কি সব্বোনাশ গিন্নি আমার গলার স্বর চিনতে পারছে না! ও। গিন্নি আমি গো!
গিন্নি: (নেপথ্যে) দাঁড়া বাপু পিত্তিটা গেলে আসছি।
গোপাল: কী সব বলছে মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। (আরও জোরে) গিন্নি ও গিন্নি!
গিন্নি: (ঝড়ের বেগে প্রবেশ করে) কি রে পোড়ারমুখো তর সয়না একটু।
(গোপালকে দেখে লজ্জিত হয়ে ঘোমটা টানে) ও তুমি তা এত চেল্লাচ্ছ কেন শুনি?
গোপাল: আমার কপাল বড়ই খারাপ গিন্নি! (গোপাল কপাল চাপড়ায়)
গিন্নি: কপাল তোমার চিরকালই খারাপ। তা হয়েছে টা কী?
গোপাল: এই মুহূর্তে আরও খারাপ হয়ে গেল।
গিন্নি: কেন রাজসভায় বেবুশ্যে কি কম পড়েছে?
গোপাল: কি যা তা বলছ গিন্নি!
গিন্নি: যা তা বলছি? পোড়ারমুখো মিন্সে তোকে আমি হাড়ে-হাড়ে চিনি। সবসময় রাজসভায় কেন যাওয়া হয়, তা আর আমি বুঝি না ভাবিস?
গোপাল: কী থেকে কী! বলি তুমি আজকাল আমার গলা চিনতে পারছ না গিন্নি!
গিন্নি: মানে?
গোপাল: সেই থেকে ডেকে যাচ্ছি। খালি বলছ, মদনা দাঁড়া। আমার গলা কি মদনার মতো? তাও যদি প্রবাস থেকে ফিরতুম। এক ঘণ্টাও হয়নি বাজারে গিয়ে ব্যাগ পুড়িয়ে ফিরছি। ওফ কি চাঁদিফাটা রোদ। সবসময় কি চেঁচামেচি পোষায়?
গিন্নি: অমন হয়। হাড়জ্বালানো লোক নিয়ে ঘর করলে অমন ভুল হতেই পারে। বাজার থেকে কী এনেছ দাও দেখি।
গোপাল: ছাইভস্ম ছাড়া বাজারে কিছুই নেই গিন্নি। চারদিকে শুধুই আগুন। নাও থলেটা ধরো। (ব্যাগটা এগিয়ে দেয়)
গিন্নি: (ব্যাগটা ওখানেই ঢেলে দেয়) এই কটা কানা বেগুন??
গোপাল: কী করব বলো গিন্নি। কানা বেগুনও মেলা কড়ি দিয়ে কিনতে হয়! দাও দেখি চট করে কটা তেলেবেগুনে ভেজে, তোমার পিণ্ডি গিলে রাজসভায় যাই হা হা। মহারাজ আবার তলব করেছেন।
গিন্নি: তা তেলটা কোথায় যে তেলে বেগুনে হবে?
গোপাল: কেন আমি তো তেলই মাখি না। তাছাড়া এই ইন্দ্রলুপ্ত মাঠে ক’ফোঁটাই বা লাগে? যাদের কোমর দোলানো চুল, বেশি তেল মাখে তারাই। (মুচকি হাসি)
গিন্নি: ওরে মিন্সে, তাহলে আমিই তেল মেখে শেষ করছি? হতচ্ছাড়া লোক ঘরের খাবে আর রাজসভার মাগীদের সঙ্গে পিরিত করবে! ঘরে কি আছে না আছে সে হুঁশ আছে? আমার খুন্তিটা কোথায় গেল? বেগুনভাজা খাওয়াচ্ছি আজ ভালো করে! ( প্রস্থান)
গোপাল: মরেচে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে। বেশ গন্ধও ছেড়েছে, ঘ্রাণেন অর্ধভোজন! এর বেশি চাইলে পিঠ পুড়বে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র লেলিহান শিখা। মান থাকতে কেটে পড়া ভালো। ( প্রস্থান)
রাজসভায় কৃষ্ণচন্দ্র পায়চারী করছেন। গোপাল প্রবেশ করে।
কৃষ্ণচন্দ্র: এই যে গোপাল এত দেরি হলো যে। এসো এসো। তোমার কথাই ভাবছিলাম।
গোপাল: চারদিকে বড্ড ঝাঁজ, তাই একটু দেরি হয়ে গেল মহারাজ।
কৃষ্ণচন্দ্র: ঝাঁজ?
