নীতির প্রশ্নে আপসহীন সাংবাদিক জে এম রউফ। শিবগঞ্জের মতো এক ভিলেজ টাউন থেকে যাত্রা, বিচরণ এখন দেশব্যাপী। দেশের নামি-দামি পত্রপত্রিকায় কাজ করেছেন। বলিষ্ঠ লেখার মাধ্যমে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছেন বিশ্ব দরবারেও। বগুড়া প্রেসক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়নসহ অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। অসাধারণ ও অকৃত্রিম এই সাংবাদিকের বর্ণাঢ্য জীবন ও তার কর্মজীবন নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন অনেক বিদগ্ধ মানুষ।
জে এম রউফ। একজন গুণী সাংবাদিক। মানুষ হিসেবে অসাধারণ। অর্ধ যুগেরও বেশি সময় ধরে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি আমার বয়সে অনেক সিনিয়র হলেও আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। অত্যন্ত সজ্জন সাংবাদিক জে এম রউফ দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে দেশের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে মিশেছেন, তাদের নিয়ে লিখেছেন; সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। অনেকের সঙ্গে রয়েছে অম্ল-মধুর স্মৃতি।
লেখক হিসেবে তার সুখ্যাতি রয়েছে। সাহিত্যের অনেক শাখায় তার অবাধ-প্রবল-প্রচুর বিচরণ আগ্রহী পাঠকদের মুগ্ধ করেছে। আমরা তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখা উপভোগ করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকের কাছ থেকে নানা কারণে দূরে থাকলেও জে এম রউফ ভাইয়ের রাশভারী ব্যক্তিত্বের আড়ালে এমন এক স্নেহপ্রবণ মন ছিল যে দূরে সরে থাকতে দিতেন না তিনি এবং আমি নিজেও বেশি সময় দূরে থাকতে পারিনি। নিজেই ফোন করে খোঁজখবর নিতেন, যেতে বলতেন তার অফিসে, বাসায়। গেলে দীর্ঘ সময় আলাপ করতেন। তিনি জানতেন আমি মেসে থাকি, কি খাচ্ছি না খাচ্ছি এসব ভেবেই হয়তো বেশ যত্ন করে খাওয়াতেন আমাকে। আমি অবশ্য এসবের বিনিময় কিছুই ফেরত দিতে পারিনি, হয়তো পারবেও না কোনো দিন।
আমার লেখক-জীবনে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছি এবং সবচেয়ে বেশি আলাপ করেছি রউফ ভাইয়ের সঙ্গেই। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে তার আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়নি কখনো। এটিই একমাত্র আলাপচারিতা, যদিও পূণাঙ্গ নয়। তবু, আমি এই অধ্যবসায়ী সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার মধ্য দিয়ে তার জীবনের খণ্ডচিত্র উপস্থাপনের চেষ্টা করছি মাত্র। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য এবার তিনি পেয়েছেন বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার। সাংবাদিকতা, পেশাগত দক্ষতা ও লেখালেখি সম্প্রতি তার মুখোমুঝি হয়েছি। এখানে পাঠকদের জন্য সেই আলাপচারিতাই তুলে ধরা হলো। (ভূমিকা ও সাক্ষাৎকারগ্রহণে রিপন আহসান ঋতু।)
রিপন আহসান ঋতু: প্রথমে আপনার বিষয়ে যাওয়ার আগে আপনার সম্পর্কে জানতে চাই, আপনার জন্ম, আপনার বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া, কর্মজীবন নিয়ে।
