মূলত আমি বেঁচেছিলাম আমার সময়েই। একটি ছবিই আমার সবচেয়ে বেশি ঈর্ষার কারণ। এই ছবিটি আমার। সেটি থাকবে। আমি থাকব না! ছবি থেকে গেছে—শহীদ কাদরী, শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, রফিক আজাদ—এরা আমার খুব কাছের মানুষ ছিলেন। তারা আজ কোথায়! নেই কেন! কেন নেই!
অনেক কথা মনে এলে কিছুই প্রকাশ করা যায় না। শুধুই ভাবনা বাড়ে। বেদনা বাড়ে। হাহাকার উড়ে যায় হাওয়ার সমান্তরাল। হাডসন নদীর তীর দিয়ে হেঁটে যাই। এর আগে হেঁটেছি টেমস নদীর পাড় দিয়েও। সুনসান নীরবতা-মনের ভেতর। কোথাও কেউ নেই! অথচ শত শত মানুষ হাঁটছে নদীর তীর ঘেঁষে। হাঁটি। হাঁটতে থাকি। আমি পেছনে একটি নদী ফেলে এসেছি। সেই নদীর নাম সুরমা। ভারত থেকে ‘বরাক’ নাম নিয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। সেই সুরমা নদীর তীরে আমি বেড়ে উঠেছি। কেটেছে আমার শৈশব। কৈশোর। যৌবনের একটি অংশ। সেই নদীটির ছায়া দেখি আমি হাডসন নদীর বুকে।
মনে পড়ে, নদীর কোনো দেশ নেই। এক ভূখণ্ড থেকে অন্য ভূখণ্ডে প্রবেশ করেও নিজ নাম নিয়েই থাকতে পারে। অথবা মানুষ বদলে দেয় নদীটির নাম। কিন্তু স্রোত একই থাকে। ঢেউ একই থাকে। একই থাকে উজান-ভাটির খেলা। আর মানুষ দেশান্তরি হলে পাল্টে নেয় নিজেকে। তাকে পাল্টে নিতেই হয়। না নিয়ে উপায় থাকে না। নাগরিক সভ্যতা আর ব্যস্ততার চাহনি মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে বেশ ছোট করে দেয়। যে মানুষের বনের মতো উদার হওয়ার কথা ছিল, সে ক্রমশ হয়ে যায় বনসাই।
একজন প্রকৃত মানুষ তার জন্মমাটির কাছেই হার মানে সবচেয়ে বেশি। মনে পড়ে, আমেরিকান কবি ডাব্লিউ এস মারউইনের তিন মিনিটের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। বলেছিলাম, আপনি কবি না হলে কী হতেন? চটপট জবাব, কৃষক হতাম। কেন? জানতে চাই। কবি বলেন, কবিও চাষাবাদ করেন, কৃষকও চাষাবাদ করেন। বিমোহিত হই। আমি কি কৃষক হতে পারতাম? মা’র কথা মনে পড়ে। মা, আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকতেন। কিভাবে খাব-বাঁচব আমি এই দুনিয়ায়! বিষয়টি নিয়ে আমি কখনো যে ভাবিনি, তা নয়। ভেবেছি। তবে মায়ের মতো নয়। মা বরাবরই চেয়েছেন আমি যেন বেঁচেবর্তে মানুষের মতো দাঁড়াতে পারি। আমি কি তা পেরেছি?
