ফারহানা ইলিয়াস, কবি। প্রায় দুই দশক ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন। প্রবাসজীবনে তার সাহিত্যচর্চা ও অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন চিন্তাসূত্রকে।
চিন্তাসূত্র: দেশ থেকে অনেক দূরে আছেন। কত বছর ধরে আছেন প্রবাসে? কেমন লাগছে প্রবাসজীবন?
ফারহানা ইলিয়াস তুলি: আমার প্রবাসজীবন প্রায় দুই দশক। সমাজ-সংসার নিয়ে ভালোই আছি বলতে পারি।
চিন্তাসূত্র: কর্মব্যস্ততার ফাঁকে লেখালেখির সুযোগ পান কেমন?
ফারহানা ইলিয়াস তুলি: আমি একসময় নিয়মিত লিখতাম। এখন কম লেখা হয়। প্রবাসে সংসার সামলানো কঠিন। এছাড়া নিজের জব তো রয়েছেই। কাজকর্ম করে লেখার সময় বের করা প্রবাসে আসলেই খুব কঠিন। মাঝেমধ্যে চেষ্টা করি মাত্র।
চিন্তাসূত্র: দূরপ্রবাসে বসে দেশকে কেমন অনুভব করেন? হঠাৎ করেই দেশে ফেরার জন্য প্রাণ কেঁদে ওঠে কখনো? দেশের কথা মনে পড়লে কী করেন?
ফারহানা ইলিয়াস তুলি: আমাদের ফ্যামিলির সিংহভাগ মানুষই বিদেশে থাকেন। ইউরোপে-আমেরিকায়। তাই অনেকটা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করি সেই অভাব। দেশের জন্য তো প্রাণ কাঁদেই। কিন্তু দেশে কি স্থায়ীভাবে ফেরা যাবে ? সেই অবস্থা নেই কেন? এর জবাব খুঁজি। নিয়মিত টিভি দেখে, পত্রপত্রিকা, বই পড়ে দেশকে ধরে রাখি মননে।
চিন্তাসূত্র: প্রবাসে সাহিত্য চর্চায় কোনো প্রতিকূলতার মুখোমুখি পড়েছেন?
ফারহানা ইলিয়াস তুলি: আগেই বলেছি, আমার লেখালেখির পরিসর খুব বড় নয়। গ্লোবাল ভিলেজে এখন সুবিধা অনেক। তাই সহজেই প্রতিকূলতা পেরিয়ে যাওয়া যায়। না আমার এমন কোনো সমস্যা হয় না।
চিন্তাসূত্র: সামনে বিজয় দিবস। এ সময় আপনি দেশের বাইরে। বিজয় দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোর সময় বিদেশের মাটিতে বসে দেশকে কিভাবে উপলব্ধি-ধারণ করেন? দিবসগুলো পালন করেন কিভাবে?
ফারহানা ইলিয়াস তুলি: মহান বিজয় দিবস আমাদের গর্বের দিন। এমন দিনগুলোয় নিউইয়র্কে অনেক অনুষ্ঠান হয়। সেগুলোতে যাই। মাঝে মাঝে অংশ নেই। এভাবেই চলে যায়।
চিন্তাসূত্র: আগামী বইমেলায় আপনার কোনো বই আসবে?
ফারহানা ইলিয়াস তুলি: হ্যাঁ, একটি কবিতার বই আসবে। ‘পরাগায়নের পূর্বশর্ত’। বের করছে তিউড়ি প্রকাশনী, ঢাকা। আরও একটি পাণ্ডুলিপি জমা আছে, আরেকটি প্রকাশনীতে। কী হয়, জানি না।
চিন্তাসূত্র: দেশের সাহিত্যচর্চার নিয়মিত খোঁজ পান? কিভাবে দেখছেন এ সময়ের সাহিত্য চর্চা?
ফারহানা ইলিয়াস তুলি: আমাদের নিউইয়র্কের বাড়িতে প্রায় প্রতিমাসেই বাংলাদেশ, ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে প্রকাশিত সাহিত্যপত্র, লিটল ম্যাগাজিন আসে। এছাড়া অনলাইনে পড়া হয় প্রায় প্রতিদিনই। আমার মনে হয়, অনেক তরুণ-তরুণী বেশ ভালোই করছেন। তারা লেগে আছেন, এটা আশার কথা। তবে সামাজিক মাধ্যমে কেউ কেউ ‘সাহিত্যত্রাস’ তৈরি করে আমাদের সম্মিলিত ক্ষতি করছেন—এটা খারাপ দিক।
চিন্তাসূত্র: বাংলা সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে হলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
ফারহানা ইলিয়াস তুলি: বিদেশি সাহিত্য পড়তে হবে। কোথায় কী হচ্ছে, তা জানতে হবে। কঠিন অধ্যবসায় বজায় রাখতে হবে। আর অনুবাদের বিষয়টি তো থাকছেই। নামি প্রকাশনী থেকে পরিশুদ্ধ ও ধ্যানী অনুবাদ ছাড়া বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বে পরিচিত করা কঠিন।
চিন্তাসূত্র: সমকালীন গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ ও কবিতার মধ্যে কোন শাখাকে আপনার ঋদ্ধ মনে হয়?
ফারহানা ইলিয়াস তুলি: একটি কবিতা দিয়ে অনেক কিছু বলা যায়। তাই আমি কবিতাকেই বেশি ঋদ্ধ মনে করি।
চিন্তাসূত্র: বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা জানতে চাই।
ফারহানা ইলিয়াস তুলি: সাহিত্য একটি জাতির শিল্পপতাকা। তা একটি জাতির অনেক ঐতিহ্যের খুঁটি। তাই বাংলাদেশ যেমন মাথা উঁচু করে বিশ্বে থাকবে, তেমনি বাংলা সাহিত্যও এগোবে। বিবর্তন গুলো পজিটিভ হলেই আমাদের সাহিত্য সমৃদ্ধ হবে। আমি এই আশা করি।