গোলাম কিবরিয়া পিনু—কবি।উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: এখন সাইরেন বাজানোর সময় (কবিতা), ১৯৮৪; খাজনা দিলাম রক্তপাতে (ছড়া), ১৯৮৬; পোট্রেট কবিতা (কবিতা), ১৯৯০; ঝুমঝুমি (ছড়া), ১৯৯৪; দৌলতননেছা খাতুন (প্রবন্ধ), ১৯৯৯; মুক্তিযুদ্ধের ছড়া ও কবিতা (ছড়া ও কবিতা), ২০১০; বাংলা কথাসাহিত্য: নির্বাচিত মুসলিম নারী লেখক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (গবেষণা), ২০১০ ও নিরঙ্কুশ ভালোবাসা বলে কিছু নেই (কবিতা), ২০১৫। সম্প্রতি সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ নিয়ে চিন্তাসূত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন এই কবি।
চিন্তাসূত্র: একসময় যারা দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ঠাঁই পেতেন না অথবা যারা দৈনিকে লিখতে স্বস্তি বোধ করতেন না, তারা লিটলম্যাগ বের করতেন। সম্প্রতি লিটলম্যাগের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বিপরীতে বেড়েছে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ। আপনি কি মনে করেন, লিটলম্যাগের জায়গাটাই এই ওয়েবম্যাগগুলো দখল করছে?
গোলাম কিবরিয়া পিনু: দৈনিক পত্রিকায় অনেকে লিখেও লিটলম্যাগে লিখে থাকেন, আবার কেউ শুধু লিটলম্যাগে লিখতে আগ্রহী থাকেন। অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ তৈরি করার সুযোগ সহজ হওয়ায়, এমন মাধ্যম জনপ্রিয়ও হচ্ছে। এর কারণ বহুবিধ—মানুষ প্রযুক্তির সুযোগ পেয়ে সহজে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তা পড়তে পারেন সহজে, এর অলঙ্করণও ছাপা লিটলম্যাগের চেয়ে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব হচ্ছে, দ্রুত তা প্রকাশ করাও সম্ভব হয়, লেখা নিয়ে দ্রুত-তাৎক্ষণিক অভিমত ব্যক্ত করা যায়। ধীরে ধীরে কাগজে ছাপা লিটলম্যাগের জায়গাটা অনেকটা অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ দখল করছে, তা ভবিষ্যতে আরও দখল করতে পারে। আমরা জানি—ইতোমধ্যে কাগজে ছাপা পত্রিকা ও সাময়িকী বিভিন্ন দেশে বন্ধ হয়ে গেছে। এই অভিঘাত নতুনের আহ্বান তৈরি করছে, তা তো আর রোধ করা যাবে না পুরোপুরি!
চিন্তাসূত্র: একসময় লেখাপ্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে, পাঁচ থেকে দশ বা তারও বেশি ফর্মার লিটলম্যাগ বের হতো। এতে খরচও হতো বেশ। কিন্তু বর্তমানে ওয়েবম্যাগে সে খরচটি নেই। আপনি কি মনে করেন, অর্থব্যয়ের কারণ না থাকায় ওয়েবের দিকে ঝুঁকছেন সাহিত্যকর্মীরা?
গোলাম কিবরিয়া পিনু: এখনো দশ বা তারও বেশি ফর্মার লিটলম্যাগ বের হতে দেখা যায়, বিশেষ সংখ্যা বা বিশেষ বিষয় নিয়ে, এই ধারা হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে বজায় থাকবে, তবে নিয়মিত লিটলম্যাগ বা সাহিত্য-পত্রিকা বের করার খরচ বেশি হওয়ায় ওয়েবম্যাগে সাহিত্যকর্মীরা ঝুঁকছেন বেশি বা ঝুঁকবেন আরও।
চিন্তাসূত্র: কারও কারও মতে, বেশিরভাগ ওয়েবই সম্পাদনা ছাড়াই লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকী বানানও দেখা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
গোলাম কিবরিয়া পিনু: তা ঠিক, অনেক ওয়েবম্যাগাজিন সম্পাদনা বা মনোযোগ সহযোগে বের হতে দেখা যায় না। এর কারণ—সহজলভ্যতা। তবে এসবের ইমেজ ভালো না হলে প্রতিযোগিতায় কিংবা সাহিত্য-শিল্পপ্রিয় মানুষের কাছে উল্লেখযোগ্যভাবে গ্রহণযোগ্যও হবে না।
চিন্তাসূত্র: একসময় কারও পকেটে একহাজার/বারো শ টাকা থাকলেই তিনি একটি লিটলম্যাগ করার সাহস দেখাতেন। এখন ১৫/১৬ শ টাকা পকেটে থাকলেই কেউ কেউ ওয়েবম্যাগ করছেন, কেউ কেউ বিনেপয়সাতেই ব্লগজিন খুলছেন, লেখা সংগ্রহ করছেন। এ ধরনের ওয়েবজিন বা ব্লগজিন বের করার কারণ কী বলে মনে করেন আপনি? এটা কি নিছকই নিজের কর্তৃত্ব প্রকাশের উপায়, না কি সাহিত্যপ্রেমের জন্য?
