বাঙালি সমাজে নারীর বিরুদ্ধে বহু কথা প্রচলিত আছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পুতুল নাচের ইতিকথায় কুসুম চরিত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন, ‘মেয়ে মানুষ এরকম হয়, ওরকম হয়, সবরকম হয়, শুধু মনের মতো হয় না।’ আমাদের সমাজের অধিকাংশ গালি নারীকেন্দ্রিক। যেমন পুরুষ রাগলে হয় বাদশাহ, নারী রাগলে হয় বেশ্যা। নারীদের ঈশ্বরও বোঝেন না। এমন অনেক অপবাদ সমাজে এখন প্রতিষ্ঠিত। যেগুলো আপাতদৃষ্টিতে সত্য বলে প্রতীয়মান কিন্তু আদতে তা নয়। যে নারী ছাড়া পুরুষের এক মুহূর্তও চলে না সেই নারীকে ঘিরে রচিত হয়েছে অসংখ্য অপবাদ, কুৎসা। নারীকে ক্ষুদ্র করে পুরুষ পেতে চায় শ্রেষ্ঠত্বের মহান দরজা।
মানুষ এখন অনেক বেশি আধুনিক, শিক্ষিত; এরপরও কেন দিনকে দিন বাড়ছে নারী-পুরুষের মধ্যকার দূরত্ব? কেন তারা বুঝে উঠতে পারছে না একে-অন্যকে। শুধু সঠিক শিক্ষার অভাবে সমস্যাটা যে বাড়ছে, তা নয়; আমাদের সাংস্কৃতিক বিমুখতাও এজন্য দায়ী।
নারী-পুরুষের মধ্যে একটা বিশাল ব্যবধান আছে। এটা প্রকৃতিপ্রদত্ত। মাসিক চক্রের শুরুর দিকে নারী দেহে অ্যাস্ট্রোজেন, ওভুলেশনের সময় প্রজেস্টেরন কাজ করে। এ দুটি প্রধান হরমোন ছাড়া আরও অনেক হরমোন আছে। এসব হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের মানসিক অবস্থা ঘনঘন পরিবর্তিত হয়। কোনো কারণে যদি একবার হরমোন ভারসাম্যহীন হয়, তবে তো জটিলতার অন্ত নেই। এসব সমস্যাকে মোকাবিলা করার জন্য নিজের শরীর ও মনকে জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ‘নো দাইসেলফ’ নামে বিখ্যাত একটা গ্রিক দর্শন আছে, যার অর্থ নিজেকে জানা। এই পুঁজিবাদী যুগে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিজেকে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে বেঁচে থাকার অর্থ একটাই। সুস্থভাবে চিন্তা করা। একমাত্র নিজেকে জানলে যেকোনো সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা যায়।
শুধু পুরুষরা নারীকে বোঝে না, বিষয়টা এমন নয়। নারী নিজেও নিজেকে বোঝে না। এমনকি জানে না, হরমোনের সাতকাহনও। তাই ‘মুড সুইং’ কিংবা অসুস্থতার সময় মানসিক পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো ক্ষমতা বেশিরভাগের জানা নেই। অথচ মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মানসিক যন্ত্রণা, অসুখ-বিসুখ থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা যায়।
প্রতিটি মানুষের জন্য নিজেকে জানা ও মন নিয়ন্ত্রণ করা হলো প্রথম দায়িত্ব। এই কাজ না করে আমরা যতই একে-অন্যকে বুঝতে চাই না কেন, তাতে সম্পর্কগুলোকে মনে হবে দূরের নক্ষত্র।
আমি তথাকথিত প্রগতিশীল ব্যক্তিদের কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো পড়েছি। নিজেকে নিয়ে মগ্ন ছিলাম। তাতে মন নিয়ন্ত্রণের মতো জটিল বিষয় নিয়ে এখন ভাবতে পারছি।
এবার আসি পুরুষের প্রসঙ্গে—পুরুষের তুলনায় নারী-শরীর অনেক বেশি সংবেদনশীল। এ সম্পর্কে বাঙালি পুরুষ জানে একেবারে কম, বোঝে তারচেয়ে অনেক বেশি। পুরুষতান্ত্রিকতা সবসময় চেয়েছে নারীকে দাবিয়ে রাখতে। তাই শাসকের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে অবলোকন করেছে নারীর প্রকৃতিকে। অথচ একটা সম্পর্ককে বুঝতে হলে সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে কাছাকাছি যেতে হয়। প্রবেশ করতে হয় অন্দরবাড়িতে। নারীকেও বুঝতে হলে হরমোন, হরমোনের সঙ্গে মুডের ওঠানামা ও পুঁজিবাদের ফলে নারীদেহে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে, তা জানতে হবে।