এই অভিবাসে, একা হয়ে গেলেই খুব বেশি মা’কে মনে পড়ে। জানি তিনি জায়নামাজে বসে তসবিহ’র দানায় হাত বোলাচ্ছেন। আর তাকাচ্ছেন আকাশের দিকে। আচ্ছা, মানুষ আকাশের দিকে তাকায় কেন? আকাশ থেকে মানুষ কী আহরণ করে? বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ ভাবি। যে পরবাসে থাকি, এখানে আমার ঠিকানা, বিত্ত, বৈভব, প্রতিপত্তি সবই গড়ে উঠেছে সাধ্যানুসারে। তারপরও কি যেন নেই। কিছু যেন নেই। কেন নেই? তবে কি নাড়ি বিযুক্ত মানুষ চিরদিনই করে তার জন্মশেকড়ের সন্ধান! মাঝে মাঝে আমি স্বপ্ন দেখি। স্বপ্নও আমাকে দেখে। আমরা একে অন্যের স্বজন হয়ে যাই। তারপর জিজ্ঞাস করি, একে অন্যের কুশল। কুশল জানতে চাওয়া মানুষের স্বভাব।
ফোন এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। স্কাইপ, স্মার্টফোন কত কিছু। চাইলেই কাউকে দেখা যায় দূর-দূরান্তে। মা আমার সঙ্গে বেশি কথা বলতে পারেন না। শুধু জানতে চান, ভালো আছিস তো! নাতনিরা কেমন আছে! বউ! এর বেশি আর বলা হয় না তাঁর। বেশি বলা তার স্বভাবও নয়। ‘তুই কবে দেশে আসবি’—সে প্রশ্নও করা হয় না তাঁর। কারণ তিনি জানেন, আমার দায়িত্ব অনেক। দায় অনেক। ‘যখন সময় পাবি আসিস বাপু’—এটা তো তিনি বলেই রেখেছেন।
মনে পড়ে যখন দূরালাপ এত সহজলভ্য ছিল না, তখন তিনি চিঠি লিখতেন আমাকে। অপেক্ষা করতেন চিঠির। সে এমন একদিন ছিল—যখন মাতৃচিঠির অপেক্ষায় আমারও কাটতো না প্রহর। প্রথম যখন বিদেশে এলাম, ওই সময়ের মা’র লেখা একটি চিঠি আমি বার বার পড়ি। ভাবি, আমি এখনো তাঁর কাছে খুব ‘ছোট্ট’-ই রয়ে গেছি। কারণ আমি চিরদিনই তো তাঁর বাপু! তাঁর লেখা সেই চিঠি পড়তে পড়তে এখনো আমার পাঁজর ভেঙে আসে। কণ্ঠে জমা হয়ে পড়ে পৃথিবীর সক শব্দ। ‘বাপু, তোর শৈশবকালে তোকে খাইয়ে যে আমের বীজটি আমি পুঁতেছিলাম, সেই বৃক্ষটি এখন অনেক বড় হয়েছে। এবারই প্রথম এলো আমের বোল। আমও ধরেছে বেশ। না—আমি সে আমগুলো খাব না। খেতে পারব না, বাপু। ভেবেছি, আমের আচার করে রেখে দেব তোর জন্য। সুযোগ পেলে পাঠিয়ে দেব কারও হাতে। তুই তো দেখিসনি, তোর রোপণ করা জবা গাছগুলোতে লাল টুকটুকে ফুল ফুটেছে অনেকগুলো। আমি প্রতিদিন ভোরে ফুলগুলোকে স্পর্শ করি। অনুভব করি তোর হাত। তুই যে হাত দিয়ে গাছগুলো লাগিয়েছিলি, তার ছায়া এখনো পড়ে আছে উত্তর বারান্দায়। তুই ভালো আছিস তো? রান্না করে খেতে পারছিস তো? খুব ভালো থাকিস বাপু আমার।
মা।
না, মা আমার পরবাসী জীবন চাননি। তিনিও আসতে চাননি পরবাসে। তারপরও নিয়তি হায়! অভিবাসী মাল্যদান করেছে আমার গলায়। সর্বশেষ যখন তাঁকে দেখতে স্বদেশে গেলাম, তখনো তাঁর সেই শঙ্কা—বউ বাচ্চা নিয়ে দেশে চলতে পারবি তো! তোর কাছে টাকা-কড়ি আছে তো!
