আরাফাত তানিম—১৯৮৩ সালের ৬ অক্টোবর সিলেট শহরে জন্ম। ’রাত্রির শেষ পৃষ্ঠা’ ও ‘বাহান্নটি ছুটির দিন’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তার। দীর্ঘদিন যাবত লন্ডন বসবাস করছেন তিনি। চিন্তাসূত্রের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে প্রবাসের সাহিত্যচর্চা নিয়ে কথা বলেছেন এই কবি।
চিন্তাসূত্র: দেশ থেকে অনেক দূরে আছেন। কত বছর ধরে আছেন প্রবাসে? কেমন লাগছে প্রবাসজীবন?
আরাফাত তানিম: ৯ বছর, ব্যস্ততার দিন শেষে টুলুর ‘এই দূর প্রবাসের তারাগুলি’ গানটিই মনে করিয়ে দেয় প্রবাস জীবনের কথা।
চিন্তাসূত্র: কর্মব্যস্ততার ফাঁকে লেখালেখির সুযোগ পান কেমন?
আরাফাত তানিম: খুব কম, কর্মব্যস্ততা, সংসার, পরিবার সময় দিয়ে খুব বেশি একটা সুযোগ মেলে না। সত্যি কথা বলতে গেলে, যা মেলে, তা ওই অফিসে যাওয়া-আসার পথে।
চিন্তাসূত্র: দূর প্রবাসে বসে দেশকে কেমন অনুভব করেন? হঠাৎ করেই দেশে ফেরার জন্য প্রাণ কেঁদে ওঠে কখনো? দেশের কথা মনে পড়লে কী করেন?
আরাফাত তানিম: প্রায়ই দেশে ফিরতে ইচ্ছে করে, দেখতে ইচ্ছে করে বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য, বাংলার মানুষের ভালোবাসা, আত্মীয়তা। বিশেষ করে আড্ডা। এসব মনে পড়লে নস্টালজিক হয়ে যাই।
চিন্তাসূত্র: প্রবাসে সাহিত্যচর্চায় কোনো প্রতিকূলতার মুখোমুখি পড়েছেন?
আরাফাত তানিম: প্রতিকূলতা বলতে সময়, তবে প্রবাসের অগ্রজ কবি-লেখকদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা হচ্ছে পজিটিভ দিক।
চিন্তাসূত্র: সামনে বিজয় দিবস। এ সময় আপনি দেশের বাইরে। বিজয় দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোর সময় বিদেশের মাটিতে বসে দেশকে কিভাবে উপলব্ধি-ধারণ করেন? দিবসগুলো পালন করেন কিভাবে?
আরাফাত তানিম: জাতীয় দিবসগুলোয় দেশে থাকলে একটা উৎসবমুখরতা থাকে, এত বেশি না হলেও প্রবাসের আলতাব আলী পার্ক জেগে রয়, প্রবাসী কবি-সাহিত্যিকরা সবসময়ই জাতীয় দিবসগুলো পালন করেন। পালনে খুব একটা বড় বেশি তফাৎ দেখি না। তবে, নিজের দেশে তো নিজের দেশের মতো করে পালন করা হয়। কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয় না।
চিন্তাসূত্র: আগামী বইমেলায় আপনার কোনো বই আসবে?
আরাফাত তানিম: খুব সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইতিহাসভিত্তিক একটি বই বের হবে, কাজ চলছে এখনো।
চিন্তাসূত্র: দেশের সাহিত্যচর্চার নিয়মিত খোঁজ পান? কিভাবে দেখছেন এ সময়ের সাহিত্য চর্চা?
আরাফাত তানিম: বলা বাহুল্য প্রবাসে সবাই ব্যস্ত, ফাঁক পেলেই সুযোগ করে সবাই মিলিত হয়, আধুনিক যুগের হোয়াটস আপ, ইভেন্ট, ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ চলে। তবু আমি মনে করি, সরাসরি বসে আড্ডা বা কর্মশালা করাটা আরও জরুরি। তাহলে আমাদের মতো তরুণেরা এর সুফল পেতো। বাংলা ভাষা ধরে রাখতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতো।
চিন্তাসূত্র: বাংলা সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে হলে, কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
আরাফাত তানিম: কমিউনিকেশন, মার্কেটিং আর প্র্যাকটিস। আমাদের বেশ কয়েকটি বাংলা মিডিয়া (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক) আছে। বাংলা সাহিত্যকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে তাদের বড় একটা ভূমিকা রাখতেই হবে। পাশাপাশি কবি-সাহিত্যিকেরা একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে কোন্দল, তা কাটিয়ে উঠতে হবে।
চিন্তাসূত্র: সমকালীন গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ ও কবিতার মধ্যে কোন শাখাকে আপনার ঋদ্ধ মনে হয়?
আরাফাত তানিম: সত্যি বলতে গেলে আমি যা মনে করি, বর্তমান সময়ে কবিতার চেয়ে গল্প-উপন্যাসেই মানুষ বেশি ঝুঁকে পড়েছে। কবিতার সুদিন ফিরিয়ে আনাটা জরুরি।
চিন্তাসূত্র: বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী
আরাফাত তানিম: বাংলা একাডেমির সাম্প্রতিক আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ। লেখালেখি ও তা প্রকাশ করার স্বাধীনতা প্রয়োজন। মৌলবাদ অপশক্তির কাছে হেরে যাওয়া বা আপস করাটা সাহিত্যের অগ্রগতিতে একটি বড় বাধা। যত সময় যাচ্ছে, তত স্পষ্টভাবে বলা যায়, সামনে খারাপ দিন আসছে।