জব্বার আল নাঈম—কবি ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার বদপুর গ্রামে। হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। এই পর্যন্ত প্রকাশিত বই: তাড়া খাওয়া মাছের জীবন (কবিতা;অর্জন, ২০১৫), বিরুদ্ধ প্রচ্ছদের পেখম (কবিতা; বিভাস প্রকাশন, ২০১৬), এসেছি মিথ্যা বলতে (কবিতা; চৈতন্য, ২০১৭)। কিশোর উপন্যাস: বক্সার দ্য গ্রেট মোহাম্মদ আলী (অন্বেষা প্রকাশ, ২০১৯)। সম্প্রতি ছোটগল্পের পাণ্ডুলিপি ‘জীবনের ছুটি নেই’-এর পেয়েছেন জেমকন তরুণ কথাসাহিত্যিক পুরস্কার-২০২০। তার পুরস্কারপ্রাপ্তি, লেখালেখি ও সমকালীন সাহিত্য অঙ্গন নিয়ে কথা বলেছেন আরেক কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
চিন্তাসূত্র: আপনি দীর্ঘদিন ধরে লিখছেন। লিখতে গিয়ে অনেকের লেখাই পড়েছেন। একটি সার্থক লেখার গুণাবলি কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
জব্বার আল নাঈম: আমি যে কথাটি প্রায়ই বলি, মানুষ হওয়ার জন্যে হাত-পা থাকতে হবে। কান, নাক, চোখ, মুখ, ঠোট, জিহ্বা থাকতে হবে। পেট ও পিঠ থাকতে হবে। অনিন্দ্য সুন্দরের জন্যে চুলও থাকবে। এসব মূলত হার্ডওয়্যার। সফটওয়্যার হলো মাথার ভেতর মগজ। আবার মগজের ভেতর অনেকগুলো বিভাগ, উপবিভাগ থাকে। পেটের ভেতর থাকে নাড়ি। বুকের ভেতরও অনেক কিছু থাকে। এগুলো একজন মানুষ হওয়ার ধারণামাত্র। প্রকৃত মানুষ হতে গেলে তার বোধ-বুদ্ধি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থাকতে হবে। জানা থাকতে হবে বোধ-বুদ্ধি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম-কানুন। একইভাবে একটি লেখাও একটি মানুষের মতো। তাকে প্রাণ দেওয়ার আগে শরীরের নানান অঙ্গ ঠিক করতে হবে। এরপর লেখায় প্রাণ ফিরবে। সেই লেখা তখন পাঠকের সঙ্গে কথা বলবে। কথা বলবে কাল মহাকালের সঙ্গেও। আর এই ধারণার জন্যে কালজয়ী ও সমকালের লেখা থেকে কিছু ধারণা নেওয়া যেতে পারে। তবে, সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, সেটা হলো লেখালেখির বোধ। বোধ না থাকলে এখানে টিকে থাকা মুশকিল। সমকালে টিকলেও মহাকাল তাকে ধরে রাখবে না।
চিন্তাসূত্র: আপনি কবিতা, প্রবন্ধ ও কথাসাহিত্যে কাজ করছেন। তাই সমকালীন কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প ও উপন্যাস সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
জব্বার আল নাঈম: এই অভিমত দেওয়া কিছুটা কঠিন। তবে, বলা যাবে না যে, তা নয়। এই সময়ের লেখায় অনেক ভেরিয়েশন রয়েছে। চিন্তায় পরিপক্বতা, লেখার গঠনে চমৎকারিত্ব, বর্ণনায় নিখুঁত, শব্দ ও বাক্য গঠনে বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয়ও রয়েছে। এরও কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, অবাধ তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা। তরুণ প্রজন্ম ভার্চুয়াল দুনিয়ার সব দেশের সব শহর ও গ্রামকে এক কাতারে এনে দাঁড় করেছে। গত শতকের ৮০ ও নব্বই দশকেও পাঠককে বিখ্যাত বিদেশি কোনো বই পড়ার জন্যে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর এই সময়ের তরুণরা মুহূর্তের মধ্যে পিডিএফ ডাউনলোড করে বই সম্পর্কে ধারণা নিতে পারছে। বাংলাদেশের কবিতার একটা চূড়ান্ত পর্যায়ের ভালো অবস্থান আছে। পিছিয়ে নেই কথাসাহিত্যও। তবে, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ রচনায় আমাদের আরও আন্তরিক প্রয়াস দরকার। এরচেয়েও বেশি দরকার আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের প্রচার ও প্রকাশ। যেকোনোভাবেই বলি না কেনো, আন্তর্জাতিকভাবে বাঙালির গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়াতে হবে।
চিন্তাসূত্র: আপনার সমসাময়িকদের মধ্যে কার কার কবিতা আপনাকে আকৃষ্ট করে, কার কার প্রবন্ধ গল্প-পছন্দ করেন। কিংবা কাকে কাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
জব্বার আল নাঈম: গত শতকের পঞ্চাশের দশক এসে ভর করেছে চলতি দশকে। এই সময়ে অর্থাৎ ২০১০ কিংবা তারও কিছু আগে থেকে আজকের দিন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জন দুর্দান্ত ভালো কবিতা লিখছেন। ১৫ থেকে ২০ জন ভালো কথাসাহিত্য রচনা করছেন। বিগত দশকগুলো একই সময়ে এতজন ভালো লিখে এটা কম ছিল।
চিন্তাসূত্র: সমকালীন সমালোচনা সাহিত্য অনেকটাই দুর্বল, বেশিরভাগই লেখকের গুণগান আর সম্পর্কের চর্চা বলে মনে হচ্ছে। আপনি এ সম্পর্কে কী বলবেন?
জব্বার আল নাঈম: সঠিক সমালোচনার অভাব। বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্য তীব্রভাবে একজন সাহিত্য সমালোচকের অভাববোধ করছে। একজন সমালোচক শুধু দুর্বলতাগুলো চিহিৃত করেন, তা নয়, সমাধানের ইঙ্গিতটাও দেখিয়ে দেন। আমাদের প্রৌঢ়রা এক প্রকার চেষ্টা করেছেন। দুই-একজন ব্যতিক্রম ছাড়া সফলতার হার কম। যদিও এই ঘাটতির কিছুটা পূরণ করেন সাহিত্য সম্পাদকরা। দুঃখের বিষয় হলেও আমাদের এখানে সেটা তুলনামূলকভাবে কম হচ্ছে। তারা জানে না কিংবা বুঝতে পারছে না তার সাহিত্যের শক্তি ও দুর্বলতা, মিথ্যা দশদিন চর্চা করতে করতে এগারতম দিন সত্য বলে মনে হয়। দুর্বল সাহিত্যের বেলায়ও একই ঘটনা। দুর্বল সাহিত্যও যখন কোনো সম্পাদকের হাত দিয়ে সম্পাদিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, তখন সাহিত্যিকের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। একটা সময় সে নিজেকে ছাড়া সাহিত্যে কাউকেই দেখতে পায় না।
চিন্তাসূত্র: বর্তমান ফেসবুক ও অনলাইন পোর্টালের কল্যাণে সাহিত্যচর্চা যেমন বেড়েছে; তেমন সাহিত্যের চৌর্যবৃত্তিও বেড়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় আছে?