জে এম রউফ: এটা আমার পরিচিত প্রায় সর্বজনবিদিত যে, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার পশ্চিম পাড়ার মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। জন্মটা আমার পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে হলেও আমার বাবা পরিবারের দিকে তেমন সময় দিতে পারেননি, কারণ তিনি টানা কয়েক দফা ইউপি সদস্য ছিলেন। এছাড়া, দুটি গভীর নলকূপ ছিল তার এক সমিতির অধীনে, সেই দুটির মধ্যে একটি নিয়ে মামলা হলে তাকে অধিকাংশ সময় আদালতে দৌড়াতে হতো। যে সময়টুকু তিনি বাড়িতে থাকতেন, তখনো এলাকার লোকজন থাকতো আশেপাশে। ফলে পরিবারের কার কী দরকার, জমি-জমায় চাষাবাদ এসব তিনি দেখার সময় পেতেন না। আমার মা ও বড় ভাইকে পরিবারের বিষয়াদি সামলাতে হতো। ৪ ভাই, ৫ বোনের সংসার। এদিকে বাবার যতটা না নজর ছিল, তারচেয়ে বেশি ছিল এলাকার মানুষের দিকে। তখন পুরো ইউনিয়ন মাত্র তিন ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত, এখন যা ৯ ওয়ার্ড। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাজ তাকে দেখতে হতো। পঞ্চম শ্রেণীতে ওঠা পর্যন্ত আমি বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ছিলাম। বাবার কী খেয়াল হলো আমাকে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ানোর জন্য বাড়ি থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে আলীগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিলেন। প্রতিদিন এই দীর্ঘ পথ হেঁটে যাতায়াত করতে হয়েছে টানা এক বছর। সে সময় বৃত্তি ছিল কোটা সিস্টেম, আগের বছরই ওই বিদ্যালয়ের একজন বৃত্তি পেয়েছে, ফলে পরের বার আর আমার বৃত্তি পাওয়া হয়নি। এরপর বিহার এম এ এম হাই স্কুলে ষষ্ঠ থেকে মাধ্যমিক পাস পর্যন্ত পড়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হই বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজে। সেই যে গ্রাম ছাড়লাম, আর ফেরা হয়নি। একই কলেজে অর্থনীতিতে অনার্স ভর্তির পরই শুরু করি সাংবাদিকতা, এখনো সেই পেশাতেই বর্তমান।
রিপন আহসান ঋতু: আপনার কোন পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে লেখালেখির হাতেখড়ি?
জে এম রউফ: হাতেখড়ি তো পত্রিকা বা ম্যাগাজিনে হয়নি! সেটা স্কুল জীবনেই বাঁধানো খাতায় হয়েছে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় কলেজ ম্যাগাজিনে সম্ভবত প্রথম একটি গল্প প্রকাশ হয়। ওই সময় আমি ‘প্রিয় পাঠক’ নামে বগুড়ার সে সময়ের আলোচিত এক সাহিত্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেখানে নিয়মিত আমরা দেয়াল পত্রিকা করতাম। আর স্থানীয় দৈনিকের সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক সাহিত্য পাতায় লিখতাম। শুরুর দিকে অবশ্য কবিতা আর প্রবন্ধই বেশি লিখেছি।
রিপন আহসান ঋতু: প্রথম জীবনে সব লেখক বা সাংবাদিকের ওপরেই কোনো-না-কোনো লেখক বা সাংবাদিকের প্রভাব পড়ে তা আপনার ওপরে কি কারও প্রভাব রয়েছে? লেখক সাংবাদিক মিলিয়ে এক সঙ্গেই বলবেন।
জে এম রউফ: লেখক বলতে যা বোঝায় আমি তো আসলে সেটি হয়ে উঠতে পারিনি, ফলে কারও প্রভাব আছে এমনটি বলা চলে না। আর আমি কোনোদিনই লেখালেখিতে কাউকে অনুকরণ বা অনুসরণ করতে চাই না। এমনকী কবিতায় অনেকে ব্যাকরণ খোঁজেন আমি সেটারও ঘোরবিরোধী। কারণ ব্যাকরণ ধরে কোনো লেখা সৃষ্টি হয় না, লেখা থেকেই ব্যাকরণ সৃষ্টি হয় বলে আমার ধারণা। আর সাংবাদিকতায় আমার আমৃত্যু গুরু প্রয়াত দুর্গাদাস মুখার্জ্জী। যিনি আমাকে সাংবাদিকতায় টেনে এনেছেন। আমি কোনোদিন কল্পনাতেও সাংবাদিক হবো মনে করিনি। কিন্তু তার কারণেই আমার এই পেশায় আসা। শুধু বগুড়া নয়, সারা দেশের মানুষের কাছেই তিনি নীতিবান, নির্ভীক ও আপসহীন সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। আমিই তার শেষ ছাত্র, আমার পর তিনি আর কাউকে দীক্ষা দিতে পারেননি, তবে আমার আগে তার কাছে সাংবাদিকতা শিখেছেন অনেকেই। আমি তার পথে হাঁটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি মাত্র।
রিপন আহসান ঋতু: কর্মজীবনে এত এত মাধ্যম থাকতেও কেন সংবাদ মাধ্যমকেই বেছে নিলেন?