গোপাল: বড্ড ঝাঁজ মহারাজ। আপনাদের রান্নাঘরে তেল সরাবরাহ করার ঠ্যালায়, আমাদের হাট- বাজারে রান্নাঘরে আগুনের বড্ড ঝাঁজ। টেকা দায়।
কৃষ্ণচন্দ্র: এসেই একখানা মোক্ষম খোঁচা দিলে গোপাল। আজ রসিকতা করার মন একদম নেই। মনটা বড্ড উদাস উদাস করছে।
গোপাল: উদাস উদাস করছে? কেন উদাস বলুন তো মহারাজ? সেই গজল গাইয়ে কি যেন নাম… পঙ্কজ উদাসের কথা বলছেন?
কৃষ্ণচন্দ্র: না না গজল বা টপ্পা কিছুই শোনার মন নেই হে !
গোপাল: ব্যাপার তবে গুরুতর মনে হচ্ছে!
কৃষ্ণচন্দ্র: বড্ড গুরুতর। বাবা ভোলানাথ স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেছেন, কৃষ্ণচন্দ্র কৈলাসে চলে আয় দু পাঁচদিন থেকে যা। তোকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে।
গোপাল: ভোলানাথ কৈলাসে যেতে বলেছেন, সে কি কথা!
কৃষ্ণচন্দ্র: কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?
গোপাল: কী করে বিশ্বাস হবে? তিনি তো এখন কলকাতায়!
কৃষ্ণচন্দ্র: কলকাতায়?
গোপাল: তাহলে আর বলছি কি! আপনার গ্রন্থাগারে যেসব কাগজ আসে তাতে কি সব ছাপা হয়?
কৃষ্ণচন্দ্র: তবে কে আমাকে স্বপ্ন দিল?
গোপাল: ডুপ্লিকেট ভোলানাথ!
কৃষ্ণচন্দ্র: মানে?
গোপাল: মানে জাল ভোলা, নকল ভোলা।
কৃষ্ণচন্দ্র: অ্যাঁ! নকল ভোলা স্বপ্ন দিতে পারে?
গোপাল: কত কি টেকনিক বেরিয়েছে আজকাল। তিলকে তাল করে দেওয়া যায়, স্বপ্নতো কোন ছাড়! কাগজ টাগজ একটু পড়ুন জানতে পারবেন। একটু নিন্দে মন্দ থাকলে খারাপ হয় নাকি? ওরা আপনার ভালোই চায়। আধপাগল খনিমজুর আর ওই খ্যাপা চাষারা ছাড়া কেউই আপনার সাধের সিংহাসন উলটে দিতে চায়না মহারাজ!
কৃষ্ণচন্দ্র: না হে গোপাল ওরা ট্যারা ছবি এঁকে আমাকে টিটকিরি করে, আর খচ্চর প্রজারা সেগুলো রসিয়ে রসিয়ে পড়ে। যাকগে, তা শিবঠাকুর এখন কলকাতায় কি করছেন? কৃষ্ণনগর কি আসবেন? তোমার কাগজওয়ালারা কী লিখেছে?
গোপাল: উনি জটা কেটে, সাপ ফেলে ত্রিশূল ভেঙে, সাবান মেখে সাহেব হয়েছেন।
কৃষ্ণচন্দ্র: সে কী?
গোপাল: উনি এখন সাগরপারে যাবেন। এদেশে দেবতাদের নাকি কোনো কদর নেই।
কৃষ্ণচন্দ্র: না না গোপাল এটা ওঁর একেবারেই ভুল ধারণা। শিবরাত্রি, চৈতিগাজনে কত লোক উনাকে পুজো করে বলো তো। কত লোক ওনাকে দেখতে দুর্গম কেদার বদ্রীতে যায় কষ্ট করে। সারাদেশে ওঁর কত ভক্ত তা কি গুনে শেষ করা যায় ?