জব্বার আল নাঈম: চৌর্যবৃত্তি আগে ছিল এখনো আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। চৌর্যবৃত্তি শব্দটি শুনতে বেশ স্মার্ট মনে হলেও সহজ বাংলায় বোঝায় ‘চুরি করা’। এটি যে কেবল সাহিত্যে আছে তা নয়, গবেষণাপত্র চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান, ক্রিমিনোলজির মাহফুজুল হক মারজান এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষক রুহুল আমিন, নুসরাত জাহান ও বদরুজ্জামান ভূঁইয়া ট্রাইবুন্যালেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই চৌর্যবৃত্তিটি এসেছে মূলত রাজনীতি থেকে। আমেরিকা কিংবা আফ্রিকার রাজনীতিতে এটা যেভাবে বসত করছে। একইভাবে ভারত কিংবা বাংলাদেশেও এই প্রক্রিয়াটি ধারাবাহিকভাবে আছে। ট্রাম্প প্রশাসনও বার বার বলছে চৌর্যবৃত্তি করেই জো বাইডেন নির্বাচনে জয় লাভ করেছেন।
তবে, সাহিত্যে চৌর্যবৃত্তির প্রভাব শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে থাকে। এই জন্যে সরকারের কঠোরতা বেশি প্রয়োজন। প্রয়োজনে কপিরাইট সংরক্ষণ করতে পারে লেখক নিজে।
চিন্তাসূত্র: আপনি কি সাহিত্যে দশক বিভাজনে বিশ্বাস করেন? সাহিত্যে দশক বিভাজন কি খুবই গুরুত্বপূর্ণ? যদি বিশ্বাস করেন, তবে নিজেকে কোন দশকের বলে দাবি করেন?
জব্বার আল নাঈম: দেখুন আল্লামা জালাল উদ্দিন রুমি সেলজুক সময়ের একজন লেখক। অথচ তিনি এখনো আমাদের সময়ে অনেক প্রাসঙ্গিক। আরও পাঁচশ বছর পরের লেখকেদেরও প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেন হয়তো। হোমার, শেক্সপিয়র, সাদিরাও এই সময়ে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা কিন্তু কোনো দশকের গণ্ডিতে আবদ্ধ নেই। দশক অতিক্রম করেই এরা চিরজীবী হয়েছে। এক লাখ সাতচল্লিশ হাজার বর্গমাইল ছোটো জমি নয়, তারপরও আমাদের চিন্তার সংকীর্ণতা রয়েছে। এটা অর্থনৈতিক কারণেও হতে পারে। আমাদের আগে উচিত এই বাউন্ডারি অতিক্রম করে আরও সামনের দিকে তাকানো। বৈশ্বিক ভাবনাটা আমাদের জরুরি। তাহলে এখানে সব কিছু পালটে যাবে। আমাদের এখানে দশকের প্রচলনটা হয়তো শনাক্তকরণের জন্যে। এই শনাক্তকরণের জন্যে হলে ঠিক আছে। সেই হিসেবে আমি দ্বিতীয় দশকের।
চিন্তাসূত্র: সাহিত্যচর্চা করতে গিয়ে কখনো কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন? যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, তারা কারা? কিংবা সেই প্রভাবের ধরনটি কেমন হতে পারে?
জব্বার আল নাঈম: শুরুর দিকে প্রভাবিত হয়েছি। এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করছি না। তখন কাজী নজরুল ইসলাম আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পড়তাম। ভাবতাম নজরুলের মতো কবিতা লিখব আর রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তীর মতো গল্প। এমন ভাবনা শৈশব থেকেই ছিল। কিন্তু ওই ভাবনাটা পালটে দেয় প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ বইটি। ভাবলাম উপন্যাস তাহলে এই স্টাইলও হয়। বোধে পুরোমাত্রায় ধাক্কা দিয়েছেন মূলত সাদাত হাসান মান্টোর লাইসেন্স, টোবা টেক সিং, ঠাণ্ডা গোশত’র মতো বিখ্যাত গল্প। যাদের বই আমি প্রায়ই পড়ি তারা হলে গল্পে সাদাত হাসান মান্টো। কবিতায় আবুল হাসান।
চিন্তাসূত্র: বাংলা সাহিত্যের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাইবো। সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে আমরা কি সঠিক পথে রয়েছি বলে মনে করেন?
