পলিয়ার ওয়াহিদ—কবি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চারটি। এগুলো হলো—পৃথিবী পাপের পালকি, সিদ্ধধানের ওম, হাওয়া আবৃত্তি ও মানুষ হবো আগে। সম্প্রতি সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ নিয়ে চিন্তাসূত্রের মুখোমুখি হয়েছেন এই কবি।
চিন্তাসূত্র: একসময় যারা দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ঠাঁই পেতেন না অথবা যারা দৈনিকে লিখতে স্বস্তি বোধ করতেন না, তারা লিটলম্যাগ বের করতেন। সম্প্রতি লিটলম্যাগের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বিপরীতে বেড়েছে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ। আপনি কি মনে করেন, লিটলম্যাগের জায়গাটাই এই ওয়েবম্যাগগুলো দখল করছে?
পলিয়ার ওয়াহিদ: কিছুটা তো করেছেই। অনলাইনে সবাই বেশি সময় কাটায়। তবে কাগজের জায়গাটা ওয়েবম্যাগ কখনো নিতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না। বরং এমনো দেখা যেতে পারে যত্রতত্র ওয়েবম্যাগের ফলে আমাদের আবার সেই ছোটকাগজে ফিরতে হবে। ভালো সম্পাদক হলে অবশ্যই ওয়েবম্যাগগুলো ভালো করতে পারবে।
চিন্তাসূত্র: এসময় সময় লেখাপ্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে, পাঁচ থেকে দশ বা তারও বেশি ফর্মার লিটলম্যাগ বের হতো। এতে খরচও হতো বেশ। কিন্তু বর্তমানে ওয়েবম্যাগে সে খরচটি নেই। আপনি কি মনে করেন, অর্থব্যয়ের কারণ না থাকায় ওয়েবের দিকে ঝুঁকছেন সাহিত্যকর্মীরা?
পলিয়ার ওয়াহিদ: আমার তেমনই মনে হয়। শুধু কিন্তু এই অর্থের কারণ প্রধান নয়। সচেতন মানুষ মাত্রই অনলাইনে একটা বড় সময় কাজ করছে। তারা বইয়ের চেয়ে অনলাইন ওয়েবম্যাগ পড়তে বাধ্য হচ্ছে। কারণ আলাদা করে বই পড়ার সময় বের করতে পারছে না। সেটাও একটা কারণ বটে। আর পাঠকের কথা তো বাদই রইলো। হাতের কাছে পেয়ে তারাও চোখ বোলাচ্ছে ওয়েবম্যাগে।
চিন্তাসূত্র: কারও কারও মতে, বেশিরভাগ ওয়েবে সম্পাদনা ছাড়াই লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকী বানানও দেখা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
পলিয়ার ওয়াহিদ: তেমন ওয়েবম্যাগও আছে ভুরিভুরি। সেগুলো টিকবে না। পাঠকও সচেতন হয়েছে। বানান ভুল ও সম্পাদনার দিকে ওয়েবম্যাগগুলো নজর না দিলে তার অবস্থাও ছোটকাগজের মতো হবে। কেউ পড়বে না।
চিন্তাসূত্র: একসময় কারও পকেটে একহাজার/বারো শ টাকা থাকলেই তিনি একটি লিটলম্যাগ করার সাহস দেখাতেন। এখন ১৫/১৬ শ টাকা পকেটে থাকলেই কেউ কেউ ওয়েবম্যাগ করছেন, কেউ কেউ বিনেপয়সাতেই ব্লগজিন খুলছেন, লেখা সংগ্রহ করছেন। এ ধরনের ওয়েবজিন বা ব্লগজিন বের করার কারণ কী বলে মনে করেন আপনি? এটা কি নিছকই নিজের কর্তৃত্ব প্রকাশের উপায়, না কি সাহিত্যপ্রেমের জন্য?
পলিয়ার ওয়াহিদ: দুই রকমই হতে পারে। নিজের কর্তৃত্ব প্রকাশ বা সাহিত্যপ্রেমের জন্যও।
চিন্তাসূত্র: আপনি কি মনে করেন, ওয়েবম্যাগ-ওয়েবজিন-ব্লগজিন মানুষকে বইপাঠবিমুখ করে তুলছে?
পলিয়ার ওয়াহিদ: তুলেছে অনেকটাই। অনেকে তো বলে আমি এখন বই পড়ি না। সারাদিন অনলাইনে থাকি। ওখানে যা পাই তাই পড়ি। তবে যারা বই পড়ে, তারা বই পড়বেই। কাগজের পাতা ছাড়া তো আমি আরাম পাই না পড়তে। এ রকম লোকের সংখ্যাও কম নয়। তবে আলটিমেটলি ক্ষতিই হচ্ছে বেশি।
চিন্তাসূত্র: আপনি নিজে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতা না লিটলম্যাগ না এই ওয়েবম্যাগে লিখতে/পড়তে পছন্দ করেন?
পলিয়ার ওয়াহিদ: দুই মাধ্যমেই লিখতে বা পড়তে পছন্দ করি। অনলাইনের বাইরেও একটা পাঠক শ্রেণী আছে। তাদের জন্য দৈনিক পত্রিকা ছাড়া বিকল্প কই?
চিন্তাসূত্র: একটি লিটলম্যাগ দুই থেকে তিন শ কপি প্রকাশিত হয়, দৈনিকের সাহিত্যপাতাও একটি সীমিত পাঠকের কাছে যায়। কিন্তু অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা যায় লাখ লাখ ইউজারের কাছে। সাহিত্যচর্চা, প্রসার ও প্রচারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
পলিয়ার ওয়াহিদ: অনলাইন প্রচারের দিক দিয়েই শীর্ষে। চোখের দেখাই এখানে শেষ। কয়জনে আর পড়েন! এখানে মূল কাজটা হয় বলে আমি মনে করি না।
চিন্তাসূত্র: ওয়েবম্যাগের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকলে একসময় কি দৈনিকের সাহিত্যপাতা গুরুত্ব হারাবে?
পলিয়ার ওয়াহিদ: সেটা তো অনেক আগেই হারিয়েছে কিছুটা। সেটা ফেসবুকের কল্যাণে হয়েছে। আর ওয়েবম্যাগ ওয়েবম্যাগই, সেটা দৈনিকের গুরুত্ব ক্ষুণ্ন করতে পারে কি?
চিন্তাসূত্র: একটি ওয়েবম্যাগকে আপনি কিভাবে দেখতে চান? অর্থাৎ একটি ওয়েবম্যাগে আপনি কী ধরনের লেখা পড়তে চান?
পলিয়ার ওয়াহিদ: শিল্প সাহিত্যের সব ধরনের মানসম্পন্ন লেখাই (অবশ্যই সম্পাদনা হতে হবে) পড়তে চাই।