এমদাদ রহমান—কথাশিল্পী। প্রকাশিত গ্রন্থ: পাতালভূমি ও অন্যান্য গল্প। চৈতন্য। সম্প্রতি সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ নিয়ে চিন্তাসূত্রের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।
চিন্তাসূত্র : একসময় যারা দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ঠাঁই পেতেন না অথবা যারা দৈনিকে লিখতে স্বস্তি বোধ করতেন না, তারা লিটলম্যাগ বের করতেন। সম্প্রতি লিটলম্যাগের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বিপরীতে বেড়েছে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ। আপনি কি মনে করেন, লিটলম্যাগের জায়গাটাই এই ওয়েবম্যাগগুলো দখল করছে?
এমদাদ রহমান: গল্প, কবিতা, উপন্যাস কিংবা গদ্য—বিবিধ ফর্মের লেখালেখি কিন্তু প্রকাশের জন্য উন্মুখ থাকে। লেখক তার দিব্যদৃষ্টিতে যা দেখেন, যা তার অনুভূতিতে কম্পন জাগায়, তাই লেখেন। আর বিশ্ব মানুষের কাছে তিনি সেই লেখা ছড়িয়ে দেন। এই যে লেখা আর প্রকাশ—এখানে কিন্তু মাধ্যমের একটি বড় ভূমিকা থাকে। কোথাও লেখক একটা বড় পরিসর পান, কোথাও আবার সেই পরিসরটি ছোট। দৈনিকের সাহিত্যের পাতার পরিসর ছোট। এখানে শব্দ মেপে লিখতে হয় কিংবা লিখতে বলা হয়; কিন্তু ছোটকাগজ বা লিটলম্যাগ—একটি বিকল্প মাধ্যম হিসেবে পুরো বিশ্বেই আজ গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। এমন বহু কাগজের নাম এখানে উল্লেখ করা যাবে; লেখককে যেন মুক্তি এনে দিলো; লেখক এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নামতে পারবেন। এই প্রেক্ষাপটে লিটলম্যাগ বহুদিন ধরেই একটা বিকল্প কিংবা মূল কেন্দ্র হিসেবেই ভুমিকা রাখছে। যারা দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ঠাঁই পেতেন না, তারা ছোট কাগজে লিখতেন—আমি তা মনে করি না। লিটলম্যাগের লেখক একটা স্পিরিট থেকে তার কাজগুলো করেন। কেউ কেউ প্রতিষ্ঠানবিরোধীও হয়ে থাকেন। কেউ আবার দৈনিকেও লেখেন। আজকাল লিটলম্যাগের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। আমি তা মনে করি না। কিংবা হয়ত কমতে শুরু করেছে। কিন্তু লেখকরা লিখছেন। তারা সমাজের অসঙ্গতিকে ব্যঙ্গ করে লিখছেন; রচিত হচ্ছে প্রতিবাদের সাহিত্য। সময় এক্ষেত্রে একটা ফ্যাক্ট অবশ্যই। সেটা কি সবার আগে কলকাতার কৌরব গোষ্ঠী বুঝতে পেরেছিল? তারা তাদের পত্রিকাকে অন্তঃর্জালে কিংবা ওয়েভে প্রকাশ করতে শুরু করেছিল। এখন লিটলম্যাগের বিকল্প হিসেবে আমরা যদি সাহিত্যের ওয়েবম্যাগগুলোর দিকে তাকাই, চিত্র কি খুব স্পষ্ট হয়েছে? গল্প প্রকাশিত হচ্ছে; উপন্যাস বেরুচ্ছে ধারাবাহিকভাবে; কবিতা তো আছেই। বিপুল কবিতা আমাদের। কিন্তু সবই যেন ক্ষীণায়ু। পাঠক আজ পড়ছে তো কাল ভুলে যাচ্ছে। ইনস্ট্যান্ট। ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে ঢেউয়ের ওপর। এদিকে দেখুন- লিটলম্যাগগুলো নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে একটা প্রাণান্ত সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে। তার সংকটও নানামুখী। এসব সংকট কাটিয়ে ওঠেও যে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে পড়তে পারে, তার নামই তো লিটলম্যাগ। লিটলম্যাগের জায়গাটি ওয়েবম্যাগ দখল করেনি, করতে পারেনি কিংবা চায়নি কিন্তু কিছুটা সম্প্রসারণ হয়েছে। বলতে চাই, দৈনিকের সাহিত্য পাতার একটা বিকল্প প্ল্যাটফর্ম হতে পারে এই ওয়েবম্যাগগুলো; আজকের ওয়েবম্যাগও নিরীক্ষা করছে; লেখকের লেখার শৈলী নিয়ে কাজ করছে, এক্ষেত্রে প্যারিস রিভিউ পত্রিকাটির কথা বলতে পারি। তারা প্রিন্টেড সংস্করণের পাশাপাশি অনলাইনেও সমান সক্রিয়। দেখতে হবে, অনলাইন পত্রিকাগুলো কি লিটলম্যাগের বিকল্প হয়ে উঠতে চাইছে কি না। যদি বিকল্প হতে চায়, তাহলে আরও দূর বহুদূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। হয়ত পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। একদিন দাঁড়িয়ে যাবে। একদিন হয়তো এসময়ের গুরুত্বপূর্ণ লিটলম্যাগগুলোর মতোই কিছু ওয়েবম্যাগ দেখা দেবে। তাদের ঘিরে লেখকগোষ্ঠী গড়ে উঠবে; গড়ে উঠবে একটি সচেতন পাঠকগোষ্ঠীও। লিটলম্যাগ কে চালায়? একদল তুখোড় তরুণ—যারা প্রতিষ্ঠানবিরোধী, যারা নিরীক্ষা ও প্রতিবাদমুখর, যারা খুব তীব্রভাবে চায় সমাজ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসুক; চায় মানুষ এগিয়ে যাক প্রগতির দিকে। অনলাইন পত্রিকাগুলিকে কি আমরা এভাবে এখনও সনাক্ত করে ওঠতে পেরেছি? কোনও নিরীক্ষায় নামতে দেখা যাচ্ছে? এরকম কোনো লক্ষণ কি প্রকাশিত হয়েছে? লিটলম্যাগের স্পিরিটের জায়গাটিতে যাওয়ার কোনো অভিপ্রায় কি দেখা যাচ্ছে এখনকার ওয়েবম্যাগুলোর? এই প্রশ্নগুলো এখন উঠতেই পারে। তবু, ছোটকাগজ বা লিটলম্যাগ বলি কিংবা ওয়েবম্যাগ বলি—সাহিত্যই মূল উপজীব্য। সাহিত্য মানুষের গভীর মনের বহু জঞ্জাল দূর করে ফেলে, মানুষকে তার সম্ভাবনার জায়গাগুলো দেখিয়ে দেয়; যে জীবনটিকে মানুষের সত্যিকার অর্থেই যাপনের কথা ছিল, যে মায়াকে উদযাপনের কথা ছিল—সাহিত্য তাকে সেদিকে ধাবিত করে!
চিন্তাসূত্র: একসময় লেখাপ্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে, পাঁচ থেকে দশ বা তারও বেশি ফর্মার লিটলম্যাগ বের হতো। এতে খরচও হতো বেশ। কিন্তু বর্তমানে ওয়েবম্যাগে সে খরচটি নেই। আপনি কি মনে করেন, বেশি অর্থব্যয়ের কারণ না থাকায় ওয়েবের দিকে ঝুঁকছেন সাহিত্যকর্মীরা?