গোপাল: আসলে এসব আর ওঁর ভালো লাগছে না। মান্ধাতা আমলের রীতি পদ্ধতি, পূজো নৈবেদ্যে ওনার আর রুচি নেই। উনি একটু অন্যরকম চাইছেন।
কৃষ্ণচন্দ্র: তা ওনার চোখ ফোটালো কে?
গোপাল: ওই সাগরপারের মেমমন্ত্রী!
কৃষ্ণচন্দ্র: ও মেমম্যাডাম। যিনি এসেছিলেন? অসাধারণ দেখতে মাইরি ! (কপালে হাত ঠেকিয়ে)
গোপাল: এই দেখুন মহারাজ আপনিও মজেছেন। শিবঠাকুর যে মজবেন এ আর এমন কি! বুড়ি মেমের গালে টোল বুঝুন ঠ্যালা।
কৃষ্ণচন্দ্র: কিন্তু উনি যে আত্মভোলা! এসবে ওনার…
গোপাল: লোকে দেবতাকেও অত ভক্তি করে না গো! চান করার জলটাও বয়ে এনেছে ভক্তরা। খাবার দাবার তো দূরের কথা। আহা বলিহারি। দিশি মন্ত্রীরা থরহরি । দিশি কোতোয়াল সেপাই নিজভূমে পরবাসী, দাঁড়কাক, হতবাক!
কৃষ্ণচন্দ্র: আচ্ছা এদেশের কোনো কিছুই কি সাহেব গিন্নির পছন্দ হলো না গোপাল?
গোপাল: কেন লজ্জা দিচ্ছেন মহারাজ। ওনার একটি জিনিসই পছন্দসই। আপনার চেয়ে কে-ই বা ভালো করে তা জানে মহারাজ। সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও ভালো খাবার হল গরিবের রক্ত। ওতে কোনো ভেজাল নেই।
কৃষ্ণচন্দ্র: সময়ে অসময়ে রসিকতা করাটা তোমার বদ স্বভাব। আমার মন এখন কৈলাসে ছুটতে চাইছে, আর তুমি টেনে টেনে যত সব আজেবাজে বিষয়ে এনে ঢুকিয়ে দিচ্ছ।
গোপাল: কৈলাস থেকে টেনে এবারে কলকাতায় নিয়ে আসুন। তারপর পাসপোর্ট করে নিয়ে যান সাগরপারে। আপনার আরাধ্যদেবতা এখন সাহেব মুলুকে পাড়ি দিতে চলেছেন।এক জাহাজেই চলে যান।
কৃষ্ণচন্দ্র: ওনার মাথায় যে কী ঢুকল তা তিনিই জানেন!
গোপাল: তা ওনার দোষটাই বা কি মহারাজ। একজন বিলিতি মন্ত্রী যদি দেবতার চেয়েও বেশি খাতিরযত্ন পায়, তবে ওঁর গোঁসা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
কৃষ্ণচন্দ্র: তা বলে একেবারে বিদেশে চালান, ছ্যা ছ্যা ছ্যা
গোপাল: কেন, চাল,গম, আলু,লোহা,কয়লা,তামা,মাছ,চা,চিনি,সস্তা মজুর, মেয়েছেলে সব যদি জলের দরে বিদেশে পাড়ি জমায় তবে শিবঠাকুর কী অন্যায় করলেন?
কৃষ্ণচন্দ্র: এভাবে দোষ দিওনা গোপাল, যাচ্ছে যেমন বিনিময়ে তেমন তো আসছেও নাকি?
গোপাল: তা ঠিক মহারাজ যেমন, বিলিতি মদ আসছে, কাপড় খোলা ছবি আসছে, পকেটকাটা ফোন আসছে, দামি-দামি কামান গোলাবারুদ আসছে। বাজারে সস্তা দরে আগুন পাওয়া যাচ্ছে ( হেসে) এও তো বিলিতি আমদানি। কালে কালে আরও কত কী আসবে তার হালহদিস কি আমরা জানি মহারাজ! এখন শুধু ভাঁড়ার খোলার কম্পিটিশন, কোন ভাঁড়েরা আগে খুলবে।
কৃষ্ণচন্দ্র: ও ও ওসব বাদ দাও। (বিব্রত)
গোপাল: হ্যাঁ মহারাজ সব দিলাম বাদ সব ঝুট হ্যায়,সত্যিরা বরবাদ।
বাইরে হৈ চৈ শব্দ। একজন সেপাই একটি লোককে নিয়ে প্রবেশ করে তার হাতদুটো বাঁধা।
সেপাই: জয় হোক মহারাজের!