জে এম রউফ: আগের প্রশ্নেই এর আংশিক উত্তর দিয়েছি। সাংবাদিকতা করবো এমন কোনো ইচ্ছা বা প্রত্যাশা ছিল না। দুর্গা দা’র সঙ্গে শহীদ প্রফুল্ল চাকী স্মৃতি সংসদসহ নানা সামাজিক সংগঠন করতে গিয়ে ঘনিষ্ঠতা। এরপর তিনি তার সম্পাদিত দৈনিক উত্তরাঞ্চল নবপর্যায়ে প্রকাশনা করতে গিয়ে আমাকেও যুক্ত করেন। এরপর মোহে পড়ে যাই, যা এখনো কেটে উঠতে পারিনি বলে এই মাধ্যমেই আছি।
রিপন আহসান ঋতু: সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কখনো নীতির দ্বন্দ্বে পড়েছেন?
জে এম রউফ: সাংবাদিকতার নীতিটা আসলে কি সেটা জানা থাকলে দ্বন্দ্বে পড়ার আশঙ্কা কম। আমরা কী কারণে সাংবাদিক, আর কেন সাংবাদিকতা করি এটা পরিষ্কার থাকাটা জরুরি। দুর্গা দা একটা কথা বলতেন যে, মানুষের জন্যই সাংবাদিকতা। এর সঙ্গে আছে দেশ-সমাজ-সংস্কৃতি আর অর্থনীতির সম্পর্ক। এই বিষয়গুলো মাথায় থাকলে দ্বন্দ্ব আপনা-আপনি কেটে ওঠা সম্ভব। যদি বলো আর্থিক সুবিধার প্রস্তাবনার কথা তাহলে বলবো, এমন অনেক প্রস্তাবই এসেছে। গ্রহণ করার প্রবৃত্তি হয়নি কোনোদিন। আমি যখন প্রথম আলোতে কাজ করি, মিলন ভাই (মিলন রহমান, বর্তমানে ইত্তেফাক-এর নিজস্ব প্রতিবেদক) তখন অফিস প্রধান। সে সময় অনেক ঘটনার সাক্ষীও তিনি। বগুড়া পৌরসভার শত কোটি টাকার কাজ ভাগ-বাটোয়ারা, এক খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার দুর্নীতির সংবাদ চেপে যাওয়া এমন নানা ক্ষেত্রে কল্পনার চেয়েও বেশি টাকার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু নিউজের স্বার্থই বড় মনে হওয়ায় তা প্রকাশ করেছি। পরবর্তী সময়ে কালেরকণ্ঠে কাজ করতে গিয়ে এক সংবাদ আটকাতে বগুড়ার একজন শীর্ষ শিল্পপতি অফিসে এসেছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। প্রত্নতত্ত্বের নিউজ আমি করলেও অন্য অনেককে পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে চলতে হয়েছে, কিন্তু আমি প্রয়োজন বোধ করিনি।
রিপন আহসান ঋতু: গণতন্ত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভূমিকা কতটুকু আছে বলে আপনি মনে করেন।
জে এম রউফ: হা হা হা, গণতন্ত্র আসলে কী জিনিস? সবারর সমানাধিকারই তো শুধু নয়, অনেক কিছুই তার সঙ্গে আছে। সেখানে মত-প্রকাশ থেকে অবাধ তথ্য নিশ্চিত করাও বোঝায়। তো তথ্য যদি অবাধ হয়, তাহলে আর অনুসন্ধানের প্রয়োজন কিসে? আসলে আমরা যতটা মুখে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলি, বাস্তবে তো সেটা নেই। এমন কিছু আইন আছে, যা অবাধ তথ্য প্রাপ্তিকে বাধাগ্রস্ত করে। তথ্য অধিকার আইনের সহায়তা নিয়ে তুমি হয়তো অফিসিয়াল তথ্য পেতে পারো, কিন্তু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য তো নয়! তাই অনুসন্ধানের দিকে সাংবাদিককে ধাবিত হতে হয়। এটা গণতন্ত্রকে সুসংহত করে, গণতন্ত্রই এর দ্বারা উপকৃত হয়, কিন্তু গণতন্ত্র দ্বারা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা উপকৃত হয় না।
রিপন আহসান ঋতু: আপনি যেহেতু প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের মতো বড় একটা প্ল্যাটফরমের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আপনার কী মনে হয় সাংবাদিকদের সার্বিক উন্নয়ন বা সার্বিক নিরাপত্তায় যথেষ্ট কাজ হয়েছে? আমরা তো দেখছি আপনি দীর্ঘ দিন ধরে সাংবাদিক দীপংকর হত্যার বিচার নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন, সে অভিজ্ঞতা থেকেও বলতে পারেন।
