[জীবনানন্দের বরিশালে জন্ম কবি হেনরী স্বপনের। ১৯৬৫সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছেন এই কবি। জন্মাবধি এখানের মাটি কামড়েই আছেন একটি এনজিওতে কর্মরত হয়ে। স্ত্রী মারিয়া লাকী সরকার ও একমাত্র কন্যা কসটিকা চিনতী। এ-পর্যন্ত ৮টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। এগুলো হচ্ছে—’কীর্তনখোলা’, ‘মাটির বুকেও রৌদ্রজ্বলে’, ‘বাল্যকাল ও মোমের শরীরে আগুন’, ‘জংধরা ধুলি’, ‘ কাস্তে শানানো মোজার্ট’, ‘ঘটনার পোড়ামাংস ‘, ‘হননের আয়ু’ ), ‘উড়াইলা গোপন পরশে’। সম্পাদনা করছেন জীবনানন্দ কবিতাপত্র। এই কবি সম্পাদকের সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন লিটলম্যাগ গন্ধম সম্পাদক মালেকুল হক।]
লিটলম্যাগাজিন সম্পাদনায় এলেন কেন? এর সমস্যা ও সম্ভাবনার দিকগুলো কী কী হতে পারে?
লিটলম্যাগাজিন সম্পাদনা প্রথমত, ছাপার স্পেসজনিত সমস্যার ফল। প্রশ্ন হলো, কারা লিটলম্যাগাজিন সম্পাদনা করেন? এক অংশ কাগজে জায়গা পান না বলে, অন্য অংশ তথাকথিত কাগজে জায়গা নেন না বলে। যারা জায়গা পান না, তাঁরা শো-বিজ-আক্রান্ত বিশেষণ লোভী। (ড্যাসের কবি—ড্যাসের সম্পাদক হতে চান) সাহিত্য নির্মাণ তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়।
অন্য অংশ নতুন ধরনের ক্ল্যাসিক সাহিত্য তৈরি করার চিন্তায় থাকেন; অভিনব উচ্চারণ নিয়ে লিটলম্যাগাজিনকে সঙ্গী করে এগোন। কারণ, আর কিছু নয়। ওইসব কাগজ যেমন এই লেখকদের চেনে না। এইসব লেখকও চিন্তাবিশ্বের বহুমাত্রিকতার কারণে ওইসব কাগজ বর্জন করেন।
আমি দ্বিতীয় পক্ষের সম্পাদকদের দলে। কেননা, সম্পাদনা আমার কাছে মোটেই গৌণ আনন্দ নয়! হস্তমৈথুনের আনন্দের মতো নয়। লিটলম্যাগাজিন প্রক্রিয়ায় আমার বেসাতিটা আত্মসমীক্ষণের। সেইসব সৎ গোষ্ঠীতন্ত্রহীন উৎকৃষ্ট লেখকের শ্রেষ্ঠ লেখাটি পাঠ করা এবং সেইসব উৎকৃষ্ট পাঠককে লিটলম্যাগের সঙ্গে ইনভলভ করাই হচ্ছে আমার সম্পাদনা চিন্তা।
________________________________________________________________________________________
আজকাল লিটলম্যাগাজিনের নামে অধিকাংশই হচ্ছে—করে খাওয়ার ধান্দাবাজি। লিফট নিচ্ছে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে। মোটা কাগজে রদ্দি ছাপিয়ে পৃষ্ঠাভরে পায়ের তলায় রেখে ওপরে ওঠার দেয়াল টপকাচ্ছে। এন্টি-এস্টাবলিশমেন্ট আওড়াতে-আওড়াতে এরাই আবার সেই এস্টাবলিশমেন্ট সুবিধাধী ভেঙ্গে খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের দপ্তরে-দপ্তরে।
