সাফিনা আক্তার—কবি, ছোটকাগজ সম্পাদক। প্রকাশিত বই—স্বপ্ন মুখর বসবাস ও জলমহল। সম্প্রতি সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ নিয়ে চিন্তাসূত্রের মুখোমুখি হয়েছেন এই তরুণ কবি।
চিন্তাসূত্র: একসময় যারা দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ঠাঁই পেতেন না অথবা যারা দৈনিকে লিখতে স্বস্তি বোধ করতেন না, তারা লিটলম্যাগ বের করতেন। সম্প্রতি লিটলম্যাগের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বিপরীতে বেড়েছে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ। আপনি কি মনে করেন, লিটলম্যাগের জায়গাটাই এই ওয়েবম্যাগগুলো দখল করছে?
সাফিনা আক্তার: দখল করার চেষ্টা করছে, তবে বেশ কিছু অযোগ্য লোক সাহিত্যটা খেলাচ্ছলে চালাতে চাইছে। যা ক্ষতিকর। এতে সাহিত্যের মানদণ্ড নষ্ট হচ্ছে।
চিন্তাসূত্র: একসময় লেখাপ্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে, পাঁচ থেকে দশ বা তারও বেশি ফর্মার লিটলম্যাগ বের হতো। এতে খরচও হতো বেশ। কিন্তু বর্তমানে ওয়েবম্যাগে সে খরচটি নেই। আপনি কি মনে করেন, অর্থব্যয়ের কারণ না থাকায় ওয়েবের দিকে ঝুঁকছেন সাহিত্যকর্মীরা?
সাফিনা আক্তার: হ্যাঁ, এই অর্থের বিষয়টি সত্যি একটা বড় বিষয়, কাগজ করতে শ্রম-অর্থ-সময় প্রচুর খরচ হয়! কিন্তু ওয়েবে শ্রম-সময় ব্যয় হলেও অর্থ তুলনামূলক কম খরচ হয়।
চিন্তাসূত্র: আপনি কি মনে করেন, ওয়েবম্যাগ-ওয়েবজিন-ব্লগজিন মানুষকে বইপাঠবিমুখ করে তুলছে?
সাফিনা আক্তার: কিছুটা, এই ওয়েবগুলো সময় কেড়ে নিচ্ছে। মুদ্রিত বইপাঠে বিমুখ হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, তবে কারও কারও পাঠক্ষুধা চাহিদা বেশি বলে আমি মনে করি। তারা শুধু ওয়েব নিয়ে পড়ে থাকেন না! তারা বই পাঠ করে মনের চাহিদা পূরণ করেন।
চিন্তাসূত্র: একসময় কারও পকেটে একহাজার/বারো শ টাকা থাকলেই তিনি একটি লিটলম্যাগ করার সাহস দেখাতেন। এখন ১৫/১৬ শ টাকা পকেটে থাকলেই কেউ কেউ ওয়েবম্যাগ করছেন, কেউ কেউ বিনেপয়সাতেই ব্লগজিন খুলছেন, লেখা সংগ্রহ করছেন। এ ধরনের ওয়েবজিন বা ব্লগজিন বের করার কারণ কী বলে মনে করেন আপনি? এটা কি নিছকই নিজের কর্তৃত্ব প্রকাশের উপায়, না কি সাহিত্যপ্রেমের জন্য?
সাফিনা আক্তার: সত্যি কথা, অদক্ষ কিছু লোকের কর্তৃত্বে কিছু ওয়েব চালু হচ্ছে, এমন হতেই পারে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। ভালো দুই/একটি ওয়েব দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছে। এতে সম্পাদনাও হচ্ছে। ফলে আমি আশাবাদী ভবিষ্যতে ভালোর দিকেই যাবে। সাহিত্য প্রেমের নামে নিজের কৃতিত্ব প্রকাশের একটা বিষয় ও আছে, এতে হিতে বিপরীত হচ্ছে।
চিন্তাসূত্র: আপনি নিজে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতা না লিটলম্যাগ না এই ওয়েবম্যাগে লিখতে /পড়তে পছন্দ করেন?
সাফিনা আক্তার: আমি আগে দৈনিকগুলোয় লেখার খুব আগ্রহ বোধ করতাম, ইদানীং দৈনিকগুলোর নীতিবোধ আমার বোধের সঙ্গে চলে না বলে কম লেখা দেই। আর লিটলম্যাগটা বরাবরই আমার পছেন্দর একটি স্থান। মুদ্রিত বই সবসময় সংরক্ষণ করা যায়, যেকোনও সময়ে সঙ্গে বহন করে যেকোনো স্থানে পড়া যায়।
চিন্তাসূত্র: একটি লিটলম্যাগ দুই থেকে তিন শ কপি প্রকাশিত হয়, দৈনিকের সাহিত্যপাতাও একটি সীমিত পাঠকের কাছে যায়। কিন্তু অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা যায় লাখ লাখ ইউজারের কাছে। সাহিত্যচর্চা, প্রসার ও প্রচারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
সাফিনা আক্তার: অনলাইনের এই একটা দিকই আশার দিক যে, এখানে পাঠক সংখ্যা অনেক বেশি। তবে ব্যাঙের ছাতার মতো গজালে একজন কটি দেখবে-পড়বে? আর অদক্ষতার বিষয়টি তো আছেই। মূল সাহিত্যচর্চা সঠিক হাতে, সঠিক পথে এগুলেই সবার মঙ্গল।
চিন্তাসূত্র: ওয়েবম্যাগের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকলে একসময় কি দৈনিকের সাহিত্যপাতা গুরুত্ব হারাবে?
সাফিনা আক্তার: অবশ্যই দৈনিকের গুরুত্ব হারাবে, এখনই অনেকেই দৈনিকবিমুখ হচ্ছে। দৈনিকগুলোর সাহিত্যপাতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। গ্রুপিংয়ের একটা বিষয় আছে। তা চোখে পড়ার মতো। সব এখানেই দলাদলির একটা বিষয় আছে। একগ্রুপ যে দৈনিকে স্থান পায়, সে দৈনিকে অন্য গ্রুপের স্থান নেই। এসব কারণে দৈনিকের সাহিত্যপাতা একদিন হোঁচট খাবেই।
চিন্তাসূত্র: একটি ওয়েবম্যাগকে আপনি কিভাবে দেখতে চান? অর্থাৎ একটি ওয়েবম্যাগে আপনি কী ধরনের লেখা পড়তে চান?
সাফিনা আক্তার: সম্পাদনার ছোঁয়া থাকবে। বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে জানতে পারব। ভুলভাল-দুর্বল লেখা, যা ইচ্ছা তাই যেন প্রকাশিত না হয়, সেদিকে ওয়েবসাইটলো যত্নবান হবে; এমনটাই আশা করি।