গালি একটা অস্ত্র। এই অস্ত্রের আঘাত শরীরে লাগে না, লাগে মগজে অর্থাৎ মন ও মননে। রাইফেলের ট্রিগার টিপলে যেমন গুলি বের হয়ে যায়, তেমনি আক্রোশ-ক্রোধের বিস্ফোরণ ঘটলেও মুখ দিয়ে গালি বের হয়। গালি আর কিছু নয়, যাকে আমরা অশ্লীল শব্দ বলি, সেটাই গালি। গালির অধিকাংশ শব্দই কাপড়ের নিচের আরামদায়ক শব্দ। কিছু কিছু শব্দ যৌনতানির্ভর, কিছু কিছু শব্দ পশু থেকে উৎপত্তি হয়। গালি এমনই একটি অস্ত্র, যার আঘাত দীর্ঘদিন মানুষ অনুভব করে আর আত্মদহনে ভোগে। আবার স্কাড ক্ষেপণাস্ত্রকে যেমন অন্য কোনো কৌশলে ধ্বংস করা যায়, তেমনি গালিকেও রুখে দিতে পারে প্রতিগালি দিয়ে। অর্থাৎ গালির সঙ্গে সঙ্গে গালি দিয়ে। ইতর শ্রেণীর মানুষ যেমন গালি ব্যবহার করে, তেমনি ভদ্রলোকেরাও করে। তবে ভদ্র লোক পরিবেশ বুঝে ব্যবহার করে। রাস্তাঘাটে ইতর শ্রেণী যে শব্দ ব্যবহার করলে ভদ্র লোকরা ছি ছি করে, তারাও কিন্তু বন্ধুমহলে একই শব্দ ব্যবহার করে। অর্থাৎ আসর বুঝে বাসর করার বুদ্ধি যাদের আছে, তারাই ভদ্রলোক। বাসর ঘরে কী ধরনের দৃশ্যের অবতারণা হয়, তা সবাই জানে।
প্রশ্ন হলো, শ্লীল আর অশ্লীলতা নিয়ে; যা বর্তমান আন্দোলনে শিশুরা ব্যবহার করছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, কীর্তনের আসরে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত অশ্লীল আর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসরে কীর্তন অশ্লীল। তাহলে বোঝা গেলো অশ্লীলতার জন্য স্থান-কালই বিবেচ্য। অনেক সময় অশ্লীল শব্দ মনোহরকর এবং কামজ ও দেহজের আচ্ছন্নতার অনঘ স্বপ্নময় আনন্দের উৎস।
এবার ফেরা যাক, পুলিশকে কেন মানুষ গালি দেয়? একমাত্র কারণ, তাদের প্রতি পুঞ্জিভূত ক্ষোভের প্রকাশ ঘটায়। আজকে যারা ফেসবুকে শিশু-কিশোরদের শ্লীলতার তালিম দিচ্ছেন, তারা কি একটু পেছনে ফিরে তাকাবেন? আশির দশকে যারা ছাত্র আন্দোলন করতেন, তাদের ভাষা কী ছিল? ‘হায়রে ঠোলা মাঙ্গির পোলা, চাকরি গেলেই ঠুস।’ কি ভুলে গেছেন? কোরাস গাইতেন না?
এখনকার ভাষা বদলে গেছে। এই ভাষা বদলের কারণ, আমাদের চারপাশের মানুষের আচরণ, চারপাশ থেকে আহরিত শব্দমালা। আর পুলিশের প্রতি তা প্রকাশের কারণ হলো মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের আর যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ বিস্ফোরণ। ফেসবুকে তালিম দেওযা যায় বটে, সেই তালিম আন্দোলনরত শিশু-কিশোরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন করবে না তালিম গ্রহণ করবে, তা ভাবিতব্য। আমাদের শিশুরা থাকুক নিরাপদে। সুন্দরে সুন্দরে ছাপিয়ে যাক ওদের জীবন।