________________________________________________________________________________________
নীরিক্ষানির্ভর—একগুঁয়ে কিন্তু নয়—মৌলিক বরং বাণিজ্যিকও নয়—বরং পুরোপুরি কনট্রিবিউশন-ই হচ্ছে আমার প্রতিটি সম্পাদনার দায়িত্ব। অবশ্য লিটলম্যাগাজিন করছি সেই বিপ্রতীপ সৌন্দর্য ও আনন্দ খুঁজে পেতে। কিন্তু লিটলম্যাগের সমস্যা মূলত, সেই প্রথম পক্ষের গণ্ডমূর্খরা। যারা দলবাজি—প্রোপাগান্ড করেন; পাঠককে লিটলম্যাগাজিন সম্পর্কে ভুল ধারণা সরবরাহের মাধ্যমে সমস্যা তৈরি করেন। আরও সমস্যা হচ্ছে—কনসেপ্ট! সম্পাদকীয় লেভেল পৃষ্টপোষকতায় কতটা কন্ট্রোল ক্ষমতা আছে কিংবা নেই।
আর সম্ভাবনা?! আমরা সম্ভব করতে পারছি কি না—এটাই প্রশ্ন। না কি নিজেদের অক্ষমতায় কলুষিত করছি নির্মাণকে। আর এইসব মারাত্মক ব্যালান্স প্রতিক্রিয়াকে কব্জা করে, কোনও কিছুকে তোয়াক্কা না করে—ক্রুফোর সেই যে একধরনের প্লানেড ভায়োলেন্স অর্থে এগিয়ে যাওয়াই হচ্ছে লিটলম্যাগাজিনের সম্ভাবনা ও সুন্দরতম দিকগুলো। হয়তো সময় একদিন বিচার করবে এই সম্ভাবনাগুলোরও।
একটা সময় লিটলম্যাগাজিন নিয়ে আন্দোলন একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। এখন তা পর্যবসিত হয়েছে পাওয়া-পাইয়ে দেওয়ার ধান্দাবাজি এবং বামন সাজার পৈতা হিসেবে। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার চটকদার কথা বলতে-বলতে বিজ্ঞাপননির্ভর কাগজ নিজেই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে, এই অভিযোগের আলোকে আপনার অভিমত…
কে, কিভাবে প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞা দেন জানি না। সাহিত্যকর্মী ও সম্পাদক হিসেবে আমার মনে হয়—একটি লিটলম্যাগাজিন যদি চিন্তার পথগুলো আটকে দেয়, নার্সিসিজম এবং দলবাজিতে আক্রান্ত হয়, সাহিত্য নির্মাণে মনযোগ না দিয়ে, লেখকবিরোধ সরবরাহ করে এবং কোনো একটি নিদৃষ্ট তত্ত্বে দ্রবীভূত হয়ে সাহিত্যবিচারে আমলাতন্ত্র আরোপ করে, তবে ওই লিটলম্যাগাজিন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। যার রূপ ভয়াবহ! প্রথম প্রশ্নের প্রথম অংশের চেয়েও ভায়াবহ !
