ইদানিং শুনছি, আমাদের দেশে গদ্যের নাকি অভাব যাচ্ছে। কবিবন্ধুরা বলছেন, দেশে ভালো গদ্যকারের অভাব। আমি খুঁজলাম। অভাব হবে কেন? প্রতিদিনই তো দেখছি, সবাই লিখছে। পত্রিকার সাহিত্যপাতায় কিংবা ছোটকাগজ প্রবন্ধে ঠাসা। এত দেখছি তারপরও বলে অভাব। কি জানি, অত বুঝে কাজ নেই। আসল কথা হচ্ছে গদ্য নেই—না কি মানসম্মত গদ্য নেই?
হতে পারে মানসম্মত গদ্য নেই। না থাকার কারণও নিশ্চয়ই আছে। আমি যে গদ্যগুলোয় চোখ বুলিয়েছি, তা দেখে তো আমার মনে হয়েছে—কে বলেছে উৎকৃষ্টমানের গদ্য নেই?আছে, আছে—সবই আছে। একটু চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। বুঝতে হবে, যে দেশের মানুষের দৈনন্দিন কথাবার্তায় লুকিয়ে আছে একেকটি বিশাল উপাখ্যান, চায়ের দোকানের আড্ডায় জমে ওঠে গুরুগম্ভীর আলোচনা, সে দেশেই গদ্যের অভাব হবে? কখনোই নয়।
গদ্য আছে। ভালো কিংবা মন্দ। যাই হোক, পাঠ করতে হবে। মন্দকে মন্দ বলতে হলেও তার সুযোগ্য প্রমাণ দিতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা, পড়তে হবে। লেখকের সাক্ষাৎ পেলে তাকে সুন্দরভাবে ভদ্রভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে হবে। সেই ভুলের ভেতর থেকেই এক সময় গড়ে উঠবে বিশুদ্ধ গদ্যভাণ্ডার।
বাংলা সাহিত্যে গদ্যের ইতিহাস বেশি পুরনো নয়। প্রাচীনকাল থেকে সাহিত্যকে শাসন করেছে পদ্য বা কবিতা। যার প্রধান বিষয়বস্তুই ছিলো ধর্ম। ধর্মাশ্রিত সাহিত্যচর্চার মাধ্যমেই বিকশিত হয়েছে কাব্যভাণ্ডার। সে ধারারও একটা পরিবর্তন আসে। সাহিত্যে মানবতাবাদ আসে, গদ্যের আবির্ভাব হয়। ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’ কথার মধ্যদিয়েই বাংলা সাহিত্যে মানবতার সুর ঝংকৃত হয়েছে। কাব্য নির্ভরতা ছেড়ে আস্তে আস্তে গদ্যের দিকে উদ্যোগী হয়েছে মানুষ।
যদিও প্রথম উদ্যোগটা কোনো বাঙালির ছিল না। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চার কাণ্ডারি উইলিয়াম কেরি প্রথম গদ্যচর্চার সূচনা করেন। তখন ১৮০১ সাল। বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার শুরু। মুদ্রণযন্ত্রের শুরু। সাহিত্যে আধুনিকতার প্রধান অবলম্বন গদ্য। উইলিয়াম কেরির গদ্যচর্চার মধ্যদিয়ে বাংলা সাহিত্যে গদ্য প্রবেশ করে। তারপর এঁকেবেঁকে এগিয়ে গেছে বহুদূর। জন্ম নিয়েছেন বিশিষ্ট গদ্যকারেরা। মূল্যবান প্রবন্ধ উপহার দিয়েছেন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রথম চৌধুরী, কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ সাহিত্যিক। যার উদ্ধৃতি এখনো মানুষের মুখে মুখে কিংবা নবীন লেখকের কোটেশনে।
তবে এখন বলতে চাচ্ছিলাম, একুশ শতকের প্রবন্ধের কথা। একুশ শতকে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রবন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং আমি বলব না যে, গদ্যের অভাব, এমনকী মানসম্মত গদ্যের অভাব।
গদ্য বলতে আমরা উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধকে বুঝিয়ে থাকি। তবে এখানে আমার আলোচনার বিষয় কেবল প্রবন্ধ। গদ্যসাহিত্যের অন্যতম বিষয়বস্তু প্রবন্ধ। গল্প বা উপন্যাস মনের আবেগ, অনুভূতি বা কল্পনার মিশেলে সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু প্রবন্ধ সৃষ্টিতে আপনার প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি, পর্যবেক্ষণ ও অভিমতের প্রয়োজন হবে। গদ্যসাহিত্যে প্রবন্ধই হচ্ছে জটিলতম কাজ। ফলে সহজেই কেউ এ জটিলতম কাজটি সম্পাদন করতে আসেন না। যারা আসেন, তারা আদা-জল খেয়েই নামেন।
