মালেক মুস্তাকিম। মূলত কবি। ১৯৮৫ সালের ১ মে, সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামে তাঁর জন্ম।পিতার নাম ইসহাক উদ্দিন, মাতা কোহিনুর বেগম। পেশা সরকারি চাকরি, নেশা তার লেখালেখি। সাহিত্য সাময়িকী ও ছোট কাগজে নিয়মিত লিখছেন। প্রকাশিত কবিতার বই: ভুলের ভূগোল; বিষণ্নতাবিরোধী চুম্বনগুলি; তোমার সাথে হাঁটে আমার ছায়া; ঘুণপোকা মন; একান্ত পাপগুচ্ছ; এবং আমি হাঁটতে গেলে পথ জড়িয়ে যায় পায়ে। কবিতাচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ পয়েছেন চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩। এই উপলক্ষে চিন্তাসূত্রের মুখোমুখি হয়েছেন কবি।
চিন্তাসূত্র: কবিতার জন্য আপনি ‘চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩’ পাচ্ছেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
মালেক মুস্তাকিম: যেকোনো প্রণোদনাই আমার কাছে আনন্দের, অনুপ্রেরণার। সেটা হোক কোনো কথা কিংবা আচরণ। আর পুরস্কার যেকোনো মানুষের জন্য এক ধরনের স্বীকৃতি। ভালো কাজের জন্য যেমন পুরস্কার রয়েছে, তেমনি খারাপ কাজের জন্য রয়েছে তিরস্কার। আর সে পুরস্কার যদি হয় প্রিয় কোনো কাজের জন্য, তাহলে আনন্দের সীমা থাকে না। কবিতার জন্য চিন্তাসূত্র পুরস্কার পাচ্ছি জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছি।
চিন্তাসূত্র: আপনার কবিতায় আপনি কোন বিষয়কে বেশি প্রাধান্য দেন?
মালেক মুস্তাকিম: দেখুন, কবিতায় কোনো একটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপারটি আপেক্ষিক। এটি কবির ওই সময়ের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, মনোজাগতিক চেতনা, সংকট, দেখা এবং জানার অভিজ্ঞতা এবং তার প্রতিদিনের জীবনাচরণের ওপর নির্ভর করে। আজ থেকে ২০/২২ বছর আগে যখন কবিতা লিখতে শুরু করি, তখন আমি স্কুলে পড়ি কিংবা মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। তখন কিশোর বয়সের আবেগ, প্রেম, ভালোবাসা এবং প্রকৃতির নানা অনুসঙ্গ অনিবার্যভাবে কবিতায় ঢুকে পড়তো। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কবি জসীম উদ্দীন হলের ৫২৮ নম্বর রুমে বসে আমি যে কবিতাগুলো লিখেছি, সেগুলোও মূলত প্রেমিকাকে নিয়ে লেখা। প্রেম-ভালোবাসা, মান-অভিমান এবং ওই সময়ের যাপিত জীবনে অভাব অনটন, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো কবিতায় উঠে আসতো।
সময়ের পরিক্রমায় কবিতার বিষয় যেমন বদলাতে থাকে, বদলাতে থাকে এর ভাষা ও শরীর। এ সময় আমি প্রচুর লিটল ম্যাগ পড়তে শুরু করি। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, নীলক্ষেত ও চারুকলার সামনে থেকে লিটল ম্যাগ সংগ্রহ করতে থাকি। এই সময়ের কবিতার ভাষা ও শরীরটাকে আমি ধরতে চেষ্টা করি। কবিতার সময় ও সময়ের ভাষাটা বোঝা একজন কবির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সময়ে আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা সে সময়ের জীবনাচরণ, চারপাশের জীবন জটিলতা, সংকট ও সম্ভাবনা বোঝাটা কবির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শব্দ এবং ভাষা ও ভাবনার একটা বিরাট পরিবর্তন ঘটে। রবীন্দ্রনাথ কিংবা নজরুল কিংবা তারও আগে মধ্যযুগের শব্দ, ভাষা আর কবিতা কাঠামো যেমন এখনকার সময়ের চেয়ে ভিন্নতর ছিল, তেমনি এখন থেকে আগামী ১০০ বছর পরের কবিতার বিষয় ও ভাষা ভিন্নতর হবে; এটাই স্বাভাবিক।