জে এম রউফ: এটা একটা জটিল বিষয়। কারণ আমরা যারা সাংবাদিকতা করি, তারা কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের অধীনে। যেখানে সরকারের সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কারণ আমার বেতন হয় প্রতিষ্ঠান থেকে, সরকার তা দেয় না। ফলে আর্থিক যে নিরাপত্তা, সেটা প্রতিষ্ঠান মালিকের দায়। সরকার এক্ষেত্রে মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়। সেটাও মালিক-সাংবাদিক ও কর্মচারীদের সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মালিকদের পক্ষে যায়, কিন্তু তারপরও মালিকরা সেটা মানেন না। ফলে আর্থিক নিরাপত্তা বা উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় সময়ের বাজারদরে সেটা সেই আগের মতোই থেকে যায়। এখন ব্যক্তি নিরাপত্তার প্রসঙ্গে আসি; দেশে এই পর্যন্ত যতগুলো সাংবাদিক হত্যা হয়েছে, তার অধিকাংশেরই বিচার হয়নি। এমনকী আসামি শনাক্ত করাও সম্ভব হয়নি। কারণ যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তারা আন্তরিকতা দেখাননি। রাষ্ট্রীয়ভাবে আশ্বাস দেওয়া হলেও সেসব বাস্তবায়ন হয় না। দীপঙ্কর দা’র প্রসঙ্গ যেহেতু তুললে, তাহলে বলি, এটার একটা মোটিভ আমাদের সামনে হাজির করা হয়েছে, হলি আর্টিজান হামলার জঙ্গি রাজীব গান্ধী এনিয়ে একটি স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। কিন্তু সেটি কারও কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। না সাংবাদিক সমাজ, না দীপঙ্কর দা’র পরিবার। কারণ দীপঙ্কর দা খুন হয়েছেন ২০০৪ সালের ২ অক্টোবর। সে সময় আদৌ রজীব গান্ধীর সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা ছিল কি-না, সেটা একটি বড় বিষয়। কারণ তার স্বীকারোক্তি দেওয়ার সময় যে বয়স, সেটার সঙ্গে দীপঙ্কর দা হত্যাকাণ্ডের সময় মেলাতে গেলে সব গুবলেট হয়ে যায় আর কী। তো এমন পরিস্থিতিতেই সাংবাদিক সমাজকে চলতে হচ্ছে। যদিও এটা ঠিক যে সাংবাদিকতা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা, সেটা জেনেই সবাই এই পেশায় আসেন। কিন্তু প্রত্যেক মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্নে রাষ্ট্রের যে দায়, সেটাকে তো পাশ কাটানো উচিত নয়, বিশেষ করে তুমি সাংবাদিকতা তথা সংবাদপত্রকে যখন রাষ্ট্রের স্তম্ভ দাবি করো; সেখানে স্তম্ভ রক্ষার দায়টা আমরা দেখি না।
রিপন আহসান ঋতু: বাংলাদেশে গণতন্ত্র কি আরও সংকটাপন্ন না-কি এর কোনো কোনো দিক শক্তিশালী হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
জে এম রউফ: একটু আগেও বলেছি গণতন্ত্র একটি বৃহৎ বিষয়। মুখের কথা আর বাস্তবিক গণতন্ত্রে অনেক ফারাক। ভোট দিয়ে গণতন্ত্র যেমন হয় না, তেমনি সব উজাড় করেও গণতন্ত্র হয় না। নানা বিষয়ে নানা মাপকাঠিতে এর বিচার করতে হয়। আমরা ক্রমান্বয়ে গণতন্ত্রের মাপকাঠিগুলো পূরণের দিকে ধাবিত হচ্ছি। একটা বিষয় আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের এই দেশকে কিন্তু অনেক পেছনে টেনে নেওয়া হয়েছে জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে। দীর্ঘ সময় সামরিক স্বৈরতন্ত্র আমাদের আটকে রেখেছে। সেই বলায় ভেঙে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার পথে যেতে অবশ্যই সময় প্রয়োজন।
