চিন্তাসূত্রের নভেম্বর সংখ্যার বিশেষ আয়োজন ছোটগল্প। অর্থাৎ ছোটগল্প বিষয়ক প্রবন্ধ–নিবন্ধ, ছোটগল্প ও তরুণ গল্পকারদের ভাবনা। তরুণ গল্পকারদের ভাবনাপর্বে ছোটগল্পের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
চিন্তাসূত্র: আপনি কেন ছোটগল্প লিখছেন?
এককথায় বলতে গেলে, আর কিছু পারি না বলেই ছোটগল্প লিখি। বিস্তারিত বলতে গেলে, তৃতীয় শ্রেণী থেকে আমার শুরুটা হয়েছিল গল্প দিয়েই। অষ্টম শ্রেণীতে এসে গোপনে এক কিশোরীর প্রেমে পড়ে কবিতা লিখতে শুরু করেছিলাম। তখন কবি হব বলেই পণ করেছিলাম। কবিতার পাশাপাশি গল্পও লিখতে থাকলাম। তখন গল্পের চেয়ে কবিতাকে বেশি প্রাধান্য দিতাম। তাই আমার লেখা কবিতার চেয়ে গল্পের সংখ্যা কম। কেননা গল্প সময়সাপেক্ষ। কবিতা তাৎক্ষণিক লিখে ফেলতে পারতাম।
একাদশ শ্রেণীতে এসে দু-তিনটি উপন্যাস লিখেছিলাম। এখন সেগুলো পড়লে হাসি পায়। ২০০৬ সালে কলেজের নোটিশ বোর্ডে গল্প আহ্বান দেখে একটি গল্প লিখলাম। পাঠিয়ে দিলাম কর্তৃপক্ষের কাছে। সেবার ওই গল্পের জন্য ‘সুনীল সাহিত্য পুরস্কার’ পেলাম। এরপর আরও দু’বার পেয়েছি। কিন্তু তখনো কোনো পত্রিকায় আমার গল্প প্রকাশিত হয়নি। তবে কবিতা প্রকাশিত হয়েছে অনেক। এরপর ২০০৮ সালে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে দৈনিক দেশবাংলা পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ করতে গেলে কেন্দ্রীয় উদীচীর এক শিল্পীকর্মীর (নাম মনে পড়ছে না) সঙ্গে দেখা হয়। তিনি আমার কবিতাগুলো দেখে বললেন, ‘আপনি গল্প লিখলে ভালো করবেন।’ কথাটি আমি তখনো বুঝে উঠতে পারিনি।
যখন বাংলা সাহিত্যে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর শেষ করলাম, তখন বুঝলাম, আমার কবিতাগুলো ঠিক কবিতা হচ্ছে না। তাই কর্মজীবনে এসে গদ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়লাম। কলেজে অধ্যাপনা করতে গিয়েও দেখলাম, আমি খুব সুন্দর গল্প বলতে পারি। শিক্ষার্থীরা আমার গল্পে আকৃষ্ট হচ্ছে। এরপর ঢাকায় সাংবাদিকতা শুরু করলেও গল্পের আহ্বান আসতে থাকে। গল্পের জন্য প্রশংসা পাই। কারণ আমাদের দেশে কবির সংখ্যা বেশি। বইমেলায় লোকসান এড়াতে জীবনের প্রথম ‘সার্কাসসুন্দরী’ নামে গল্পগ্রন্থ বের করি।
এতক্ষণ যা বললাম, এটা বাহ্যিক কারণ। অন্তর্গত কারণ হচ্ছে—আমি সাধারণ মানুষের কথা বলতে চাই; সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাই। চায়ের দোকানে, কলেজের মাঠে, কিংবা কোনো আড্ডায় সবাই কবিতার চেয়ে গল্প শুনতেই বেশি পছন্দ করে। এছাড়া গল্পে আমি আমার কথাগুলো গুছিয়ে সুন্দরভাবে বলতে পারি। তাই ছোটগল্প লিখছি। তবে কবিতা লেখা কিন্তু ছেড়ে দেইনি। পাশাপাশি প্রবন্ধ, নাটক, সাহিত্য সমালোচনাও লিখে যাচ্ছি।
চিন্তাসূত্র: আপনার গল্পের বৈশিষ্ট্য কেমন হওয়া উচিত?