বিশ্বাসযোগ্য লিটলম্যাগাজিনের দুর্দিন এখন। চারদিকে কনডম বিজ্ঞাপনের মতোই আলোআঁধারির ধূম্রজাল। সম্পাদক-কবি-লেখক সবাই-ই আজকাল জর্জরিত এই জালে। আমি যেমন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে চাই না, তেমনি বিরোধিতার কথাও বলি না। আবার লিটলম্যাগাজিনের আন্দোলন-ফান্দোলনও বুঝি না। তবে লিটলম্যাগাজিনের একটি ট্রাজেডির জগৎ আছে। এর ভেতরের দুঃখভোগ-ব্যথা-বেদনাসহ যেসব ক্ষত আছে, যা কেবল সে সব লিটলম্যাগাজিনের মরমি-সৎ-সমব্যথীর খবর রাখে। কিন্তু আজকাল লিটলম্যাগাজিনের নামে অধিকাংশই হচ্ছে—করে খাওয়ার ধান্দাবাজি। লিফট নিচ্ছে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে। মোটা কাগজে রদ্দি ছাপিয়ে পৃষ্ঠাভরে পায়ের তলায় রেখে ওপরে ওঠার দেয়াল টপকাচ্ছে। এন্টি-এস্টাবলিশমেন্ট আওড়াতে-আওড়াতে এরাই আবার সেই এস্টাবলিশমেন্ট সুবিধাধী ভেঙ্গে খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানের দপ্তরে-দপ্তরে।
যে অর্থে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা, তা তো আমার নির্মাণ ও সম্পাদনার মধ্যে থাকেই। দখল এবং বর্জন কোনোটাই শুভ নয়। বরং আমার পথ খোলা। বিজ্ঞাপন ও প্রতিষ্ঠানের (তথাকথিত) লেখক যদি আমার চিন্তা এবং কাগজকে শোষণ করে পেছন দিকে নিয়ে যায়। তবে ওই বিজ্ঞাপন অবশ্যই বিজ্ঞাপন এবং ওই লেখক অবশ্যই প্রতিষ্ঠান। যেখানে কৃত্রিম বিরোধিতায় নিজেই বিজ্ঞপিত করা হয়—নিজের বেশ্যালয়ে। যার ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে, আজকের ভয়াবহ-ভয়ঙ্কর অসুখের নাম—এইডস। এই দুরারোগ্য ব্যধিতে নিজে তো নিঃশেষ হচ্ছেনই—ছড়াচ্ছেন আরও বেশি। যা লিটলম্যাগাজিনকে ক্ষতিগ্রস্ত-কলুষিত করছে প্রতিনিয়ত।
লিটলম্যাগাজিন গোষ্ঠীবদ্ধ সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে যেতে পারে না—আত্মচর্চার ঘেরাটোপে আটকে পড়ে?
সব লিটলম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত খাটে না। এক্ষেত্রে ঢালাও দুর্নাম চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কোনো কোনো লিটলম্যাগাজিন এর বাইরে আছে।
আমার মনে হয়, লেখকের এখন একা হওয়ার সময়। গোষ্ঠীবদ্ধ নির্মাণ—সংকীর্ণতা এবং আত্মচর্চার ঘেরাটোপে আটকে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওই পত্রিকাগুলোকে কি লিটলম্যাগাজিন বলা যাবে? লিটলম্যাগাজিনের বরং এই প্রবণতাগুলোই ভাঙার কথা। অথচ সে নিজেই আক্রান্ত। যে সব পত্রিকা এই শৈবালে আটকে গেছে তার লেখককুল(!) খুব নিকট সময়ে নির্মাণ সংকীর্ণতায় বিদ্ধ হয়ে যাবেন। আমার কখনো কখনো এ-ও মনে হয়—লেখক থেকে লেখকের দূরত্ব থাকা উচিত— মাইল-মাইল।
সম্পাদনা এই দূরত্ব কমিয়ে দেয়। যে কারণে সেই লেখক—সম্পাদক চিন্তা এবং অতিক্রমগুলো ব্যক্তি শোষণে আটকে যেতে পারে। সম্পাদনা করতে গিয়ে পাঠের অনেক ক্ষতিকর দিক আছে। লেখকের কী মাত্রায় একা হওয়া দরকার, তা বোঝাতেই এই স্পর্শকাতর কথাগুলো বলা। কারণ লিটলম্যাগাজিন সম্পাদনা এখন তো ফ্যাশনে আটকে গেছে। কিংবা পাঠক যোগাযোগের বদলে, লেখক যোগাযোগের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছেন। যা অনেক লেখকের ক্ল্যাসিক নির্মাণের নীরবতাকে ভেঙে দেয়। নৈঃশব্দ্যের ধাঁধায় ফেলে দেয়।
লিটলম্যাগ এবং বাণিজ্যিক পত্রিকা দ্বন্দ্ব, আছে কি না? এটা কি একে-অন্যকে অতিক্রম করতে না পারার কৌশল?
