ভ্যাট উঠাইয়া নিছে, তাতেই সবাই আনন্দে গদগদ হচ্ছে—এই টাইপের পুঁজিবাদী আন্দোলন দেখে, জটলা দেখে, নর্দন-কুর্দন দেইখা কিছু বামপন্থী মনে করে, এই বুঝি বিপ্লব হইয়ে যাইতেছে! এরা সব সময় বিপ্লবের অবসেশনে থাকে।
বাংলাদেশে শিক্ষা একটা প্রতারণার নাম। শিক্ষা নামে যা আমরা চিনিম তা বইয়ে থাকে না—এই দেশে এইটা কিনতে হয়। গরিব হইলে কিনতে কষ্ট হয় ধনী হলে একটু সহজেই কেনা যায়। শিক্ষা হইল জাতে ওঠার সিঁড়ি, ভোগের জীবনে প্রবেশের লিফ্ট। এর সাথে জ্ঞনভিত্তিক সমাজ ও মানুষ তৈরির কোনো সম্পর্ক তো নাই বরং স্কিল-লেবারও প্রডিউস করতে পারছে না। শিক্ষকদের অশিক্ষা এখন ওপেনসিক্রেট বিষয়। এই অবস্থায় ‘লিটনের ফ্ল্যাটে’ বান্ধবী নিয়ে ডেটিং করা পোলাপাইন হিসেবে যাদের ইমেজটা দাঁড়াই গেছিল, যারা ‘ভাক্কাস’ কোরাসের জন্য বাপের পাপের পকেট কাটত, তারা এখন বাপের টাকা বাঁচাতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। সরকার প্রথমে হার্ড লাইনে গেছে। এটা হইছে ভুল। মনে করছে গুলি করলে ফার্মের মুরগি খামারে ফিরে যাবে। কিন্তু তা হয় নাই। পোলাপাইন জমাই ফেলছিল।
পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ের পোলাপাইনের আলগা এলিটিজম। কথায় কথায় ৬৯, ৭১, ৯০ এইসব। আন্দোলন ও দেশ গড়ার সূতিকাগার হিসেবে নিজেদের জাস্টিফাই করত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পইড়া নিজেরে জাতির অভিভাবক মনে করত। তাদের ফাঁপরের কাছে প্রাইভেটের পোলাপাইন অসহায় হয়ে যাইত। ফলে এখন এইটা একটু হাল্কা হইল।
শিক্ষা জিনিসটা কী—এইটা নিয়ে আমাদের এখানে কোনো কথা নাই। আমাদের এখানে এডিকেশনটা হইল ভোগাস। তারুণ্যের জন্য অভিশাপ। এরা শিক্ষিত হয় আর জনবিচ্ছিন্ন হয়। শিক্ষা হইছে ভাগ্যপরির্বতন এর কুত্তা দৌড়ের দমের নাম। ভালোভাবে পড়া-লেখা করা, ভালো চাকরি করা, সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করা, চিকন চাইলের ভাত খাওয়া, ২টা বাচ্চা নেওয়া, ডায়বেটিক কন্ট্রোল করতে হাঁটা, বড় বড় ডাক্তার সব সময় লাইনে লাগাইয়া রাখা—এমনই একটা ভোগসর্বস্ব মধ্যবিত্তময় জীবনের জন্যই তো এরা এত কষ্ট করে। শিক্ষার এন্টার প্রসেসটা জীবনের প্রতি একটা নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছু না। যাই হোক ভাবের কথা কইলে তো আর চলবে না এখন।
আই হেইট এডুকেশন। শিক্ষিতরা সাহেব হইয়া কালোচামড়ার ইংরেজ হয়। কৃষক কামলা জীবনকে ঘৃণা করে। মানুষকে অবহেলা করে। শ্রমশোষক হয়। কোনো রিকশাওলা বা পাটচাষী দুর্নীতিবাজ হইতে পারে না। বাট, আপনি কয়টা সার্ফিকেটের জোরে তারে আন্ডার মাইন করেন। অথচ তার মধ্যে হাজার বছরের কৌমের জ্ঞান ধারাবাহিকভাবে জারি আছে। সে জানে কাইটা গেলে কোন গাছের পাতার রস দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কখন