প্রথম পর্ব: তত্ত্বধারা
দু’মলাটের মধ্যে আধুনিক বাংলা কবিতার রূপ-রস-ঔজ্বল্য-বৈচিত্র ধারণ করার প্রথম অভিপ্রায় জেগে ওঠে আধুনিক বাংলা কবিতার একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যের বহুমুখী প্রতিভা বুদ্ধদেব বসু (৩০ নভেম্বর ১৯০৮-১৮ মার্চ ১৯৭৪)’র মনে। সময়টা ১৯৩৮ সালের। কিন্তু নানা কারণে সংকলনটি তখন তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে সম্পাদনার ভারটি নিয়ে নেন দুজন রসজ্ঞ সমালোচক। একজন হলেন আবু সয়ীদ আইয়ুব অন্যজন হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। দু’বছর পর ১৯৪০ সালের জুলাই মাসে (বাঙলা শ্রাবণ ১৩৪৬) দেশ পাবলিকেশন্স থেকে বের হয় প্রথম আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলন গ্রন্থটি। ফলে বুদ্ধদেব বসুর মনে এ রকম একটি সংকলনের প্রয়োজনীয়তা প্রথম উদয় হলেও বাস্তবায়ন হয়ে যায় আবু সয়ীদ আইয়ুব এবং হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে। এর চৌদ্দ বছর পর (মার্চ, ১৯৫৪; ফাল্গুন ১৩৬০) বের হয় বুদ্ধদেব বসু সম্পাদতি আধুনিক বাংলা কবিতার দ্বিতীয় সংকলন। এরপর কেটে চায় চার দশকের মতো সময়। ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বের হয় আধুনিক বাংলা কবিতার সর্বশেষ সংকলন। সম্পাদনা করেন প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে স্বীকৃত ও সমালোচিত কবি হুমায়ুন আজাদ। প্রকাশের পর পরই গ্রন্থটি সৃষ্টি করে একই সঙ্গে বিরাগ এবং অনুরাগ। একই সময়ে গ্রন্থটি যেমন অভ্যর্থিত হয়, আক্রান্তও হয় তেমন। দেখা যাচ্ছে বিগত ৭৭ বছরে আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলন বের হলো তিনটি, যেগুলোর সম্পাদক হলেন চারজন।
বিষয় অভিন্ন হলেও ব্যক্তি যখন একাধিক হন তখন তাদের রুচি, দর্শন, কাব্যবোধ, বিবেচনার নিরিখ, অভিলাষ, অভিপ্রায়, পর্যবেক্ষণের ধরন তো ভিন্ন হতে বাধ্য। তাহলে একাধিক ব্যক্তির বিবেচনা বোধের আওতায় এসে আধুনিক কবিতার স্বরূপ কী রূপ পরিগ্রহ করল তা কৌতূহলের জন্ম দেয় বৈকি। এমনকি প্রথম সংকলন বের হওয়ার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে (মাত্র ১৪ বছর) বের হয়ে গেল দ্বিতীয় সংকলনটি, অন্য সম্পাদকের হাত দিয়ে। তাতে আধুনিক বাংলা কবিতার সর্বশেষ রূপটি কেমন দাঁড়ালো? এত অল্প সময়ে আধুনিক কবিতা কি নতুন কোনো দিকে বাঁক নিল? যদি নিয়েই থাকে তাহলে তার স্বরূপ ও প্রবণতাগুলো কী কী? যদি কোনো বাঁক না নিয়েই থাকে তাহলে আরেকটি সংকলন কেন? এরকম প্রশ্নের উদয় হওয়া অবান্তর নয় একেবারে। এমনকি দ্বিতীয় সংকলন প্রকাশের চল্লিশ বছর পর এবং প্রথম সংকলন প্রকাশের চুয়ান্ন বছর পর আধুনিক বাংলা কবিতা কী রূপ পেল, তাও আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম সংকলন প্রকাশের পর অন্য সম্পাদকের হাত দিয়ে বের হওয়া সংকলনটিরই বা বিশেষত্ব কী! কিংবা প্রয়োজনীয়তাই বা কী ছিল, এসব বিষয়ে একটু আগ্রহ থাকা খুবই স্বাভাবিক।
আধুনিক এবং অনাধুনিকের বিভাজন রেখাটি আরও স্পষ্টতর হয়ে উঠত
