১৯৯৬ সাল। ইরাকে তখন চলছে মার্কিন অবরোধ। জাতীয় টেলিভিশনে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইটকে জিজ্ঞেস করা হলো: অবরোধের কারণে ইরাকে যে ৫ লাখ শিশু মারা গেলো, এ নিয়ে আপনার অভিমত কী? অলব্রাইট বলেছিলেন, ‘এটা খুব কঠিন একটা সিদ্ধান্ত। তবে যে লক্ষ্য পূরণে এই কাজ করা হচ্ছে, তার মূল্য হিসেবে এটা ঠিকই আছে’। এ থেকে আমাদের কারও বুঝতে বাকি থাকে না, মানুষের মুক্তি, সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ, গণতন্ত্র কিংবা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মতো মার্কিন প্রত্যয়গুলোর মানে কী!
সম্প্রতি আবারও কথিত মার্কিন সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের বলি হয়েছে ৬ শিশুসহ ১০ বেসামরিক আফগান। রোববার (২৯ আগস্ট) কাবুলে আইএসের আত্মঘাতী এক হামলাকারীকে লক্ষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় এক পরিবারের অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ইসলামিক স্টেটের এক আত্মঘাতী হামলাকারী বিমানবন্দরে হামলার চেষ্টা করায় তাকে টার্গেট করে ড্রোন ছোড়া হয় বলে দাবি করেছে পেন্টাগন। তবে ভুল নিশানায় ড্রোনের আঘাতে শিশুসহ ১০ জনের প্রাণহানির ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। ভাগ্যিস এবার তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেননি, যে আফগানিস্তানে তারা আধুনিকতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এভাবে মানুষ মারাটা ঠিকই আছে! অন্তত তদন্তের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটা কড়া বিবৃতি দিয়েছে বটে। তবে বলা হয়নি, এভাবে মানুষ মারাটা যুদ্ধাপরাধ। বলা হয়নি, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধ করছে।
গোপাল এবং উইসিংয়ের মতে, ২০০৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কার্যকরভাবে তালেবানকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) যখন এই নিবন্ধ লিখছি; ততক্ষণে তল্পি-তল্পা গুটিয়ে সব শেষ মার্কিন সেনাও আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিয়েছে। অবসান হয়েছে ২০ বছরের আগ্রাসনের। তবে সমঝোতার মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দিয়ে যাওয়া হলো সেই তালেবানের হাতে, যারা আফগানিস্তানকে প্রস্তর যুগে ফেরত পাঠাতে চায়। মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়োর পর আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়ে তালেবান বিজয়োল্লাস করেছে। তবে হেরে গেছে মানুষ। হেরে গেছে সাধারণ আফগানরা। যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়েছে তারা। কিভাবে? একটু পেছনে ফেরা যাক। ফেরা যাক আশির দশকে।
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের কালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ আর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই মিলে আফগান প্রতিরোধ সংগ্রামকে জেহাদে রূপান্তর করার পথ রচনা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত মুসলিম দেশগুলোকে কমিউনিজমের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। ২০০১ সালে সুবিখ্যাত ভারতীয় লেখক ও অধিকারকর্মী অরুন্ধতী রায় ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় লিখেছিলেন ইনফিনিটি জাস্টিস-এর বীজগণিত। অরুন্ধতী লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানকে সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য একটি ভিয়েতনামে পরিণত করা। তবে শেষ পর্যন্ত এটি হয়ে উঠলো তার থেকেও বেশি কিছু।
১০ বছরে আমেরিকার এই ছদ্মবেশী যুদ্ধে ৪০টি মুসলমান দেশ থেকে ১ লাখ চরমপন্থী মুজাহিদিনকে অর্থ আর প্রশিক্ষণ দিয়েছে সিআইএ। আর এ-কাজটি তারা করেছে আইএসআই-এর মাধমে। মুজাদিহিন নেতা আর সৈন্যরা জানত না যে তাদের এই জেহাদ তারা আসলে লড়ছে আংকেল স্যামের পক্ষে। ভাগ্যের পরিহাস এটাই যে, আমেরিকাও একইভাবে টের পায়নি, তারা অদেরই বিরদ্ধে এক ভবিষাতের যুদ্ধে শত্রপক্ষকে পরিপুষ্ট করে তুলছে। ১০ বছরের টানা লড়াই শেষে ১৯৮৯ সালে রুশরা তল গুটিয়ে চল যায়। পেছনে রেখে যায় ধুলোয় মিশে যাওয়া এক সভ্যতা।