আমার মনে হয়, লিটলম্যাগাজিন বাণিজ্য পত্রিকাকে মনে রেখে সম্পাদিত হয় না। লেখকের কালকে অতিক্রম করার প্রবণতা থেকেই এর উৎপত্তি। বাণিজ্যিক পত্রিকার সঙ্গে এর দ্বন্দ্ব-শত্রুতা এর কারণ নয়—পরিণতি! আরও মজার বিষয় বাণিজ্যিক পত্রিকাকে আমলে এনে তাকে শত্রু ভাবায়, প্রতিপক্ষ বললে লিটলম্যাগাজিনের নিজস্বতা ও সম্ভ্রম হারায়। নিজেই সে নিজেকে ছোট করে।
হয়তো বা যদি বাণিজ্যিক পত্রিকাগুলো মনে করত যে, লিটলম্যাগাজিন তার শত্রু, তাতে বরং তার দেউলিয়া অবস্থা প্রমাণিত হতো। আমার অবাক লাগে এই ভেবে—লিটলম্যাগাজিন সম্পাদকরা এ সব কথা বলেন, লিটলম্যাগাজিনের সম্ভ্রমহানি করে বাণিজ্য পত্রিকাকে সন্মান দেখান কেন? লিটলম্যাগাজিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক পত্রিকাকে এই দ্বন্দ্বে লিপ্ত করা মূর্খ সম্পাদকের জ্ঞানচর্চা বলা যায়।
________________________________________________________________________________
এখানকার (বাংলাদেশের) লিটলম্যাগাজিনের সমস্যা অনেক। প্রতিশ্রুতিশীল বহু লেখক, যারা তাদের চরিত্র হারিয়ে নিজেদের অসম্ভব করে তুলছেন। অথবা এই যে তারা আর ক্ল্যাসিকচর্চার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন না। এ সবই একগুঁয়ে চর্চার ফল।
________________________________________________________________________________
তবে অতিক্রম? একটি লিটলম্যাগাজিন অন্য একটি লিটলম্যাগাজিনকে বিভিন্নভাবে অতিক্রম করে যেতে পারে। আমাদের মধ্যে এই অতিক্রম করার প্রবণতা তো দূরের কথা, উল্টো একটি লিটলম্যাগাজিন অন্য একটি লিটলম্যাগাজিনকে সহ্য করার ক্ষমতাই অর্জন করেনি। বরং নিজের চরিত্র হারিয়ে অন্যের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করাই এর মূল কাজ। যে জন্য এখন হামেশাই মেঘে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে মন্ত্রময় সাহিত্য নির্মাণ—নক্ষত্রের পথ।
সাহিত্যনির্ভর প্রচুর লিটলম্যাগাজিন নতুনদের আত্মপ্রকাশ-বিকাশ-প্রতিষ্ঠার নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। ইদানিং সাহিত্যমূর্খ বামনরা এর পাতায়-পাতায় বসে আছেন। এই বিষয়ে আপনার অভিমত…
এই বামনরা চিন্তাকে খুলে দেন না। আটকে দেন। লিটলম্যাগাজিনের সাহিত্য বিচার, একজন বামন করবেন—ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। এই সাহিত্যবিচার করবে কাল—মহাকাল। যত বেশি পারা যায় লিটলম্যাগাজিনে নতুনদের খুব বেশি আশ্রয় দেওয়া উচিত। সঙ্গে পুরনোরা যদি নতুন কিছু করেন; তাদেরও সামনে আনা। সম্মানা করা। যদিও কিছু সাহিত্যমূর্খ বামনের পাল্লায় পড়ে পিছু হটছে নতুন চিন্তা। নতুন সাহিত্য সৃষ্টির উন্মাদনা হারাচ্ছে।
অন্যদিকে লিটলম্যাগাজিন হারিয়ে ফেলছে তার চরিত্র। বামনরা ভোগ করছেন নতুনদের। তারা পাতায় পাতায় বীজ-নষ্টের নাশকতা ছড়াচ্ছেন। দেউলিয়া হওয়ার ভয়ে নিজেকে মুখ্য করে তুলছেন। যে চিন্তাকে নিয়ন্ত্রিত করে বামনরা তার একমাত্রিক চিন্তায় আটকে ফেলেন। তারা বহুরূপী প্রতিষ্ঠানের হয়েই এসব করছেন।
লিটলম্যাগীয় প্রতিষ্ঠানবিরোধি–ক্রোধমিশ্রিত নতুন পথের সন্ধানকারী তরুণ লেখকেরা কেন তাদের পোষ্য হন? কেনই বা তাদের বৃত্তের দুয়ারে ঘুরপাক খাচ্ছেন। কেন তারুণ্যের এই আপোষকামিতা?