আমি মনে করি, আমার গল্পের বৈশিষ্ট্য আমারই নির্ধারণ করা উচিত। আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার গল্পের বৈশিষ্ট হবে—মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাহাকার, ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে অপূর্ণতা থেকে যাবে, পদে পদে সমস্যা সৃষ্টি হবে কিন্তু সমাধান না-ও হতে পারে। অলৌকিকতার আশ্রয় নিতে আমার একদম ভালো লাগে না। কারণ আমি ত্রাণকর্তা নই। তাই গল্পে কাউকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারব না। জীবনের করুণ বাস্তবতাই আমার গল্পের উপজীব্য। এছাড়া একেবারে সাদামাটা বক্তব্য থাকবে। কোনো দার্শনিকতা, তত্ত্ব, প্যাঁচ, গম্ভীর আবহ আমার পছন্দ নয়। যেমন, আমরা চায়ের দোকানে কোনো একজনের গল্প শুনছি। সবাই চুপ। গল্পকার এমনভাবে বলে যাচ্ছেন, যেন সবার চোখের সামনেই ঘটছে ঘটনাটি। অথচ তিনি আমার মতো নিয়মিত লেখক নন; তবু মানুষ তার গল্প শুনছে। আর গল্পটি শেষ হলেও শ্রোতারা বাড়ি যাওয়া অবধি সেই গল্পটি নিয়েই ভাবতে থাকেন। এমনকি হঠাৎ হঠাৎ সেই গল্পটি মনে পড়ে যায়। গল্পটি ছড়িয়ে পড়ে একজন থেকে অন্য জনে। আমিও চাই আমার গল্পের বৈশিষ্ট্য এমনই হোক।
চিন্তাসূত্র: একটি ছোটগল্পে পাঠক কী কী পেতে পারে বা চায়?
পাঠক যা চায়, তা হয়তো পরিপূর্ণভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ভেবে দেখতে পারি যে, পাঠক কী চাচ্ছেন। সব পাঠকের রুচি তো আর এক নয়। সবাইকে হয়তো আমি ধরতে পারব না। তবু আমার একটা টার্গেট পিপল চাই। আমাকেই নির্ধারণ করতে হবে যে, তারা কারা? কারণ এ যাবৎ প্রকাশিত গল্পগুলোর পাঠকপ্রিয়তা বা জনপ্রিয়তা দেখে মনে হচ্ছে, পাঠক সহজ-সরল-প্রাঞ্জল ভাষার গল্প চায়। তবে গল্প লেখার আগেই পাঠকের শ্রেণীবিভাগটা করে নিতে হয়। গল্পটি আমি কাদের জন্য লিখছি। যে জীবনে মদের স্বাদ পায়নি, তাকে মদের গল্প শোনালে মজা না-ও পেতে পারেন। তাই তো পাঠক চায় জীবনঘনিষ্ট গল্প। চায় গল্পের ভেতরে প্রশান্তি কিংবা বুকভর্তি হাহাকার। অথবা মিলনের বন্যায় ভেসে যেতেও খারাপ লাগে না পাঠকের।
চিন্তাসূত্র: একজন কবি যখন একজন গল্পকারও; তখন তার গল্পের প্রভাব কেমন হতে পারে?
সবাই তো আর ‘সব্যসাচী’ নন। তবে অনেকেই সাহিত্যের একাধিক শাখায় কাজ করছেন। তারা একইসঙ্গে উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, গান, সমালোচনা ইত্যাদি রচনা করছেন। আবার কেউ কেউ শুধু একটি শাখাতেই স্থির হয়ে আছেন। যারা একটি শাখায় স্থির হয়ে আছেন; তাদের হিসাব ভিন্ন। তবে একজন ‘কবি’ যখন গল্প লিখবেন; তখন তার গল্পে অবশ্যই কবিতার প্রভাব থাকবে এবং থাকতে বাধ্য। কারণ তিনি ইচ্ছা করলেও এ প্রভাব এড়াতে পারবেন না। তার গল্পের বর্ণনায়, সংলাপে, উপমায়, চরিত্র বা গল্পের নামকরণে কাব্যময়তা প্রকাশ পাবেই। সংলাপে কবিতার পঙ্ক্তি আসবে। নায়ক-নায়িকার হাতে কবিতার বই উঠে যাবে। এমনকি দেখা যেতে পারে যে, নায়িকা কলেজে যাওয়ার সময়ও ব্যাগে বা হাতে প্রিয় কবির কবিতার বই নিয়ে যাচ্ছেন। আরো কত প্রভাব তো রয়েছেই। সেগুলো আমরা নিজেরাই খুঁজে নিতে পারি।
চিন্তাসূত্র: একটি ছোটগল্পে যৌনতাকে কিভাবে নান্দনিক করা যেতে পারে?