একদিন আমাকে আর বউকে কাছে ডেকে আমাদের দু’হাত ভরে তুলে দিলেন বেশ কিছু টাকা। আমার তো চোখ ছানাবড়া! এত টাকা-তুমি পেলে কোথায়? তিনি হাসেন। বলেন, জমিয়েছি। পাল্টা প্রশ্ন, কেন আমার বুঝি জমানো থাকবে না! আমি হেসে উঠি। হাসে বউও। টাকাগুলো তোমরা নিয়ে নাও। আমি বলি, আমার কাছে তো চলার মতো টাকাকড়ি আছে। তাঁর জোরাজোরির সঙ্গে কি আমি পেরেছি কখনো? কিছু টাকা নিয়ে নেই। কিছু টাকা নেয় তাঁর বউও। মহাখুশি তিনি। তোরা হোটেলে গিয়ে খিছু খেয়ে নিস। এখনো তাঁর ভাষায় ‘ভাতের হোটেল’, যেখানে বিরিয়ানি পাওয়া যায়।
আমি হাডসনের তীর ঘেঁষে হেঁটে যাই। আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিয়ে ছোট ছোট ডিঙ্গিগুলো আমার খুব কাছ দিয়ে চলে যায়। নিয়ন বাতির আলো জানান দেয় সন্ধ্যা নামছে। এখন এখানে সন্ধ্যা। পৃথিবীর অন্য মেরুতে এখন ভোর হচ্ছে।
মা ঘুম থেকে জাগছেন। তারপর প্রাত্যহিক রুটিন মাফিক বসছেন প্রার্থনায়। দুহাত তুলে বলছেন, হে প্রভু, আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে।
দুই.
আমি সেই প্রার্থনা সঙ্গে নিয়ে আজও চলি। আমার এগিয়ে যাওয়ার সময়ের কথা আমাকে হাসায়। আমাকে কাঁদায়। লালকুঠিতে নিয়মিত আড্ডা দেই। সিলেটের লালকুঠি সিনেমা হলের নামডাক ছিল বেশ। তৃষ্ণা রেস্টুরেন্ট। সেখানে বিদিত লাল দাসের নেতৃত্বে বসে আমাদের আড্ডা।
গীতিকার সিদ্দিকুর রহমান, গীতিকার গিয়াস উদ্দিন আহমদ, গীতিকার সৈয়দ মুফাজ্জিল আলী প্রমুখ আমার অনেক সিনিয়র। আমি সদ্য কলেজপাস যুবক। বাউল গান আমার মননে। গান নিয়ে কথা হয়। ভাবনা বিনিময় হয়।
১৯৮৫ সালের এক বিকেল। আমরা আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় আমাদের মাঝে এসে হাজির হন তরুণ বাউল ফিরোজ মিয়া। কথা চলতে থাকে। প্রায় সবারই টার্গেট আমি। তারা আমাকে বাজিয়ে দেখতে চান। আমি কথার উত্তর দিতে থাকি।
গিয়াস ভাই ছিলেন খুব রসিক মানুষ। হা হা করে হাসতেন। আমাকে বলেন, রাখো ফকির, তোমার বাউল গান। সাংবাদিকতা করো।
আমি বলি, কিন্তু আমি তো গান লিখতে চাই, গিয়াস ভাই!
কথায় যুক্ত হন বাউল ফিরোজ মিয়া। বলেন, আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই।
আমি বলি, বলুন।
তিনি বলেন, আচ্ছা আপনি তো বন্ধু বন্ধু বলে গান লিখছেন। যদি আপনার বন্ধু আপনার সামনে একদিন চলে আসেন, তাহলে আপনি তাকে কি উপহার দেবেন?
কথাটি আমাকে ভাবায়। বলি, এর উত্তর আজ দেব না।
সিদ্দিক ভাই বলেন, তাকে সময় দাও, ফিরোজ। ইলিয়াস ভেবে বলুক।
মাথা নাড়েন সৈয়দ মুফাজ্জিল আলী।
আমি বলি আগামী আড্ডায় জবাব দেব।
পরের সপ্তাহে আবার আমাদের আড্ডা জমে। এর মাঝেই আমি এই গানটি লিখে ফেলি। হাতে লেখা কাগজ থেকে গানটি পড়ে শোনাই।
ফিরোজ মিয়া চমকিত দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। গিয়াস ভাই বলে ওঠেন, তোমার হবে ফকির ইলিয়াস!
