আহমেদ শিপলু—কবি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হলো: বসন্তের অপেক্ষায় (১৯৯৯), কোথাও তুমি নেই (২০০১), ক্রাচে ভর দেয়া যৌবন (২০০৫), মন পাখিটার ডানা কাটা উড়তে মানা (২০০৯), নির্বাচিত কবিতা (২০১৩), বালিকার আকাশ (২০১৫), প্রজাপতিরা ফিরে গিয়েছিলো (২০১৭), বিষণ্ন ইস্পাত (২০১৮), বিষবৃক্ষের উল্লাস (২০১৮)। সম্পাদনা: কাব্যকল্প (আবৃত্তির ক্লাসের জন্য সম্পাদিত গ্রন্থ২০১৮), আবৃত্তির শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০১৮); নন্দিতা (শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির পত্রিকা)। সম্প্রতি সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ নিয়ে চিন্তাসূত্রের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন এই কবি।
চিন্তাসূত্র: একসময় যারা দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ঠাঁই পেতেন না অথবা যারা দৈনিকে লিখতে স্বস্তি বোধ করতেন না, তারা লিটলম্যাগ বের করতেন। সম্প্রতি লিটলম্যাগের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বিপরীতে বেড়েছে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ। আপনি কি মনে করেন, লিটলম্যাগের জায়গাটাই এই ওয়েবম্যাগগুলো দখল করছে?
আহমেদ শিপলু: সময়ের পরিক্রমায় পরিবর্তিত হয় মানুষের রুচিবোধ, সংস্কৃতি ও সভ্যতা। নিত্যনতুন প্রযুক্তি আকৃষ্ট করে ক্রমশ।
একটা সময় গাঁটের টাকা খরচ করে যারা ছোটো কাগজ সম্পাদনা করতেন, তাদের মধ্যে একটা আলাদা স্পৃহা ছিলো। নতুন কিছু তুলে ধরা এবং কবিতা ও সাহিত্যের প্রথাগত রূপ পরিহার করার প্রয়াস থেকে সম্পাদকরা খুঁজে খুঁজে বের করতেন সেই সব লেখক কবিকে; যারা প্রতিষ্ঠিত পত্রিকায় জায়গা পান না বা যেতে চান না। কিন্তু একসময় দেখা গেলো সেইসব সম্পাদক, কবি, লেখক চাকরির সুবাদে দৈনিকের সাহিত্যপাতার সম্পাদক-লেখক বনে গেলেন। ছোটকাগজও ক্রমশ তার চরিত্র বদলাতে বদলাতে সংকলন বা সাহিত্য পত্রিকায় পরিণত হয়েছে। তাই উৎসাহী সম্পাদকের সংখ্যা কমেছে যেমন, তেমনি প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় ওয়েবজিন, ওয়েবম্যাগ একটি নতুন পরিক্রমায় নিয়ে যাচ্ছে ছোটকাগজের জায়গাটিকে। বর্তমান প্রজন্মের নিরীক্ষাপ্রবণতা ও প্রযুক্তির কল্যাণে ও জাতীয় দৈনিকের ওপর করপোরেট দুনিয়ার কালো থাবায় অধিকাংশ কাগজের সাহিত্যপাতা গুরুত্ব হারিয়েছে ইতোমধ্যে।
চিন্তাসূত্র: একসময় লেখাপ্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে, পাঁচ থেকে দশ বা তারও বেশি ফর্মার লিটলম্যাগ বের হতো। এতে খরচও হতো বেশ। কিন্তু বর্তমানে ওয়েবম্যাগে সে খরচটি নেই। আপনি কি মনে করেন, অর্থব্যয়ের কারণ না থাকায় ওয়েবের দিকে ঝুঁকছেন সাহিত্যকর্মীরা?
