নমুনা স্বরূপ
চু পাহাড়,পাশাপাশি দুজন লোক। অনেক্ষণ নীরবতার পর একজন বলল, ‘অনেকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি, সাহসের অভাবে পারিনি। আমি একটা কাপুরুষ। আপনি?’ মৃদু হাসলো অন্যজন। উত্তরে বললো, ‘আত্মহত্যা করব বলেই এসেছিলাম, হঠ্যৎ উপলব্ধি হলো আমি কাপুরুষ নই; তাই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
পরিমিতিবোধ
নিজেরা আলাদা আলোচনা করবে বলে ওরা মানুষ দুটোর ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর খানিকটা বিরতি নিয়ে আহ্লাদ শান্ত-শীতল কণ্ঠে বলল, ‘এত কঠোর হওয়া ঠিক নয় বন্ধু, কেন বুঝতে পারছিস না, তুই একটু আপস করলেই ওই মানুষ দুটোর সম্পর্ক টিকে যায়।’
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল অহঙ্কার, ‘তোরই বা এত ঢং কিসের শুনি? এটা কেন বুঝিস না যে তুই মাত্রারিক্ত অবুঝ হলে পরেই আমার চান্দিটা গরম হয়।’ আহ্লাদ আর অহঙ্কার যখন তাদের পরিমিতিবোধ নিয়ে আলোচনা করছে, অদূরে ছেলেমেয়ে দুজন প্রাণ খুলে হাসছে।
আত্মকথা
বাইরে আট ঘণ্টা কাটিয়ে এসে ঘরে দুই ঘণ্টা, তারপর টিভির সামনে বসল মানুষটা। খানিক বাদে শুনতে পেলো কেউ বলছে, ‘বসলে যখন টিভিটা ছেড়েই বসো, বন্ধ করে রাখলে কেন?’ ক্লান্ত মানুষটি মনে মনে বলল, ‘আমিতো রোজই টিভি দেখি, আজ না হয় আমাকেই সে দেখলো। ঘরে বাইরে আমারও তো গল্প কিছু কম নেই।’
চাতুরিপূর্ণ
পানি ভর্তি গ্লাসটি খালিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে আর বলছে, ‘জীবনে পূর্ণতা না থাকলে তার আবার আনন্দ কিসের বলো তো?’ খানিকবাদেই ভরা গ্লাসটি খালি হয়ে গেল। পানিতে ভরে উঠল খালিটা। শান্ত হেসে এবার সে উত্তর দিল, ‘ভরে উঠতে কতক্ষণ? কিংবা ফুরিয়ে যেতে?’
পুঁজি
একটা ওষুধ আরেকটা ওষুধকে বলছে, ‘তুই কিসের কাজ করিস রে?’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অন্যটা বলল, ‘ব্যথা অপসারণের।তুই?’ ‘আপাতত ব্যথা বাড়ানোর।’ বলল প্রথমটা। অবাক হয়ে দ্বিতীয় ওষুধটা জানতে চাইল, ‘কিভাবে?’ উত্তর দেওয়ার আগেই দোকানদার বিক্রি করে দিলো মেয়াদোত্তীর্ণ ওই ওষুধটাকে।
প্রাণবন্ত
পাঞ্জাবিকে মিটিমিটি হাসতে দেখে শাড়িটা বলল, ‘ওরম বোকা বোকা হাসছ কেন?’ টানটান উত্তেজনায় পাঞ্জাবি এবার উত্তর দিলো, ‘স্যার আজ পুরোনো বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। এতদিন পর কেন গেল সেই রাগে আমার কলার ধরে স্যারের বান্ধবীর সে কি টানাটানি। উফ! যা লেগেছিল না! এই শোন, ম্যাডামকে আবার এগুলো বলো না কিন্তু।’ পাঞ্জাবির কথা শুনে লাজুক হেসে দিলো শাড়ি। বললো, ‘তুমিও স্যারকে বলো না, আজ ম্যাডামও তার পুরোনো বন্ধুর কাছে গিয়েছিল। তবে তোমার স্যারের অসভ্য ওই বান্ধবীর মতো আমায় মারধর করেনি। আহ! কি মোলায়াম আদর।’ ‘তারপর হঠ্যৎ ওরা চুপ। প্রাণবন্ত স্যার আর ম্যাডামকে ঘরে ডুকতে দেখে ওরাও যারপরনাই খুশি।
অব্যক্ত
মাঝামাঝি জায়গাটায় এসে দুজনের দেখা। একজন সিঁড়িতে উঠছেন, নামছেন অন্যজন। নিচের দিকে নামা মানুষটা সম্মুখের লোকটিকে দেখে মনে মনে বললেন, ‘উঠুন, কিন্তু মনে রাখবেন প্রয়োজনে অনেকবার নামতে হয়। অফুরন্ত সুযোগ সুবিধা থাকার পরও আমি কখনো না নেমে পারিনি।’ দ্রুত ওপরে ওঠার বৃথা চেষ্টায় অন্য লোকটি তখন সিঁড়িতে বসে হাঁপাচ্ছে…।