বাবার হাত ধরেই লেখালেখির শুরু। বাবা তুষ্টচরণ বাগচী কবিতা লিখতেন। তিনি কবি জসীমউদ্দীনকে আদর্শ মানতেন। সেকালে আমার ধারণা ছিল, কবিরা বুঝি আর জন্মাবেন না। অর্থাৎ রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত-জসীম বুঝি একবারই জন্মে। এঁদের মতো কবি-সাহিত্যিক বুঝি আর নতুন করে আসবেন না। বাবা আমাকে বলতেন, ‘আরে, তাঁরা গেছেন, আবার নতুন কবি আসবেন! এই জসীম-সুকান্ত-সুনীল তো আমাদের ফরিদপুরেরই সন্তান। তাঁরা কবি হতে পারলে, তুমিও হতে পারবে!’ এই কথা ক’টিই আমাকে লেখালেখির জগতে নিয়ে আসে। আমি সেদিনই জসীমউদ্দীনের একটা কবিতা নকল করে লিখে বাবাকে দেখাই। তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। বাবা বললেন, ‘কবিতাটি ভালো হয়েছে। তবে জসীমের মতো নয়, নিজের মতো করে লেখো।’ সেই থেকে নিজের মতো করে লিখতে চেষ্টা করছি। ভালো লিখছি না মন্দ লিখছি, তা জানি না। তবে নিজের মতো করে লিখছি। ওই নকল কবিতাটিই হচ্ছে আমার প্রথম রচিত কবিতা। আর তার পাঠক একমাত্র আমার বাবা।
এঘটনার পর মাদারীপুর মহকুমার কদমবাড়ী হাইস্কুলে পড়ার সময়ে ‘কিশলয়’ নামের একটা দেয়ালপত্রিকা প্রকাশ করি। সেই দেয়ালপত্রিকায় আমার বেশ কয়েকটি কবিতা প্রকাশিত হয়। কিন্তু সেগুলো আর সংরক্ষণ করিনি। আমার প্রিয় শিক্ষক অনিলকৃষ্ণ দত্তকে দিয়ে সেই পত্রিকায় কবিতা লিখিয়েছিলাম। অনিলকৃষ্ণ দত্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ ও বিএড। সহকারী শিক্ষক হিসেবে আমরা তাকে পাই। তিনি এখন অই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যতদূর মনে পড়ে রূপচাঁদ কীর্ত্তনীয়া, রমেশচন্দ্র গাইন, প্রভাসচন্দ্র গায়েন, স্বপনকুমার কীর্ত্তনীয়া এবং রসময় কীর্ত্তনীয়ার কবিতাও অই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। স্বপনকুমার কীর্ত্তনীয়া খুবই ভাল লিখতেন। তিনি এলাকায় ‘কবিভাই’ বলেই পরিচিত। আমার কবিতা লেখার পেছনে কবি স্বপনকুমার কীর্ত্তনীয়ার নেপথ্য প্রেরণা ছিল। অকালপ্রয়াত এই কবিকে আমি এখনো স্মরণ করি পরম শ্রদ্ধায়। রূপচাঁদ কীর্ত্তনীয়া আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিনিও প্রয়াত। অন্যরা আর কবিতা লেখেননি।
স্কুলে ভালো রেজাল্ট করে ভর্তি হই ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে। আমি ছিলাম রাজৈর থানা কেন্দ্রে সর্বোচ্চ এবং মাদারীপুর মহকুমার মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ছাত্র। ফরিদপুরে গিয়ে আমার চেয়েও জনাদশেক ভাল ছাত্র পাই। এর মধ্যে একজন ছিল বোর্ডে স্ট্যান্ড করা ছাত্র; খতিব আশরাফুর রহমান সিতু। স্টার পাওয়াও ছিল কয়েকজন। কিন্তু সাহিত্যসংস্কৃতির সঙ্গে এদের তেমন যোগ ছিল না। আমার পুরনো রোগ আবার পেয়ে বসে। তাতে আবার রাজনৈতিক চেতনাও যুক্ত হয়েছে। সামনে পেলাম হিরোশিমা দিবস। বের করলাম দেয়ালপত্রিকা। আমাদের সঙ্গ ছিলেন সিতুর বন্ধু তপু। অই পত্রিকায় ‘হিরোশিমা’র ঘটনা নিয়ে ছড়া লিখেছিলাম। কলেজ-জুড়ে আমার লেখকনাম ছড়িয়ে গেল। কিন্তু দেয়ালপত্রিকায় লিখে কি আর মন ভরে?