মনে রাখতে হবে, গল্পকে কেন্দ্র করে প্রবন্ধ হতে পারে। কিন্তু প্রবন্ধকে কেন্দ্র করে গল্প খুব বেশি একটা হয় না। একটি কাব্যগ্রন্থকে কেন্দ্র করেও একটি প্রবন্ধ হতে পারে। আবার শুধু একটি কবিতা নিয়েও প্রবন্ধ লেখা যায়। ঠিক তেমনি শুধু একটি গল্প নিয়ে যেমন আলোচনা হতে পারে। আবার গল্পের বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে বিভিন্ন ভাবে আলোচনা হতে পারে। যেমন—গল্পের সামাজিক অবস্থা, গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র, নারী চরিত্রের ভূমিকা, নামকরণের সার্থকতা, লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি বিষয়ে আলাদা আলাদা প্রবন্ধ হতে পারে। যেহেতু এতো কিছুকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে আছে প্রবন্ধ ফলে প্রবন্ধকারকেও জানতে হয় অনেক। পড়তে হয় অনেক। বুঝতে হয় বেশি।
প্রবন্ধের বিচিত্র বিষয়ভঙ্গি রয়েছে। সমকালীন সাহিত্যের দর্পণ বলা যায় প্রবন্ধকে। প্রবন্ধ বা আলোচনা না হলে সাহিত্যের মান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া সম্ভব নয়। চিন্তাসূত্রে প্রকাশিত একুশ শতকের ক্ষুরধার প্রবন্ধে সমকালীন সাহিত্যের আদ্যোপান্ত তুলে এনেছেন প্রাবন্ধিক রঞ্জনা বিশ্বাস, অনু ইসলাম, কাজী মহম্মদ আশরাফ, কুমার দীপ, এমরান কবির, মোহাম্মদ নূরুল হক ও ইয়াসির আজিজ প্রমুখ।
তাদের আলোচনায় অভিনবত্ব রয়েছে। তারা গতানুগতিকতার বাইরেও ভিন্নমাত্রার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেছেন। তাদের দৃষ্টিতে কবিতায় রাষ্ট্রচিন্তা, বাংলাদেশের কাহার বা পালকি বাহক, সাহিত্যের স্বায়ত্তশাসন, কবিতার কাছে প্রশ্ন—আকাশে চাঁদ হেসে ওঠে কিনা, কবিতার ভাষায় অভিনব নিরক্ষরতা, কবিতার সময় ও মনীষার দান, বাংলাদেশের গদ্যচর্চা প্রভৃতি উঠে এসেছে।
কাজী মহম্মদ আশরাফ ‘সাহিত্যের স্বায়ত্তশাসন’ প্রবন্ধে শিল্প-সাহিত্যের অপমৃত্যু বা অকালমৃত্যুর প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি এ অপমৃত্যু রোধ করার আহ্বানও জানিয়েছেন। তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘আমরা প্রথমেই অভিযোগ করেছি সাহিত্যের অকালমৃত্যু কিংবা অপমৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করতে পারলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান করতে পারি না। ঠিক এ মুহূর্তে তা করছিও না। কারণ অভিযোগ পেশ করার আগে জেনে নেওয়া জরুরি সাহিত্যের অপমৃত্যু বা অকালমৃত্যুর অর্থ কী! আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি সাহিত্যের কখনো মৃত্যু হয় না। শুধু বস্তু ও শক্তির চরম পরিণতির মতো রূপান্তরিত ঘটে মাত্র। বিশ্বাস করি সাহিত্যের সাহিত্য সাহিত্য হয়ে ওঠার জন্য তার বস্তু- শিল্পবস্তু- হয়ে ওঠা প্রয়োজন। আর বস্তু হয়ে উঠলে তা আপনা থেকেই শক্তি হয়ে ওঠে।’
মোহম্মদ নূরুল হক তাঁর ‘কবিতার সময় ও মনীষার দান’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘কবিতার সময় কবিতা চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কবিতায় যে সময় চিত্রিত হয় সে সময়ের সঙ্গে কবির সম্পর্ক কেমন ওই সময়ের ধারণা কবি সত্তাকে কী পরিমাণ আলোড়িত করে তা সততার সঙ্গে চিত্রায়িত করার সঙ্গে সঙ্গে সমকালের রুচি এবং প্রধান অসুখ শনাক্ত করার দায় কবির ওপর বর্তায়।’ এ কথাটি এজন্য বলা যে, প্রাবন্ধিককে এভাবেই ব্যবচ্ছেদ করতে হয়। তিনি আরও বলেছেন, ‘প্রকৃত কবি শিল্পকলা এবং জ্ঞান-প্রপঞ্চের প্রত্যেক শাখারই সারবত্তা আত্মস্থ করে, তাকেই ভাবে-ভাষায় রূপান্তরিত করেন। সব সময় দিনানুদিনের ঘটনা প্রবাহ নয়; প্রায় অনিত্য ঘটনা এবং অনুভূতি ও উপলব্ধিই কবিতার বিষয় হয়ে ওঠে সঙ্গে কেবল কল্পনা নয়, অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেণলব্ধ মনীষা কবিতাকে প্রমূর্ত করে তোলে। এ কারণেই কালজ্ঞান এবং মনীষা কবির স্বাতন্ত্র্যের পথে গুরুত্বপূর্ণ।’