গোলাম কিবরিয়া পিনু: সংকীর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে বের করে ভালো অবস্থান তৈরি করা সম্ভব নয়, মানুষের পর্যবেক্ষণ শক্তি রয়েছে। তা দিয়ে তো তারা বিবেচনা করে থাকেন। ফাঁকি ও সংকীর্ণ ভেদবুদ্ধি দ্বারা সাহিত্যপ্রেম জোরালো বা গভীর হয় না বলেই মনে করি, নিছক কর্তৃত্বের জন্য ওয়েবম্যাগাজিন বের করলে তা সহজে দ্রুত ইমেজ হারাবে। আমরা লক্ষ করছি, ইতোমধ্যে অনেক ওয়েবম্যাগাজিন হারিয়ে গেছে। ওয়েবম্যাগাজিন বের করা সহজলভ্য হওয়ায় তাকে আরও গভীর ও অন্যান্য অনেক বিবেচনা নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
চিন্তাসূত্র: আপনি কি মনে করেন, ওয়েবম্যাগ-ওয়েবজিন-ব্লগজিন মানুষকে বইপাঠবিমুখ করে তুলছে?
গোলাম কিবরিয়া পিনু: ওয়েবম্যাগাজিন বা ওয়েবম্যাগ কাগজে ছাপা বই থেকে দূরে নিয়ে গেলেও পাঠযোগ্য বিষয় কিন্তু বিভিন্ন ওয়েব-ফর্ম থেকে মানুষ গ্রহণ করছে। এটা প্রযুক্তির অভিঘাত, তা আরও চোখ মেলে দেখতে হবে।
চিন্তাসূত্র: আপনি নিজে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতা না লিটলম্যাগ না এই ওয়েবম্যাগে লিখতে /পড়তে পছন্দ করেন?
গোলাম কিবরিয়া পিনু: আমি এখনো সব মাধ্যমেই পড়ি ও লিখি। আমার লক্ষ থাকে, এগুলোর কোনটা মর্যাদাপূর্ণ, কোনটা ভালো লেখা ছাপে, কোনটার সম্পাদক কতটা যোগ্য বা নৈর্ব্যক্তিকভাবে লেখা ছাপে, দৃষ্টিভঙ্গি কেমন—এসব ছাড়াও আরও কিছু বিবেচনা করি। এসব বিবেচনার মধ্যে দিয়ে আমি এগুলোর কোনোটা কাছে টানি বা দূরে রাখি।
চিন্তাসূত্র: একটি লিটলম্যাগ দুই থেকে তিন শ কপি প্রকাশিত হয়, দৈনিকের সাহিত্যপাতাও একটি সীমিত পাঠকের কাছে যায়। কিন্তু অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা যায় লাখ লাখ ইউজারের কাছে। সাহিত্যচর্চা, প্রসার ও প্রচারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
গোলাম কিবরিয়া পিনু: অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা বহুবিধ সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের সম্মুখে দাঁড়িয়েছে, তা আমরা কতটুকু সফলভাবে ব্যবহার করতে পারছি, তার ওপরই নির্ভর করবে লিটলম্যাগ ও দৈনিকের সাহিত্যপাতার বিকল্প অনলাইন সাহিত্য পত্রিকার অস্তিত্ব ও বিকাশ। মনে রাখা উচিত, দৈনিকের সাহিত্যপাতা বা পত্রিকাও তাদের ওয়েব-ভার্সন রাখছে। সে কারণে এক ধরনের প্রতিযোগিতা থাকছেই। তবে, অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা সার্কুলেশনে অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে, তবে বিভিন্নভাবে গ্রহণযোগ্য করার ওপরই তার সফলতা নির্ভর করে।
চিন্তাসূত্র: ওয়েবম্যাগের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকলে একসময় কি দৈনিকের সাহিত্যপাতা গুরুত্ব হারাবে?
গোলাম কিবরিয়া পিনু: শুধু ওয়েবম্যাগ বাড়লেই হবে না, গুণগতভাবে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ হয়ে প্রতিযেগিতায় আসলেই, তা বিবেচিত হবে, নচেৎ নয়।
চিন্তাসূত্র: একটি ওয়েবম্যাগকে আপনি কিভাবে দেখতে চান? অর্থাৎ একটি ওয়েবম্যাগে আপনি কী ধরনের লেখা পড়তে চান?
গোলাম কিবরিয়া পিনু: একটি ওয়েবম্যাগ অনেক ধরনেরই হতে পারে—কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ছাড়াও আরও অনেক কিছু নিয়ে। সৃজনশীলতার বহু স্তর ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য একজন বহুদর্শী ও যোগ্য সম্পাদক প্রয়োজন, সেইসঙ্গে কিছু সহযোগী। সামর্থ্য ও শ্রম, গভীর পর্যবেক্ষণ দিয়ে ভালো লেখা সংগ্রহ করা ও বিষয় নির্ধারণ করা এবং লেখক আবিষ্কার করা সমীচীন। সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ হলে সাহিত্যের বিভিন্ন দিক ও বিষয় নিয়ে তা সাজানো দরকার।