চিন্তাসূত্র: এবারের বইমেলায় আপনার কী কী বই আসছে? প্রকাশক কে? প্রচ্ছদ কে করেছেন? প্রকাশিত বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
জিললুর রহমান: ধন্যবাদ। মেলায় আসছে, এভাবে না বলে, মেলায় থাকছে বলা ভালো মনে করি। আমি সাধারণত মেলাকে কেন্দ্র করে বই বের করি না। বিগত চার পাঁচ মাসে আমার সর্বমোট পাঁচটি বই প্রকাশ পেয়েছে। তার মধ্যে কবিতার বই অন্য মন্ত্র (২য় সংস্করণ) পুনঃপ্রকাশ পেলো। অন্যমন্ত্র আমার প্রথম কবিতাবই, যা ১৯৯৫ সালে ছোটকাগজ লিরিক থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। আরেকটি কবিতার বই ‘এক সে মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি’ নতুন এসেছে। এই বইটির মধ্যে একটা এপিক আবহ রয়েছে। এখানে ১২৬টি সপ্তপদী সংকলিত হয়েছে, যার প্রতিটি লেখাই ৭-মাত্রার মাত্রাবৃত্তে রচিত হয়েছে। গদ্যগ্রন্থ ‘কবিতা : পাঠে পাঠান্তরে’ মূলত বিভিন্ন লেখকের কবিতা বিষয়ে আলোচনা। এখানে ১৫টি কবিতা বিষয়ক নিবন্ধ সংকলিত হয়েছে। ‘উত্তরচেতনার ভূমিকা’ গদ্যগ্রন্থে আধুনিকতা, পোস্টমডার্নিজম, উত্তর আধুনিকতা বিষয়ে আলোকপাত করে উত্তরচেতনা বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। ‘সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা’ শিরোনামে সর্বশেষ প্রকাশিত গদ্যগ্রন্থটিতে প্রাসঙ্গিক চারটি গদ্য প্রকাশিত হয়েছে। এবার আমার সবক’টি বইয়েরই প্রকাশক : দ্বিমত পাবলিশার্স (চট্টগ্রাম)।
চিন্তাসূত্র: সারাবছর লেখক-প্রকাশক বই প্রকাশ না করে এই একুশে বইমেলা এলেই বই প্রকাশের প্রতিযোগিতায় নামেন। মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে আপনি কিভাবে দেখেন?
জিললুর রহমান: আমি সারাবছর বই বের করা মানুষ। আমার প্রথম বই ১৯৯৫ সালে জুলাই মাসে বেরিয়েছিল। বিগত বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি বই অবশ্য প্রকাশকের আগ্রহে মেলাকে কেন্দ্র করেই বেরিয়েছে। আমি দেখেছি সারাবছরই কিছু কিছু বই বিক্রি হয়। তবে, মেলায় কেনার জন্য অনেক পাঠকই অপেক্ষায় থাকে। এমনও অনেককে বলতে শুনেছি যে, তারা সারাবছরের বই মেলা থেকেই কেনে। মূল্যহ্রাসও একটা কারণ হতে পারে। তাই হয়তো লেখক প্রকাশকও মেলাকেন্দ্রিক বই বের করে।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
জিললুর রহমান: বইমেলা তরুণদের উৎসাহ জোগায় বইকি। ইদানীং অনেক নতুন কবি লেখকের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় প্রায় প্রতিটি বইমেলায়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের বইও আমরা এই মেলায় সহজে সংগ্রহ করতে পারি।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা প্রকাশনা শিল্পে তরুণদের উৎসাহিত করার ব্যাপারে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
জিললুর রহমান: অনেক তরুণ প্রকাশনা শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে। মেলা তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট। তবে, মেলা কেন্দ্রিক কিছু প্রকাশক লেখকদের হতাশ করছে। কোন রকমে মেলায় বইটি বের করে বটে, তবে তাড়াহুড়ার ত্রুটি বইটির গাঠনিক মান দুর্বল করে ফেলে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত প্রচারের অভাব, সারাবছর আর বইটি ক্রেতার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা না রাখা খুবই বেদনাদায়ক।
চিন্তাসূত্র: প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বই প্রকাশ করতে পারেন। এতে বছর বছর বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মান বৃদ্ধি ঘটছে না বলে অনেকেরই অভিযোগ; বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন আছে কি?
জিললুর রহমান: অনেক ঝা চকচকে বই চোখে পড়ে। সুন্দর প্রচ্ছদ, দারুণ ভালো বাঁধাই, সাথে ফ্ল্যাপে খ্যাতিমানদের লেখা শংসাপত্র। এসব বই আমাকে ধাঁধায় ফেলে দেয়। কেনার পরে দেখি অনেক বই-ই ভুষিমাল। না কবিতার মান ভাল, না গল্প উপন্যাসের। ভাল বইগুলো জঞ্জালের নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। কোনটা ভাল বই বুঝতে পারি না। অথচ আমি বিশ্বাস করি নতুন লেখকদের ভেতরেই ভবিষ্যতের কাব্যভাষা ও উন্নত গদ্যের সুষমা লুকিয়ে আছে। তাই, আমি মনে করি, যথাযথ সম্পাদনা ছাড়া বই বের করা উচিত না। প্রকাশকদের উচিত প্রফেশনাল এডিটর নিয়োগ দিয়ে পাণ্ডুলিপিগুলো বিবেচনা করা।