এমদাদ রহমান: লিটলম্যাগে প্রথা ভাঙার ব্যাপার থাকে। লেখকরা সমাজের ব্যাধিকে আরও স্পষ্টরূপে চিহ্নিত করতে পারেন। কিন্তু এই পত্রিকাগুলোর প্রকাশও সহজসাধ্য নয়। বহু পত্রিকাই পয়সার ওভাবে দুই তিনটি সংখ্যা বের করার আর বের করতে পারেনি; বন্ধ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে কলকাতার কিছু কাগজ আছে, যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে পেরেছে। এখন অবশ্য এই প্রশ্নটি ওঠাও অস্বাভাবিক নয়—লিটলম্যাগের প্রয়োজন কি ফুরিয়েছে? উত্তর দেওয়া যায় অনায়াসে—না। প্রয়োজন ফুরোয়নি। কিছু মানুষ এখনো আছেন, যারা এখনো স্বপ্ন দেখেন। নতুন সাহিত্যের ভার বহনের সক্ষমতা ওয়েবম্যাগগুলোর এখনো তৈরি হয়নি বলে আমি মনে করি। সামর্থ্যের অভাবের জন্য নয়, বরং সাহসের অভাবের কারণেই এমনটি হচ্ছে। সাহিত্যও এ কারণে তরলতায় আক্রান্ত হয়েছে। আজকের প্রচুর অনলাইন থেকে রাশি রাশি গল্প কবিতা আপনি অনায়াসে পাচ্ছেন ল্যাপটপের একটি মাত্র ক্লিকে কিন্তু পড়তে গেলেই মনে হবে আবর্জনা। দৈনিকের সাহিত্যপাতাই যেন তার ফর্ম ভেঙে ওয়েবম্যাগ হয়ে গেছে!
চিন্তাসূত্র: কারও কারও মতে, বেশিরভাগ ওয়েবেই সম্পাদনা ছাড়া লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকী বানানও দেখা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমদাদ রহমান: লেখা প্রকাশে যত্ন নেই। তাড়াহুড়ার ছাপ থেকে যায়। অনূদিত লেখাগুলো যাচ্ছেতাই মনে হয়। লেখক লেখাটি লিখে আর ফিরেও দেখছেন না; এমনকি নিজের লেখায় কী কী বানান ভুল করেছেন, সেটাও খোঁজ করছেন না। সম্পাদকও সেই লেখা ভুলসহ ছাপিয়ে দিচ্ছেন। তবে, ছাপানো লেখা যেকোনও সময় এডিট করার সুযোগ থাকে ওয়েবম্যাগগুলোয়।
চিন্তাসূত্র: একসময় কারও পকেটে একহাজার/বারো শ টাকা থাকলেই তিনি একটি লিটলম্যাগ করার সাহস দেখাতেন। এখন ১৫/১৬ শ টাকা পকেটে থাকলেই কেউ কেউ ওয়েবম্যাগ করছেন, কেউ কেউ বিনেপয়সাতেই ব্লগজিন খুলছেন, লেখা সংগ্রহ করছেন। এ ধরনের ওয়েবজিন বা ব্লগজিন বের করার কারণ কী বলে মনে করেন আপনি? এটা কি নিছকই নিজের কর্তৃত্ব প্রকাশের উপায়, না কি সাহিত্যপ্রেমের জন্য?