আমি মাথা নিচু করি। বলি, আমার মাথাটিতে হাত বুলিয়ে দিন প্রিয় অগ্রজ।
বিদিত দা’ আমার মাথায় হাত রাখেন। আশীর্বাদ করেন। সবাই একসঙ্গে বলে ওঠেন, তুমি লেখা চালিয়ে যাও ইলিয়াস।
ফিরোজ মিয়া বলেন, কোনো সুর আছে আপনার সুপ্ত মনে!
আমি গুন-গুনিয়ে গেয়ে উঠি। গিয়াস ভাই আবার বলেন, বাহ!
এই গানটিতে প্রথম কণ্ঠ দেন অকাল প্রয়াত বাউল ফিরোজ শাহ।
গানটি দিচ্ছি এখানে, প্রিয় পাঠক। গানটি আমার ‘হৃদে গাঁথা মালা’ ( ১৯৮৯ )- বইয়ে স্থান পেয়েছে।
তোরা শোন গো সখিগন, বন্ধু আসিবে এখন
কোলাহল করিস না আমি বলি,
সাবধানে ফেলিও পায়ের তালি।সারিবদ্ধ হয়ে সবাই দাঁড়িয়ে থাকিস
নীরব নিস্তব্ধ হয়ে বন্ধুরে দেখিস
তার রূপের ঝলকে, তোরা নাচিস পুলকে
বাসরে প্রদীপ দিও জ্বালি।।ফুলবাসরে প্রাণবন্ধু করবে আরোহণ
চতুর্পাশ্বে সখি তোরা দাঁড়াবে তখন
ধূপ লোবান আগর, লাল চন্দন আতর
আনন্দে তার অঙ্গে দিও ঢালি।।তারপরে আমাকে তোরা সাজিয়ে দিও
হীরা আর স্বর্ণের অলংকার আমায় পরাইও
দিও শুভ্র বসন, হাতে মুক্তারই কাংকন
আমার বুকে দিও প্রেমের ডালি।।প্রাণবন্ধুকে দেবো আমি প্রেম উপহার
সবকিছু বিলিয়ে দেবো চরণে তাহার
মিশবো তার সাথে, আর দেবো না যেতে
ইলিয়াস যাবে ভবের মায়া ভুলি।।
গানের ভেতরে চলতে চলতে মনে হয়, আসলে কিছুই পারিনি। পারলে হয়তো কিছুটা তৃপ্ত হতে পারতাম।
তিন.
আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় সিলেটের প্রাচীনতম ‘সাপ্তাহিক যুগভেরী’-র ‘শাপলার মেলা’য়। এটি ছিল একটি চতুর্দশপদী কবিতা। কবিতার নাম ছিল— ‘বাসিয়া পারের গান’। প্রকাশ সাল ছিল ১৯৭৫। কবিতার প্রথম লাইনগুলো ছিল:
জালালী কৈতর হয়ে উড়ে যেতে যায় এই প্রাণ
কে তুমি দক্ষিণ পারে বসে একা বাজাও সে বাঁশি
আরেকবার দেখে যেও—এই জল কত ভালোবাসি
কে তুমি নবীন মাঝি, গাও সুরে বাসিয়ার গান।’
আমি তখন মগ্ন হয়ে তিন কবির ভেতর ডুবে আছি। জীবনানন্দ,আল মাহমুদ ও দিলওয়ার। চৌদ্দ লাইনের কবিতাগুলো পড়তে পড়তে প্রায় ‘হাফিজ’ বনে গেছি। কেন কবিতা আমাকে ঘিরে ধরেছিল? কেন? এসব নিয়ে কথা বলি শহীদ কাদরীর সঙ্গে।
কবিকে দেশ ছেড়ে যেতে নেই, বলেছিলেন কবি শহীদ কাদরী। দেশ ছেড়ে এলে কী হয়? ‘আর নিজের কোনো অস্তিত্ব থাকে না’— বলছিলেন তিনি। তাহলে কি আপনারও নেই? প্রশ্ন করেছিলাম তাঁকে। সহাস্যে বলেছিলেন, আমারও নেই।
