আজিজ কাজল। জন্ম ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৮৪। কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার টইটং গ্রামে। বাবার নাম আব্দুল হাকিম। মা রাবেয়া বেগম। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে আজিজ কাজল কনিষ্ঠ। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ওপর বি.এ সম্মানসহ এম এ সম্পন্ন করেছেন। পেশা শিক্ষকতা। বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ক্যামব্রিজে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লেখেন। ইতোমধ্যে তার ৩টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো হলো, ‘এ পালের জোছনা প্রহরে’, ‘ধ্বনি পূর্বাপর’ ও ‘বাঁকা হরফে চাঁদ’। এবার পেয়েছেন চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি প্রবর্তিত ‘দোনাগাজী পদক-২০২০’। লেখালেখি ও পুরস্কারপ্রাপ্তি মুখোমুখি হয়েছেন চিন্তাসূত্রের।
চিন্তাসূত্র: এবার কবিতায় ‘দোনাগাজী পদক-২০২০’ পেলেন। কেমন লাগছে পুরস্কার প্রাপ্তিতে?
আজিজ কাজল: উৎসাহবোধ করছি। যেকোনো পরিশ্রম বা কর্মের মূল্যায়ন উৎসাহ বাড়ায়। উদ্দীপনা জাগায়। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথকে মসৃণ করে।
চিন্তাসূত্র: আপনি তো কবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ, কথাসাহিত্যও চর্চা করছেন। কোন পরিচয়ে পরিচিত হতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
আজিজ কাজল: আসলে প্রবন্ধ ও কথাসাহিত্যে এখন নানাভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এই দুটির করণকৌশল বা ব্যঞ্জন রপ্ত থাকলে কবিতা এমনিতেই ধরা দেয়। পাশাপাশি কল্পনা, যৌক্তিক আবেগ আর ছন্দটা মজ্জাগত থাকলেই হয়; এখানে আমি ভালো বা উৎকৃষ্ট কবিতার কথাই বলছি। এখন আমি কবিতার এক্সটেনশন হিসেবে নিজের জ্ঞান আর প্রজ্ঞাকে দীর্ঘ আর বর্ণনাধর্মী করার চেষ্টা করছি। যেটা প্রবন্ধ বা কথাসাহিত্যে সম্ভব বলে মনে হয় না।
চিন্তাসূত্র: কবিতা লেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হলো কেন?
আজিজ কাজল: কবিতা লেখার আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার বড় কারণ হলো আমার মরহুম বাবা থেকে শোনা ছড়া বা পুঁথির সুরে শোনা ছন্দের নানা তাল। তিনি গার্হস্থ্য নানা মজার বিষয় আর অসংলগ্নতাকে খুব সহজে ছড়ার মতো ছন্দ করে বলতে পারতেন। শিক্ষক ছিলেন। ভালো রসবোধ বা হিউমার ছিল। ইংরেজি, বাংলা আর উর্দুকে একসঙ্গে করে মজার মজার কত বিষয় খিচুড়ি আওড়াতেন, যা সত্যি অভাবনীয় ও শিক্ষণীয়। বাবার এই বিশেষ লক্ষণ আর সরাসরি গ্রামে প্রকৃতির কোলে বড় হওয়া এই দুই বিষয়ের সম্মিলনে, নিজের আবেগকে প্রকাশের—অভ্যাসবশত চেষ্টা দিতে দিতেই ছড়া, পদ্য লেখার প্রচেষ্টা অবশেষে কবিতায় রূপ নিলো। মূলত এভাবেই কবিতা লেখা। এছাড়া, কবিতার পাশাপাশি গদ্যচর্চা সেই কবিতা লেখার বয়স থেকেই ছিল। স্টুডেন্ট লাইফে কবিতার পাশাপাশি পত্রিকায় নিয়মিত কত গদ্য, প্রবন্ধ, ফিচার, প্রতিবেদন লিখেছি।
চিন্তাসূত্র: সমকালীনদের মধ্যে কার প্রবন্ধ আপনাকে অনুপ্রাণিত করে?
