স্টেশন
গ্রামের কোনো স্টেশনে দাঁড়িয়ে
মনটা উধাও কোথায় গেলো হারিয়ে
পাতার ভেতর আকাশ গিয়ে মিলছে
দূরের সবুজ ট্রেনের লাইন গিলছে।
ওই যে দূরের বন বনানী পেরিয়ে
আসবে বুঝি রেলগাড়িটা বেরিয়ে
গল্প বলে রেলের লোহা লক্কর
ছোট্ট বেলার স্মৃতিরা দেয় চক্কর।
ট্রেন আসবে গাল দু`টো ঠিক ফুলিয়ে
ঝকর মকর ছন্দে মাথা দুলিয়ে
অপেক্ষাটা কেমন যেন বন্য
দাঁড়িয়ে আছি রেলগাড়িটার জন্য।
দুষ্টু-মিষ্টি রেলগাড়িটা আসলে
আগের মতোই হো হো করে হাসলে
বাজবে জোরে স্টেশনের ঘণ্টা
হবে আরও ফুরফুরে এই মনটা।
গ্রামের কোনো স্টেশনে দাঁড়িয়ে
শৈশবকে খুব ডাকি হাত বাড়িয়ে।
ডাকবাক্স
ডাকবাক্সতে চিঠি ফেলতাম
মনে মনে কতে ডানা মেলতাম
উড়ে যেতো কথা বন্ধুর কাছে
এমন মধুর কত স্মৃতি আছে।
হলুদ খামের বুকে পুরে কথা
ভেঙে ফেলতাম কত নীরবতা
কী দারুণ ছিল সেই সব দিন
উত্তর এলো মনটা রঙিন।
অপেক্ষারাও কী মধুর ছিল
ইমেইল ম্যাসেজ সব কেড়ে নিলো
আজকাল সবই মুহূর্ততেই
এই কথা আছে এই কথা নেই।
ডাকবাক্সরা রাস্তার মোড়ে
বৃষ্টিতে ভেজে রৌদ্দুরে পোড়ে
আর কেউ পাশে দাঁড়ায় না তার
একটাও চিঠি জমে না তো আর।
ডাকবাক্সর মনটা খারাপ
তার মনজুড়ে ব্যথার প্রলাপ
নাহ আজও তারে খুব মনে পড়ে
রেখেছি তো তাকে মনের এই ঘরে।
স্মৃতি করে তাকে ধরে রাখলাম
ডাকবাক্সটা বুকে আঁকলাম
ধুলো মেখে লাল বাক্সটা নত
তবু কথা যায় কথা আসে কত।
শব্দ কুড়াই
শব্দ কুড়াই শব্দ উড়াই
শব্দ বাঁধি ছন্দ দিয়ে,
শব্দ হাসে শব্দ আসে
মিষ্টি ফুলের গন্ধ নিয়ে।
ভালোবাসা কাঁদা-হাসা
শব্দকে এই বুকে পুরে,
কবির নামে শব্দ থামে
হোক সে যতই ভবঘুরে।
শব্দরা চায় জড়িয়ে মায়ায়
ঢুকবে কোনো কবির খাতায়,
শব্দ সুখে হাসি মুখে
থাকবে কোনো বইয়ের পাতায়।
শব্দ উড়ে যাবে দূরে
ভাসবে শুধুই আলোর ডানায়,
দুঃখ ফেলে হেসে খেলে
থাকলে তাকে দারুণ মানায়।
পাথর পাথর দুঃখে কাতর
শব্দরা খুব অভিমানী,
নীরবে সে উঠবে ভেসে
ঝরিয়ে যাবে চোখের পানি।
শব্দ কুড়াই শব্দ উড়াই
শব্দ বাঁধি ছন্দ দিয়ে,
শব্দ নিয়ে ঘেরা জীবন
ভালো এবং মন্দ দিয়ে।
রাজার জীবন
যেই ভেবেছি তুমিটা কই
অমনি তুমি এলে,
তোমার রঙিন ছবি আঁকার
রঙতুলিটা ফেলে।
যে ভেবেছি ডাকবো তোমায়
আগেই নিলে ডেকে,
ক্যামনে বোঝো অবাকই হই
ভাবনা মনে এঁকে।
হয় না দেখা তবু যেন
কত্ত কাছেই থাকো,
পাখির মতো মনটাকে খুব
যত্ন করে রাখো!
কখনো নীল কখনো মেঘ
ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ি,
আহা রাজার জীবন, পেলাম
মিঠে ছড়ার বুড়ি।
এই বিভাগের আরও লেখা পড়ুন: কাকতাড়ুয়া ॥ জহিরুল ইসলাম