মধ্যরাতে মিলিটারি ব্যান্ডের আওয়াজ দরজা খুলে সদর দরজায় গিয়ে দেখি বাড়ির সামনে সেনা কুচকাওয়াজ করছে। সেনা না পুলিশ! যেই হোক সামরিক পোশাক গায়ে। পুরুষ ধরছে তারা নপুংসক করবে। এসব দেখে বাড়ির দরজা বন্ধ করে দিলাম। দরজায় ঠকঠক আওয়াজ পড়লো।
—দরজা খুলুন না হলে ভেঙে ফেলবো। বাড়িতে ঢুকেই একটা ঘর দখল করে নিলো।
—এক এক করে প্যান্ট খুলে এদিকে আসুন।
বাবা, ভাই, আমি। তিনজনকে নগ্ন হতে হবে পুরুষ হওয়ার অপরাধে রাষ্ট্রের পোষা কুকুরগুলোর কাছে।
—কী নাম আপনার? আপনার আইডি কার্ডটা দেখতে চাই। আপনার বিরুদ্ধে মামলা করবো আমি।
আমার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় পড়লো এসে!
বাবা বললো, চুপ কর। খবরে বলেছে, সরকার ঘোষণা করেছে এ দেশের প্রতিটি পুরুষকে নপুংসক করা হবে।
আমি চেঁচালাম। বললাম, কিন্তু কেন? জনসংখ্যা রুখতে? ধর্ষণ আটকাতে? না কি সরকারবিরোধী সব আন্দোলন সব উদ্দীপকগুলো স্তব্ধ করে দিতে?
আবারও একটা থাপ্পড় এসে পড়লো মুখের ওপর—মাদার চোদ।
চোখ দুটো রক্ত জবার মতো লাল। দুটো সন্ড্যাগন্ড্যা লোক আমার বাবা ভাই পরিবারের সামনেই আমার হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরলো পেছন থেকে। আরও একজন এক হেঁচকায় কোমর থেকে নামিয়ে ফেললো প্যান্টটা। পকেট থেকে একটা ধারালো ব্লেড বের করলো। তার গায়ে তখনো রক্তের দাগ লেগে। হয়তো পাশের বাড়ির কারও রক্ত। আমার শুক্রথলিটা শরীরের যে অংশে আটকে আছে, সেখানে শরীর থেকে আলাদা করতে ব্লেডে পড়লো টান। আর তখনই স্বপ্ন গেলো ভেঙে।
মানুষের জীবনে আজ গভীর কোনও তাৎপর্য নেই; সিকোয়েন্সিয়াল। আমি কোথা থেকে এসেছি? কেন এসেছি? কোথায় যাচ্ছি? জীবনের উদ্দেশ্যই বা কী, অর্থই বা কী?—এই প্রশ্নগুলো এখন একমাত্র মনোরোগীরা করে। বাকিদের কাছে অর্থহীন। সচেতনভাবে নিজেকে খুঁড়তে খুঁড়তে জীবনের সন্ধান, জীবন কে বোঝা, নিজেকে বাজিয়ে দেখার সময় নেই আজ। বন্ধক মানুষের মেধা—‘অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়—/আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে;/আমাদের ক্লান্ত করে।’ অ্যালকোহল; কিছুই খেলা করে না জীবনানন্দ। আমরা বেঘোরে জীবন হরাই।আমরা অর্থ ও বিত্তের দালাল; সচ্ছলতার দাস।আমরা বর্ণ জোগাড় করে নেই, আমরা মুখোশ পরতে ভালোবাসি। আর মুখোশটা কেউ খুলে দিলে রে রে করে উঠি। মিডল-ক্লাস পরিমণ্ডলে এক ধরনের লিমিটেশন, অনেক রকম ক্রাইসিস, কোয়েস্ট আছে।
ক্ষমতা আজকে আমার স্বপ্নের মতো এতটা অত্যাচারী নয়। ক্ষমতা তোমাকে পুরস্কৃত করে।মিশেল ফুকো। পুরস্কার টা তোমাকে গ্রহণ করতেই হবে; কারণ তুমি তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক। কোনোক্রমে বেঁচে থাকতে একটা চাকরি তোমাকে করতেই হবে। একটুও সময় পাবে না ভালোবাসতে, একটুও সময় পাবে না স্বপ্ন দেখতে; একটুও সময় পাবে না ভাবতে তুমি ভোট কাকে দেবে? আদতে দিতে যাবে কিনা। একটুও সময় পাবে না বোঝার তুমি বেঁচে আছ কিনা!
ক্ষমতা, প্রতিষ্ঠানের হাতে সাধারণ মানুষ সত্যিই খোজা। পাওয়ারটাকে ইউটিলাইজ করতে তাকে ক্ষমতার তলায় আসতে হচ্ছে। ক্ষমতা ব্যবহার করতে গিয়ে ক্ষমতার হাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। যুগে যুগে রাজনীতির কাছে, রাষ্ট্রের কাছে, ক্ষমতার কাছে মানুষ পরাজিত। আর কত কাল না-মানুষ হয়ে থাকবে মানুষ। অমানুষদের অত্যাচারে আর কত দিন চলতে থাকবে এমন টা? আর কত দিন অনিবার্য শৃঙ্খল? মানুষের কি মুক্তি হবে না কখনো?
সুস্থতা, সুস্থিরতা, সৌন্দর্য; একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন; মানুষের কি সব সম্ভাবনার শেষ? একটু আশাও কোথাও নেইকো বেঁচে। ক্যালাইডোস্কোপ দৃশ্যের মতো অবচেতনে স্বপ্নগুলো আনাগোনা করে। ফ্রয়েড বলছে—চেতনাটুকুই সব নয়; তার বাইরে অনেক কিছুই আছে। আমি বললে পাগল বলবে লোকে।পণ্ডিতদের অভাব নেইকো দেশে।
তবু নানান পার্সপেক্টিভ ঘেঁটে তবু নানান অনুষঙ্গ খুঁটে আমার স্বপ্নের এক্সট্রাকশন ঘটে।আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানে যাকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে; তেমনি এমন কোনো রিয়েলিটি নেই, যেটা দ্রষ্টানিরপেক্ষ। কোন সময় দেখছি, কোন মানসিক অবস্থায় দেখছি, অনেক কিছুর ওপরে নির্ভর করছে বিষয়টি।
আমার স্বপ্নগুলো ভীষণ রিয়েলিস্টিক হয়। মনোজগতের সমস্ত দলাকরা জায়গা নিয়ে তৈরি। পরিবারও একটি প্রতিষ্ঠান।
আমার ভেতর যখন এমন কিছু বাসা বাঁধে, যখন অনেক কিছু আমাকে বলতে বাধা দেয়—পরিবার, আত্মীয় স্বজন, চারপাশে লোকজন, দেশ, রাষ্ট্রের চোখ রাঙানি, ঢিল ছোড়ার ভয়, মনোরোগী বলার ভয় তখন আমার ভেতরে যে ব্যারিয়ারগুলো কাজ করবে—দ্যাটস অ্যা পাওয়ার।
ওখানেই তো প্রতিষ্ঠান লুকিয়ে আছে।আর তার ফাঁদে পড়লে আমি নিজেও একটা এস্টাব্লিশমেন্ট, সংস্থাপন, প্রতিষ্ঠান হয়ে যাবো! তাই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার লড়াইটা সর্বপ্রথম নিজের থেকে শুরু হয়।