বৃষ্টি হবেম সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে পারে। আপনার নিকৃষ্ট বিদ্যার অহং তারে শোষণ করে দিনে দিনে প্রান্তে ঠেলে দেয়। পরে এরাও ধান চাইল বিক্রি করে পোলারে সাহেব বানাতে চায়। এভাবে দিন দিন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিসর বড় হচ্ছে। অপরাধের ক্রিয়েটিভ সব ধরনও জারি হচ্ছে। এই অবস্থা তৈরির পেছনে তথাকথিত এডুকেশনের একটা বড় ভূমিকা আছে। এগুলা জটিল জিনিস বিস্তারিত লেখলে ভালো হইত।
করপোরেট ক্যাপিটালের যুগে যোগ্য লেবার তৈরি করার দায়িত্ব নিছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমাদের এখানে যোগ্য ক্যাডার তৈরি হচ্ছে। ধর্ষণে ১০০ করা, ভিক্ষুকের কাছ থেকেও চাঁদা নেওয়া এমন সব যোগ্যতা এরা অর্জন করতে পারছে।
যেইসব পোলাপান নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ঝাঁপাইয়া পড়ছে, সফল হইছে। তাদের নিয়ে আমি কোনো হোপ দেখি না। এদের নিয়ে হোপ দেখে কানা হইতে চাই না। টেম্পুরাল স্বার্থবাদী চৈতন্য থেকে ঝাঁপাইয়া পড়া আর একটি জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক পরিগঠন ও মুক্তির জন্য লড়াইয়ের ময়দান প্রস্তুত করা, এর জন্য নিজেকে নিয়োজিত করা, নিজেকে ‘রাজনৈতিক’ করে গড়ে তোলা—এর মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান আছে। আমি ভালো থাকব, ভালো খাবো. সুশীল হয়ে চলব। সবাই আমারে খুব শিক্ষিত ও রুচিবান মনে করবে —এমন কুচিন্তাই শিক্ষিতদের আত্মরতিমগ্ন পশুতে পরিণত করছে।
বাংলাদেশে একটা নৈতিক সংকট চলছে। চেতনার নামে সন্ত্রাস। আর এর ক্ষেত্র তৈরি করেছে শিক্ষিত-সুশীল-ধান্দাবাজ এনজিওবাজরা। গণতন্ত্রের নামে গণধর্ষণ সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এমন একটি অনৈতিক পারভারসিভ শাসন কাঠামোর বিরুদ্ধে যে কথা বলতে পারবে না, যেকোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে না, তারে বিপ্লবী তো দূরের কথা; একটা গাধার সাথেও তুলনা করা যাবে না। কারণ, গাধা অনেক পরিশ্রম করে।
জ্ঞান ও ব্যবহারবাদী বা কনজিউমার এলিটিস্ট এডুকেশনপ্রাপ্তরা বাংলাদেশের ৩৯ ভাগ নিরক্ষর মানুষের সাথে সদা-সর্বদা নিমকহারামি করতেছে। এডুকেশন অর্জন একটা কুত্তার কামড়া-কামড়ি। প্রি স্কুল থেকে এই কুত্তাদৌড় শুরু হয়। শিক্ষা আত্মধ্বংসী, হিউমেন ডিগনিটিকে কিল কইরা ফেলে, এটা একটা নষ্ট প্রতিযোগিতার বিষয়। কিন্তু শিক্ষা তো জ্ঞানগত বিষয় হওয়ার কথা ছিল।
বিখ্যাত চিন্তক, আমার অতি প্রিয়জন, শ্রদ্ধেয় আশীষ নন্দির মতো আমিও মনে করি, কলোনিয়াল ভারত বর্ষে এডুকেশন তারুণ্যের জন্য অভিশাপ হয়ে হাজির হইছে। এডুকেশন ইজ ভোগাস।
* প্রকাশিত অভিমত লেখকের নিজস্ব। এর জন্য চিন্তাসূত্র দায়ী নয়।