মানবজীবনে যৌনতা আবশ্যক একটি বিষয়। প্রাণীজগতের অপরিহার্য অংশ। ব্যক্তি জীবনে যেমন যৌনতাকে অস্বীকার করতে পারি না; ঠিক তেমনি কখনো কখনো গল্পেও যৌনতাকে এড়িয়ে যেতে পারি না। সে ক্ষেত্রে বিবরণটা কেমন হবে; সেটাই বিবেচ্য। রগরগে বর্ণনা বা অনিবার্যতা ছাড়া যৌনাঙ্গের নাম উচ্চারণও বাঞ্ছনীয় নয়। যেমন ধরুন, একটি খারাপ চরিত্র একটি মেয়েকে ধর্ষণ করছে, সেখানে আমরা মেয়েটিকে কিভাবে ধর্ষণ করা হচ্ছে, তা বর্ণনা করতে পারি না। সুকৌশলে বিষয়টি তুলে আনতে পারি। কিংবা নায়িকার সৌন্দর্য বর্ণনায় অযথাই তার যৌনআবেদনময় প্রত্যঙ্গ তুলে না এনে উপমা প্রয়োগের মাধ্যমে বা উপযুক্ত শব্দ প্রয়োগের দ্বারা প্রকাশ করা যায়। মনে রাখতে হবে—যৌনতা অশ্লীলতা নয়। তবে বাড়াবাড়িতে তা অশ্লীল হয়ে ওঠে।
চিন্তাসূত্র: কোন শ্রেণীর ছোটগল্প সবচেয়ে বেশি পাঠকসমাদৃত হয় বলে মনে করেন?
প্রথমে ভাবতে হবে— আমাদের পাঠক কারা? অর্থাৎ আমাদের দেশের শিক্ষার হার কেমন? মানুষের মাথাপিছু আয় কত? মানুষের মধ্যে উদারতার হার কতটুকু? ধর্মীয় গোড়ামি রয়েছে কেমন? রাজনৈতিক অস্থিরতার মাত্রা কেমন? এসব উত্তর ঠিকঠাক পেয়ে গেলে গল্পের শ্রেণীও খুঁজে পাওয়া যাবে। পাঠক সমাদৃত গল্পের মধ্যে বলা যায়- মধ্যবিত্ত শ্রেণীর গল্প বেশি জনপ্রিয় হয়। কারণ আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সংখ্যা বেশি এবং তারা সমাজ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি সচেতন। তারা সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বই পড়েন। সঠিক পথের সন্ধান লাভের জন্য গল্প পড়েন। গল্পের চরিত্রের সঙ্গে নিজের জীবনের মিল খোঁজেন। গল্পের চরিত্রের সফলতায় উজ্জীবিত হন এবং ব্যর্থতায় বিমর্ষ হয়ে পড়েন।
এছাড়া রোমান্টিক গল্পের পাঠক তো রয়েছেই। তবে তা অবশ্যই বিয়োগান্তক হওয়া চাই। রোমিও-জুলিয়েট, লাইলি-মজনু, দেবদাস-পার্বতী, অপু-হৈমন্তি, রুপাই-সাজুরা আমাদের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। অর্থাৎ বলা যায়, পাঠক বাস্তবসম্মত জীবনের গল্প শুনতে পছন্দ করেন। কমেডির একটি গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও সেটি দ্বিতীয়বার আর হাতে ওঠার মতো ঘটনার জন্ম দিতে পারে না। যেমন আমি ব্যক্তিগতভাবে ‘হৈমন্তি’ গল্পটি কতবার যে পড়েছি—তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারব না।
চিন্তাসূত্র: একটি কাহিনী বা গল্পকে ছোটগল্পে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কোন কোন শর্ত পূরণ করতে হয়?