পরবর্তী ইতিহাস সবার জানা। শুরু হয় গৃহযুদ্ধের কাল। চেচনিয়া, কসোভো আর কাশ্মিরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে জেহাদের আগুন। সিআইএ’র সামরিক সরঞ্জাম আর তহবিল বরাদ্দ অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে জেহাদীদের সংখ্যা বেড়ে যায়। দরকার হয় আরও টাকার। মুজাহিদিনিরা তখন জেহাদের কর হিসেবে কৃষকদের আফিম চাষে বাধ্য করে। আইএসআই বানিয়ে দেয় হাজার হাজার হেরোইন ল্যাব। আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত হয়ে ওঠে দুনিয়ার সবথেকে বড় হেরোইন উৎপাদনকারী অঞ্চল। মাদক বিক্রির বিপুল অর্থের একটা বড় অংশ মুজাহিদিনদের প্রশিক্ষণে ব্যয় হতো। ১৯৯৫ সালে তালেবান আইএসআই-এর সহায়তায় গৃহযুদ্ধের ভেতর দিয়ে আফগানিস্তানের বড় অংশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে; বলা বাহুল্য পরোক্ষা মার্কিন মদদে।
৯/১১-এ টুইন টাওয়ার হামলার পর আল কায়েদার শীর্ষ নেতা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার কথিত অপরাধে আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদবিরোধী অনন্ত যুদ্ধের কাল শুরু হয়; সেই লাদেন কিন্তু সিআইএ আর আইএসআই কর্তৃক প্রশিক্ষণ পাওয়া মুজাহিদিনদের একজন! অর্থাৎ আমেরিকার বানানো প্রডাক্ট। যে তালেবানকে উৎখাত করার কথা বলে আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু হলো, সেই তালেবানের সঙ্গেই ‘শান্তিচুক্তি’ করে আজ আফগানিস্তান ছেড়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই চুক্তিতে কী ছিল? আফগান নারীদের নিরাপত্তা প্রশ্ন, সামগ্রিক আফগানদের সুরক্ষার প্রশ্ন একেবারেই ছিল না চুক্তিতে। ছিল দুই পক্ষের লাভ-লোকসানের প্রশ্ন। এখন তালেবানের জন্য উর্বর ভূমি রেখে আফগানিস্তান ছেড়ে গেছে মার্কিনিরা। ২০০১ সালে মার্কিন আগ্রাসন শুরুর সেই সময়ে ৮০ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন ছিল। ২০ বছর পর যখন তারা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে, তখন মানবিক সহায়তা প্রয়োজন এর প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষের (১ কোটি ৪০ লাখ)। কেবল অর্থনৈতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতারণারও বলি হয়েছে আফগানরা। কিভাবে, সেটাই নিচে আলাপ করা হবে|
সামরিক প্রতারণা
আফগান ন্যাশনাল আর্মিকে শুরু থেকেই নিয়মতান্ত্রিকভাবে কম অনুদান দেওয়া হয়েছিল। তালেবান তাদের নিচের স্তরের কর্মীদের যে বেতন দিতো, আফগান পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সৈনিকেরা তার চেয়ে অনেক কম বেতন পেতো। এমনকি সামান্য যে বেতন তারা পেতো, সেটাও সময়মতো পরিশোধ করা হতো না। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগের কয়েক মাস সৈন্য ও পুলিশ সদস্যরা কয়েক মাস বিনা বেতনে ছিল। তালেবান তাদের কাতারের কার্যালয় থেকে এই পুলিশ ও সৈন্যদের নিজেদের দলে টেনেছে এবং তাদের অর্থ দিয়েছে।
২০১২ সালে ‘ফান্ডিং দ্য এনিমি : হাউ দ্য ইউএস ট্যাক্সপেয়ার্স ব্যাংকরোল দ্য তালেবান’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন ডগলাস উইসিং। ২০১৪ সালে আনন্দ গোপাল লিখেছেন, ‘নো গুড মেন অ্যামং দ্য লিভিং: আমেরিকা, দ্য তালেবান অ্যান্ড দ্য ওয়ার থ্রো আফগান আইজ’। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান দখলের পর লেখা এই দুই বই থেকে জানা যায়, তালেবানের বেশিরভাগ উচ্চ পদস্থ ও অন্য সদস্য আফগান সমাজে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত ছিল। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট তালেবান নেতাদের এবং সৈন্যদের হয়রানি, কারাদণ্ড আর হত্যা অব্যাহত রাখে। এ কারণেই আত্মরক্ষার্থে তারা আবার অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হয়। গোপাল এবং উইসিংয়ের মতে, ২০০৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কার্যকরভাবে তালেবানকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল।
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবানের সঙ্গে রাশিয়া-চীন-ইরান ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সম্পর্ক যেন ফরিদ জাকারিয়ার মতামতেরই প্রতিফলন!
