চিন্তাসূত্রের নভেম্বর সংখ্যার বিশেষ আয়োজন ছোটগল্প। অর্থাৎ ছোটগল্প বিষয়ক প্রবন্ধ–নিবন্ধ, ছোটগল্প ও তরুণ গল্পকারদের ভাবনা। তরুণ গল্পকারদের ভাবনাপর্বে ছোটগল্পের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন কথাশিল্পী আশরাফ জুয়েল।
চিন্তাসূত্র: আপনি কেন ছোটগল্প লিখছেন?
আমাদের প্রত্যেকের জীবনযাপন একেকটা ছোটগল্প। আমাদের মধ্যে কেউ আছেন, যারা তাদের গল্প লেখেন না, আবার আমার মতো অনেকেই আছেন, যারা লেখেন। অতএব আমি আমার নিজেকে প্রকাশ করতে চাই বলেই গল্প লিখি।
চিন্তাসূত্র: গল্পের বৈশিষ্ট্য কেমন হওয়া উচিত?
আমি আমার জীবনকে যেমন দেখছি, গোচরে-অগোচরে ঘটে যাওয়া মুহূর্তগুলো একসঙ্গে জোড়া দিলে যেমন হয়, তেমনি। অথবা পৃথিবী আমার সঙ্গে যেমন আচরণ করছে বা আমি পৃথিবীর সঙ্গে যেমন আচরণ করছি। ব্যাপারটা আপেক্ষিক।
চিন্তাসূত্র: একটি ছোটগল্পে পাঠক কী কী পেতে পারে?
এর উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন। পাঠক যা যা চায় আর কি! সবসময় হয়তো ধরতে পারি না, আবার অনেক সময় ইচ্ছে করেই ধরি না। ইচ্ছে করে না। সত্যিকার অর্থে মানুষ নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, সে নিজেকেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখতে চায়, দেখতে ভালোবাসে। হয়তো ভালো দিকটা দেখাতে চায়। আর নিজের কদর্য রূপটা আড়ালে রাখতে চায়। সবসময় পারে না। লেখকের কাজ বেড়ে যায় তখন, মানে লেখক যখন অন্যের কদর্য রূপটা বের করতে পারে না, তখন সে নিজেকেই উন্মুক্ত করে দেয়। সেক্ষেত্রে লেখক নিজেকে অন্য এক নামে পাঠকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। যারা এই কাজটা ভালোভাবে করতে পারে, তারাই হয়তো পাঠকের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। আর একজন লেখকের সবচেয়ে বড় পাঠক সে নিজেই।
চিন্তাসূত্র: একজন কবি যখন একজন গল্পকারও, তখন তার গল্পের প্রভাব কেমন হতে পারে?
এটা খুব বিশ্রী। গল্পের মধ্যে কবি বা কবিতার মধ্যে গল্পকারের অনুপ্রবেশটা। আটকে রাখা যায় না। আবার এও ঠিক, সময় পাল্টাচ্ছে। গল্প-কবিতার ভাষা অনবরত নিজেদের জায়গা পরিবর্তন করছে। তাই যা লেখা হচ্ছে, যেভাবে লেখা হচ্ছে হোক। কারও তো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না, মানে গল্প বা কবিতার। আমরা শুধু শুধু ভাবছি এসব নিয়ে।
চিন্তাসূত্র: একটি ছোটগল্পে যৌনতাকে কিভাবে নান্দনিক করা যেতে পারে?
ভাত খাওয়ার, ঘুমানোর, বাজার করার, চাকরি করার, অসুখে পড়ার, জন্মগ্রহণ করার বা মৃত্যুবরণ করার মাঝে আমরা নান্দনিকতা খুঁজি? বা কোনো পুরুষ যখন কোনো নারীর কাছে বা কোনো নারী যখন পুরুষের কাছে যায়, কোনো পশুপাখি, পোকামাকড় যখন যৌনতায় মেতে ওঠে তখন নান্দনিকতা? না। এটা আর পাঁচটা কাজের মধ্যেই একটা কাজ। সাহিত্যের যৌনতা? সেও একই ব্যাপার। একসময় আরম্ভ হবে, একসময় শেষ। এটা সামর্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
চিন্তাসূত্র: কোন ধরনের ছোটগল্প বেশি পাঠকসমাদৃত হয় বলে মনে করেন?
পাঠক যেমন চাইবে। ধরুন, কমবেশি সবারই মদ খেতে ইচ্ছে হয়, সবাই পারে? আবার যারা পারে, তারা কি সব ধরনের মদ পছন্দ করে? করলেও মাতাল হতে পারার সক্ষমতা সবার আছে?
চিন্তাসূত্র: একটি কাহিনী বা গল্পকে ছোটগল্পে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কী কী শর্ত পূরণ করতে হয়?
একটা গল্প লেখা হয়ে যাওয়ার পর এসব শর্ত সিনথেসিস নিয়ে মাতামাতি আরম্ভ হয়। ঐ আরকি যারা লিখতে টিখতে পারেন না, তারাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অতএব এসবে কোনো শর্ত-টর্ত আরোপ না করাই ভালো।
চিন্তাসূত্র: ছোটগল্প নিয়ে পরিকল্পনা কী?
কোনো পরিকল্পনা নেই।
চিন্তাসূত্র: মানুষের কল্যাণে ছোটগল্প কেমন ভূমিকা রাখতে পারে?
মানুষের কল্যাণ? যে মানুষ নিজেই নিজের কল্যাণ বোঝে না, সে কারও গল্প থেকে কল্যাণমূলক কোনো কিছু কিভাবে গ্রহণ করবে?