এর জন্য প্রথমেই দরকার নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কিত জ্ঞান। কোনটি শিল্প আর কোনটি শিল্প নয়; সে বোধও থাকাটা জরুরি। তাই তো সাহিত্যবোদ্ধাদের কাছে সব গল্পই গল্প হয়ে ওঠে না। কোন কোন গল্প শুধু বর্ণনাই হয়ে ওঠে। তার নান্দনিক বোধ বা শৈল্পিক সত্তা পাঠকের চোখে ধরা পড়ে না। অবচেতন মনে কোন গল্প বলে গেলে, তা পাঠকের বোধগম্য না-ও হতে পারে। কারণ কাহিনী সবাই বলতে পারে। গল্প বলাটা আরো কঠিন। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার হুবহু বর্ণনা দিলেই সেটি গল্প হয়ে যায় না। সেটি সংবাদ হতে পারে। তাই এর জন্য কিছু কৌশল বা নিয়মের প্রয়োজন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমি বলবো, আমাদের পূর্ববর্তী লেখকদের অনুসরণ করা যেতে পারে। (বিদেশি লেখকদেরও অনুসরণ করা যায়; তবে নিজস্বতা অস্বীকার করে নয়।) একটি ঘটনা বর্ণনা করতে গেলে কিভাবে শ্রোতাকে ধরে রাখতে হবে, সে বিষয়ে গল্পকারকেই ভাবতে হবে। অযথা বকবক শোনার মতো সময় কারো হাতেই নেই।
তাই স্থান, কাল, পাত্র, পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে একটি আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করে ক্রমান্বয়ে পাঠককে টেনে নিয়ে যাওয়াই সার্থক গল্পের বৈশিষ্ট্য। রবীন্দ্রনাথের ‘ছোটগল্প’ বিষয়ক থিউরি অবশ্যই প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে আপনি গল্প কীভাবে বলবেন? উত্তম পুরুষে, না কি অন্যদের মাধ্যমে বলে যাবেন। সেটি কি বর্ণনাত্মক নাকি সংলাপধর্মী হবে? যা-ই করুন; যেকোন একটি পন্থায় এগিয়ে যান। শৃঙ্খলা বজায় রেখে সামনে এগিয়ে যান; তাহলে পাঠকও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠবেন না।
চিন্তাসূত্র: ছোটগল্প নিয়ে আপনার নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ কেমন ফলাফল দিতে পেরেছে?
আমি মূলত কোনো কাজেই নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ করি না। সামনে যা দেখি, তা-ই। আর গল্পে তা সম্ভবও নয়। তবে আমি শুধু বাংলাদেশের লেখকের লেখা পড়তে পছন্দ করি। কারণ আমি জানি, আমার পূর্বসুরী যারা লিখে গেছেন, তারা আমার দেখা বাংলাদেশটাকে তুলে ধরেছেন। দেশের সামাজিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিসংখ্যান পাই। তাদের কাছ থেকে ধারণা নিতে পারি। আর যদি বিদেশি লেখকের প্রতি অনুরক্ত হয়ে যাই তাহলে আমার গল্পে বাজে প্রভাব পড়বে। বাজে বললাম এই কারণে যে, আমার দেশের সমাজ-সংস্কৃতি ওই লেখকের দেশের সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে না-ও মিলতে পারে। আমি কেন তার থেকে অসমর্থনযোগ্য তথ্য নেব? তার থেকে কোন এক অযাচিত বিষয় আমার গল্পে উঠে আসতে পারে; যা পরবর্তী সময়ে আমার সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া ১৮০০ সালে আধুনিকতার শুরু থেকে এ পর্যন্ত এমন কোনো লেখক কি নেই, যাকে আমি অনুসরণ করতে পারি।? আমার বোধ বা বিবেক আমাকে পর ধন লোভে মত্ত হতে দেয় না। আমার যা আছে, আমি তা নিয়েই সুখী থাকতে ভালোবাসি। কারণ আমার দেশে যত গল্পকার রয়েছেন; তাদের সবার লেখাই তো আমি পড়ে শেষ করতে পারব না। তাহলে কেন নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে গিয়ে মোপাসাঁ, গোর্কি, মার্কেজ, মুরাকামি বলে বলে মুখে ফেনা তুলব? তাদের প্রেক্ষাপট আর আমার প্রেক্ষাপট কি এক? একই যদি না হয়, তাহলে আমার গল্প পাঠক গ্রহণ করবেন কিভাবে?