দুই বাংলার লিটলম্যাগাজিন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই…
আমার বিশ্বাস দুই বাংলার অনেক লিটলম্যাগাজিন-ই লিটলম্যাগের চরিত্র হারিয়ে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যদিও এর কারণ ভিন্ন ভিন্ন। ওপার বাংলার লিটলম্যাগের বিষয় বৈচিত্র্য আছে সত্য। কিন্তু বিষয়ের সঙ্গে যেসব লেখক জড়িত তাদের চিন্তাকাঠামো অনেকাংশেই গতানুগতিক। তাদের চিন্তা অতীত-ক্ল্যাসিক-অপভ্রংশ। ফলে তাদের নতুন ক্ল্যাসিক তৈরির ক্ষেত্রে নতুন পথের সন্ধান নেই। নেই ক্রোধও। তাদের লিটলম্যাগাজিনের বিষয়গুলোর মধ্যে বি-মানবায়ন খুব বেশি নেই। এক ধরনের একমাত্রিক জীবনমুখী ধারা ওখানকার লেখকদের চালিত করে।
মিডলক্লাসের গার্হস্থ্য নিয়ন্ত্রিত বিষয়গুলোর মধ্যে ওখানকার লিটলম্যাগাজিনের লেখকরা ঘুরপাক খান। তাছাড়া মুড নিয়ন্ত্রিত সাহিত্যের চেয়ে প্রতিবেদন এবং ন্যারেট করার প্রবণতা অনেক বেশি। পশ্চিম বাংলার লিটলম্যাগাজিন মারা গেছে লেখক আধিক্যে। যারা সবাই চিন্তাবিশ্বে শারদীয় একমাত্রিক। যাতে ক্রিয়েটিভ কোনো অভিনব মন্ত্রময় পথের সন্ধান অন্তত খুঁজে পাওয়া যায় না।
এখানকার (বাংলাদেশের) লিটলম্যাগাজিনের সমস্যা অনেক। প্রতিশ্রুতিশীল বহু লেখক, যারা তাদের চরিত্র হারিয়ে নিজেদের অসম্ভব করে তুলছেন। অথবা এই যে তারা আর ক্ল্যাসিকচর্চার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন না। এ সবই একগুঁয়ে চর্চার ফল।
বিভিন্ন রকমের ম্যানুফেস্টা-স্লোগান-গোষ্ঠীবদ্ধ আকাঙ্ক্ষা এখানকার লেখকদের ক্ষয় করে গেছে। এ-ও বলা যায়, লেখক হওয়ার কমিটমেন্ট ছিল না বলেই উত্তেজনা এবং সাময়িক প্রাপ্তি তাদের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্রে এখানকার লিটলম্যাগাজিন সেই ভূমিকা রাখতে পারেনি। লেখক হওয়ার অসীম যাত্রায় লিটলম্যাগাজিন অনেক ভালো পাঠক তৈরি করেছে সত্য! কিন্তু মৌলিক লেখক তেমন সৃষ্টি করতে পারেনি। মূলত, এখানকার লিটলম্যাগাজিন মরে গেছে। মরে যাচ্ছে, লেখক শূন্যতায়। যার জন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া বহু লিটলম্যাগাজিন যেমন দায়ী, তেমিন দায়ী লেখক-সম্পাদকও।