কৃষ্ণচন্দ্র: বলো সান্ত্রী কী ব্যাপার?
সেপাই: মহারাজ এই লোকটা রাজকোষাগারের আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল। আমরা ধরে দু ঘা দিতেই স্বীকার করল চুরির মতলব।
কৃষ্ণচন্দ্র: কি সাংঘাতিক ব্যাপার অ্যাঁ, উচ্চ নিরাপত্তাবলয়ে চোর! এই তোর নাম কী?
চোর: (পিছমোড়া করে বাঁধা হাতদুটো। একটু সোজা হয়ে তাকিয়ে বলে) আজ্ঞে চোর।
কৃষ্ণচন্দ্র: কী এত আস্পর্ধা! যতবড় মুখ নয় তত বড় কথা?
চোর: আজ্ঞে মহারাজ, পেটের জ্বালা নেভাতে গিয়ে নিজের আসল নাম কবে ভুলে গেছি। আজ পরিচয় শুধু চোর।
গোপাল: তাই বলে চোর? আর নাম পেলি না? ওটা মহারাজের মন্ত্রীদের জন্য বাঁধা জানিস না।
কৃষ্ণচন্দ্র: আহ গোপাল বড্ড খারাপ স্বভাব তোমার। (চোরের দিকে ফিরে) তা তুই আর চুরির জায়গা পেলি না। শেষে রাজ কোষাগারে চুরি করতে এলি অ্যাঁ? জানিস এর পরিণতি কী?
চোর: দেশের প্রতিটি ঘর শূন্য মহারাজ। চারদিকে অন্নকষ্ট, কোথায় চুরি করব? বাঁচতে হবে পরিণতি ভেবে কী লাভ?
কৃষ্ণচন্দ্র: বলিহারি তোর সাহস!
চোর: সারাদেশে যখন হা অন্ন অবস্থা, তখন ভাবলাম রাজকোষাগারই একমাত্র উপায়। সব সুখ তো ওখানেই জমা হয়েছে মহারাজ।
কৃষ্ণচন্দ্র: কী বলতে চাইছিস তুই?
গোপাল: আমি বলব মহারাজ যদি অভয় দেন?
কৃষ্ণচন্দ্র: অ্যাঁ!
গোপাল: চোর বলতে চাইছে সারাদেশের সব লুটের মানে চিটিং মাল ( স্বগত) এখন রাজকোষাগারে অর্থাৎ ফান্ডে জমা আছে। ও সেটাই চুরি করে নিয়ে যেতে এসেছে।
কৃষ্ণচন্দ্র: চোরের বড্ড দুঃসাহস গোপাল!
গোপাল: দুঃসাহস বলে দুঃসাহস। মন্ত্রী নেই শান্ত্রিসেপাই কিছুই নেই। একা একা চুরি বড্ড বাহাদুরি।
কৃষ্ণচন্দ্র: ভুলভাল বকা বাদ দাও গোপাল। ওকে কী শাস্তি দেওয়া যায় সেই কথা বলো। রাগে আমার ব্রক্ষ্মতালু লাফাচ্ছে।
গোপাল: শাস্তি দিতে হলে ওকে একটাই শাস্তি দেওয়া উচিত বলে মনে হয় আমার।
কৃষ্ণচন্দ্র: আমিও তাই ভাবছি গোপাল। দেখো দুজনের মধ্যে কি মিল আমাদের অ্যাঁ।
গোপাল: ও আপনিও তাই ভাবছিলেন। কি মহানুভব রাজা আপনি মহারাজ!
কৃষ্ণচন্দ্র: তবে গোপাল সবসময় যে ব্যাঙ্গ করো, ভাবো আমি সবসময় ভুল করি, ভুল ভাবি?
গোপাল: আসলে বড্ড সেপাই সান্ত্রি জেলখানা কোতোল এসে পড়ে আপনার কথায় তো তাই!