রিপন আহসান ঋতু: ডিজিটাল বাংলাদেশ একটা ইতিবাচক দিক হলেও, সাংবাদিকতায় ডিজিটালাইজ হয়ে তো আমরা যাকে তাকে সাংবাদিক হতে দেখছি। বিশেষ করে নামে বেনামে অনলাইন পোর্টাল বা অনলাইন টিভির মাধ্যমে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
জে এম রউফ: যুগের সঙ্গে চলাকেই মূলত, প্রগতিশীলতা বলে। ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতাও ডিজিটাল হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রশ্ন হলো যে, কেউ একটি ওয়েব পোর্টাল খুলে নিজে যেমন সাংবাদিক সাজছে, তেমনি যার তার হাতে কার্ড ধরিয়ে দিচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বলছি। এমনকী সদ্য সাবেক তথ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আমরা মিছিল-সমাবেশও করেছি সেই দাবি বাস্তবায়ন না করার কারণে। বর্তমানে কিন্তু অনলাইনকেও রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করছি, এটা কঠোরভাবে মনিটরিং করা দরকার। জাতির বিবেক বা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভে চির ধরলে ক্ষতি রাষ্ট্রের। আশা করি, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিযুক্তরা বিষয়টি দেখবেন।
রিপন আহসান ঋতু: দীর্ঘ সময়ের এই সাংবাদিক জীবনে, জাতীয় বনাম আঞ্চলিক সাংবাদিকতার বেসিক পার্থক্যটা কী দেখলেন?
জে এম রউফ: সাংবাদিকতা তো আসলে জাতীয় বা আঞ্চলিক হয় না। কোনো সাংবাদিককেই জাতীয় সাংবাদিক বলা হয় না, তেমনি কেউ আঞ্চলিকও নন। কিন্তু রাজধানীতে বাস করলে তাকে জাতীয় আর জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে হলে তাকে আঞ্চলিক বা মফস্বল তকমা লাগানো হয়। এটা হীনমন্যতা। কোনো শিক্ষক বা আইনজীবী বা চিকিৎসক রাজধানীতে থাকলে তাকে জাতীয় কেউ বলে না, তারাও দাবি করেন না। কিন্তু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটিই হয়ে আসছে। এমনকি মজুরি কাঠামোতেও এটি করা হয়। আমরা মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে এটি নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছি। কিন্তু কাজ খুব একটা হয়েছে বলে মনে হয় না, যদিও একটি খাত এতে অপসারণ করা হয়েছে মাত্র। আর একটি কথা বলি, রাজধানীতে বসে যারা সাংবাদিকতা করেন তারা প্রত্যেকে একটি মাত্র বিট কাভার করেন, কিন্তু জেলা বা উপজেলায় যারা কাজ করেন তারা প্রত্যকেই ক্রাইম, আদালত, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সবার রজনৈতিক দলসহ সংবাদের যতগুলো শাখা আছে সবই করেন। সেই বাস্তবতায় সংবাদ মাধ্যমের প্রাণই কিন্তু তারা। এটা আমার অভিমত, কেউ ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন, তবে যুক্তি দিয়ে করলে আমি সেটা গ্রহণ করবো।
রিপন আহসান ঋতু: আজকাল উন্নয়ন সাংবাদিকতার বিষয়টা প্রায় আলোচনায় আসে, আপনি এটা নিয়ে কিছু বলবেন কি-না?