বিবেচনার নিরিখ এবং দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য নিয়েই সম্পাদিত হয় আধুনিক বাংলা কবিতার প্রথম সংকলন। সম্পাদক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ভূমিকায় জানাচ্ছেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বহু পার্থক্য আছে বলে সস্তা বাহাদুরির অভিযোগ অসম্ভব নয় জেনেও আমরা আলাদা ভূমিকা লিখেছি। কয়েকজন খ্যাতনামা কবিকে আমরা বাদ দিয়েছি, তাঁদের লেখায় আধুনিক ভাব বা ভঙ্গির সন্ধান পাইনি বলে।’ কিন্তু সম্পাদয়কদ্বয় সেই সব ‘খ্যাতনামার’ নাম উচ্চারণ করেননি। ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমাণ করারও চেষ্টা করেননি যে, কী কী উপাদানের অভাবে অথবা কী কী উপাদানের উপস্থিতির জন্য তাদের ভেতরে আধুনিক ভাব ও ভঙ্গির সন্ধান পাওয়া যায়নি। করলে আধুনিক এবং অনাধুনিকের বিভাজন রেখাটি আরও স্পষ্টতর হয়ে উঠত।
তাহলে আধুনিক’ হওয়ার নিরিখটাই বা কী? কবিতায় কী ধরনের উপাদান থাকলে তাকে আধুনিক বলা যেতে পারে। তা নির্ধারণ না হলে, বা প্রবণতাগুলোর স্পষ্টীকরণ না ঘটলে কিসের নিরিখে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে কবিতাগুলো? সংকলনকে যদি আধুনিক কবিতার প্রয়োগিক ফলের একটি সামগ্রিক উপস্থাপন হিসেবে ধরে নেই, তাহলে এর তত্ত্বটি খোলাসা হওয়া দরকার। আধুনিকের উপাদানগুলোর স্পষ্টীকরণই হতে পারে, সেই তত্ত্বের প্রাথমিক ও মৌল ভিত্তি। সম্পাদকের প্রথম কাজ হলো এই তত্ত্বটি হাজির করা। তারপর অনাধুনিকের সঙ্গে আধুনিকের বিভাজন রেখাটিকে স্পষ্ট করে দেওয়া। এরপর আসে প্রয়োগ। আবু সয়ীদ আইয়ুব ও হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এ সব নিরিখ এবং বিভাজন রেখাগুলোকে টানার চেষ্টা করেছেন আলাদাভাবে। আলাদাভাবে, কারণ আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলন করতে গিয়ে তাঁরা লিখেছেন পৃথক পৃথক ভূমিকা। ভূমিকা যখন পৃথক এবং ভূমিকাকে তত্ত্ব হিসেবে মানছি কিন্তু সংকলনভুক্ত কবিতাগুলো পৃথকভাবে কার নির্বাচন তা জানতে পারছি না। অর্থাৎ সম্পাদকদ্বয় তত্ত্ব হিসেবে আলাদা ভূমিকা লিখবেন, কিংবা আলাদাভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন, তারা একমত হতে পারবেন না একই ভূমিকায়, কিন্তু কবিতা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অভিন্ন মতাবলম্বী হবেন। এ এক অদ্ভূত মতৈক্য এবং মতানৈক্য। আধুনিক বাংলা কবিতার প্রথম সংকলনটিকে এ রকম একটা ব্যাপারের মধ্য দিয়ে উপস্থাপিত হতে হয়েছে।
তবে এর মাধ্যমে একটা বিশেষ বিষয়ে তাঁদের তিনজনেরই সহমত প্রকাশ পেয়েছে। সেটা হলো, আধুনিক কবিতার মানদণ্ড হিসেবে রবীন্দ্রনাথকেইও টেনে এনেছেন তাঁরা। এবং রবীন্দ্রনাথকেই প্রধান বিভাজক রেখা মানা হয়েছে। এবং রবীন্দ্রনাথকেই প্রথম আধুনিক কবি হিসেবে দেখানোও হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রথম সংকলনের প্রস্ততি পর্ব এবং প্রকাশকালে রবীন্দ্রনাথ জীবিত। রবীন্দ্র বিরোধিতা যখন একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছিল এবং যারা এর অগ্রগণ্য কুশীলব ছিলেন, তাঁদের হাত দিয়েই রবীন্দ্রনাথ পুনরায় স্বীকৃতি পাচ্ছেন। অথচ বুদ্ধদেব বসু ও অজিত দত্ত সম্পাদিত বিখ্যাত পত্রিকা ‘কবিতা’র প্রথম সংখ্যায়ই আধুনিক কবিতার একটা ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। সেখানে যে যে বৈশিষ্ট্য বর্জনের কথা বলা হয় এবং যে যে বৈশিষ্ট্য ধারণের কথা বলা হয়, সেগুলোর সম্পূর্ণ ঘাটতিই ছিল রবীন্দ্রকাব্যে। যে যে বৈশিষ্ট্য বর্জনের কথা বলা হয়েছিল সেগুলোর প্রবল উপস্থিতি রবীন্দ্রকাব্যে। যে যে বৈশিষ্ট্য বর্জনের কথা বলা হয়েছিল সেগুলোই ছিল রবীন্দ্রকাব্যের অলঙ্কার। তাই এই প্রবল অনাধুনিক রবীন্দ্রনাথ-বিরোধিতা করা ছিল তৎকালীন তরুণ কবিদের অন্যতম ফ্যাশন। এই ফ্যাশনের কুশীলব তিরিশের পঞ্চপাণ্ডব থেকে শুরু অনেকেই ছিলেন। ছিলেন প্রথম সংকলনের রসজ্ঞ সম্পাদকদ্বয়ও।
