ফারহানা রহমান। জন্মেছেন ১৯৭২ সালের ১৩ আগস্ট। তিনি একাধারে কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, চলচ্চিত্র সমালোচক, অনুবাদক ও কবি। প্রকাশিত কবিতা গ্রন্থ ৫টি, প্রবন্ধ ১টি, ছোটগল্প-গ্রন্থ ১টি। কথাসাহিত্যে পেয়েছেন এবার ‘চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার’। পুরস্কারপ্রাপ্তি ও সাহিত্যচর্চা নিয়ে চিন্তাসূত্রের পক্ষ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছেন হারাধন কর্মকার।
চিন্তাসূত্র: কথাসাহিত্যে এবার পেলেন চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার। কেমন লাগছে?
ফারহানা রহমান: ধন্যবাদ। যেকোনো পুরস্কার বা সম্মাননাই একধরনের ভালোবাসার স্বীকৃতি। একজন লেখকের জন্য এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে সম্মানের। ভালো না লাগার তো কারণ নেই। খুব ভালো লাগছে।
চিন্তাসূত্র: আপনি দীর্ঘদিন ধরে লিখছেন। লিখতে গিয়ে অনেকের লেখাই পড়েছেন। একটি সার্থক লেখার গুণাবলি কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন? গল্প লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক কী বলে মনে করেন?
ফারহানা রহমান: একজন লেখকের ভেতর বসবাস করতে হবে নিদ্রাহীন দুইটি সত্তাকে। একটি প্রতিভাবান শিল্পীর, অন্যটি নিপুন মিস্তিরির। শিল্পীর দিকটা দৃষ্টিনির্ভর আর মিস্তিরির দিকটা বুদ্ধিনির্ভর। দৃষ্টি আর বুদ্ধি, এই দু’ইয়ের রসায়নে সৃষ্টি হয় একটি সার্থক লেখা। কথাগুলো আমার নয়। সৈয়দ শামসুল হকের। তিনি সার্থক লেখার উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘চেয়ারের চারটে পা যদি মেঝের ওপর ঠিকমতো নাই বসলো তো সে চেয়ার দেখতে যতই মনোহর হোক আমার তাতে কাজ নেই। চেয়ার বসবার জন্যে। মেঝের ওপর জুৎমতো সেটি বসতে হবে, পা চারটে স্থিরমতো থাকতে হবে, কোথাও একটু টলমল করবে না; তবে সে চেয়ারে আমি বসবো। লেখাটিকেও মিস্তিরির হাতের ওই চেয়ারের মতো পোক্ত হতে হবে।’
একটি ভালো গল্প লেখার জন্য যেমন দরকার মানুষের জটিল মনস্তত্ত্ব বুঝতে পারার ক্ষমতা, তেমনি দরকার প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা, রাজনীতি, অর্থনীতি, দর্শন বোঝার দৃষ্টিভঙ্গিও। ভালো লেখককে আসলে হতে হয় জ্যাক অব অল ট্রেডস অ্যান্ড মাস্টার অব রাইটিং। আর থাকতে হবে প্রখর কল্পনাশক্তি। লেখককে বুঝতে হবে, তিনি যা দেখছেন বা লিখতে চাইছেন তার সবকিছুই অতীতে লেখা হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতেও লেখা হবে। তাহলে একজন লেখক তার পাঠককে নতুন কী দিতে পারেন? সত্যি কথা বলতে, কিছুই নয়। তবে তিনি যেটা করতে পারেন, সেটা হচ্ছে পাঠককে আকৃষ্ট করা। সেটা সম্ভব শুধু বিষয়টি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখার মাধ্যমে। ভালো লেখার সঙ্গে আপনি একটি বিস্ফোরণের তুলনা করতে পারেন। একটি শক্তিশালী ডিনামাইটকে দেখে যেমন বোঝার উপায় নেই তার ধ্বংসের ক্ষমতা কতটুকু, শুধু বিস্ফোরণের পরই সেটা বোঝা যায়। তেমনি একটি ভালো লেখা পড়েও পাঠকের মধ্যে গভীর বিস্ময় জাগে। তার মধ্যে অজান্তেই কিছু পরিবর্তন ঘটে যায়।
চিন্তাসূত্র: আপনি সাহিত্যের অনেক শাখায় কাজ করছেন। তাই সমকালীন কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
