চিন্তাসূত্র: এবারের বই মেলায় আপনার কী কী বই আসছে? প্রকাশক কে? প্রচ্ছদ কে করেছেন? প্রকাশিত বই সর্ম্পকে কিছু বলুন।
নুরুন্নাহার মুন্নি: এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসছে আমার কাব্য ‘আধখোলা জানালার আলাপ’। প্রকাশক অনুপ্রাণন প্রকাশন। প্রচ্ছদ শিল্পী আইয়ূব আল আমীন। বইটির অন্তরজমিনে পাঠক যখন প্রবেশ করবে তখন পাঠক প্রকৃতির নৈর্সগে ডুবে যেতে যেতে প্রেমের আকাশ পাতাল চষে বেড়াবেন; মানবপ্রেম,সমাজের ইতিবাচক নেতিবাচক বাচনভঙ্গিও বেরিয়ে আসবে কখনো সখনো; নারীকণ্ঠের প্রতিবাদী আওয়াজ নাড়িয়ে তুলবে পাঠকের বিবেক। মাতৃভূমির প্রতি প্রেম, সশ্রদ্ধ ভক্তি বন্দনাসহ সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে নতুন প্রজন্মের প্রতি রয়েছে উদাত্ত আহ্বান। মুক্তির নতুন স্বাদ জাগানিয়া তারুণ্যদীপ্ত আহ্বান গ্রন্থটির পরতে পরতে।
চিন্তাসূত্র: সারাবছর লেখক প্রকাশক বই প্রকাশ না করে এই একুশে বই মেলা এলেই বই প্রকাশের প্রতিযোগিতায় নামেন। মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে আপনি কিভাবে দেখেন?
নুরুন্নাহার মুন্নি: আসলে অমর একুশে বইমেলা আমাদের লেখকদের জন্য একটা দাওয়াতি বাড়ির মতো। প্রকাশকরা আমাদের দাওয়াত দেন আর আমরাও উদগ্রিব হয়ে বসে থাকি নিজেদের উপহার নিয়ে সেই দাওয়াতি বাড়িতে উপস্থিত হওয়ার। এখানে লেখকের উপহারে প্রকাশক এবং পাঠক দুজনই খুশি। তাহলে বলুন এমন একটি আয়োজন একজন লেখক বা প্রকাশক কি লুফে নিতে চাইবে না? অবশ্যই। মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশটা লেখক, প্রকাশক ও পাঠক; সবার জন্য লাভজনক। লেখক তার একটি যোগ্য প্লাটর্ফম পাচ্ছে, প্রকাশক লাভবান হচ্ছে আর পাঠক তো মহাখুশি।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
নুরুন্নাহার মুন্নি: আমি মনে করি একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্যে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটো প্রভাবই ফেলছে।তবে আমি বলব ইতিবাচক প্রভাবটাই বেশি।এখানে লেখার মান এবং সমৃদ্ধি বিবেচনা করে কোনো কোনো প্রকাশক নতুন ধারার লেখকদের মূল্যায়ন করছেন,তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ করে দিচ্ছেন বাংলা সাহিত্যে তাদের লিখনির শাখা প্রশাখা বিস্তার করতে।অন্যদিকে কিছু প্রকাশক মুনাফা লাভের আশায় অযোগ্য লেখক তৈরি করে বাংলা সাহিত্যকে কলুষিত করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা প্রকাশনা শিল্পে তরুণদের উৎসাহিত করার ব্যাপারে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
নুরুন্নাহার মুন্নি: হ্যাঁ এটা একটা অভিনব বিষয়। আমরা গত কয়েক বছর ধরেই দেখছি,প্রবীণ প্রকাশকদের পাশাপাশি তরুণ প্রকাশকরা একুশে বইমেলা জুড়ে প্রকাশনা শিল্পে বেশ সরব।এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় এই যে,তরুণ প্রকাশকরা অধিকাংশই লেখক,সাংবাদিক,লিটলম্যাগ সম্পাদক অর্থাৎ লেখালেখির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেদিক চিন্তা করলে কিছু তরুণ লেখকের বেকারত্ব দূর করতে একুশে বইমেলায় প্রকাশনা শিল্প দারুণ ভূমিকা পালন করছে।
চিন্তাসূত্র: প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বই প্রকাশ করতে পারেন। এতে বছর বছর বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মান বৃদ্ধি ঘটছে না বলে অনেকেরই অভিযোগ।বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন? বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন আছে কি?
নুরুন্নাহার মুন্নি: প্রথমত, প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার ওপর বই প্রকাশ অনেকটা নির্ভরশীল। কারণ প্রকাশক চিন্তা করবেন বই প্রকাশ করলেই যে বইটি বিক্রি হবে এমনটি কিন্তু নয়। এখানে লেখার মান, পাঠকের চাহিদা সবকিছুই বিবেচ্য। মানছি প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে বছর বছর বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে মানহীন লেখাও ঢুকে পড়ছে। যদিও তা সুদূর প্রসারী হতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, এটা ভেবে ভালো লাগছে যে প্রকাশনা উপকরণের দাম এবার বেশি হওয়ায় প্রকাশকরা চিন্তাভাবনায় বেশি প্রেসার দিয়েছেন। বাছাইকৃত বইগুলোই এবারের বইমেলায় নিয়ে এসেছেন। নীতিমালার কথা বলতে গেলে অবশ্য নির্দিষ্ট নীতিমালা মেনেই প্রকাশকরা বই প্রকাশের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সেটাই লেখক ও পাঠকের জন্য ইতিবাচক।