তিন সম্পাদকই সহমত পোষণ করছেন
এরপরও আধুনিক বাংলা কবিতার সংকলন করতে গিয়ে তাঁরা তিনজনই প্রথম নত হলেন রবীন্দ্রকাব্যে। বলা হয়ে থাকে আধুনিক বাংলা কবিতা শনাক্তকরণের প্রধান দু’টি নিরিখের একটি হচ্ছে কালের বিচার অন্যটি ভাবের বিচার। কালের দিক থেকে আধুনিক বাংলা কবিতা ঠিক কোনখান থেকে আরম্ভ হয়েছে, তা বলা শক্ত। প্রাচীন ও আধুনিকের মাঝখানে সব জায়গায় প্রাকৃতিক সীমানা খুঁজে পাওযা দুষ্কর। আবু সয়ীদ আইয়ুব জানাচ্ছেন ‘‘কালের দিক থেকে মহাযুদ্ধে-পরবর্তী, এবং ভাবের দিক থেকে রবীন্দ্রপ্রভাবমুক্ত, অন্তত মুক্তিপিয়াসী, কাব্যকেই আমরা আধুনিক কাব্য বলে গণ্য করেছি। বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দুই দশকের কবিতা যে মোটের ওপর রবীন্দ্রকাব্যেরই প্রতিধ্বনি, এতে সন্দেহ করা চলে না, এবং আক্ষেপও করা যায় না যখন আমরা স্মরণ করি, রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা বাংলার মতন দীন সাহিত্যকে ঋদ্ধির কোন স্তরে নিয়ে এসেছে। তৃতীয় দশকে নজরুল ইসলাম, যতীন সেনগুপ্ত প্রভৃতির শক্তি ও সাহসের ফলে সে-সর্বজয়ী প্রতিভার একচ্ছত্র সাম্রাজ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নবীন বাঙালি কবিদের নিজেকে চিনবার এবং চিনাবার সুযোগ করে দিলো। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং বিদ্রোহী দলে যোগ দিয়ে তাকে আশাতীত মর্যাদা দান করলেন। গদ্যরীতির প্রচলন ক’রে, কাব্যেও বিশিষ্ট ভাষা বর্জন করে, কবিকুল পরিত্যক্ত ‘অসুন্দর’ প্রাকৃতিক মানবিক পরিবেশকে গ্রহণ ক’রে, তিনি নিজের ঐতিহ্য নিজেই ভেঙেছেন।’’
হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ভূমিকায় জাানাচ্ছেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য যে রবীন্দ্রনাথের অমিত প্রতিভা আজও অপরিম্লান; তিনি শুধু জ্যৈষ্ঠ নন, তিনি শ্রেষ্ঠ, তাই বিনয়রহিত কনিষ্ঠদের আশির্বাদ করতে তিনি কুণ্ঠিত হননি, স্বসৃষ্টি ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে যে দুঃসাহসীরা বিদ্রোহ করতে চেয়েছিল, তাদেরই দলে যোগ দিতে সংকোচ করেননি। রবীন্দ্রপ্রভাব থেকে অল্পবিস্তর যাঁরা মুক্ত হয়েছেন বা হতে চেষ্টা করেছেন, তাঁদেরই লেখা থেকে এ সংকলন, অথচ এখানে সর্বাগ্রে পাওয়া যাবে অগ্রগণ্য রবীন্দ্রনাথকে।’ বুদ্ধদেব বসু ভূমিকায় লিখেছেন, ”… রবীন্দ্রনাথের পরে প্রথম নতুন তো রবীন্দ্রনাথ নিজেই। সে-কথাও সত্য, তাই এই সংকলন আরম্ভ হয়েছে ‘লিপিকা’র রচনা দিয়ে, যে-বইতে মানসী থেকে বলাকা পর্যন্ত এক জন্ম শেষ করে, রবীন্দ্রনাথ নতুন করে জন্ম নিয়েছিলেন। তাঁর শেষ পর্যায়ের রচনার ধারা আমাদের সাম্প্রাতিক কাব্যে নানাভাবে ফলপ্রসূ হয়েছে, পরবর্তীর প্রতিবেশিতায় সেই সম্বন্ধটি চিনতে পারা হয়তো সহজ হবে।’’