ফারহানা রহমান: সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনেক নতুন নতুন কাজ হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে লেখক হয়ে ওঠার জন্য যে প্রস্তুতি পর্ব, সেটা নতুন লেখকদের মধ্যে কম হচ্ছে বলেই মনে হয়। কবিতার ক্ষেত্রে বলা দরকার, কবিতা লেখা শিখতে হয়। মূলত লেখালেখির পুরো মাধ্যমটাই শিক্ষার বিষয়। সেইসঙ্গে থাকতে হবে লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুশীলন। এজন্যই লেখাকে বলা হয় গুরুমুখী বিদ্যা। আর লেখকের প্রধান গুরু হচ্ছে বই। লিখতে হলে পড়তে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আর কবিতা লেখার জন্য প্রস্তুতি অত্যাবশ্যক। কারণ এখানে আঙ্গিক-প্রকরণের ব্যাপার আছে। কবিতার অপরিহার্য উপাদান ছন্দ। কবিতায় সেটির সঠিক ব্যবহার দরকার। সেইসঙ্গে দরকার চিত্রকল্প, উপমা, অনুপ্রাস, রূপকের সঠিক প্রয়োগ ও সঠিক রসায়ন। এদিকে গল্প উপন্যাসের মতো কবিতাতে তো সবকিছু খুলে বর্ণনা করাও সম্ভব নয়। সেখানে থাকতে হবে কিছুটা গোপনীয়তা। কিন্তু সেই গোপনীয়তা যেন আবার পাঠকের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে না পড়ে। তাও দেখতে হবে। এক্ষেত্রে জীবনানন্দের সেই বিখ্যাত উক্তির কথা উল্লেখ কড়া যেতে পারে, ‘সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি। কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা রয়েছে এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্য-বিকীরণ তাদের সাহায্য করছে।‘
গল্পের ক্ষেত্রে বলতে চাই, এখানে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে। কোনো কোনো গল্পের ভেতর গল্পই খুঁজে পাই না। কোথাও কোথাও ভাব আছে কিন্তু ভাষা নেই। কোথাও আবার অতিশয় ভাষার কচকচানি। প্রবন্ধের ক্ষেত্রেও তাই। এককথায় বলতে গেলে বলা যায়, অনেক লেখা হচ্ছে কিন্তু ঠিকমতো কোথাও সেই বিস্ফোরণ হচ্ছে না।
চিন্তাসূত্র: আপনার সমসাময়িক ও অনুজদের মধ্যে কার কার গল্প আপনাকে আকৃষ্ট করে, কার কার প্রবন্ধ-কবিতা পড়েন। কিংবা কাকে কাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
ফারহানা রহমান: চেষ্টা তো করি সমসাময়িক ও অনুজ গল্পকারদের সবার গল্পই পড়তে। এখন তো অনেক গল্পকারই খুব ভালো গল্প লিখছে। ইমতিয়ার শামিম, মশিউল আলম, প্রশান্ত মৃধা, আহমাদ মোস্তফা কামাল, হামীম কামরুল হক, কামরুন নাহার শীলা, মোজাফফর হোসেন, কুলদা রায়, শাহনাজ মুন্নী, অদিতি ফাল্গুনী গায়েন, সাদিয়া সুলতানা, রুমা মোদক, ম্যারিনা নাসরীন, ফাতেমা আবেদিন নাজলা, মেহেদী উল্লাহ, আফসানা বেগম, রুখসানা কাজল, জয়দীপ দে শাপলু, আনিফ রুবেদ, আশান উজ জামান, কিজি তাহনিনসহ অনেকের গল্পই ভালো লাগে। কয়জনের আর নাম বলবো?
চিন্তাসূত্র: সমকালীন সমালোচনা সাহিত্যকে কোনো কোনো কবি বলছেন, অনেকটাই দুর্বল। তাদের অভিযোগ, বেশিরভাগই সমালোচকই লেখকের গুণগান আর সম্পর্কের চর্চা করেন। আপনি এ সম্পর্কে কী বলবেন?
ফারহানা রহমান: দেখুন ভালো সমালোচকের দায়িত্ব হচ্ছে ভালো পাঠক তৈরি করা। আর পাঠকের রুচির ওপর শিল্প-সাহিত্যের মান অনেকটাই নির্ভর করে। পাঠকের রুচি ও চাহিদার ওপর নির্ভর করেই কিন্তু উপন্যাস সৃষ্টি হয়। আমাদের সমকালীন সাহিত্যের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে যে, সাহিত্যির সমালোচনার অবস্থান ঠিক কোথায়। সে রকম জোরালো সাহিত্য সমালোচনা চোখে পড়ে না।
চিন্তাসূত্র: বর্তমান ফেসবুক ও অনলাইন পোর্টালের কল্যাণে সাহিত্যচর্চা যেমন বেড়েছে; তেমন সাহিত্যের চৌর্যবৃত্তিও বেড়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় আছে?