‘দ্য ফেমেইল ব্রেইন’ বইয়ে, Louann Brizendine বলেছেন, নারীর অনুভূতির কম্পার্টমেন্ট পুরুষের তুলনায় বড়। এ কারণে নারীরা অনেক কিছু ভাবে। অনেক খুঁটিনাটির হিসাব থাকে তাদের কাছে। এদিকে পুরুষ বন্দি হয়ে আছে খেলাধুলা, রাজনীতি, যুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে। নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈপরীত্যের কিছুটা জন্মগত, কিছুটা এসেছে সাংস্কৃতিক জীবনযাপন থেকে। সাংস্কৃতিক দোষ যা একজন মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে একসময় হয়ে যায় সহজাত; সেগুলোও নিয়ন্ত্রণ করা যায় মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। বিখ্যাত বায়োলজিস্ট ব্রুস লিপটন এমন কথাই বলেছেন তার ‘বায়োলজি অব বিলিফ’ বইয়ে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, সঠিক চিন্তা করার জন্য সুস্থ থাকাটা যেমন জরুরি, তেমন সঠিক শিক্ষা-দীক্ষা অনস্বীকার্য। অথচ আধুনিকতার নামে বাঙালি তার নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য থেকে সরে এসেছে অনেকখানি। এখন শহরে মানুষের কায়িক পরিশ্রম হয় না বললেই চলে।
সম্প্রতি এক রিপোর্টে ডব্লিউএইচও বলেছে, বিশ্বের প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ কোনো ধরনের কায়িক পরিশ্রমের সঙ্গে জড়িত নয়। আবার ফাস্ট ফুড, প্রসেসড ফুডের ওপর বাড়ছে নির্ভরশীলতা। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অসুখ-বিসুখ। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ত্রিশ শতাংশের কাছাকাছি থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো ঔপনিবেশিকতার দায় থেকে মুক্ত নয়। এ ব্যবস্থা যেন মানুষকে করে তুলছে আরও বেশি বৃত্তবন্দি। মানুষ না পারছে নিজস্ব সংস্কৃতির কাছে ফিরে যেতে, না পারছে মুক্ত হতে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুন করে সাজানো প্রয়োজন, যেন মানুষের চিন্তা-ভাবনার জায়গাটা পোক্ত হয়। যেন পুঁজিবাদ এসে সমাজটাকে খণ্ড-বিখণ্ড না করতে পারে। সমাজ যদি জ্ঞানভিত্তিক না হয় তবে অরাজকতা সৃষ্টি হবেই। বাড়বে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান। মানুষে মানুষে সৃষ্টি হবে দূরত্ব। এই যে নারী-পুরুষের মধ্যে পুরুষতন্ত্র এসে জায়গা দখল করে নিয়েছে এর কারণও শিক্ষাব্যবস্থা। একসঙ্গে সুন্দরভাবে বাঁচতে গেলে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান খুব প্রয়োজন।
একে-অন্যের ওপর কর্তৃত্ব করতে গেলে পুরুষতন্ত্র কিংবা নারীবাদ এসে জায়গা দখল করে নেবে। তাতে বাড়বে দূরত্ব। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে প্রশ্ন জাগে বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব নিয়ে। একটা দেশের রাজনীতিবিদরা স্বার্থান্বেষী হতে পারেন। সেক্ষেত্রে দায় এসে পড়ে বুদ্ধিজীবীদের উপর। সাধারণ মানুষের ওপর। কিন্তু প্রলেতারিয়েত শ্রেণি থেকে বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে একেবারে কম। সেক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের মতো বুদ্ধিজীবীরাও যদি বুদ্ধি বিক্রিতে মেতে ওঠেন তবে যেকোনো দেশকে গ্রাস করবে পুঁজিবাদী চক্র। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা মানুষ তৈরির কারখানা নয়। সেখানে মানুষ তৈরিও হয় না। সেখানে তৈরি হয় দাস শ্রেণি। আর দাস শ্রেণি দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকবে, একে-অন্যকে দোষারূপ করবে; এটাই স্বাভাবিক।
বর্তমানে যারা সাহিত্যচর্চা করছেন, যাদের পুঁজিবাদ, সাংস্কৃতিক বিমুখতা নিয়ে বলার কথা তারা গ্রুপিজমে ব্যস্ত। এরা বৃত্তের বাইরে যায় না। সাধারণের কথা ভাবার শক্তিও তাদের নেই। তাদের পড়াশোনাও বড্ড সেকেলে। যদিও কয়েক বছর ধরে পরিবর্তনের হাওয়া ঘূর্ণি তুলছে। অনেকে বিদেশি সাহিত্যের দিকে ঝুঁকছেন। অনুবাদ হচ্ছে। এর অর্থ যদি নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে বাতিল করা হয় তবে সেটা হবে বোকার স্বর্গ। মানুষকে নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ভেতর দিয়ে পথ চলতে হয়। তবেই সম্ভব আত্মিক মুক্তি। তবেই মানুষে মানুষে কমবে দূরত্ব। নারী-পুরুষের মধ্যে তৈরি হবে ভালোবাসার বন্ধন।
০২.