এই মুহূর্তে আমার কবিতার বিষয়বস্তু হচ্ছে চারপাশের চেনা জগতের অন্তরালে যতটুকু অচেনা, অজানা কিংবা থাকা না থাকার মাঝখান দিয়ে যতটুকু আছে বলে ভ্রম হয়। কবিতায় আমি এক নতুন জগৎ তৈরি করতে চাই। যা কিছু সত্য তা কি আসলেই সত্য, কিংবা যা কিছু মিথ্যা তা কি আসলেই মিথ্যা? না কি এই সত্য-মিথ্যার আড়ালে অন্য কিছু আছে, যা হয়তো ভাবিনি আমরা। ধরুন, আমি দেখতে চাই গাছ কি উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে; নাকি বৃক্ষের শরীরও কোনো পোশাকে আচ্ছাদিত, এদের সংসার, প্রেম, বংশপরম্পরা, দহন, মৃত্যু; এ বিমূর্ত বিষয়গুলোকেও আমি কবিতায় তুলে আনার চেষ্টা করছি। ধরুন, একটি পথ আরেকটি পথের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো, তাদের সঙ্গম, মৃত্যু, বেঁচে থাকা, কথোপকথন, মানুষের সঙ্গে এসব ছোটখাটো বিষয়গুলোর বোঝাপড়া আমি কবিতায় তুলে আনছি।
চিন্তাসূত্র: সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে কবিতাচর্চার মতো কাজে ব্যস্ত থাকেন। সরকারি দায়িত্ব পালন ও কবিতাচর্চার সমন্বয় করেন কিভাবে?
মালেক মুস্তাকিম: দেখুন, কবিতা আমার প্রতিদিনের যাপিত জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমার লেখালেখির শুরু স্কুল জীবন থেকে। আপনি জেনে আশ্চর্য হবেন, আমার লেখালেখির শুরুটা হয়েছিল নাটক লেখার মধ্যে দিয়ে; আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন। এ সময় টুকটাক কবিতা লিখতে শুরু করি। স্কুল জীবন শেষে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে রাজধানীতে পাড়ি দেই। ভর্তি হই ঢাকা কলেজে। ওই সময় ঢাকা কলেজের কয়েকজন বড় ভাই ‘উন্মেষ’ নামে একটি ছোট পত্রিকা বের করতেন। আমি সেখানে কবিতা লিখতে শুরু করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য পড়ার সুবাদে সাহিত্যের অন্দরমহলে ঢুকে পড়ি। ওই সময় খোন্দকার আশরাফ হোসেন সম্পাদিত ‘একবিংশ’ পত্রিকার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। আামার শিক্ষক কবির চৌধুরী, কাশিনাথ রায়, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ফখরুল আলম, কাজল বন্দোপাধ্যায়, কায়সার হককে দেখে লেখালেখির অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আমরা বন্ধুরা মিলে ‘স্রোত’ নামে একটি লিটল ম্যাগ বের করতে শুরু করি। এ সময় আমি মালেক মোহাম্মদ, বিপ্রতীপ বৈদ্য প্রভৃতি ছদ্মনামে লিখতে শুরু করি। কবিবন্ধু ফারহান ইশরাক ‘কাটা চামচ’ নামে একটি পত্রিকা বের করতো, সেখানেও লিখতে শুরু করি। লেখালেখি এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পরেও লেখালেখির অভ্যাসটা দারুণভাবে রয়ে গেছে। তবে সরকারি দায়িত্ব পালন এবং কবিতাচর্চা একইসঙ্গে চালানো বা সমন্বয় করা খুব কঠিন।
কবিতা আপসহীন, খুব সময় এবং একাকিত্ব দাবি করে। যত্ন চায়। যেহেতু আগে থেকেই কবিতা লেখার প্রতি এক ধরনের ঝোঁক ছিল, তাই কবিতার জন্য কিছুটা আলাদা সময় বের করতে হয়। আরেকটি বিষয় হলো কবিতা তো ভেতরে ভেতরে যাপন করবার জিনিস, আমার মনে হয় আমার শরীরে রক্তধারার মতো এক ধরনের প্রবাহ শিরা উপশিরায় চলতে থাকে। তাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও কবিতার জন্য কিছুটা সময় তোলা থাকে। এ দুয়ের মধ্যে আপাত কোন বিরোধ নেই।
চিন্তাসূত্র: বাংলাদেশের সমসাময়িক কবিতা নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী বলে?
