শীতের সকাল। সূর্য এই মাত্র উঠি উঠি করছে। ঘাসের ওপর শিশির বিন্দু চিকচিক করছে। এত শীত গাছের পাতাও যেন জমে আছে। পুকুরের জল থেকে ধোঁয়া উঠছে। থুত্থুরে এক বুড়ি কুঁজো হয়ে খুব পাতলা একপ্রস্থ কাপড় গায়ে কাঁপছে আর হাঁটছে।
ইনারা আধো ঘুম আধো জাগরণে। তার মর্নিং স্কুল। মা খুব ডাকাডাকি করছেন। মাত্র তিন বছরের ইনারা তাকে সবার সঙ্গে ভোরেই বিছানা ছাড়তে হয়। তার বাবা কোলে নিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে দিয়ে বললেন, মা এবার ওঠো, স্কুলে যেতে হবে। স্কুলের কথায় তার মন খারাপ হয়। কারণ মা-বাবা ছেড়ে তাকে দীর্ঘ সময় থাকতে হয়। আবার স্কুলে গেলে মন ভালো হয়ে যায়। স্কুলের টিচারেরা তাকে খুব ভালোবাসে। গল্প শোনায়। সেখানে খেলার জন্য দোলনা, ভারসাম্য, নাগরদোলা এমনি অনেক রাইড আছে। সবার সঙ্গে সে দারুণ মানিয়ে খেলাধূলায় মেতে ওঠে। কিন্তু আজ তার ইচ্ছা নেই স্কুলে যাওয়ার। সে বাবার কোল থেকে লাফিয়ে দাদুর কোলে আসে। দাদুর গলা জড়িয়ে ধরে। বাবা বুঝতে পারে আজ সে স্কুলে যাবে না। দাদুও তাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যায়। মাঝে-মাঝে স্কুলে না গেলে কিছুই হবে না। তারা আজ সূর্যোদয় দেখবে।
মাঘের শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। দাদু তাকে উলের জামা পরিয়ে দেয়। পায়ে মোজা-জুতা লাগিয়ে বলেন, চলো সূর্যোদয় দেখবো। বাড়ির দরজায় মস্ত এক পুকুর। পুকুরের পূব দিক থেকে বড় থালার মতো গোল হয়ে লাল রঙের সূর্য উঁকি দিচ্ছে। ইনারা পিটপিট চোখে তাকায়। তার ঘুমজড়ানো চোখে বিস্ময়। কী সুন্দর! দাদুর কোল থেকে নেমে হাঁটতে চায়। দাদু তাকে কোলে রাখতে চায়। শিশিরে তার জুতা ভিজে যেতে পারে। তাতে ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। কিন্তু বুদ্ধিমতি দাদুর কোলে থাকবেই না। সে শিশির ধরতে যায়। কিন্তু হাত দিতেই ঝরে যায়।
সত্যি কুঁজো বুড়ি গরম চাদর পেয়ে খুশিতে নাচতে লাগলো। ইনারও খুশিতে দাদুর গলা জড়িয়ে ধরলো। তোমরাও দুঃখী মানুষকে গরম কাপড় দিতে পারো।
তার খুব রাগ হয়। মন খারাপ করে। এবার দাদুসহ শিশির ধরার চেষ্টা করে। দাদু বলেন, ঘাসের ডগায় যখন থাকে তখনই এর নাম শিশির, হাতে নিলে জল হয়ে যায়। ইনারা ইশারায় কুঁজো বুড়িকে দেখায়। গুটি-গুটি পায়ে বুড়ির দিকে এগিয়ে যায়। বুড়ির গায়ে জামা নেই। কাঁপছে। ইনারার দাদু বুড়ির খোঁজ খবর নেয়। ইনারা একবার দাদুর দিকে তাকায় একবার বুড়ির দিকে তাকায়। দাদু বুড়িকে বললেন, চলো বাড়ির ভেতরে চলো।
ইনারা দাদুর হাত ধরে নাচতে নাচতে এগিয়ে চলে, পাছে পাছে বুড়ি হাঁটে। দাদু বুড়িকে একটি গরম চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন, বললেন, বসো চা খাও।
দাদু চা করলেন। ইনারা দাদুর সঙ্গে বুড়িকে এটা ওটা এগিয়ে দিলো। আজ খাবার টেবিলে তার কান্নাকাটি নেই। দাদু, কুঁজো বুড়ি আর ইনারা একসঙ্গে চা খেলো, বিস্কুট খেলো। কুঁজো বুড়ি চলে যেতে চাইলে ইনারা ভীষণ মন খারাপ করে। দাদু বড়িকে অনুরোধ করলো আজ এখানেই থেকে যাও। আমাদের সঙ্গে ভাত মাছ খেয়ে তবেই যেও। বুড়ি রাজি হলো। ইনারা আনন্দে হাতহালি দিলো।
এখন সে তার দাদুর সাথে পড়ার টেবিলে, দাদু তাকে ছড়া শোনাচ্ছে,
ভোরের আলোয় সূর্য হাসে।
শিশির হাসে ঘাসে।
চড়ুই পাখি কিচির মিচির
কুঁজো বুড়ি নাচে।
সত্যি কুঁজো বুড়ি গরম চাদর পেয়ে খুশিতে নাচতে লাগলো। ইনারও খুশিতে দাদুর গলা জড়িয়ে ধরলো। তোমরাও দুঃখী মানুষকে গরম কাপড় দিতে পারো।