বিকল্প ধারার সংবাদমাধ্যম ‘ট্রুথ আউট’-এ ড. জায়েদ নবি লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো যেভাবে আফগানিস্তানের উন্নয়ন সহায়তা ব্যবস্থার কাঠামো গঠন করেছে; তা যুদ্ধবাজদের বিপুল দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়। অন্যদিকে পরিবহন ও অবকাঠামো নির্মাণে তালেবান সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে, যা পরোক্ষভাবে তাদের আর্থিকভাবে লাভবান করে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ও তালেবান প্রসারে ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আফগান দখলের পর থেকে বিশে^র ৯০ শতাংশ আফিম সরবরাহ হয়েছে আফগানিস্তান থেকে; যা থেকে তালেবান তাদের তহবিলের প্রায় ৫০-৬০০ শতাংশ পেয়েছে। এদিকে গ্রামগুলোতে তো যুক্তরাষ্ট্র আসার পর অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোনো ছাপ লাগেনি। ইতোমধ্যে কয়েক দশকের যুদ্ধের কারণে উচ্চ বেকারত্ব এবং অনুন্নতার ভয়াবহ নজির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে। এর সঙ্গে ছিল গ্রামে গ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের বোমাবর্ষণ আর রাত্রিকালীন অভিযান। যা গ্রামীণ আফগান জনগোষ্ঠীকে মূলধারা আরও বিচ্ছিন্ন করেছে।
অর্থনৈতিক প্রতারণা
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনীর আগ্রাসনে জড়িত ছিল বিশে^র ৪০টি উন্নত দেশ। আফগানিস্তানে তারা নাকি পশ্চিম ইউরোপে মার্শাল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেয়ে বেশি ব্যয় করেছে। তবে সেই বিনিয়োগ কোথায় হয়েছে? জায়েদ নবী বলেছেন, বলতে গেলে সবটাই সামরিক আর অবকাঠামো খাতে। আফগানিস্তানের জনসংখ্যার অধিকাংশই গত ২০ বছর ধরে গ্রামাঞ্চলে বসবাস করছে, তালেবান তাদের বেশিরভাগ সদস্যই সংগ্রহ করেছে সেই গ্রাম থেকে। অথচ সেই গ্রামের দিকে কোনো মনোযোগ দেওয়া হয়নি।
যদি আন্তরিকভাবে বিনিয়োগ করা হতো, তা হলে এই অর্থ সামাজিক পরিষেবা এবং আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি কৃষি খাতের জন্য কেন্দ্রীয় রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতা তৈরির দিকে মন দিত। কিন্তু তা হয়নি। এর পরিবর্তে কৃষি খাতকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছিল। যে কারণে জাতীয় বেকারত্বের হার কমপক্ষে ৪০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। অথচ দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ জনসংখ্যার বয়স ২৫ বছরের কম। যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের নিজস্ব কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। অথচ আফগানিস্তানের গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি কিংবা দেশটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য আফগান কৃষকদের যথেষ্ট ভর্তুকি তারা দেয়নি।
জায়েদ নবির মতে, আফগানিস্তানে জাতীয় সক্ষমতার বিকাশ ঘটতে দেওয়া হয়নি। সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দিয়ে অবকাঠামো ও উন্নয়ন খাতের বেশিরভাগ কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়েছিল মার্কিনিদের। এতে মার্কিন করপোরেশনগুলো লাভবান হয়েছিল। আফগানিস্তানের ভাগ্যে তেমন কোনো বদল ঘটেনি। মার্কিন ব্যয়ের মাত্র ২ শতাংশ বা তার চেয়ে কম আসলে ‘মৌলিক অবকাঠামো বা দারিদ্র্য বিমোচন পরিষেবা আকারে আফগান জনগণের কাছে পৌঁছেছে’।