কৃষ্ণচন্দ্র: দেখে-শুনে বড্ড রাগ হয়ে যায় যে গোপাল। জানো তো যে রাজার রাগ চন্ডাল।
গোপাল: রাজার এত পেয়েও যদি রাগ-চন্ডাল হয়, তবে প্রজারা হাওয়া খেয়ে কীর্তন করবে কেন?
কৃষ্ণচন্দ্র: বেশ তো ভালো কথা বলছিলে ফের সেই…
গোপাল: বেশ বলব না এই মুখ বন্ধ করলুম।
কৃষ্ণচন্দ্র: গোপাল মুখ বন্ধ করলে হবে না। সামনে সমূহ বিপদ। এই বিদ্রোহী চোরকে নিয়ে কী করি তাই বলো। বুদ্ধি দাও। এমন শাস্তি দিতে হবে যেন কেউ আর চুরি না করে।
গোপাল: কেন দুজনের মনের ইচ্ছা তো মিলে গেলো মহারাজ!
কৃষ্ণচন্দ্র: তবু একবার মুখ ফুটে বলোই না। তুমি না! বড্ড ফিচেল তুমি গোপাল। ( হাসি) বলো বলো।
গোপাল: চোরের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত…( থেমে)
কৃষ্ণচন্দ্র: উচিত…কী হলো বলো!
গোপাল: আপনি যেহেতু কৈলাসে যাবেন মনস্থির করেছেন….
কৃষ্ণচন্দ্র: করেছিলুমই তো!
গোপাল: অপরাধ নেবেন না মহারাজ। আপনার তাই চোরের হাতে রাজত্বটা দিয়ে যাওয়া উচিত।
কৃষ্ণচন্দ্র: কী-ইইই!! (রাজা বিস্ময়ে বিপর্যস্ত)
গোপাল: আজ্ঞে হ্যাঁ মহারাজ। আপনার অবর্তমানে রাজত্বটা কে চালাবে অমন করে?
কৃষ্ণচন্দ্র: (রাগে অগ্নিশর্মা) কী, বলছ কী গোপাল?
( চোর হো হো করে হেসে ওঠে)
চোর: গোপাল ঠিকই বলেছেন মহারাজ, আমিই আপনার একমাত্র উত্তরসূরি।
কৃষ্ণচন্দ্র: কী এতবড় অপমান!
গোপাল: রাগ করবেন না মহারাজ। এটাকে অপমান ভাবছেন কেন? এর চেয়ে বড় স্বীকৃতি আর কী আছে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় চোর তো আপনি। কি নিপুণ উপায়ে সারাদেশকে বোকা বানিয়ে কোষাগারটি ফুলিয়েছেন। যদিও এর জন্য আপনার মন্ত্রী-সভাসদ-অমাত্য-কোতোয়াল-সেপাই-সান্ত্রী-বিচারক-জহ্লাদদেরও কৃতিত্ব কম নয়। ( হাসি)
চোর: আর আমি কোনো সাহায্য ছাড়াই আপনার সেই কোষাগার ফাঁকা করে দিতে এসেছিলাম। তাই মহারাজ গোপালের মন্ত্রণা মতো আপনার রাজ্যপাটটি যোগ্য হাতে ছেড়ে দিন। (হাসি) আমার অভিষেকের বন্দোবস্ত করুন।
কৃষ্ণচন্দ্র: (প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ। রাগে অগ্নিশর্মা) সেই ব্যবস্থাই করছি। অ্যাই, কে কোথায় আছিস, এদের দুজনকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যা। গোপালকে তিন বছরের জন্য অন্ধকূপে পুরে রাখ। আর প্রকাশ্য দিবালোকে হাটের মধ্যে এই বাতুল চোর কে চড়িয়ে দে শূলে।
কৃষ্ণচন্দ্র প্রস্থান করে। সেপাই দাড়িয়েই ছিল। সে গোপাল আর চোরকে পাকড়াও করে। ধৃত অবস্থাতেই গোপাল আর চোর রাজার প্রস্থান পথের কাছে এসে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে হাসে আর বলে…
গোপাল ও চোর: আর আমাদের বিবাগী মহারাজকে কৈলাসের বদলে বিলিতি রানীর গাউন শুঁকিয়ে নিয়ে আয়। হো হো হো হা হা হা! (দুজনকে টানতে টানতে সেপাই নিয়ে যায়)