এমরান কবির তাঁর ‘কবিতার ভাষা: অভিনব নিরক্ষরতা’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘কবিতায় শব্দের এই একচ্ছত্রতার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। বরং কবি যদি তাঁর ভাব প্রকাশের জন্য প্রতীক বা রূপকের দ্বারস্ত হন তখনও শব্দই তার একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে। ভাব প্রকাশের জন্য তিনি যে বাক্য গঠন করবেন তারও একক তো ওই শব্দই। তাহলে বলা যায়, ভাব ও ভাষার প্রকাশের জন্য শব্দের এক বিশাল নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কিন্তু শব্দের উপর রয়েছে কবির আরেক বিশাল মহিমা। শব্দ যখন ওই মহিমাপ্রাপ্ত হয় তখনই তা অনন্য হয়ে ওঠে।’
‘বাংলাদেশের গদ্য চর্চা’ প্রবন্ধে ইয়াসির আজিজ বলতে চেয়েছেন, ‘গদ্যচর্চার ক্ষেত্রে বিষয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র—সাধারণত সাহিত্য অনেক কিছুই তার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গ্রহণ করে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, জীবনের অভিজ্ঞতা, ধর্মচর্চা, দর্শন, নারীবাদ, প্রেম, যুদ্ধ— এমন অনেক কিছুই অনায়াসে জায়গা পেতে পারে উপন্যাস, গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধে। প্রবন্ধ ও মুক্তগদ্যও সব কিছুকেই অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষপাতী। উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও নির্দিষ্ট গ্রন্থ, উপন্যাস, গল্প ও কবিতার মূল্যায়নধর্মী মুক্তগদ্য লেখা চলে। বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন, রচনার মান বা উৎকর্ষ-ই আসল।’
কুমার দীপ তাঁর ‘এখনো কি সেই আকাশে ওঠে গো চাঁদ হেসে’ প্রবন্ধের শুরুতেই হতাশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি বলতে চান, ‘কেউ বলেন কিছুই হচ্ছে না, কেউ বলেন বন্ধ্যা সময় অতিক্রম করে চলেছি আমরা। কেউ ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে নিশ্চিত করে না বলতে পারলেও কবিতা যে হচ্ছে না সে বিষয়ে স্থির নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। আশার সমাধিতে বসে কেউ আবার আগামি দিনের স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন দ্যাখেন। কিন্তু বাংলা কবিতার বহু বিস্তৃত ও বিশ্ববিশ্রুত বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে কেন এই দীর্ঘশ্বাস?’ লেখকের এমন প্রশ্নের উত্তর নিজেই খুঁজেছেন তাঁর আলোচনায়।
বাংলা সাহিত্যে আলোচিত উপন্যাসগুলোর একটি হলো- ‘হাসুলী বাকের উপকথা’। আর এই উপন্যাস নিয়ে রঞ্জনা বিশ্বাসের প্রবন্ধের নাম–হাসুলী বাঁকে’র কাহার ও বাংলাদেশের পালকি বাহক’। প্রান্তিক মানুষকে সাহিত্যের ভরকেন্দ্রে স্থাপন করে যিনি প্রথম উপন্যাস রচনায় সাহস দেখিয়েছেন তিনি তারাশঙ্কর। তারাশঙ্করের এই উপন্যাসটি নিয়ে আলোচনা করেছেন রঞ্জনা বিশ্বাস। এতক্ষণে এই সাত-আটটি প্রবন্ধের মধ্যে কেবল একটি প্রবন্ধ পেলাম যে, কেবল একটি উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমার মনে হয় সাহিত্যে আধুনিকতার শুরু থেকে একুশ শতক পর্যন্ত যত গল্প-উপন্যাস-কাব্য এসেছে তার প্রত্যেকটি নিয়ে স্বতন্ত্র আলোচনার দাবি রাখে। রঞ্জনা বিশ্বাস তাঁর প্রবন্ধে দেখিয়েছেন লেখক কীভাবে পরম যত্নে কাহার বা পালকিঅলার জীবন বিবৃত করেছেন এ উপন্যাসে।