এটা কারও অজানা নয় যে, আমেরিকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য ১৯৮০-এর দশকে মুজাহাদীদের সহায়তায় বিলিয়ন বিলিয়ন খরচ করার পর ১৯৯২-২০০১ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধ ও তালেবান শাসন আফগানিস্তানে জীবনযাত্রার মান হ্রাস করেছিল। ২০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তান ছেড়ে যাচ্ছে, তখনও এখানকার দারিদ্র্যের হার ৫৫ শতাংশ।
রাজনৈতিক প্রতারণা
প্রথম থেকেই মার্কিন-ন্যাটো জোট আফগানিস্তানের গণতন্ত্রের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করেছে। আফগান প্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করে হামিদ কারজাইয়ের পুতুল সরকারকে তারা নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কারজাই ছিলেন একজন প্রাক্তন পশতুন মুজাহিদিন এবং তালেবান প্রতিনিধি যার সামান্য অভিজ্ঞতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা ছিল। তাকে আপাতদৃষ্টিতে নির্বাচিত করা হয়েছিল কারণ তিনি মার্কিন-ন্যাটো সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।
প্রশাসনিকভাবেও একই কাজ করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, যোগ্যতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগের পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো ইচ্ছাকৃতভাবে নব্য উদারবাদের পক্ষের, আইভি লিগ টেকনোক্র্যাট এবং যুদ্ধবাজদের নিয়ে একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, যা শেষ পর্যন্ত এনজিও এবং বিদেশিদের পরিচালিত দুর্নীতির উপদ্রবে পরিণত হয়েছিল।
একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা জালাল খান আল-জাজিরায় লেখা নিবন্ধে বলছেন, যখন আমি কাবুলকে তালেবানের কাছে পতিত হতে দেখছিলাম, তখন আমার প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের একটি মন্তব্য মনে পড়ছিল। তা হলো, ‘আমেরিকার শত্রু হওয়া বিপজ্জনক হতে পারে কিন্তু আমেরিকার বন্ধু হওয়া আরও ভয়ঙ্কর।’
সাম্রাজ্য যুগের অবসান?
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তিধর দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে দুই ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, ২০০১ সালে আক্রমণের পর থেকে প্রায় ৭ লাখ ৫৫ হাজার সামরিক কর্মী মোতায়েন করেছে এবং দুই দশক ধরে প্রশিক্ষিত, সজ্জিত এবং জাতি গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। যখন তারা দেশটি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তার আফগান মিত্ররা এক সপ্তাহের মধ্যেই আত্মসমর্পণ করে। আফগানিস্তান কি আমেরিকান শতাব্দীর সমাপ্তি ঘোষিত হলো, নাকি এটি একটি অস্থায়ী বিদায়? জালাল খান আল-জাজিরায় লিখেছেন, সম্ভবত আমেরিকান শতাব্দীর অবসান বলার মতো সময় এখনও আসেনি। তবে গত দুটি দশক বৈশি^ক ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।এদিকে ভারতীয়-আমেরিকান রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার ফরিদ জাকারিয়া তার ২০০৮-এর বই দ্য পোস্ট-আমেরিকান ওয়ার্ল্ড-এ বলেছিলেন, ‘আমেরিকা-পরবর্তী বিশে^র বাস্তবতা হলো নতুন শক্তিগুলো তাদের স্বার্থের বিষয়টিকে আরও জোরালোভাবে সামনে নিয়ে আসছে।’ আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবানের সঙ্গে রাশিয়া-চীন-ইরান ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সম্পর্ক যেন ফরিদ জাকারিয়ার মতামতেরই প্রতিফলন!
আরও পড়ুন:
১। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির সন্ধানে ॥ অসীম সেন
২। ডিজিটাল যুগে রূপান্তরিত সংবাদবাস্তবতা ॥ বাধন অধিকারী