‘চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ উঠলো ছয় লেখক-সংগঠকের হাতে। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কাঁটাবন সিগন্যাল, এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত কবিতা ক্যাফেতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা এই পুরস্কারের ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র ও উত্তরীয় গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গিয়াস শামীম। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি-গবেষক আমিনুল ইসলাম, কবি-প্রাবন্ধিক মজিদ মাহমুদ, কথাশিল্পী হাসান অরিন্দম ও কথাশিল্পী নাহিদা আশরাফী।
সাহিত্য পুরস্কারের প্রচলিত সংস্কৃতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. গিয়াস শামীম বলেন, ‘পৃথবীতে সব পুরস্কার, সব পদকই রাজনৈতিক। নোবেল পুরস্কার এটি সম্মানজনক ও গৌরবের পুরস্কার। কিন্তু এটিও রাজনৈতিক চিন্তাপ্রসূত।’চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চিন্তাসূত্র যে কাজটি হাতে নিয়েছে তাতে আমি অত্যন্ত আশাবাদী। আপনারা এই কাজটি চালিয়ে যাবেন।’
পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারাও লেখালেখির কাজ অন্তর্গরজেই করবেন। কারও তোয়াজ-তোষামোদি করার জন্য লিখবেন না- সেখানেই আপনাদের স্বস্তি।’
ড. গিয়াস শামীম আরও বলেন, ‘মানুষ দুইভাবে তার উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে। একটি হলো মনুষ্যপ্রজাতির উত্তরাধিকার, আরেকটি হলো শিল্পের উত্তরাধিকার। আপনি যা লিখছেন তা যদি একজন পাঠকও পড়েন এবং তাতে যদি পাঠকের মনে আনন্দ জাগে, সেই লেখার মধ্যে আনন্দের সন্ধান পায়; বাঁচার উপাদান পায় তাহলে লেখক হিসেবে আপনি সার্থক। সেখানেই লেখক হিসেবে আপনার সার্থকতা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘পুরস্কার যেমন স্বীকৃতি তেমন দায়িত্ব পালনও। যারা পুরস্কার পেয়েছেন তারা থেমে যাবেন না। আপনাকে প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে হবে যে আপনি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। আপনাকে সেই দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।’
কবি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের শুভকামনা জানাই। চিন্তাসূত্রে আমি যতগুলো কবিতা, যতগুলো প্রবন্ধ লিখেছি তা অন্য কোথাও লিখিনি। চিন্তাসূত্রের প্রতি আমার ভালোবাসা আছে, পাশাপাশি দায়বদ্ধতাও আছে। যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানাই।’
কবি মজিদ মাহমুদ বলেন, ‘পুরস্কারের যে জটিল রাজনীতি, তা থেকে মনে করি চিন্তাসূত্র ভালো। এই পুরস্কারের মাধ্যমে চিন্তাসূত্র লেখকদের স্বীকৃতির জায়গায় এনেছে। এটি ভালো দিক। আমরা সাহিত্য নিয়ে মোটেই হতাশ নই।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ড. হাসান অরিন্দম বলেন, ‘যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের লেখালেখির সঙ্গে আমি আগেই পরিচিত। তাদের বইগুলো নানা মাধ্যম থেকে পড়ার চেষ্টা করেছি। তারা আসলেই খুব ভালো লেখেন। চিন্তাসূত্রের এই সিলেকশন আমাকে আশাবাদী করেছে। এতেই প্রমাণিত হয় সব জায়গায় অন্ধকার নেই, আলো আছে। আমি বিশ্বাস করি চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কারের মাধ্যমে লেখকরা অনপ্রাণিত হবেন।’
স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার কমিটির আহ্বায়ক কবীর আলমগীর; অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব প্রতীক মাহমুদ।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন প্রবন্ধে গাউসুর রহমান, কবিতায় সেলিনা শেলী, কথাসাহিত্যে সাদিয়া সুলতানা, তরুণ কবি শাহিন সপ্তম, শিশুসাহিত্যে তৌহিদ এলাহী ও সংগঠনে জয়দুল হোসেন।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে গাউসুর রহমান ও জয়দুল হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। গাউসুর রহমানের পক্ষে কথাশিল্পী নাহিদা আশরাফী এবং জয়দুল হোসেনের পক্ষে কথাশিল্পী হেলাল উদ্দিন হৃদয় ও কবি শরাফত হোসেন পুরস্কার গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ থেকে চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার দিয়ে আসছে। প্রথমবার ৩ শাখায় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন প্রবন্ধে অনীক মাহমুদ, কবিতায় মাহমুদ কামাল ও কথাসাহিত্যে রুমা মোদক।