অনেকে সাহিত্য বলতে একটা বৃত্তের মধ্যে অন্তরীণ হয়ে আছেন। তারা বেছে বেছে কবিতা, উপন্যাস পড়েন। তাদের কাছে প্রশ্ন, শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমারেখা টেনে দেওয়াটা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত হবে? বুদ্ধিমত্তা প্রকাশের এমন উদার ক্ষেত্রে একজন মানুষ যদি নিজেকে মুক্তভাবে প্রকাশ করতে না পারেন, তবে আধুনিকতার অর্থ মলিন হয়ে যায়। স্বীকার করছি, মেডিক্যাল সায়েন্স সহজ বিষয় নয়। তবে বইগুলো সাধারণ মানুষের উপযোগী করেই লেখা হয়। প্রথমদিকে অনুধাবন করতে একটু সমস্যা হলেও হিমালয়তুল্য কষ্ট হওয়ার কথা নয়। মনে রাখতে হবে সাধনার পথ সবসময়ই কঠিন। আধুনিকায়নের ফলে যেভাবে রোগশোক বাড়ছে তাতে মেডিক্যাল সায়েন্সকে যত দূরে ঠেলে দেওয়া হবে, তত অসুস্থতা চেপে ধরবে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্ষেত্রে বেছে বেছে পড়শোনা করা যেমন ক্ষতিকর সাহিত্যের ক্ষেত্রেও কথাটা একইভাবে প্রযোজ্য। আমি তথাকথিত প্রগতিশীল ব্যক্তিদের কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো পড়েছি। নিজেকে নিয়ে মগ্ন ছিলাম। তাতে মন নিয়ন্ত্রণের মতো জটিল বিষয় নিয়ে এখন ভাবতে পারছি। মনে রাখতে হবে, একজন নিয়ন্ত্রিত মানুষকে পুঁজিবাদ কখনো দখল করতে পারে না।
০৩.
ছোটবেলা থেকে সবার মতো আমার মনেও গেঁথে দেওয়া হয়েছিল সংসারের বীজ। সেই স্বপ্নে বুঁদ হয়ে গড়পড়তা লেখাপড়া করেছি। যতটুকু পড়েছি সবটুকু ছিল মুখস্থ বিদ্যা। তাই বোধের জায়গা তৈরি হয়নি।
নিজেদের সুবিধার্থে আমরা যৌথপরিবার প্রথা ভেঙে দিয়েছি। তাতে আমাদের মধ্যে জেঁকে বসেছে হতাশা, বিষণ্নতা। আমারও শহুরে। একক পরিবার আমাদের। একমাত্র ছেলে সেই ষোলো সালে কলকাতায় চলে যাওয়ার পর থেকে সারাদিন কাটতো একাকী। আমার নিজস্ব কোনো জগৎ ছিল না। টুকটাক লেখালেখি করছিলাম ঠিকই কিন্তু নিজেকে মগ্ন রাখার মতো তেমন ব্যস্ততা ছিল না। একাকিত্ব দূর করতে একজন মানুষ হন্যে হয়ে খুঁজছিলাম। কিন্তু পুঁজিবাদী যুগে মানুষ পাব কোথায়!