একদিন গেলাম ফরিদপুর প্রেসক্লাবে। স্থানীয় পত্রিকাগুলো দেখতে। অনেক পত্রিকা বের হয় তখন ফদিপুর থেকে। মাসিক গণমন, সাপ্তাহিক জাগরণ, সাপ্তাহিক চাষীবার্তা, সাপ্তাহিক আলমোয়াজ্জিন, সাপ্তাহিক আলমিজান, সাপ্তাহিক একাল, অর্ধসাপ্তাহিক বাংলাসংবাদ প্রভৃতি। মফঃস্বল থেকে এসেছি। সাহিত্য কিংবা সংবাদপত্রের কাউকে চিনি না। পত্রিকায় কী করে লেখা পাঠাতে হয়, তাও জানি না। তবে বুদ্ধি করে সবকটি পত্রিকার ঠিকানা লিখে নিয়ে এলাম। তারপর কবিতা লিখে খামে ভরে সবকটি পত্রিকার ঠিকানা লিখে কলেজের পাশের ডাকবাক্সে ফেলে দিলাম। একরকম অবিশ্বাস বুকে নিয়ে পরের সপ্তাহে আবার গেলাম প্রেসক্লাবে। গিয়ে দেখি কবিতা ছাপা হয়েছে সাপ্তাহিক আলমোয়াজ্জিনে। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে নিবেদিত একটি কবিতা। কবিতার প্রথম স্তবক এখনো মনে আছে,
‘একাই একশ তুমি এই ত্রিভুবনে
তাই তুমি চিরকাল থাকবে স্মরণে
তোমারই জ্ঞানালোকে আলোকিত বিশ্ব
তোমারই পুণ্য মন্ত্রে হবো আজ শিষ্য।’
অনেক প্রশংসা পেয়েছিলাম কবিতাটির জন্য। কিন্তু পত্রিকা আর ক’জন পড়ে। নিজেই পত্রিকার কপি বন্ধুদের দেখিয়েছি। যেচে যেচে প্রশংসা কুড়াতেও যে সুখ, তা সেদিন উপভোগ করেছি। কী লিখেছি, সেটি বড় কথা নয়, ছাপার অক্ষরে নাম ছাপা হয়েছে, সেটিই তখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে আমার জীবনে। অন্যদিন ক্লাসে মন বসাতে পারিনি। মনের ভেতর অন্য রকম শিহরণ। শরীরের ভেতরেও সেই শিহরণ টের পাই। পত্রিকাটি বুকের ওপর রেখে শুয়ে থাকি হোস্টেলের কক্ষে। কিন্তু চক্ষে ঘুম আসে না। নিজেকে একজন কবি ভাবতেই বুকটা ফুলে ওঠে। নির্ঘুম একটা রাত কেটে যায় কবিতা প্রকাশের আনন্দে! আমি জানি এটি কবিতা হিসেবেও দুর্বল, ছড়া হিসেবেও ব্যর্থ। তাই কোনো গ্রন্থে এর স্থান হয়নি। কবিতাটি আমি ভুলে যেতে চাই। কিন্তু প্রথম মুদ্রিত কবিতা হিসেবে এর অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারি না। তাই এটি মনের কোণে জায়গা পেয়েছে।
সোবহান তালুকদার পরে উপল তালুকদার নামে লিখছে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। আরো লিখত জোবায়ের স্বপন। তার সঙ্গেও দেখা নেই দীর্ঘদিন।
আর যে সসব কবিতা পাঠিয়েছিলাম, পরের ২/৩ মাসের মধ্যে তা বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়ে গেল। মোটামুটি কবি হিসেবে ফরিদপুরে আমার ছোটখাটো অবস্থান দাঁড়িয়ে গেল। আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল! আমার কবিতা তাহলে ছাপার যোগ্য?
ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থা তখন সারা দেশের মধ্যেই আলোচিত ও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান। ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’ দেওয়া হয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে। এই সংস্থার উদ্যোগে নিয়মিত সাহিত্যআসর বসত। সেখানে যাওয়া শুরু করলাম। সঙ্গী হলো সহপাঠী বন্ধু দীপংকর হালদার। হোস্টেলে পাশাপাশি কক্ষে থাকতাম। সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের হিন্দু হোস্টেলের ২ ও ৩ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা আমরা। দীপংকর বিশ্বাসের একটি কবিতার চরণ এখনো মনে আছে, ‘আমি সৈনিক, যাই দৈনিক, বাংলার অই বর্ডারে…।’ দীপংকর কবি হতে পারত। কিন্তু কৃষিবিদ হয়েছিল। কৃষিবিদ্যাচর্চার সুযোগ না নিয়ে সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য হয়েছে। আর আমি এখনও ছাপোষা কেরানির মতো কবিতা লিখেই চলছি।
আমার কবি হওয়ার বাসনা ফরিদপুরে থেকেই তীব্র হয়ে ওঠে। আমার ফরিদপুরবাসের সময়ে আলাওল পুরস্কার নিতে আসেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। তার ‘শুক্লা শকুন্তলা’ কাব্যের জন্য অই পুরস্কার লাভ করেন। জাতীয় পর্যায়ের কোনো কবির সঙ্গে সরাসরি আলাপ এই অনুষ্ঠানেই। ফরিদপুরবাসের কালেই অই পুরস্কারসূত্রেই কবি মোহাম্মদ রফিকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁর ‘কীর্তিনাশা’ সেবার পুরস্কৃত হয়। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে কবি আসাদ চৌধুরীও ছিলেন বিশেষ অতিথি। তাঁর সঙ্গেও পরিচয় হয় ফরিদপুরেই। আর ফরিদপুরের কবিদের মধ্যে তখন আনম আবদুস সোবহান, এনায়েত হোসেন, আবদুল লতিফ ভুঁইয়া, আবদুস সাত্তার গুমানী, ফকির নিজামউদ্দিন, আনোয়ার করিম, বাবু ফরিদী, আবু জাফর দিলু, পাশা খন্দকার, আবুবকর সিদ্দিক, সেলিম আলফাজ, শহীদুল্লাহ সিরাজী, কচি রেজা, কমলেশ রায়, মামুনুর রহমান মামুন প্রমুখ ছিলেন প্রথম সারির। এঁদের সকলের সান্নিধ্যলাভ ও প্রেরণায় আমি কবির জীবন অবলম্বন করতে উদ্বুদ্ধ হই। আমার সমকালীন কবিদের মধ্যে ছিল ইয়াছিন কলেজের ছাত্র অনক আলী হোসেন শাহিদী ও সোবহান তালুকদার। অনক আলী হোসেন শাহিদী তখন প্রচুর লিখেছেন। এখন আর তার খবর পাই না। সোবহান তালুকদার পরে উপল তালুকদার নামে লিখছে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক। আরো লিখত জোবায়ের স্বপন। তার সঙ্গেও দেখা নেই দীর্ঘদিন।
উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। কিন্তু স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তখন সারা দেশ উত্তাল। কাঞ্চন-মোজাম্মেল-দীপালি প্রাণ দিয়েছেন। ট্রাকের চাপায় শহীদ হয়েছেন সেলিম-দেলোয়ার। এতদিনে আমার রাজনীতির দীক্ষা হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন মিছিল-সমাবেশ। লেখালেখির চেয়ে স্লোগানে কণ্ঠ মেলানোকেই শ্রেয় মনে করছি। ভেতরে অদৃশ্য তাড়নায় মাঝেমাঝে ছড়া লিখি। ‘খেলাঘর’ সংগঠন করি। খেলাঘরের