মালেক মুস্তাকিম: দেখুন, কবিতা তো থেমে থাকার জিনিস নয়। এটি নদীর মতো প্রবাহমান। চর্যাপদ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত নানা পরিক্রমার মধ্য দিয়ে কবিতা চলছে। তবে বিভিন্ন সময়ে কবিতার বাঁক-বদল হয়েছে। আমি বলবো, কবিতায় এখন একটি নীরব বিপ্লব চলছে। কথাটি এজন্য বললাম, গত ৮/১০ বছরে মানব সত্যতার ইতিহাসে তথ্য প্রযুক্তির একটি বিরাট ধাক্কা লেগেছে মানুষের জীবনে এবং যাপনে। চিন্তা-চেতনা, পারস্পরিক সম্পর্ক ও বিশ্বাসে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মোবাইলফোনসহ নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে জীবন এবং সমাজ কাঠামো বদলে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলো সমসাময়িক কবিরা তাদের কবিতায় তুলে আনছেন। বিশেষ করে তরুণ কবিরা এসব বিষয় নিয়ে কবিতা লিখছেন। নতুন কবিদের কবিতায় এক ধরনের ভাষা কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। তরুণরাই সব সময় কবিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালিয়ে এসেছে। সমসাময়িক কালে অনেক তরুণ কবিই ভালো কবিতা লিখছে।
চিন্তাসূত্র: আপনি একাধারে কবি। সেই হিসেবে বাংলা কবিতা নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
মালেক মুস্তাকিম: দেখুন বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষার জন্য আমরাই একমাত্র জাতি যারা রাজপথে রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি। ভাষার যেমন ইতিহাস রয়েছে, তেমনি বাংলা কবিতারও সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসেও কবিতার ব্যাপক প্রভাব আমরা জানি। বাংলাদেশের সব সংকট ও সম্ভাবনায় কবিতাই আমাদের আলো দিয়েছে, পথ দেখিয়েছে। কবিতা হচ্ছে বোধের সংস্করণ। কবিতা মানুষের জন্য মানুষকে জাগাবে। আমাদের সীমানা পেরিয়ে বাংলা কবিতা বিশ্ব সাহিত্য পরিমণ্ডলে নেতৃত্ব দেবে; আমি সেই স্বপ্ন দেখি।
চিন্তাসূত্র: আপনার সমকালীন কবিরা বাংলা কবিতায় কোনো পরিবর্তন বা ভিন্ন সুর আনতে পেরেছেন? নাকি পুরোনো পথেই হাঁটছেন?
মালেক মুস্তাকিম: দেখুন, প্রতিটি সময়ের অথবা যুগের একটি নিজস্ব সুর থাকে। সে সুর টিকে কবিতায় ধরতে পারার একটি বিষয় রয়েছে। কিংবা হয়তো কবিরাই সময়ের গলায় সেই সুরের ঘণ্টাটা পরিয়ে দেন। যার ফলে একেক সময়ের কবিতাকে আমরা আলাদা করে চিনতে পারি। একটু আগেই যেমন বলেছি, তরুণদের হাত ধরে কবিতায় একটি নীরব বিপ্লব চলছে। হয়তো আমরা ওইভাবে টের পাচ্ছি না কিংবা টের পেতে হয়তো আরও কিছু সময় লাগবে। তবে এ কথা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, তরুণদের হাত ধরে কবিতার ভাষা, ভাবনা, কাঠামো এবং আকারেও যেমন পরিবর্তন হচ্ছে, তেমনি একটি নতুন স্বরও তৈরি হয়েছে। আর একটি কথা, কবিতায় পুরনো পথে হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। সেই পুরনো পথ থেকে প্রতি মুহূর্তে জ্ঞাত ও অজ্ঞাতভাবে অসংখ্য নতুন নতুন পথ ও বাঁকের সৃষ্টি হচ্ছে কবিতায়।
চিন্তাসূত্র: সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ সম্পর্কে আপনি কেমন ধারণা পোষণ করেন? ওয়েবম্যাগের গতিপ্রকৃতি ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