সেখানে নারীর মতো জটিল বিষয়কে অনুভব না করে, কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যে মোহিত হলে নারীর প্রতি আচরণটা কখনোই নিরপেক্ষ হবে না, এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে অপবাদ আরোপ করা খুব সহজ। আর সে কারণেই বাড়ছে নারী-পুরুষের মধ্যকার দূরত্ব।
আমি আমার নিজেকে নিয়ে আগ্রহ বোধ করেছি ছত্রিশ বসন্ত অতিক্রম করার পর। পড়তে শুরু করেছি অনেকটা বাধ্য হয়ে। আগে সংসারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছি। গড়ে উঠেছিল অভিযোগের পাহাড়। হরমোন ইমব্যালেন্স হওয়ার পর নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছি, কেন এমন হলো। কোথায় গেলে পাওয়া যাবে সুস্থতা নামক সোনার হরিণ। এসব ভাবতে ভাবতে আরও বেশি অ্যাংজাইটি, স্টেস। একটা জটিল বৃত্তে দীর্ঘ বছর বন্দি ছিলাম।
আঠারো সাল থেকে অ্যাংজাইটি, স্ট্রেসের বিভিন্ন লক্ষণ আমার মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। অসংখ্য ট্রমার মধ্যে দিয়ে কেটেছে এক একটি প্রহর। সাইকিয়াটিস্ট দেখিয়েছি। ডাক্তার, ওষুধ পরিবর্তন করেও কোনো উপকার হয়নি। উপরন্তু জটিলতা বাড়ছিল। একবার ঢাকায় গিয়ে মেডিসিন এবং ডায়াবেটিক ডক্টর এস এস রেজাউল ইসলামকে দেখিয়েছিলাম। তার সাথে অনেক বিষয় নিয়ে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে জানলাম, মানুষের দুঃখ কষ্ট জমা থাকে অবচেতন মনে। যেহেতু অবচেতন মন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলাম তাই অ্যাংজাইটির বৃত্ত থেকে বের হতে পারছিলাম না।
সেই প্রথম আমি সাবকনসাস মাইন্ডের সাথে পরিচিত হই। মেডিক্যাল সাইন্স একটা জটিল বিষয়। তার ওপর নিউরোলজি হলে তো কথা নেই। তাই বারবার থেমে যেতে হয়েছে। কনসাস-সাবকনসাস মাইন্ড নিয়ে দিনকে দিন আগ্রহ বাড়ছিল। মন ও যুক্তি বলছিল, এ পথে হাঁটলেই নিজেকে জানতে পারব। নিয়ন্ত্রণ করতে পারব মানসিক অবসাদ। বহুবার সিমপ্যাথেটিক, প্যারাসিমপ্যাথেটিক-এর গোলক ধাঁধায় আটকে পড়েছি। তবু থেমে থাকিনি। অর্গানিক খাবারের দিকে ঝুঁকেছি। ব্যায়াম করতে হয়েছে প্রতিদিন। সচেতন হয়েছি ভিটামিন ডি সম্পর্কে। কিন্তু তারপরেও সমস্যা পুনঃপুন আমাকে বিপর্যস্ত করছিল। একটা জটিল বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম বারবার। একবার নার্ভাসনেস নৈরাজ্যবাদী আচরণ করছিল। কোনোমতে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না করতে আরেক সমস্যা। শরীরে কী যেন হাঁটছিল। এক প্রকার সেনসেশন। মাঝেমধ্যে ক্লাস্টোফোবিয়া অ্যাটাক করতো। মাথার মধ্যে কুয়াশাচ্ছন্ন ভাব। একটু স্থির হয়ে যে ভাবব কিংবা লিখব সেই ক্ষমতাটুকু লোপ পেয়েছিল। সেই ভয়াবহ দুর্যোগে কারো সমর্থন পাইনি। তারপরেও সারাক্ষণ নিজেকে সাহস দিয়েছি। ভেবেছি ইতিবাচক ভাবনা।
প্রথম বছর নার্ভাসনেস, ক্লাস্টোফোবিয়া রাজত্ব করেছে। দ্বিতীয় বছর একটু কমছিল কি বাড়ছিল। কেন কমছিল কেনই বা বাড়ছিল তা ছিল বোধের বাইরে। সে বছর খেয়াল করলাম, মানুষজনের মধ্যে থাকলে মানসিক সমস্যাগুলো আক্রান্ত করে না। যখন একা একা থাকি তখনই সমস্যাগুলো হায়েনার মতো কামড়ে ধরে।
নিজেকে জানার জন্য, বোঝার জন্য একবার ডিএনএ’র ভেতর প্রবেশ করেছি। পড়েছি পুঁজিবাদ, দর্শন বাদ দিলে সবকিছু কেমন যেন ফিকে হয়ে যায়। তাই বস্তুবাদী দর্শনের সঙ্গে যোগ করেছি জীবনমুখী দর্শন। সেদিন নিউরোজেনেসিস পড়ার পর মনে একটা নতুন ধারণা তৈরি হলো। নতুনবোধ। সেই পথ চলতে চলতে জানলাম, মানুষের মধ্যে অপার শক্তি আছে। আসলে মানুষ হলো স্রষ্টার ক্ষুদ্রকণার বিচ্ছুরণ। মানুষ চাইলেই বাড়াতে পারে স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা। এখন প্রায় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাথ্যায়ের কণ্ঠে বলতে ইচ্ছে হয়, ‘জীবন এত ছোট কেনে!’ কোনো বিষয়কে উপভোগ করতে হলে চর্চা করতে হয়। যাকে বলে সাধনা। সেখানে নারীর মতো জটিল বিষয়কে অনুভব না করে, কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যে মোহিত হলে নারীর প্রতি আচরণটা কখনোই নিরপেক্ষ হবে না, এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে অপবাদ আরোপ করা খুব সহজ। আর সে কারণেই বাড়ছে নারী-পুরুষের মধ্যকার দূরত্ব।