আজিজ কাজল: সমকালীন প্রাবন্ধিকদের মধ্যে বেঁচে আছেন মোস্ট সিনিয়রসহ—যতীন সরকার, ড. আকবর আলি খান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবুল মোমেন। তাদের প্রবন্ধ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। এছাড়া, তপন বাগচী, হামীম কামরুল হক, কাজী মহম্মদ আশরাফ, মামুন রশীদ, কুমার দীপ, মোহাম্মদ নূরুল হক, মজিদ মাহমুদ, কামরুল হাসান বাদল, শাহিদ হাসান, জিললুর রহমান, হাফিজ রশিদ খানসহ অনেকের প্রবন্ধই আমাকে অনুপ্রাণিত করছে।
চিন্তাসূত্র: এই সময়ের কবিতার আলোচনা করতে গেলে কাকে কাকে আপনি এগিয়ে রাখবেন?
আজিজ কাজল: এই সময়ের কবিতায় ময়ূখ চৌধুরী, আসাদ মন্নান, ফাউজুল কবির, এজাজ ইউসুফী, স্বপন দত্ত, হাফিজ রশিদ খান, শাহিদ আনোয়ার, বীরেন মুখার্জী, পরিতোষ হালদার, উপল বড়ুয়া, রিমঝিম আহমেদসহ অনেকেই রয়েছেন, যাদের কবিতা মনোযোগ দিয়ে পাঠ করি।
চিন্তাসূত্র: পুরস্কার নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে। আপনি পুরস্কারকে কোন চোখে দেখেন?
আজিজ কাজল: পুরস্কার নিয়ে স্বজনপ্রীতির প্রচলনটাই বেশি। ফলে প্রকৃত শিল্পীরা থেকে যায় আড়ালে। তাই ভালো কাজের নিরপেক্ষ মূল্যায়ন আর পৃষ্ঠপোষকতাই পারে প্রকৃত শিল্পীকে মর্যাদা দিতে। পুরস্কৃত করতে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অথবা উৎসাহ হিসেবে পুরস্কার ঠিক আছে। যদিও প্রকৃতি শিল্পীরা বিষয়গুলোকে থোড়াইকেয়ার করেন। কর্মই তার ধ্যান। বিশ্ব সাহিত্যে এমনকি বাংলা সাহিত্যেও এর যথেষ্ট উদাহরণ আছে।
চিন্তাসূত্র: এই সময়ের কথাসাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে গেলে কাদের আপনি গুরুত্ব দেবেন?
আজিজ কাজল: হরিশংকর জলদাস, মহীবুল আজিজ, শাহাদুজ্জামান, আহমাদ মোস্তফা কামাল, মনি হায়দার, রফিকুজ্জামান রণিসহ আরও অনেককেই।
চিন্তাসূত্র: বাংলা একাডেমি পুরস্কার, করপোরেট পুরস্কারের পাশাপাশি দেশের সাহিত্যসংগঠনগুলো থেকে দেওয়ার পুরস্কারের মধ্যে আপনি স্পষ্ট কোনো পার্থক্য দেখেন? কোন পুরস্কারকে আপনার নিরপেক্ষ ও বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়?
আজিজ কাজল: বাংলা একাডেমি পুরস্কার বা কর্পোরেট পুরস্কারের মধ্যে পুরস্কারের প্রাপ্তিদের মধ্যে ভালো নামের তালিকা আরও সংকুচিত হয়ে আসছে। এইটা খুব দুঃখজনক। মাঝেমধ্যে এমন মানুষকে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা নিজেরাও বিব্রতবোধ করছেন। পাশাপাশি দেশের সাহিত্য সংগঠনগুলো সেই জায়গায় তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো করছে বলা যায়। যে পুরস্কার একজন যোগ্য শিল্পীকে তার কাজের মূল্যায়নের ওপর দেওয়া হয়, সেই পুরস্কারকে আমার অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ মনে হয়।