আহমেদ শিপলু: আগেই বলেছি, প্রযুক্তির কল্যাণে এটা নতুন একটি প্ল্যাটফরম। তারুণ্যের ধর্ম হচ্ছে, নতুনকে গ্রহণ করা। যেমন এখন বেশিরভাগ লেখক-কবি লিখতে গিয়ে কাগজ কলম ব্যবহার করেন না; এটাও সেরকম।
চিন্তাসূত্র: কারও কারও মতে, বেশিরভাগ ওয়েবেই সম্পাদনা ছাড়াই লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকী বানানও দেখা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
আহমেদ শিপলু: ওয়েবচর্চা শুরু হয়েছে তরুণদের হাত দিয়ে। এখনো এটা ফার্স্ট জেনারেশন এর হাতে; আরেকটু সময় পেলে এরাই একদিন পরিপক্ব ওয়েবজিন উপহার দেবে।
চিন্তাসূত্র: একসময় কারও পকেটে একহাজার/বারো’শ টাকা থাকলেই তিনি একটি লিটলম্যাগ করার সাহস দেখাতেন। এখন ১৫/১৬ শত টাকা পকেটে থাকলেই কেউ কেউ ওয়েবম্যাগ করছেন, কেউ কেউ বিনে পয়সাতেই ব্লগজিন খুলছেন, লেখা সংগ্রহ করছেন। এ ধরনের ওয়েবজিন বা ব্লগজিন বের করার কারণ কী বলে মনে করেন আপনি? এটা কি নিছকই নিজের কর্তৃত্ব প্রকাশের উপায়, না কি সাহিত্যপ্রেমের জন্য?
আহমেদ শিপলু: অবশ্যই সাহিত্যপ্রেমের জায়গা থেকে; তবে ভালোমন্দ সব সময়েই ছিল, এখনো আছে।
চিন্তাসূত্র: আপনি কি মনে করেন, ওয়েবম্যাগ-ওয়েবজিন-ব্লগজিন মানুষকে বইপাঠবিমুখ করে তুলছে?
আহমেদ শিপলু: তা অনেকটাই বলা যায়; আসলে শুধু ওয়েবজিন না, এখন ফেসবুকেও লেখা-পড়ায় প্রচুর সময় খেয়ে ফেলছে।
চিন্তাসূত্র: আপনি নিজে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতা, না লিটলম্যাগ, না এই ওয়েবম্যাগে লিখতে/পড়তে পছন্দ করেন?
আহমেদ শিপলু: দেখুন, আজকাল সাহিত্যপাতায় ছাপানো লেখাটাও স্ক্রিনশট নিয়ে ফেসবুকে দিয়ে দেওয়া হয় প্রচারের জন্য। এখন অনেকেই জাতীয় দৈনিকের পাতা পড়েন অনলাইনে। তাই আমি অনলাইনেই আগ্রহী বেশি; এছাড়া, এখানে ইনস্ট্যান্ট পাঠপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, যা লেখকের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।
চিন্তাসূত্র: একটি লিটলম্যাগ দুই থেকে তিন শ কপি প্রকাশিত হয়, দৈনিকের সাহিত্যপাতাও একটি সীমিত পাঠকের কাছে যায়। কিন্তু অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা যায় লাখ লাখ ব্রাউজারের কাছে। সাহিত্যচর্চা, প্রসার ও প্রচারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
আহমেদ শিপলু: আমি এটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখি। মানুষ বইবিমুখ হলেও, প্রতিদিন পাঠমুখী হচ্ছে এসবের কল্যাণে।
চিন্তাসূত্র: ওয়েবম্যাগের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকলে একসময় কি দৈনিকের সাহিত্যপাতা গুরুত্ব হারাবে?
আহমেদ শিপলু: আমার ধারণা সাহিত্যপাতা ছাপা হলেও, এটার ওয়েবভিত্তিক নির্ভরতা বাড়বে ক্রমশ।
চিন্তাসূত্র: একটি ওয়েবম্যাগকে আপনি কিভাবে দেখতে চান? অর্থাৎ একটি ওয়েবম্যাগে আপনি কী ধরনের লেখা পড়তে চান?
আহমেদ শিপলু: আমি সব ধরনের লেখাই পড়তে চাই। তবে, নিরীক্ষাধর্মী লেখার প্রতি আগ্রহ থাকবে বেশি।