ন’ খাইয়ুম ভাত বরতন পুরাই
আসমানোত মেঘ উইট্রে ও ফুত মনোত লাগে ডর
ঝড়-বাতাসে থর থর কাঁপে ছনের ছানির ঘর
ন’ যাইচ ও ফুত আজিয়া তুই কইলজাত পানি নাই
একলা জীবন কাডাই দিলাম তোর মুইক্কা ফুত ছাই—
খল খল করে সাগরে ঝড় দোইজ্জায় বাইরগেগ পানি
বাপের মতো সাহসী তোর ডর ন’ লাগে জানি
মাথার কসম দিলাম তোরে, সাম্পান ন’ ভাসা
তুই ছারা আঁর বাঁচি থাকার কী আছে আশা!
মা-বাপে আঁর দায়-দায়িত্ব তুলে দিলো যারে
শূন্য ঘরত্ একলা সেও ফেলাই গেলো আঁরে
তুই আছিলি পেডোত তখন, ন’ দেইক্কে তোর মুখ
বঙ্গোপসাগরৎ তোল্লাই আঁইনতো গেইয়ে সুখ!
আর কোনোদিন ন’ আইলো সে ফিরি আঁরার কাছে
হাঙর, কুমির খাইলো না-কি ভিন্ দেশে যাই বাঁচে
মাছের মায়া জালের টান, জলের জীবন রাখ্
বরতন পুরাই ন’ খাইয়ুম ভাত, আঁর কাছে তুই থাক্!
(বৃহত্তর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত)
জেবন ভ’রে যাচ্ছি খেটে
জেবন ভইরে যাচ্ছি খেটে কামের বিরাম নাই
তুইনে পরি ছিড়া শাড়ি মরিচ পান্তা খাই
মন দিলো না মিনষে তবু ভালোবাসলি পরে
আমার কথা শুনলি যে তার গতর পোড়ে জ্বরে!
হাসি মুখে কইলে কথা কইষে ধমক মারে
পোড়াচ্ছে মন তুষের আগুন দেখাবানি কারে
হলুদ মরিচ বাটনা বেটে যাচ্ছে জ্বলি হাত
জিয়ল মাছের ঝোল রাঁদিছি ভাতার খাবে ভাত!
দামান গেছে হাল চষতি নতুন চরের ভূঁই
দাওয়ায় বইসে কেঁথা সেলাই; ফুটলো হাতে সুই
ছাওয়াল কাঁদে; দোউড়ে গেলাম ঘুম পাড়াতি ঘরে
হঠাৎ করে আইলো দেয়া রূম ঝুম ঝুম করে!
উঠোনেতে বেচন ধান রোইদে মেলা ছিল
কেম্মায় জানি, দেয়ার পানি বেচন ভাসাই নিলো
কে ঠেকাবি মিনষের হাতে গুড়ুম গুড়ুম কিল
ভাইসে গেছে শর্ষ্যা-কাকন, কলাই, গম আর তিল!
চুলের মুঠি ধরে কবে রাখবো-নানে তোরে
সামাল দেবো কেম্মায় তারে, পারবো-নানে জোরে…!
(বৃহত্তর ফরিদপুরের আঞ্চলিক ভাষায় রচিত)
আপন-পর
আঁই যেতিরে আপন ভাবি, হেতি ভাবে পর
আঁঙ্গো বাড়ির হঁতের লগে হেতির বাপের ঘর
হেতির মায়ে ডাকে আঁরে আদর করি হোলা
ছোডকালে আঁল্লাই আছিলো হেতির দুয়ার খোলা!
খেলছি কতো কানামাছি, পুতুল বউয়ের স্বামী
হাপলা-হালুক তুইলছি দুই’জন বুক হানিতে নামি
হঠাৎ কিল্লাই হেতির চোখে শরম শরম করে
দেখলে আঁরে কিল্লাই হেতি হলাই থাকে ঘরে!
খেজুর রসের শিন্নি রান্দে রসুই ঘরে বই
কোমর ঢুলাই মুড়ি ভাজে, বিন্নি ধানের খই
বাতাসে তার গন্ধ হাই হুইর ঘাঁডো যাই
চোখের হাইন্নে বুক ভিজি যায় হঁতের দিকে চাই!
বুকের হুইরে হাল দি উডে বোয়াল জাগুর কৈ
হেতিরে আঁই মনের কতা কেন্নে বুঝাই কই?
হবোনে দেই হিনছে শাড়ি, বাইনছে হিতায় চুল
আতে দিছে রেশমি চুড়ি, খোঁপায় গোলাপ ফুল!
থালা ভরা আদার হাতে ডাকে চৈ চৈ যায়
উড়ি আইয়ে হাঁস-কবুতর, মোরগ আদার খায়
হেতির বাড়ির মাচাং ভরা, হুই হাগ, হোয়া কদু
চান্নির মতো মুখে হেতির ঝরে হাসির মধু!
ঘুমের মইধ্যে নাম ধরি তার বেন রাইতে কাঁদি
হেতির নামে মনের ভিডায় প্রেমের মহল বাঁধি
আদর করি নাম দিছি তার সুখের ‘কোহিনুর’
রাইখছি তারে কইলজায় গাঁথি, থাক না যত দূর…!
(বৃহত্তর নোয়াখালির আঞ্চলিক ভাষায় রচিত)