সাহিত্যবাসরে যাই। ছড়া পড়ি, গল্প পড়ি। পঠিত লেখা নিয়ে আলোচনা করি। কবিতা লেখা আর হয়ে ওঠে না। গদ্যকবিতা আমার কলমে আসে না। অইসময় বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সাহিত্যসংস্কৃতিচর্চার সঙ্গেও যুক্ত থাকি। জগন্নাথ হলে দেয়ালপত্রিকা সম্পাদনা করি। স্বসম্পাদিত দেয়ালপত্রিকায় কবিতা লিখি। জগন্নাথ হলের মধ্যে কবি হিসেবে মোটামুটি পরিচিতি লাভ করি। কিন্তু জাতীয় পত্রিকায় তখনো কবিতা প্রকাশিত হয়নি। জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত না হলে কবি হওয়া যায় নাকি? আমাদের অনেক বন্ধু তখন লিটলম্যাগাজিন বের করে। দুএকটা লিটলম্যাগাজিনে আমার লেখাও প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু আমার লক্ষ হয়ে দাঁড়ায় জাতীয় পত্রিকা। দৈনিক বাংলার সাহিত্যসম্পাদক তখন কবি আহসান হাবীব। কবিতা নিয়ে দৈনিক বাংলায় উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু কবি আহসান হাবীবের দরোজায় গিয়েও ভেতরে ঢুকতে সাহস পাইনি। এরকম ৪/৫ দিন কবিতা নিয়ে গিয়েও ফিরে এসেছি। দূর থেকে দেখে এসেছি কবি আহসান হাবীবকে। তার পাশে বসা কবি নাসির আহমেদকে। ‘বিচিত্রা’র সম্পাদক ছিলেন কবি শামসুর রাহমান। অই ভবনে তখন আরো কবি কাজ করেন : ফজল শাহাবুদ্দীন, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, মাহমুদ শফিক প্রমুখ। কিন্তু কারো সাথেই কথা বলার সাহস পাইনি।
তারপরও মনে করি লেখালেখির বড় পুরস্কার হলো পাঠকের ভালবাসা। সেই ভালবাসা পাওয়ার জন্য আজীবন লিখে যেতে চাই। কেন লিখি, কী লিখি জানি না বলে লিখি।
দৈনিক ‘ইত্তেফাকে’ সাহিত্যপৃষ্ঠা দেখেন কবি আল মুজাহিদী। দৈনিক সংবাদের সাহিত্যসম্পাদক কবি মাহমুদ আল জামান। এঁদের কাছেও যেতে সাহস পাইনি। এর বাইরে তখন বড় পত্রিকা ছিল দৈনিক আজাদ, দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক দেশ আর দৈনিক খবর। মতিঝিলে বাংলার বাণীর অফিসের নিচে তখন একটা বাক্স রাখা ছিল। সেখানে রেখে এলাম একটা কবিতা। মাসখানেক পরে ওটি ছাপা হয়, ‘কেয়ার কাঁটায় সুখ’। কবিতাটি পরে আমার প্রথম কাব্য ‘কেতকীর প্রতি পক্ষপাত’ (১৯৯৬)-এ গ্রন্থিত হয়। এটিই আমার প্রথম প্রকাশিত গ্রহণযোগ্য কবিতা। ছাপার পরে যাই সাহিত্য-সম্পাদকের সঙ্গে পরিচিত হতে। আরে এ যে কবি সোহরাব হাসান! ততদিনে তাঁর ‘বাতিল রাজদণ্ড’ পড়া হয়ে গেছে। তাই আলাপ জমাতে অসুবিধা হয়নি। এরপর বাংলার বাণীতে আমার অনেক কবিতা ছাপা হয়। দৈনিক দেশ পত্রিকায় কবি হেলাল হাফিজের হাত ধরেও আমার অনেক কবিতা ছাপা হয়। তবে নিজেকে কবি ভাবার সুযোগ পাই দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ প্রকাশের পরে। ওই পত্রিকার সাহিত্যসম্পাদক কবি নাসির আহমেদের হাত ধরে আমার অনেক কবিতা প্রকাশ পায়। নবক্ষই দশকের শুরুতে কবি নাসির আহমেদই আমাকে কবি হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আন্তরিক ছিলেন। তার কাছে এই কারণে আমি ঋণ স্বীকার করি।