কিন্তু আপনি তো কবিতায় আপনার আশ্রয় খুঁজেছিলেন। হ্যাঁ- খুঁজেছিলাম। পেয়েছি কি না, জানি না। মানুষ এমন একটি প্রাণী, সে জীবনে বহুবার, বহুরকম আশ্রয় খোঁজে।
আমি কবি’র কথায় সম্মোহিত হই। কথাগুলো আমার বুকে বাজে। কানে লাগে। আমি ভাবতে থাকি, সেই কৈশোরকালের কথা। কী দুর্বার গতি নিয়ে আমি সামনে এগোতে চেয়েছিলাম। ভাবতাম, আমাকে ঠেকায় কে! আমি যাত্রী হতে চেয়েছি ঝড়ের বিপরীতে। আমি যাত্রা করেছি বসন্তকে আখ্যান করে। একটি ফাল্গুনকে বলেছি, তুমি দাঁড়াও। একটি চৈত্রকে বলেছি,তুমি আবার এসো।
মানুষ তার সময়কে ধরে রাখতে পারে না। জানি, জীবনে লেখা সব চিঠি সমাপ্ত হয় না। সব চিঠির উত্তরও আসে না। তবু মানুষ চিঠি লেখে। মানুষ নিজের লেখা অক্ষরগুলোকেই ভালোবাসে অনেক বেশি। তার নিজের হাতের লেখা যত খারাপই হোক। জীবনের ৫৫ বছর আর লেখালেখির ৪০ বছর পেরিয়ে এসে আমার এখনো মনে হয়, আমার স্বপ্ন আছে, আশ্রয় নেই। কেন এমন মনে হয় ?
কবি হুমায়ুন আজাদ ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে নিউইয়র্কে মুক্তধারা আয়োজিত বইমেলা উদ্বোধন করতে আসেন। তাঁকে নিয়ে দীর্ঘ আড্ডা দেই। জানতে চেয়েছিলাম, আপনি কি স্বপ্ন দেখেন?
কবি বলেন, না, আমার কোনো স্বপ্ন নেই!
কেন নেই?
তিনি বলেন, একজন দ্রোহী মানুষের স্বপ্ন থাকে না। তার যা থাকে, তা হলো কর্মযজ্ঞ। স্বপ্নবাজরা ঘরকুনো হয়।
আপনি স্বপ্ন না দেখলে কাজ করবেন কিভাবে? আমি প্রশ্ন করি।
তিনি জবাব দেন, কাজ করতে পরিকল্পনা লাগে। অধ্যবসায় লাগে। আর স্বপ্ন দেখে আলসে মানুষেরা!
আমি প্রসঙ্গ পাল্টাই। কারণ আমি তাঁকে মননে-মনীষায় চিনতাম।
হুমায়ুন আজাদকে ওরা খুন করতে চেয়েছিল। কেন চেয়েছিল? কারণ এই বাংলাদেশ যে সমাজ পালন করে, হুমায়ুন আজাদ ছিলেন তার চেয়ে অনেক অগ্রসর।
আমি একজন অগ্রসর মানুষ হিসেবে দাঁড়াতে চেয়েছি মাত্র। এর বেশি কিছুই চাওয়া ছিল না আমার। থাকলে আরও অন্যভাবে জীবন যাপন করতে পারতাম। হ্যাঁ। লেখক জীবন একটি পুরো জীবনই গ্রাস করে নেয়। অবশিষ্ট কিছুই রাখে না। তাই আমাদের চারিধারে শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, হুমায়ুন আজাদরা যখন দাঁড়ান, তখন তাঁদের হাতে কোনো সম্বলই থাকে না।