জে এম রউফ: সাংবাদিকতা মানেই কিন্তু উন্নয়ন। সেটা সামাজিক উন্নয়ন বলো, অর্থনৈতিক বলো, রাজনৈতিক বলো বা যেকোনো ধরনের; এটাকে উত্তরণও বলা চলে। সাংবাদিকতা কিন্তু পশ্চাদপদতা বা কূপমণ্ডুকতা নয়, এটা প্রগতিশীল ও অগ্রসরমান বিষয়। তো অগ্রসর তা প্রগতিই তো উত্তরণ। একটি অবস্থা থেকে নতুন অবস্থায় গমন। কাজেই সাংবাদিকতাকে উন্নয়নে নতুন করে টানার দরকার নেই। এখন মানদাতা আমলের কোনো কিছু দিয়ে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা তো সম্ভব নয়, এ কারণে উন্নয়নের যেমন দরকার, সেই বিষয়টি তুলে ধরাও জরুরি। এ কারণে উন্নয়ন সাংবাদিকতার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সেটি বরাবরই সাংবাদিকতার অংশ বলেই আমি মনে করি।
রিপন আহসান ঋতু: এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আমাদের বর্তমান সামাজিক জীবন নৈরাজ্য-নৈরাশ্য, সন্ত্রাস-শৃঙ্খলা এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। এর পেছনে কী কারণ আছে বলে আপনার মনে হয়।
জে এম রউফ: অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হলো সব মানুষকে কর্মে নিয়োজিত করতে না পারা। সবাইকে কাজের মধ্যে রাখতে পারলে তো সে অপরাধের বিষয়ে ভাবার সময়ই পাওয়ার কথা নয়। যখন কাজ পাচ্ছে না, তখন গ্রুপ তৈরি করছে; আপরাধ সংঘটিত করছে। অন্য কারণ হলো যথাযথ ও দ্রুততম সময়ে বিচার বা শাস্তি নিশ্চিত না করা। বিচার প্রলম্বিত করলে অপরাধ প্রবণতা বাড়ে এটা সর্বজন স্বীকৃত, কিন্তু তা দ্রুততর করা যাচ্ছে না। আর একটি কারণ আমার মনে হয় সামাজিক অনুশাসন না থাকা। আগে এলাকার মুরব্বি বা বড় ভাইকে দেখলে অনেকে সটকে পড়তো, কারণ ওই মুরব্বি বা বড় ভাই তাকে শাসন করতে পারতো। কিন্তু এখন সেটি করার কোনো জো নেই। কারণ সামাজিক বন্ধন ক্রমান্বয়ে শিথিল হয়ে পড়ছে। এমনকী বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছাত্রকে শাসন করতে ভয় পাচ্ছেন, কখন না জানি তাকে মামলায় পড়তে হয় বা চাকরি চলে যায়। এই পরিস্থিতি গুলোও অপরাধ প্রবণতার জন্য দায়ী।
রিপন আহসান ঋতু: এখন হলুদ সাংবাদিকতা বা অপ-সাংবাদিকতার কথা খুব শোনা যায়, এমনকী অনেককে বলতে শুনেছি সাংবাদিক মানে সাংঘাতিক! আসলে এই কথাগুলো উৎপন্ন হলো কিভাবে বা এর ভিত্তি কতটুকু?