এরপরেও আমার লেখক-জীবন বিস্তৃত হয়েছে। গবেষণা করেছি প্রফেসর আবুল আহসান চৌধুরীর প্রেরণায়। প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে আমি প্রেরণা পেয়েছি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, শামসুজ্জামান খান, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, সুকুমার বিশ্বাস, মাহবুবুল হক, স্বরোচিষ সরকার, অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের কাছ থেকে। ছড়া লেখার ক্ষেত্রে যাঁদের পরোক্ষ প্রেরণা আমাকে শক্তি যুগিয়েছে, তাঁদের মেধ্য আখতার হুসেন, সুকুমার বড়ুয়া, খালেক বিন জয়েনউদ্দিন, লুৎফর রহমান রিটন, ফারুক নওয়াজ, সুজন বড়ুয়া, আমীরুল ইসলাম, আহমাদ মাযহার প্রমুখের নাম এখন মনে পড়ছে। কবিতা লেখার নেপথ্য প্রেরণা কবি শামসুর রাহমান, মহাদেব সাহা, আসাদ চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, মোহাম্মদ রফিক, মুহম্মদ নূরুল হুদা, অসীম সাহা, আবিদ আনোয়ার, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ প্রমুখ।
আমার ছোটদের জন্য প্রথম বই ‘শুভর শখের গোয়েন্দাগিরি’। পরের বছর ছড়ার বই বের হয়, ‘রুখে দাঁড়াই বর্গী তাড়াই’। তারপর প্রকাশকের অনুরোধে লিখি ‘ছোটদের শেক্সপিয়ার’, ‘ছোটদের মধুসূদন’, ‘ছোটদের ওসমানী’, ‘ছোটদের টিপু সুলতান’। তারপর ছড়ার বই ‘চরকাবুড়ি ওড়ায় ঘুড়ি’, ‘স্বপ্নেবোনা তূণীরসোনা’, ‘খাচ্ছে ছুটি লুটোপুটি’, ‘সমকালে তমকালে’, ‘সকালবেলা স্মৃতির বেলা’ বেরিয়েছে। ছোটদের জন্য লেখা বইগুলো আমার প্রিয়। আর তাই ছোটদের জন্য আমৃত্যু লিখে যেতে চাই।
নিজেকে কবিতা-জগতের একজন বিবেচনা করে তৃপ্তি পাই। যা কিছু লিখি না কেন, তাকে মনে হয় আমার কবিতাচিন্তারই সম্প্রসারণ। তাই কবিতা থেকে দূরে থাকা সম্ভবপর নয় কোনোমতেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে প্রবন্ধ লিখে পেয়েছিলাম ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার’। পরে ছড়া সাহিত্যের জন্য পাই ‘এম নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার’। এরপর উপন্যাস লিখে পাই জেমকন সাহিত্য পুরস্কার। প্রবন্ধের জন্য কলকাতা থেকে পাই মহাদিগন্ত সাহিত্য পুরস্কার। আমার গবেষণাগ্রন্থের জন্য পাই যশোর জেলা পরিষদের দেয়া সরকারি মধুসূদন পদক। যাত্রাগান নিয়ে গবেষণার জন্য অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিপদক লাভও আমার বড় অর্জন। কবিতার জন্য ফরিদপুর থেকে কবি বাবু ফরিদী সাহিত্য পুরস্কার আর কলকাতা থেকে নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার ও সাংস্কৃতিক খবর পদক পেয়ে ধন্য হয়েছি। গল্প লিখে মাদারীপুর থেকে পাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য পুরস্কার। এছাড়া অনুভব সমিতি পদক, জসীমউদ্দী গবেষণা পুরস্কার, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা প্রভৃতি স্বীকৃতি আমাকে আরো কাজ করার প্রেরণা যোগায়। তারপরও মনে করি লেখালেখির বড় পুরস্কার হলো পাঠকের ভালবাসা। সেই ভালবাসা পাওয়ার জন্য আজীবন লিখে যেতে চাই। কেন লিখি, কী লিখি জানি না বলে লিখি।