জব্বার আল নাঈম: সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সাহিত্যিক ও শিল্পীর গুরুত্ব অনেক। এই ধারাটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। কখনো কখনো সমাজ তার প্রয়োজনে কবি সাহিত্যিক জন্ম দেয়। প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলে কবিরা। এজন্যে কালে কালে বিভিন্ন দেশের লেখকরা রাষ্ট্রের দ্বারা নির্যাতিতও হয়েছে। তারপরও সুন্দরের বিনির্মাণ করতে লেখক সমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে। এর ফলে রাষ্ট্রের বিপক্ষেও তাদের একটা অবস্থান তৈরি করে।
ভবিষ্যতের রূপ রেখা হলো বর্তমান কাল। অথচ বর্তমান কালটা ঠিক নেই। একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার করা সহজ হবে, হজরত মুয়াবিয়াহ তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। জুমার নামাজের খুৎবা পড়ানোর পর ঘোষণা দিলেন, রাষ্ট্রের সব সম্পদ আমার অধীন। কেউ প্রতিবাদ করলো না। একই কথা পর পর তিন জুমা বললেন। কিন্তু তৃতীয় জুমায় এক যুবক দাঁড়িয়ে আমিরের কথার প্রতিবাদ করলেন। তখন তিনি বললেন, আমি তো ভেবেছি এই রাষ্ট্রে কোনো মানুষ নেই। এখন প্রতিবাদটা করতে হয় মূলত কবি, লেখকের। এখানে প্রতিবাদ শব্দটি বাদ দিয়ে তেলবাজিতে শরীর ভারি করছে সবাই।
চিন্তাসূত্র: পুরস্কার নিয়ে অনেক রকম কথা শোনা যায়, এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
জব্বার আল নাঈম: যোগ্য ব্যক্তির হাতে পুরস্কার উঠলে ভালো লাগে।
চিন্তাসূত্র: গল্পের জন্য জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার পেলেন। কেমন লাগছে? সাহিত্য পুরস্কার কি লেখককে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করে?
জব্বার আল নাঈম: পুরস্কার বাড়তি আনন্দ দেয়, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। জেমকন সাহিত্য পুরস্কার ২০০২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে দিয়ে আসছে। একটা বেসরকারি পুরস্কার একটানা এতদিন দিয়ে আসাটা সহজ কথা নয়। আর সেটাই করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। নিশ্চয়ই তারা ধন্যবাদের দাবিদার। সাহিত্য পুরস্কার সব সময় সব লেখককে যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারে না, সত্য। দেখেন, পুলিৎজার, ম্যান বুকার বা নোবেল পুরস্কারের ভূমিকা সাহিত্য, সাহিত্যিকদের কাছে অন্যরকম। পাঠকের কাছেও এসব পুরস্কারের গ্রহণযোগ্যতা বা আবেদন অনেক। নোবেলের মতো দামি ও সম্মানজন সাহিত্য পুরস্কারও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তা-ও দুই দুইবার—১৯৫৮ ও ১৯৬৪ সালে। এদের একজন বরিস পাস্তের্নাক অন্যজন জ্যঁ পল সার্ত্র। আমাদের জসীমউদ্দীনও বাংলা একাডেমি গ্রহণ করেননি। কিন্তু এরা সাহিত্যে বেশ প্রভাবশালী। মানে তাদের রচনা বেশ আলোচিত। আবার লিও তলস্তয়, ম্যাক্সিম গোর্কি, মার্ক টোয়েন, রবার্ট