জে এম রউফ: এর আগেই মনে হয় আংশিক বলেছি অনলাইনের ছড়াছড়ির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে। তারপরও বলি একটি প্রতিষ্ঠানে কেউ কাজ করে যদি বেতন না পায় তাহলে তাকে চলতে হবে নিশ্চিতভাবেই দুই নম্বরি করে! আমরা তো বলিই যে প্রতিষ্ঠান বেতন দিতে পারে না, সেই প্রতিষ্ঠান থাকবে কেন? মালিক যদি কোনো বিনিময়ে কার্ড হাতে ধরে দিয়ে বলে করে খাও, তাহলে তো সে আপকর্মই করবে। তাই যেকোনো সংবাদ মাধ্যম চালু হওয়ার আগেই যাচাই করা দরকার তার মালিকের বেতন দিয়ে সেটি চালানোর সক্ষমতা আছে কি না। যদি না থাকে তাহলে তাকে কেন অনুমোদন দেওয়া হবে? খেয়াল করে দেখবে হলুদ সাংবাদিকতা বা অপসাংবাদিকতার সঙ্গে কিন্তু কথিত সাংবাদিকরাই জড়িত। হয়তো ব্যতিক্রম দুই-একটি পাওয়া যাবে যারা নীতিহীন তেমন। কিন্তু বেতন-ভাতা পায় এমন সাংবাদিকদের অধিকাংশ অপকর্মে জড়ায় কম। কারণ তার সেই অপকর্মের কথা জানাজানি হলে চাকরি হারানোর ভয় থাকে। কিন্তু যে মালিককে তুষ্ট করে কার্ড নিয়ে ‘করে খায়’ তার তো চাকরির ভয় নেই। ফলে এই অপবাদ বহন করতে হয় গোটা সাংবাদিক সমাজকে।
রিপন আহসান ঋতু: আবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, আপনি বন্ধু হিসেবে কাদের পেয়েছিলেন? সবাই নিশ্চয়ই বন্ধু ছিল না?
জে এম রউফ: হা হা হা। অনেকেই বলে আমি বুড়োদের বন্ধু। কথাটা একেবারে যে মিথ্যা বলে, তা নয়। আমার সমবয়সী বন্ধুর চেয়ে সিনিয়র বন্ধুর সংখ্যাই বেশি। বিশেষ করে দুর্গা দা’র সহচর্যে থাকতে গিয়ে এমনসব মানুষের সান্নিধ্যে আমাকে কাটাতে হয়েছে যে, সমবয়সী যারা ছিল হয়, তারা আমাকে এড়িয়ে চলতো, নয় তো আমি তাদের সময় দিতে পারতাম না। তবে ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সে সময় (১৯৯৬-২০০১) যারা ছিলেন বগুড়ায় তারা যেমন আমার বন্ধু, তেমনি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও অনেকে আমার বন্ধু তালিকায় আছেন। নানা কারণে অনেকেই হয়তো বন্ধুর মতো মিশেছে, কিন্তু হৃদ্য সম্পর্ক সবার সঙ্গে হয়নি। আর স্কুল কলেজের সহপাঠীদের মধ্যেও আমার বন্ধুর সংখ্যা কম, সহপাঠী হিসেবে সবার সঙ্গেই সম্পর্ক ভালো। আমার অনুধাবনের মূল কথা হলো, কবিতা যারা লেখে তাদের বেশি বন্ধু থাকতে নেই। নিঃসঙ্গতার চেয়ে কবির বড় বন্ধু কেউ নয়, কারণ এতে ভাবনার সময় মেলে।
রিপন আহসান ঋতু: আপনাকে প্রগতিশীল রাজনৈতিকের স্ট্যান্ড নিতে দেখি আমরা, আপনি বন্ধু বৎসল একজন মানুষ। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কোনো বন্ধুকে হারাতে হয়েছে কি না?
জে এম রউফ: একদমই নয়। কারণ আমি আমার আদর্শিক জায়গা সবখানেই পরিষ্কার করে বলি। আনাদের মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি সত্তা, অসাম্প্রদায়িকতা এসব আমার উন্মুক্ত বিষয়। এসব নিয়ে কোনো আপস নেই। ফলে যারা আমার বন্ধু অথবা আমার সঙ্গে মেশে তারা এই বিষয়গুলো জেনেই মেশে। না জেনে কেউ মিশতে এলে আপনাতেই চলে যায়, সেটা বন্ধুত্বে সম্পর্ক গড়ানোর আগেই।
রিপন আহসান ঋতু: আপনি তো খুব আড্ডাবাজ মানুষ, এখনো পুরোনো কোনো আড্ডার স্মৃতি আপনাকে তাড়া করে কি না, করলে কী করেন?
