এ সময়ের তরুণদের মধ্যে অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল কবি শামীম হোসেন। ‘ধানের ধাত্রী’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার-২০১৫’ পেলেন তিনি। লেখালেখি ও পুরস্কার প্রসঙ্গ ধরেই আলাপচারিতা শুরু হয় কবি শামীম হোসেনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পাভেল রহমান।
পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাই ।
একজন কবি তার জীবনব্যাপী একটা পরিভ্রমণের ভেতর থাকেন। ধরুন, কবিতার এই জীবনটাই একটা মহাকালের ট্রেন। যেটা, মাঝে মাঝে এসে স্টেশনে দাঁড়ায়। ট্রেন দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীদের কেউ কেউ কিছু সময়ের জন্য নেমে পড়েন। ছোট্ট একটা বিরতি এবং পুনরায় তারা ট্রেনে চেপে বসেন। পুরস্কারটাও আমার কাছে তেমনই মনে হয়। মহাকালীন এই স্রোতে পুরস্কার তার জন্য কিছুটা প্রেরণা যোগায়। কবিতা তো কোনো দশকফ্রেমে বন্দি হতে চায় না। ফলে সারাজীবন আমি কবিতার পরিভ্রমণেই কাটাতে চাই। আমি সেই সব মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ, যাদের দুঃখ-কষ্ট-আনন্দ কিংবা জীবনের নানা বিষয় আমার কবিতায় ধরার চেষ্টা করেছি। ফলে একদিকে যেমন মানুষ, অন্যদিকে এই অপার প্রকৃতির কাছেও আমি সমান ঋণী।
পুরস্কার তো আগেও পেয়েছেন। এই পুরস্কারের কোনও আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে কি?
সব পুরস্কারেই স্বকীয়তা রয়েছে। পুরস্কারের ছোট-বড় বিচার করা কবির কাজ নয়। কবির কাজ কবিতায় আত্মমগ্ন থাকা। এই আত্মমগ্ন থাকার ভেতরেই মানুষের এই বৃহৎ ভালোবাসা তাকে বাঁচিয়ে রাখে। তাই ভালোবাসার কাছে সব পুরস্কারই সমান।
পুরস্কারপ্রাপ্তিকে কবি হিসেবে কিভাবে দেখেন?
একজন কবির নিকট পাঠকই তার যোগ্যতম পুরস্কার। পুরস্কার হয়তো একজন লেখকের ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু খ্যাতির পালক যুক্ত করে। যাকে এই মোহ পেয়ে বসে তার নিকটে শুধু দম্ভ ও মোহ-ই থাকে। লেখা থাকে না। ফলে আমি এগুলোকে খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে পাশ কাটিয়ে নিজের লেখাতেই মগ্ন থাকতে চাই। পুরো জীবনটাকেই কবিতার কাছে সমর্পিত করতে চাই। তাই ব্যক্তি কিংবা কবিসত্তা আলাদা করে দেখতে চাই না।
এবারের বইমেলা নিয়ে আপনার ব্যস্ততার কথা জানতে চাই।
এবার বইমেলায় আমার কোনও বই প্রকাশিত হচ্ছে না। তবে পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘ধানের ধাত্রী’ কবিতাগ্রন্থটি বইমেলায় প্লাটফর্ম প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাবে। এছাড়া, লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে প্লাটফর্মের ৪৩ নম্বর স্টলেও পাওয়া যাবে। তবে আশা করি, আগামী বইমেলার জন্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে পারব।
এ সময়ের কবিতা প্রসঙ্গে আপনার মূল্যায়ন?
এ সময়ের কবিতা প্রসঙ্গে বলতে গেলে আমার ভেতরে এক ধরনেরর ভালো লাগা তৈরি হয়। অগ্রজদের পাশাপাশি আমার তরুণ সতীর্থ বন্ধুদের লেখা পড়ে প্রাণিত হয়। কারণ তাদের অনেকের লেখায় এখনো শেকড় বিচ্ছিন্ন হয়নি। যতটুকু হতাশ হয় সাম্প্রতিক কলকাতার তরুণ বন্ধুদের কবিতা পড়ে। তবে কেউ কেউ বেশ মুগ্ধও করেন।
একনজরে শামীম হোসেন
কবি শামীম হোসেন ১৯৮৩ সালের ৭ আগস্ট রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আত্মমগ্ন রয়েছেন কবিতাচর্চায়। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো—বরেন্দ্র প্রান্তরে বসন্ত নামে (কাব্য-২০০৭), পাখি পাখি ভয় (কাব্য-২০১১), উপমাংসের শোভা (কাব্য-২০১২), শীতল সন্ধ্যা গীতল রাত্রি (কাব্য-২০১৩), ধানেরধাত্রী (কাব্য-২০১৫) এবং এক তুড়ি ছয় বুড়ি (ছড়া-২০০৮)। কবিতা লেখার পাশাপাশি সম্পাদনাতেও রয়েছে তার বিশেষ দক্ষতা। দীর্ঘ ১৫বছর ধরে প্রকাশ করছেন শিল্প-সাহিত্যের কাগজ ‘নদী’। বর্তমানে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক উত্তরা প্রতিদিন’ এ সিনিয়র সাব-এডিটর হিসেবে কর্মরত।