ফ্রস্ট, হেনরিক ইবসেন, কাফকা, লোরকা ও বোর্হেস এরা কেউ নোবেল পুরস্কার না পেয়েও নোবেল লরিয়েটদের চেয়ে কোনো অংশে ছোটো নয়। মূল ধারার লেখক যারা তারা কোনো পুরস্কারের কাছে ঘেঁষতে চায় না। এর মানে এই নয়, পুরস্কার চায় না। কেউ কেউ ব্যতিক্রম হতে পারে। পুরস্কার প্রদানকারী সংস্থা নিজ উদ্যোগে বই সংগ্রহ করে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে মনোয়ন করতে পারেন। এতে পুরস্কার ও লেখক দুই-ই সম্মনিত হয়।
চিন্তাসূত্র: পুরস্কারের পেছনে নাকি অনেক ধরনের রাজনীতি কাজ করে। নানা সমীকরণ হিসাব করে অযোগ্যদেরও পুরস্কার দেওয়া হয়। যোগ্যদের পুরস্কার দিলে লেখক তো বটেই, পাঠকরাও খুশি হন। তবে, অযোগ্যদের দিলে, তাদের ওপর পাঠক বিরক্ত হওয়ার চেয়ে জুরি বোর্ডের ওপর বেশি বিরক্ত হন। এই ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
জব্বার আল নাঈম: অযোগ্যরা অনেক বিখ্যাত পুরস্কার পেয়েছেন। এই পুরস্কার যে কেবল সাহিত্যে তা নয়, অন্যান্য সেক্টরেও এই হতাশা রয়েছে। লেখকরা আবেগপ্রবণ বলে এসব ভাবায়। দায়টা জুরি বোর্ডের ওপর যতটা বর্তায়, তার চেয়ে বেশি বর্তায় পুরস্কার প্রদানকারী ওই সংস্থার ওপর। শতকরা ৯৫টি পুরস্কার কমিটি তাদের জুরি বোর্ডের নাম হাইড রাখে। জেমকন গ্রুপ জুরি বোর্ডের নাম প্রকাশ করে সাহসিকতা একই সঙ্গে সততার পরিচয় দিয়েছে। এমনটা অভাবনীয়। আমার বিশ্বাস সব পুরস্কার প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও জুরি বোর্ড সেরা বই বা লেখককেই মূল্যায়ন করতে চায়।
চিন্তাসূত্র: সমকালীন সাহিত্য জগতে নাকি এক ধরনের রাজনীতি চলছে। এই রাজনীতির বলি হচ্ছেন প্রকৃত সাহিত্যিকরা। সাহিত্যের এই রাজনীতি সম্পর্কে আপনার অভিমত শুনতে চাই।
জব্বার আল নাঈম: প্রকৃত সাহিত্যিকরা রাজনীতির বলি। কথাটা অন্যভাবে বললে বলা যেতে পারে, অবহেলিত। তাদের মূল্যায়ন করবে কে? পৃথিবীর উন্নত দেশের বিখ্যাত লেখকদের জীবনী থেকে জানা যায়, সমকালে তারা বেশি সমালোচিত। নিন্দিত। এর কারণ, নতুন বা ব্যতিক্রম কিছুই কেউ সহজে মেনে নিতে চায়নি। অথবা মানতে কিছুটা সময় লাগে সমাজের। মেধাবীরা সব সময় তার কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়। তারা কেনো সময়ের স্রোতে নিজেকে ভাসাবে। এমনটা করা ঠিক নয়। আমি এটাকে অবহেলিত বা রাজনীতির বলি বলব না। বললেও যারা শক্ত মানসিকতার তারা ঠিকই উত্তরণ লাভ করে। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে। সেই ব্যতিক্রমই হলো আপনার কথা, রাজনীতি করে করে সমকালে কেউ বড়ো হতে চায়। তারা কাজ দিয়ে বড় হতে চায় না। এরা আসলে জীবিত অবস্থায় মরে যায়। বার বার মৃত্যু হয় তাদের। কিন্তু প্রকৃত লেখকের মৃত্যু হয় না।
চিন্তাসূত্র: চিন্তাসূত্রকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জব্বার আল নাঈম: চিন্তাসূত্রের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ।