চিন্তাসূত্র: এবারের বইমেলায় আপনার কী কী বই আসছে? প্রকাশক কে? প্রচ্ছদ কে করেছেন? প্রকাশিত বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
জব্বার আল নাঈম : ২০২২ বইমেলার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০২৩ বইমেলায়ও আসছে আমার দ্বিতীয় উপন্যাস। নাম ‘চিৎকার’। বইটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছে প্রকাশনা সংস্থা ‘সাহস পাবলিকেশন্স’। ৩৮৭-৩৮৮ নম্বর স্টল। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার নাজমুল হুদা রতন (রতন ভাই)। চিৎকারের জন্য প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর। এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি ফিকশন। এর স্থান আমার জন্মগ্রাম। বদরপুর। উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট একাত্তর। পাকিস্তানি সৈন্যরা অন্যায়ভাবে বাঙালির ওপর যুদ্ধ ছাপিয়ে দেয়। এতে বাঙালির জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। পালিয়ে যায় অনেক বাঙালি। আশ্রয় নেয় ভারতে। সেই সুযোগে শিয়াপন্থী পাকিস্তানি কিছু সৈন্য পূর্ব বাংলাকে শিয়া রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা চালায়। তারা সুন্নি ও হিন্দুদের নির্বিকারভাবে অত্যাচার শুরু করে। যদিও শেষ পর্যন্ত এখানে পাকিস্তানি সৈন্যরা সফল হতে পারে না। এর ভেতরে আরও বেশকিছু কাহিনি রয়েছে। আশা করি, যা ঋদ্ধ পাঠকের মনের খোরাক জোগাবে।
চিন্তাসূত্র: সারাবছর লেখক-প্রকাশক বই প্রকাশ না করে এই একুশে বইমেলা এলেই বই প্রকাশের প্রতিযোগিতায় নামেন। মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে আপনি কিভাবে দেখেন?
জব্বার আল নাঈম: মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশের প্রবণতাটাকে খারাপ ভাবে দেখি না। বইমেলাটা লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের জন্য ঈদের মতো। বাণিজ্যিক দিকে নজর দিলে দেখা যায়, বেশ কিছু প্রকাশনা সংস্থা এই একমাসকে উপজীব্য করে বাকি এগারো মাস অফিস চালানোর খরচ তোলে। তবে, মেলাকেন্দ্রিক প্রবণতা থেকে বের হতে হবে আমাদের। এটা সাহিত্যের জন্য ভালো হবে। বইমেলার মাস সামনে এলে পার্টটাইম লেখকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। যারা সত্যিকারার্থে লেখালেখি করতে চায় অর্থাৎ যারা লেখালেখির জন্য জীবন উৎসর্গ করে তারা কিছুটা আড়ালে চলে যায়। আমার বেশ কয়েকটা বই মেলার আগে বা পরে প্রকাশ হয়েছে। এতে কোনো ঝামেলা মনে করি না।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
জব্বার আল নাঈম: প্রভাব তো একটা আছে। ওই যে বললাম, একটা আনন্দ উৎসব, ঈদ ঈদ পরিস্থিতি। মেলায় অনেক লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের মিলনের কারণে পরিচিতিটা বেশ বাড়ে। এই মেলা দিয়ে কে বড় লেখক, কে ছোট লেখক তা নির্ধারণ কিংবা যাছাইয়ের কোনো সুযোগ নেই। কোনো লেখকের হাজার হাজার বই বিক্রি হলেই যে সে বড় লেখক তা না, আবার একজন জাত লেখকের বই ৩০টা বিক্রি হলে সে দুর্বল লেখক হয়ে যাবে এমনও না। অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যার মার্কেটিং পলিসি ভালো তার বই বিক্রি বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। আসলে আলোচনাটা হওয়া উচিত কনটেন্ট নিয়ে, বাক্যের গঠনপ্রণালী নিয়ে, সাহিত্যের ধরণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে। অথচ সেসব আলোচনা থেকে আমাদের সাহিত্যিকেরা দূরে সরে গেছে। এই অর্থে মেলার প্রভাব ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি দেখছি।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা প্রকাশনা শিল্পে তরুণদের উৎসাহিত করার ব্যাপারে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
জব্বার আল নাঈম : তরুণদের উৎসাহিত করা হয় সম্ভবত। তবে সেটা বাংলা একাডেমির মাধ্যমে নয়। বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তরুণ ও মেধাবীদের পাণ্ডুলিপি প্রকাশের মাধ্যমে তা করে থাকেন। যদিও ওই মূল্যায়ন পদ্ধতি ও পাণ্ডুলিপি প্রকাশের ধরণটা প্রশ্নবিদ্ধ, এতে বেশকিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন দরকার বলে মনে করছি। বর্তমানে পাণ্ডুলিপি কিংবা বই পুরস্কৃত হওয়ার পরও পাঠক সেটা গ্রহণ করছে না। তার মানে দাঁড়ালো, পুরস্কারের সেই রকম গ্রহণযোগ্যতা নেই। অথচ পুরস্কার পাওয়া বইটি ষোলো কোটি মানুষের দেশে অন্তত একহাজার কপি বিক্রি হওয়ার কথা, সেটা হচ্ছে বলে মনে করি না আমি।
চিন্তাসূত্র: প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বই প্রকাশ করতে পারেন। এতে বছর বছর বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মান বৃদ্ধি ঘটছে না বলে অনেকেরই অভিযোগ; বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন আছে কি?
জব্বার আল নাঈম : এটা সুন্দর একটি প্রশ্ন। এই সিস্টেমে হাজার হাজার বই প্রকাশিত হয় সত্য। এর কারণ, একুশে বইমেলা। মাসব্যাপী মেলা হওয়ার কারণে। এটাও সমস্যা ছিল না যদি আমাদের প্রকাশকেরা নির্মোহভাবে পাণ্ডুলিপি সেন্সর করতো। প্রকাশকদের একটি সমিতি আছে, সেই সমিতির নিশ্চয়ই একটি নীতিমালা রয়েছে, সেখানে সেন্সর শব্দটি কতটা প্রভাব নিয়ে আছে সেটা দেখা ও জানা দরকার। যদি সেটা না থাকে তাহলে প্রকাশকেরা এই দায় কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারবেন না। যদি সেন্সর বোর্ড থাকত তাহলে হয়তো হাজার হাজার পাণ্ডুলিপি বইয়ে পরিণত হতো না। বাজে বই হওয়া মানে কাগজ নষ্ট। কাগজ বানায় গাছ দিয়ে। গাছ কাটলে পরিবেশ নষ্ট। তার মানে দাঁড়ালো বাজে পাণ্ডুলিপি থেকে শুধু বাজে বই হয় তা না, পরিবেশটাও নষ্ট করে। বই প্রকাশের জন্য লেখকের কোনো নীতিমালা দরকার নেই, নীতিমালা দরকার প্রকাশকের। আমাদের অধিকাংশ লেখকই জানে না- পাণ্ডুলিপি প্রুফ এবং এডিট করতে হয়! এটা খুবই দুঃখজনক। যদিও এমন লেখকেরা সংখ্যাই আমাদের আশপাশে বেশি।