এমদাদ রহমান: যতদূর দেখছি, তাতে কারোরই উদ্দেশ্য তো খারাপ বলে মনে হচ্ছে না। বিপুল এই কর্মযজ্ঞের পেছনে সাহিত্যের প্রতি গভীর প্রেমের ব্যাপারটাই প্রধান হয়ে উঠছে। অনলাইনের এই কাজগুলোকে এখন আর উপেক্ষাও করা যাবে না। অনলাইনে লেখালেখির জগতে অভ্র একটি বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। বাংলা টাইপ এখন করা কত সহজ। এই ব্যাপারটিও তারুণ্যকে ওয়েবম্যাগের দিকে ধাবিত করেছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাস্রোত এখন বিশ্বময়। বলা হয়—ওয়ার্ডস উইদাউট বর্ডার! মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকা, সেখান থেকে লাতিন আমেরিকা হয়ে জাপান; তারপর হারুকি মুরাকামি, কাজুও ইশিগুরো, মিলান কুন্দেরা থেকে হাসান আজিকুল হক—পাঠকের সামনে বিশ্বসাহিত্যের দরোজা আজ খোলা। খোলা জানালা। এখন দরকার ভাবনার প্রসারতা, চিন্তার গভীরতা। গ্রহণ-বর্জনের খেলাও চলছে। আজকের পাঠকও প্রাজ্ঞ পাঠক।
চিন্তাসূত্র: আপনি কি মনে করেন, ওয়েবম্যাগ-ওয়েবজিন-ব্লগজিন মানুষকে বইপাঠবিমুখ করে তুলছে?
এমদাদ রহমান: বই কখনো হারিয়ে যাবে না; তার পাঠকও থাকবে। পাঠক পড়তে চাইবে। আইজাক বাশেভিক সিঙ্গারের একটি কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেছেন—মানুষের স্বভাবে এমন কোনও পরিবর্তন ঘটে যায়নি, যার কারণে সে ‘ওয়ার্ক অব ইমাজিনেশন’ সম্পর্কে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। সিঙ্গার আরও বলেন, সাহিত্য যদি উৎকৃষ্ট হয়, তাহলে প্রযুক্তি সেখানে কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে পারবে না।
চিন্তাসূত্র: আপনি নিজে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতা, না লিটলম্যাগ, না এই ওয়েবম্যাগে লিখতে /পড়তে পছন্দ করেন?
এমদাদ রহমান: দৈনিকের সাহিত্যপাতাকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এখন দুই বাংলাতেই যেসব সাহিত্য সাময়িকী বের হচ্ছে,সেগুলো কিন্তু প্রিন্টেড যেমন পড়া যাচ্ছে, তেমনি অনলাইনেও পড়া যাচ্ছে। আমি এখন দেশের বাইরে। আমাকে সম্পূর্ণরূপেই অনলাইনের ওপর নির্ভর করতে হয়। লিখতে পছন্দ করার ক্ষেত্রে আমার রক্ষণশীলতা তেমন একটা নেই। আমি নিজেও একটি ওয়েবম্যাগ (গল্পপাঠ) সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত আছি, বিগত কয়েক বছর। মানসম্মত একটি সাহিত্যপাতায় নিজের লেখা প্রকাশ পেলে আনন্দিত হবো যেমন, তেমনি সিরিয়াস ওয়েবম্যাগেও নির্দ্বিধায় লিখব।
চিন্তাসূত্র: একটি লিটলম্যাগ দুই থেকে তিন শ কপি প্রকাশিত হয়, দৈনিকের সাহিত্যপাতাও একটি সীমিত পাঠকের কাছে যায়। কিন্তু অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা যায় লাখ লাখ ইউজারের কাছে। সাহিত্যচর্চা, প্রসার ও প্রচারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
এমদাদ রহমান: কয়েক লাখ ইউজারের কাছে গিয়ে লাভ কী? যেতে হবে প্রকৃত পাঠকের কাছে। ‘সীমিত পাঠক’ কথাটির মধ্যেও একটা দর্শন আছে। একটা সার্কেল। মানে সাহিত্যে সব সময়ই একটা সার্কেল থাকে। একটা বিশেষ শ্রেণীর পাঠকের কাছেই কিন্তু সাহিত্য যায়, যেতে চায়। এটা হয়তো ট্র্যাজেডি। আজকের দিনে বোর্হেসের লেখা নির্দিষ্ট কিছু পাঠক পড়বে, তেমনি রুলফো’র পেদ্রো পারামো উপন্যাসটিও কিন্তু সবাই পড়বে না। এখানে প্রশ্ন ছিল বেশি পাঠকের কাছে যাওয়া নিয়ে। হ্যাঁ। অস্বীকারের কোনো উপায়ই নেই—ওয়েবম্যাগগুলো সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা পাঠকের সাহিত্য পাঠের ক্ষুধা মেটাচ্ছে। এছাড়া এভাবে কিন্তু একটি আর্কাইভও গড়ে উঠছে। মনে করুন দেশের বাইরের কোনও একজন পাঠকের ইচ্ছা হলো, হাসান আজিজুল হকের আত্মজা ও একটি করবী গাছ গল্পটি পাঠ করবে। কিন্তু তার কাছে তো বই নেই। তার কাছে এই গল্পটি পাওয়ার এখন একমাত্র উপায় অনলাইন। সে গুগলে গিয়ে সার্চ করে খুব সহজেই গল্পটি পেয়ে যাবে। আর এখানেই একটি ওয়েবম্যাগের গুরুত্ব। দেশজ সাহিত্য ওয়েবম্যাগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়।
চিন্তাসূত্র: ওয়েবম্যাগের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকলে একসময় কি দৈনিকের সাহিত্যপাতা গুরুত্ব হারাবে?
এমদাদ রহমান: দৈনিকের সাহিত্য পাতা বন্ধ হবে না, তার কিছু কারণও আছে; নিজেদের ব্যবসার প্রয়োজনেই তারা পাতা রাখবে। ওয়েবম্যাগের সংখ্যাও বাড়বে। বাড়ুক। সাহিত্যপাতাগুলোও থাকুক, পাশাপাশি আরও ওয়েবম্যাগ আসুক। কিন্তু সবার কাজ যেন লোক হাসানো না হয়; লেখকের ক্রোধ ও কৌতুক যেন মানুষের সামগ্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে বিরাট একটা ভূমিকা পালন করতে পারে।
চিন্তাসূত্র: একটি ওয়েবম্যাগকে আপনি কিভাবে দেখতে চান? অর্থাৎ একটি ওয়েবম্যাগে আপনি কী ধরনের লেখা পড়তে চান?
এমদাদ রহমান: সাহিত্য কোনো ফাঁপা বিষয় নয়, সে একটা বিশেষ কিছু ব্যাপারকে ধারণ করে এগিয়ে চলে, যেমন—চিন্তার গভীরতা। আর তাই সাহিত্যকে আমি বিনোদন হিসেবে নেব না। সাহিত্য আমার কাছে রক্তমাংসের ব্যাপার। এদিক থেকে যদি বিবেচনা করি, তাহলে আমার দৃষ্টিতে একটি ওয়েবম্যাগে যা যা থাকবে তা হচ্ছে—বিশ্বজনীনতা। নিরীক্ষা। সাহিত্যের নতুন বাঁক আবিষ্কার। পাঠকের চিন্তার জগতকে গভীরভাবে আলোড়িত করবে এমন স্পর্ধা। দুর্বিনীত দুঃসাহস। নির্ভুল লেখা। অসামান্য গদ্য। একটি তীব্র কবিতা। সাক্ষাৎকার। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের, যেকোনো দেশের কবি কিংবা ঔপন্যাসিকের সাক্ষাৎকার; যেমনটি করে থাকে প্যারিস রিভিউ; তাদের ‘আর্ট অব ফিকশন’ সাক্ষাৎকারগুলো বিশ্বসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য। চাই, একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। চাই নতুন একটি উন্মোচন। লেখকরা কেন লেখেন, কী লিখছেন, কী লিখবেন, কী পড়ছেন—এসব তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়; আর অবিরাম স্বপ্ন আর তারুণ্য। নিজস্ব কিছু লেখক থাকুক। নতুন লেখক তৈরি হোক। ওয়েবম্যাগগুলোর নিজস্ব চরিত্র গড়ে উঠুক। একইসঙ্গে বিশাল একটি পাঠকগোষ্ঠীও তৈরি হোক।