ফারহানা রহমান: সাহিত্যের প্লেজারিজম বা চৌর্যবৃত্তি আসলে সবসময় ছিল। এখন ইন্টারনেটের যুগে তথ্যের সহজলভ্যতার জন্য আমরা জেনে যাচ্ছি কোথায় কিভাবে চুরি হচ্ছে বা কে চুরি করছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, এই চৌর্যবৃত্তি আগে ছিল না। আসলে এসব ক্ষেত্রে তেমন কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। যেকোনো ভালো জিনিসের প্রতিই তো মানুষের আগ্রহ থাকে। ভালো জিনিস চুরির চেষ্টা হবেই।
চিন্তাসূত্র: সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে কখনো কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন? যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, তারা কারা? কিংবা সেই প্রভাবের ধরনটি কেমন হতে পারে?
ফারহানা রহমান: আসলে প্রভাবিতই তো হয়ে আছি। প্রতিমুহূর্তে প্রভাবিত হয়ে চলেছি। অগুনতি লেখকের লেখা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি। যখন যার লেখা ভালো লেগেছে, তার লেখা দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছি। মনে হয়েছে আমিও যদি এমন একটি লেখা লিখতে পারতাম, তাহলে জীবন সার্থক হয়ে যেতো। এই কিছুক্ষণ আগেই শম্ভু মিত্রের ‘কালীদহে’ নামক একটি ছোটগল্প পড়ে শেষ করলাম। আর সেই একই কথা মনে হলো ইশ! আমিও যদি এমন একটি গল্প লিখতে পারতাম। এটা তো প্রভাবিত হওয়াই, তাই নয়?
চিন্তাসূত্র: ইদানিং পত্র-পত্রিকায় আপনার লেখা খুব বেশি চোখে পড়ে না। কী নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন? এবার আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে, সেগুলো কী কী?
ফারহানা রহমান: পত্র-পত্রিকার জন্য ফরমায়েসি লেখা আর লিখতে হচ্ছে না। নিজের অনেক লেখা পড়ে আছে সেগুলো লেখারই সময় করে উঠতে পারি না। এছাড়া, অজস্র বই পড়ে থাকে হাতের কাছে। ওগুলো পড়ার জন্যও তো সময় দরকার। তখন মনে হয় পড়ার আনন্দের কাছে লেখার কষ্ট হার মেনে যায়। আরও রয়েছে সিনেমা দেখা আর ঘোরাঘুরি করার বাতিক। আমি যেহেতু একজন লোনার, তাই নিজের সঙ্গ নিজে পছন্দ করি। একা একা ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি। বই পড়া, সিনামা দেখা আর ঘুরে বেড়ানোতে অবসর সময় কেটে যায়। ইদানীং অবশ্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করার কাজে একটু ব্যস্ত আছি। আশা করছি তিনটি বই বের হবে। সবই অনেক পুরনো পাণ্ডুলিপি। কবিতা, অনুবাদ এবং প্রবন্ধের বই বের হবে আশা করা যায়।
চিন্তাসূত্র: বাংলা সাহিত্যের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাইবো। সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে আমরা কি সঠিক পথে রয়েছি বলে মনে করেন?
ফারহানা রহমান: সাহিত্যের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পুরোপুরি নির্ভর করে রাজনীতি ও সমাজব্যাবস্থার ওপর। দেখুন একটি দেশের সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সাহিত্য বিমুখ করে ধর্মের দিকে ঠেলে দেওয়া কোনো কাজের কথা হতে পারে না। একটি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, অপব্যাবস্থা, বঞ্চনা, নিপীড়ন যখন ছড়িয়ে যায় তখনই শুধু সে সমাজের মানুষ অদৃষ্টের কাছে আশ্রয় খোঁজে। দেখুন সমাজে সবক্ষেত্রে বৈষম্য কমে গেলে, প্রকৃত শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা হলে (সেটি অবশ্যই সাহিত্য ও বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে) এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে মানুষের পক্ষে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মৌলবাদের ক্রমাগত বিস্তার হচ্ছে যে সমাজে, সেখানে সাহিত্যের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, তা আমরা সবাই জানি। আমাদের একটি খুব সাধারণ কথা বুঝতে হবে যে, ধর্মীয় মতবাদের সঙ্গে বিজ্ঞান ও সাহিত্যির মতবিরোধ সুস্পষ্ট। আমরা যদি এর মাঝামাঝি কিছু একটা কল্পনা করি, তাহলে বলতে হবে, আসলে মিথ্যার স্বর্গে বাস করছি। আপনি শিল্প-সাহিত্যমুখী বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে সম্পূর্ণ মৌলবাদী ও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্য তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এটি তো একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রই। সেটি সমাজে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত। তবে এখনো চেষ্টা করলে হয়তো মৌলবাদের আধিপত্য বিস্তার রোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সাহিত্য অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে পারে। আমাদের সমাজে তো সর্বক্ষেত্রে সাহিত্যের চর্চা হচ্ছে না। তারপর তো সঠিক বেঠিকের প্রশ্ন। এখন থেকে ৩০/৩৫ বছর আগেও তো আমাদের সমাজের এমন বেগতিক অবস্থা ছিল না। আমরা যখন স্কুল/কলেজে পড়তাম দেখেছি প্রতিটি বাসার ছেলেমেয়েদের নাচগান শিখতে। কেউ শিল্পের কোনো ক্ষেত্রে পারদর্শী নয় এমন ছেলেমেয়েদের সমাজে হেয় চোখে দেখা হতো। আর দেখুন আজকের মধ্যবিত্ত সমাজ ব্যবস্থার কী হাল হয়েছে? (নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সমাজ সবসময়ই গোলমেলে) কোনো বাড়ি থেকেই আমি তো এখন আর গানের সুর ভেসে আসতে শুনি না। চারিদিকে শুধু জোব্বা পরা মানুষের কলরব ভেসে আসতে শুনি। যেহেতু সমাজে শিল্পসাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে একটি ভ্যাকুয়াম অবস্থা বিরাজ করছে, সেহেতু ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রতিটি মানুষকে এখন স্ব-উদ্যোগে সাহিত্য পাঠে মনযোগী হতে হবে। শিল্পের সঙ্গে নিজেকে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রাখতে হবে। মানুষের ভেতর-বাইরের এই শূন্যতা সমাজের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এখন সময় এসেছে প্রশ্ন করার। স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলে চলবে না। মানুষের চিন্তা, চেতনা, মনন গড়ে তোলার দায়িত্ব একদিকে যেমন রাষ্ট্রের, তেমনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মনন গড়ে তোলার দায়িত্ব কিন্তু তার নিজের ওপরও বর্তায়। নিজেকেই নিজে বদলাতে হবে। একটি অন্ধকার সমাজে সাহিত্য কেন, কোনোকিছুই সঠিক পথে চলতে পারে না।
চিন্তাসূত্র: সমকালীন সাহিত্য জগতে নাকি এক ধরনের রাজনীতি চলছে। এই রাজনীতির বলি হচ্ছেন প্রকৃত সাহিত্যিকরা। সাহিত্যের এই রাজনীতি সম্পর্কে আপনার অভিমত শুনতে চাই।
ফারহানা রহমান: সাহিত্যের রাজনীতি সবসময় ছিল। প্রকৃতপক্ষে একটি রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে জন্ম থেকেই আপনি রাজনীতির শিকার। রাষ্ট্র যেমন আপনার প্রতিটি আচরণ ঠিক দেয়, তেমনই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আপনি প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মধ্যেই আছেন। সাহিত্য তো জীবনেরই অংশ। তাই এখানেও রাজনীতি আছে। দেখুন প্রকৃত ব্যাপারটির সঙ্গেই বলিদানের একটি সম্পর্ক কিন্তু রয়েছে। প্রকৃত দেশপ্রেমিক, প্রকৃত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, প্রকৃত সাহিত্যিক; সবাই রাজনীতির বলি হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। আর আমরা আসলে কোন সমাজে বসবাস করছি, সেটাও নির্ভর করে এসব ক্ষেত্রে। তবে শিল্পসাহিত্যের ক্ষেত্রে খুব বড় ভূমিকা পালন করে পাঠকের রুচি। এককথায় পাঠকই বললাম। কারণ একজন শিল্প বোদ্ধাকে আপনি আসলে পাঠকের সঙ্গেই তুলনা করতে পারেন। তো সেই পাঠক-স্রোতা বা দর্শক আপনি যে নামেই ডাকুন, তাদের রুচির ওপর যেমন শিল্পসাহিত্য সৃষ্টি হয়, তেমনি পাঠকের রুচিও গড়ে তোলেন একজন সাহিত্য সমালোচক। এসবই একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আর এর সবকিছুর নিয়ন্ত্রকও হচ্ছে সেই রাজনীতি। আমরা কোনোভাবেই এই রাজনীতির বাইরে নই।
চিন্তাসূত্র: চিন্তাসূত্রকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফারহানা রহমান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন: আমরা বড় শূন্যতা র মধ্য দিয়ে যাচ্ছি ॥ মিলু শামস