তিরিশি কবিদের কাছে রবীন্দ্রনাথ যখন আধুনিক কবিতার বৈশিষ্ট্য বিচারের একটি উপাদান, একটি উজ্জাল বিভাজক রেখা এবং কবিতাকে আধুনিক করতে তোলার জন্য একটি বর্জনযোগ্য নাম, সেখানে এই তিরিশেরই প্রধান প্রতিভূদের হাতে প্রবল স্বীকৃতি পাচ্ছেন প্রথম আধুনিক বলে। এবং এ ক্ষেত্রে তিন সম্পাদকই সহমত পোষণ করছেন।
প্রথম তিন সম্পাদকের আধুনিকতা এবং হুমায়ুন আজাদের আধুনিকতা এক নয়
ঠিক এই জায়গাতেই এসে প্রচণ্ডরকম দ্বিমত পোষণ করছেন হুমায়ুন আজাদ। শুধু দ্বিমত নয় রীতিমতো অস্বীকার করছেন রবীন্দ্রনাথকে আধুনিক বলে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাছে, ‘রোম্যান্টিক কবিতার একজন’। আধুনিকতার সঙ্গে রোম্যান্টিসিজমের যথাযথ বৈপরীত্যকে আমলে নিয়েছেন হুমায়ুন আজাদ। অন্যরা নেননি। কিংবা এই বৈপরীত্যকে আমলে নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে যথাযথ মূল্যায়নের সাহস দেখাননি। হুমায়ুন আজাদ জানাচ্ছেন, যারা আধুনিক তারা রোম্যান্টিক নন। একইভাবে যারা রোম্যান্টিক তারা আধুনিক নন। কিন্তু তাতে কি আধুনিক কবিতার বৈশিষ্ট্য বিচারের যে প্রধান দুটি দিকের কথা বলা হলো, কালের দিক থেকে এবং ভাবের দিক থেকে, সে-গুলোর সঙ্গে কি একটু তালগোল পেকে যায়?
সেটা হয়তোবা বিবেচনার দাবি রাখে। কিন্তু হুমায়ুন আজাদ যে বক্তব্যটি দিলেন, তা একটু খতিয়ে দেখা যেতে পারেন, তিনি বলেছেন, ‘বাংলার মহৎ/প্রধান কবিদের তালিকাটি হবে এমন : বডু চণ্ডীদাস, চণ্ডীদাস, বিদ্যাপদি. জ্ঞানদাস, গেবিন্দ দাস- পদাবলীর পাঁচজন ; মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, বিজয়গুপ্ত, ভারতচন্দ্র-মঙ্গলকাব্যের তিনজন; মাইকেল মধুসূদন দত্ত- মহাকাব্যের একজন; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- রোম্যান্টিক কবিতার একজন; এবং জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে,-আধুনিক কবিতার পাঁচজন।’
তাহলে বিষয়টির মীমাংসা এ রকম করে করা যায় যে, মহৎ কবি হলেই তিনি আধুনিক হবেন সে-রকমটি ভাবার জো নেই। কিংবা রোম্যান্টিক হলেও আধুনিক হওয়া যায় সে-ভাবনাও অচল। তাহলে আধুনিকরা কি রোম্যান্টিক হতে পারেন না? ভাবের দিক থেকে দেখে সেটাকে কি আধুনিকেরই আরেক রূপ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না?
কিন্তু সেটা যদি হতোই তাহলে তো আবু সয়ীদ আইয়ুব, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে হুমায়ুন আজাদের কোনো বিরোধ থাকে না। কারণ এতে আধুনিকতার উপাদানের সঙ্গে রোম্যান্টিকতার উপাদান যে সমপাতিত হয়ে যায়। কিন্তু হুমায়ুন আজাদ সেটা মানবেন কেন। তিনি তো স্পষ্ট করেই দিচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রোম্যান্টিক। আধুনিক নন। অর্থাৎ রোম্যান্টিকতা এবং আধুনিকতার মধ্যে বিস্তর ফারাক। এবং যিনি রোম্যান্টিক তিনি আধুনিক হতে পারেন না।
তাহলে এখানে আমরা একটি অনুসিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, প্রথম তিন সম্পাদকের আধুনিকতা এবং হুমায়ুন আজাদের আধুনিকতা এক নয়। আর এক নয় বলেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, রুচির ভিন্নতার বিচার ব্যতিরেকেই তাদের সংকলনের নির্বাচন-প্রক্রিয়া ভিন্নতর। এসবের স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায় সংকলনগুলোতে।
চলবে…