মালেক মুস্তাকিম: দেখুন, আমার লেখালেখির চর্চা শুরু হয়েছিল লিটল ম্যাগের মাধ্যমে। ঢাকা কলেজ থেকে প্রকাশিত‘উন্মেষ’ নামের একটি সাহিত্য পত্রিকায়। এরপর শূন্য দশকের গোড়ার দিকেও শাহবাগ কিংবা আজিজ মার্কেটকেন্দ্রিক লিটল ম্যাগের একটি দুর্দান্ত সময় ছিল। ওই সময় শাহবাগ থেকে নিয়মিত লিটল ম্যাগ কিনে নিয়ে যেতাম। পড়তাম। সাহিত্যচর্চার মূল জায়গা-ই হচ্ছে লিটল ম্যাগ। এখানে তরুণ লিখিয়েদের মধ্যেও এক ধরনের প্রতিযোগিতা থাকে। তরুণ লেখকদের জন্য লিটল ম্যাগ বা অধুনা ওয়েবম্যাগ অবশ্যই লেখা ও পড়ার জন্য অনেক বড় একটি প্ল্যাটফর্ম। আমি এখনো দুই বাংলা থেকে প্রকাশিত ওয়েবম্যাগ নিয়মিত পড়ি। এখন লিটল ম্যাগের জায়গা পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে ওয়েবম্যাগ। লিটল ম্যাগের চর্চা তাই দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক চর্চাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখন আমরা গুগল করলেই পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে প্রকাশিত ওয়েবম্যাগ যেমন পড়তে পারি, তেমনি লিখতেও পারি। এখন মুদ্রিত বইয়ের জায়গাও দখল করে নিচ্ছে অনলাইন বুক। কাজেই শিগগিরই অনলাইনে বুক পাবলিশ হতে শুরু করবে হয়তো। তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে ওয়েব ম্যাগ খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। ওয়েবম্যাগের ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে বলতে গেলে অবশ্যই বলতে হবে আগামীতে সাহিত্য চর্চার প্রধানতম পাদপীঠ হয়ে উঠবে ওয়েবম্যাগ।
চিন্তাসূত্র: আমাদের দেশে পুরস্কার নিয়ে অনেক রকম কথা শোনা যায়। কেউ কেউ বলছেন, পুরস্কারের সঙ্গে নগদ অর্থ না থাকলে তার মূল্য নেই, আপনি কী মনে করেন?
মালেক মুস্তাকিম: আমাদের দেশের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিকে আমরা একসূত্রে প্রোথিত করতে পারিনি। এখানে যারা শিল্প সাহিত্য করি, তাদের মধ্যে নানাবিধ বিভাজন এবং সিন্ডিকেট রয়েছে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ভালো কাজকে উৎসাহিত তো করতেই পারি না বরং নানারকম সমালোচনায় লিপ্ত হই। নিজেরাই নিজেদের গ্রুপের লোকজনকে পুরস্কার দেই এবং এক ধরনের গর্ব বোধ করি। বড় বড় পুরস্কারগুলো নিয়েও নানা রকম বিতর্ক শুনতে পাই। এর ফলে পুরস্কারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের গল্প ও সমালোচনার জন্ম হয়। পুরস্কার দেওয়ার যে প্রকৃত উদ্দেশ্য, তা ব্যাহত হয়। অনেক সময় প্রকৃত লেখককে উৎসাহ ও সম্মান দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে দুই-একটি ক্ষেত্র ছাড়া এর ব্যতিক্রম কিন্তু অনেক রয়েছে।
সাহিত্য পুরস্কারের সঙ্গে নগদ অর্থের কোনো সংশ্লেষ নেই। একজন লেখক কখনোই অর্থ কিংবা পুরস্কারের জন্য লেখেন না। তবে পুরস্কার তাকে উৎসাহী করে তোলে। আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। পুরস্কারের সঙ্গে নগদ অর্থ থাকা না থাকা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। এটি পুরস্কারের মানকে ছোট কিংবা বড় করতে পারে না। যোগ্য মানুষকে পুরস্কৃত করতে পারাটাই যেকোনো পুরস্কারের সার্থকতা বলে আমি মনে করি।
চিন্তাসূত্র : কারও কারও মতে, পুরস্কার দেবে বড় বড় নামিদামি প্রতিষ্ঠান, ছোট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেওয়ার পুরস্কারকে তারা গুরুত্বহীন বলছেন। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
মালেক মুস্তাকিম: দেখুন শুরুতেই বলেছি, পুরস্কার একটি স্বীকৃতি। ছোট বড় মাঝারি যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পুরস্কার দিতে পারে এবং কোনো পুরস্কারকেই ছোট করে দেখার কিছু নেই। সাহিত্য পুরস্কার দিয়ে অথবা নিয়ে কেউ যদি বড় লোকি দেখাতে চায়, তাহলে তা সেই প্রতিষ্ঠানের মানষিক দৈন্য ছাড়া আর কিছু নয়। সেক্ষেত্রে কোনো পুরস্কার না দেওয়া ভালো। আমি আবারও বলতে চাই, পুরস্কার খুব বড় কিছু নয়। তবে সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চায় অনুপ্রেরণা হিসেবে পুরস্কারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।