আমি কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজের ধারায় লিখে যেতে চাই। তাতে গল্প হোক বা না হোক। তবে সার্থকতা এই- পাঠক যখন পড়ে বলবে, আপনার গল্পটি ভালো লেগেছে। তখন পরবর্তী গল্প লেখায় উৎসাহী হব। তা না হলে সাহিত্যের অনিষ্ট করার কোন অধিকার আমার নেই। ছলচাতুরী করে পাঠকপ্রিয় হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই আমার। আমি মাটি ও মানুষের গল্প বলতে চাই। আমি যে সমাজের মানুষ; সে সমাজের ঘটনাই আমার গল্পের উপজীব্য।
চিন্তাসূত্র: আপনার ছোটগল্প নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে ভিন্ন একটি ধারা সৃষ্টির চিন্তা করছি। একই গল্প ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে দেখতে চাই—পাঠক সেটা গ্রহণ করে কি না। তবে আমি কথকের ভূমিকায় থাকতে ভালোবাসি বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তাই ভাবছি, পরবর্তী গল্পগুলো আমিই বলব। পাঠক শুধু শুনবে। বায়োগ্রাফিক্যাল স্টোরি লাইন নির্মাণ করার ইচ্ছা আছে। পাঠক ভাববে সব ঘটনাই আমার জীবনের। আসলে এর একটি ঘটনাও আমার জীবন সংশ্লিষ্ট নয়।
অন্যভাবে বলতে গেলে, আগামী বইমেলার জন্য আরেকটি পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেছি। তার নাম দিয়েছি ‘নিশিসুন্দরী’। এই বইটিও দোয়েল প্রকাশনীই করছে। বলতে গেলে আপাতত ছোটগল্প ছাড়া অন্য কোন বই করার চিন্তা করছি না। তবে জীবনে অন্তত একটি কাব্যগ্রন্থ করার ইচ্ছা আছে। সে যাই হোক, সবসময় গল্পই প্রাধান্য পাবে আমার কাছে।
চিন্তাসূত্র: মানুষের কল্যাণে আপনার ছোটগল্প কেমন ভূমিকা রাখতে পারে?
আমরা কেন গল্প লিখছি? মানুষকে আনন্দ দিতে? পিছিয়ে পড়া মানুষকে শিক্ষা দিতে? অবহেলিত মানুষকে জাগাতে? এর যেটিই হোক না কেন। আমি যে উদ্দেশ্যে লিখছি সেটা যেন সফল হয়। আনন্দ দিয়েও মানুষের কল্যাণ করা যায়। মানুষকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দেওয়া যায়। আমার গল্প পড়ে যদি কেউ উপকৃত হয়; তবে তা মানুষের কল্যাণের জন্যই লেখা। আবার আমার গল্প পড়ে যদি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়; তাহলে তার জন্যও আমিই দায়ী।
আমি মনে করি, লেখক নিজে যদি জীবন সম্পর্কে উদাসীন হন, পরিবার বিমুখ হন, রাষ্ট্রবিরোধী হন- তবে সেই লেখক কখনো কারো উপকারে আসতে পারেন না। কারো কল্যাণ করতে হলে আগে কল্যাণ সম্পর্কে ধারণাটা তো তার থাকতে হবে। আর তা না হলে তিনি পাঠক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। নিজে নিজেই হতাশ হয়ে পড়বেন। তখন তার লেখাগুলো দিস্তায় দিস্তায় কাগজের আবর্জনা বলে মনে হবে।
সুতরাং আমি গল্প লিখছি মানুষের কল্যাণে। তাই আমার গল্পে অযথা ধর্ষণ দৃশ্য আনি না। কারণ আমি এটা সাপোর্ট করি না। অযথা খুন-খারাবি আনি না- কারণ একে আমি ঘৃণা করি। তার মানে আমি এই সমাজটাকে যেভাবে চাই- ঠিক সেভাবে গল্পের ভিতরে প্রকাশের চেষ্টা করি। অসঙ্গতিগুলোকে হাইলাইটস করার চেয়ে সমাধানের বিষয়গুলো মোটাদাগে উপস্থাপনের চেষ্টা করি। ফলে আমি মনে করি, মানুষের কল্যাণে আমার ছোটগল্প ইতিবাচক ভূমিকাই রাখতে পারে।