জে এম রউফ: আমি আড্ডা দেই নিজের জন্য। আড্ডায় যত মানুষ আর সমাজ সম্পর্কে ধারণা মেলে অন্য কোথাও তুমি সেটি পাবে না। আবার পেশার জন্যও এটা খুব দরকারি, কারণ এমন কিছু তথ্য তুমি আড্ডায় জানবে, যেটা পরবর্তী কোনো সংবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে, আড্ডা আমার কাজেরই অনুষঙ্গ। অনেক জায়গায় গেলে প্রশ্ন করে আপনি কী করেন? আমি মজা করে উত্তর দেই ঘুরেফিরে বেড়াই আর আড্ডামারি। আসলে আমার পেশাটাই তো তাই, আমি মনে করি তাদের কাছে আমি সত্য কথাই বলি। আমি যেখানেই ঘুরতে যাই আড্ডার একটা আয়োজন করে নেই। আড্ডার জন্য তো খুব বেশি মানুষের প্রয়োজন হয় না, দুই জন হলেও সেটা চলে। পুরাতন আড্ডা বলে তো কিছু নেই, সবই স্বাতন্ত্র্য। জায়গার হয়তো রদবদল হয়, কিন্তু আড্ডা বদলায় না। ফলে জায়গার মায়া যেটুকু সেটা অনেক সময় মনে পড়েই। তাতে আক্ষেপ করার কিছু নেই। ছাত্র জীবনের পুরো সময়টা ফুল পট্টির ফুটপাতে বা খোকন পার্কের ভেতরে আড্ডা দিয়েছি, এখনো পার্কে বসি মাঝে মাঝে। ফুটপাতে ফুলের দোকান তো এখন নেই তাদের আলাদা মার্কেট হয়েছে। সপ্তপদীর পশ্চিম পাশে হান্নানের বইয়ের দোকানেও আড্ডা ছিল আমাদের। এরকম অনেক স্থান আছে। বাসার বাইরে গেলে আমি মানুষের মাঝে থাকতে পছন্দ করি আর কী!
রিপন আহসান ঋতু: বয়স তো অনেক হলো, আপনার নিজস্ব দেয়ালে কতটা সুন্দর ছবি আঁকা হলো ভাই?
জে এম রউফ: জীবনের দেয়াল তো ছবিময়। কোনোটি আনন্দের কোনোটি বেদনার। কোনটি প্রাপ্তির কোনটি হারানোর। বেদনা বা হারানোর হলেই যে সে ছবি অসুন্দর হবে বা তার উপযোগিতা থাকবে না, তা কিন্তু নয়। সবকিছু মিলেই তো জীবন। তবে নতুন একটি ছবি সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে সেটা আমার সন্তান রণন। এটাই সব ছবির সেরা ছবি, যা আমাকে বাবা বানিয়েছে।
রিপন আহসান ঋতু: ব্যক্তিগত জীবনে কোনো অতৃপ্তি বা হতাশা কি আপনাকে কখনো আচ্ছন্ন করেছে?
জে এম রউফ: আমি বরাবরই আশাবাদী মানুষ। কঠিন সময় পাড় করি নির্বিকার চিত্তে, কারণ অন্ধকারের বিপরীতে আলো থাকবেই, এটা আমি বিশ্বাস করি। আমাকে নিজ নামে পরিচিত করতে যতটা সংগ্রামের মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে অনেকের কাছেই সেটি দুঃসাধ্য। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। গ্রাম থেকে শহরে এসে কোনো স্বজন-পরিজন বা অর্থ-বিত্ত ছাড়াই আমাকে পথ করে নিতে হয়েছে নিজের সামর্থ্য দিয়ে। হতাশ হলে কি তা পারতাম! আর অতৃপ্তি হলো ব্যক্তির নিজস্ব অক্ষমতাকে আড়াল করার অজুহাত, আমি তেমনটি ভাবি না কোনো দিন।
রিপন আহসান ঋতু: আপনার সুখময় কোনো স্মৃতির কথা শুনে শেষ করতে চাই।
জে এম রউফ: সুখের স্মৃতি তো বলবো জীবনের শেষ বেলায়। এখন জীবনের অনেক পথ বাকি। ছেলে বড় হোক তারপর এটা বলার সময় আসবে। এখন যাপিত জীবন অম্ল-মধুর। সুখের স্মৃতিকে প্রকাশ করলে দুঃখের স্মৃতিরা কষ্ট পাবে। কারণ দুটোই আমাকে এই আমি পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
রিপন আহসান ঋতু: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জে এম রউফ: তোমাকেও ধন্যবাদ