অনু ইসলাম তাঁর ‘কবিতায় রাষ্ট্রচিন্তার উপাখ্যান’ প্রবন্ধে রাষ্ট্রচিন্তা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানব চেতনা, ঐতিহ্য চেতনা, ইতিহাস চেতনা, সমাজ চেতনা, সৌন্দর্য চেতনা ইত্যাদি বাদ দিয়ে যেমন সার্থক কবিতা রচনা করার কথা চিন্তা করা যায় না। তেমনি রাষ্ট্রচিন্তাও কবিতায় যে দম্ভের সাথে আশ্রয় নিয়ে তার স্থান দখল করে বসে আছে। রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের যে প্রকাশ তাই কবিতায় রাষ্ট্রীয় চেতনা। রাষ্ট্রীয় চেতনার দিকটি বিভিন্ন আলোচনার একটি যথার্থ সংলাপ। আমাদের এই রাষ্ট্রীয় চেতনার কবিতা ফুটে উঠেছিল বিভিন্ন সময়ের আন্দোলনগুলোর মাঝে।’ তিনি তাঁর ‘কবিতায় রাষ্ট্রচিন্তার উপাখ্যান’ প্রবন্ধে সেই সময়ের কবিতার পটভূমির উপাখ্যান নিয়ে আলোকপাত করার প্রয়াস পেয়েছেন। যা বিভাজিত চেতনার রূপরেখা ঘেটে সত্যের নির্যাসটুকু নিঙ্ড়ে বের করার মতো।
তবে অনেকের ক্ষেত্রেই দেখেছি, প্রবন্ধে মূল বিষয়ের বাইরে গিয়ে কবি বা লেখকের অতিমাত্রার প্রশংসা ও অপ্রাসঙ্গিক কথা তুলে ধরেন। কোনো বিষয়ে প্রবন্ধ লিখলে অবশ্যই বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দেয়া জরুরি। কেউ কেউ কাব্যগ্রন্থের আলোচনা করতে গিয়ে কবিতার চেয়ে কবির গুণগানে মুখর হয়ে ওঠেন। এটা কবির জন্য কখনোই ইতিবাচক দিক নয়। লেখার মূল্যায়ন হোক চোখ বুজে, শুধু লেখা পড়ে। কাব্যগ্রন্থের কবিতা আসলেও কবিতা হয়ে উঠেছে কিনা? সে বিষয়ে আলোচনা জরুরি। ছন্দ অলঙ্কার উপমা অনুপ্রাস উৎপ্রেক্ষা- সব মিলিয়ে কবিতার প্যাটার্ন গড়ে উঠলো কিনা সেটাই বিবেচ্য হওয়া উচিত।
অন্যদিকে, যদি গল্পের কথা বলি, গল্পের শ্রেণিবিভাগ বুঝে স্থান কাল পাত্রের সামঞ্জস্য নিয়ে অনেকেই আলোচনা করেন না। গল্পের পেছনেও গল্প থাকতে পারে। গল্পের নির্মাণে দুর্বলতা কোথায়, কেমন হলে আরও সুন্দর হতে পারতো—কত কিছু নিয়েই তো আলোচনা করা যায়। একুশ শতকে এসে যেন লেখককে খুশি করাই আলোচকের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি সবার কথা বলছি না। ব্যতিক্রম তো অবশ্যই আছে। যারা আলোচনার জন্যই আলোচনা করেন তারাই টিকে থাকবেন। ব্যতিক্রম লেখাগুলোই যুগ যুগ টিকে থাকবে। ব্যক্তির স্তুতিমূলক লেখা খুব বেশি অগ্রগামী তো নয়ই একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও সাহসী নয়।
গল্পের পরে যদি প্রবন্ধের কথায় আসা যায়, আমরা আসলে পড়ি কম; লিখতে চাই বেশি। প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক লেখাই গুগল সার্চে খুঁজে পাওয়া যায়। এটা ওটা থেকে অনুচ্ছেদ উক্তি চরণ ধার করে দেড় হাজার শব্দের প্রবন্ধ তৈরি করা যায়। লেখা যায় না। তৈরি বললাম এ কারণে যে, ওটা এক ধরনের নির্মাণ। এর-ওর দোকান থেকে উপকরণ এনে দাঁড় করানো। লেখা বিষয়টি ভিন্ন অর্থ বহন করে। লিখতে হলে পড়তে হবে। একথা সবাই বলেন।
তবে আশার বাণী হচ্ছে, একুশ শতকের প্রবন্ধ আরও শক্তিশালী হবে। আরও আরও প্রাবন্ধিকের লেখনিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে একুশ শতকের গদ্যভাণ্ডার। তাই স্তুতি নয় মৌলিকতাই হোক প্রধান অনুষঙ্গ।