মিলন আশরাফ—কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক। বাস—প্রাচীন জেলা শহর যশোর। প্রকাশিত বই: আদিপাপ (ছোটগল্প সংকলন), সোনামুখীর মানুষেরা (ছোটগল্প সংকলন)। অনুবাদ: জাদুর আংটি (শিশুতোষ উপন্যাস), অদ্ভুত সাহায্যকারী (বেলারুশের শিশুতোষ গল্প সংকলন)। সম্প্রতি সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ নিয়ে চিন্তাসূত্রের মুখোমুখি হয়েছেন এই তরুণ লেখক।
চিন্তাসূত্র: একসময় যারা দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ঠাঁই পেতেন না অথবা যারা দৈনিকে লিখতে স্বস্তি বোধ করতেন না, তারা লিটলম্যাগ বের করতেন। সম্প্রতি লিটলম্যাগের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বিপরীতে বেড়েছে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ। আপনি কি মনে করেন, লিটলম্যাগের জায়গাটাই এই ওয়েবম্যাগগুলো দখল করছে?
মিলন আশরাফ: ‘জায়গা দখল’ কথাটিতে আমার আপত্তি আছে। বরং ‘ওয়েবম্যাগ’ সাহিত্যক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন বলতেই আমার ভালো লাগে। আসলে কোনোটার বিকল্প কোনোটা হতে পারে না। ওয়েবম্যাগ আসায় ঢাকায় লিটলম্যাগের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। মফস্বলে এর প্রভাব খুব বেশি পড়েছে বলে আমি মনে করি না।
চিন্তাসূত্র: একসময় লেখাপ্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে, পাঁচ থেকে দশ বা তারও বেশি ফর্মার লিটলম্যাগ বের হতো। এতে খরচও হতো বেশ। কিন্তু বর্তমানে ওয়েবম্যাগে সে খরচটি নেই। আপনি কি মনে করেন, অর্থব্যয়ের কারণ না থাকায় ওয়েবের দিকে ঝুঁকছেন সাহিত্যকর্মীরা?
মিলন আশরাফ: ব্যাপারটি ঠিক অর্থব্যয়ের নয়। লিটলম্যাগ করে সংসার চালাচ্ছে—এমন উদাহরণ কিন্তু এই শহরেই আছে। বিজ্ঞাপন যোগাড় করতে পারলে সেটা খুবই সম্ভব। আমি মনে করি, ওয়েবম্যাগের দিকে ঝোঁকার অন্যতম প্রধান কারণ—নিজেকে খুব সহজে নিমেষেই পাঠকের কাছে হাজির করার সুযোগ।
চিন্তাসূত্র: কারও কারও মতে, বেশিরভাগ ওয়েবেই সম্পাদনা ছাড়া লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকী বানানও দেখা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
মিলন আশরাফ: অভিযোগটির সত্যতা আছে। বিশেষ করে, অনুবাদের ক্ষেত্রে আমি দেখেছি, তাড়াহুড়া করে কারেন্ট ইস্যুকে ধরতে সম্পাদনা ছাড়াই ছাপা হচ্ছে হরদম। এতে পাঠকরা প্রতারিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে সম্পাদকদের সচেতনতা কাম্য।
চিন্তাসূত্র: একসময় কারও পকেটে একহাজার/বারো শ টাকা থাকলেই তিনি একটি লিটলম্যাগ করার সাহস দেখাতেন। এখন ১৫/১৬ শত টাকা পকেটে থাকলেই কেউ কেউ ওয়েবম্যাগ করছেন, কেউ কেউ বিনেপয়সাতেই ব্লগজিন খুলছেন, লেখা সংগ্রহ করছেন। এ ধরনের ওয়েবজিন বা ব্লগজিন বের করার কারণ কী বলে মনে করেন আপনি? এটা কি নিছকই নিজের কর্তৃত্ব প্রকাশের উপায়, না কি সাহিত্যপ্রেমের জন্য?
মিলন আশরাফ: প্রশ্নের উত্তরটা আগেই কিছু দেওয়া হয়ে গেছে। এখানে বলি, একেবারেই যে সাহিত্যপ্রেম নেই, তা নয়। তবে কম। প্রচার-প্রচারণার ঝোঁকটাই বেশি। সেটা কর্তৃত্ব প্রকাশও হতে পারে।
চিন্তাসূত্র: আপনি কি মনে করেন, ওয়েবম্যাগ-ওয়েবজিন-ব্লগজিন মানুষকে বইপাঠবিমুখ করে তুলছে?
মিলন আশরাফ: মোটেও নয়। ওযেবম্যাগ বরং বইপাঠে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। কারণ যারা জীবনে কখনো বইয়ের পাতা উল্টিয়ে দেখতো না, তারা কিন্তু ওয়েব ব্রাউজিং করে পড়ে। সেখান থেকে একটা পড়ার অভ্যাস নিশ্চয় তৈরি হয়। মানে বই পড়ার প্রতি আগ্রহের সৃষ্টি হয়।
চিন্তাসূত্র: আপনি নিজে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতা না লিটলম্যাগ, না এই ওয়েবম্যাগে লিখতে/পড়তে পছন্দ করেন?
মিলন আশরাফ: পড়ার ক্ষেত্রে আগে দৈনিকের সাহিত্যপাতায় একমাত্র ভরসা ছিল। মানের দিকটাও ছিল উচ্চতর। এখন দৈনিকের সাহিত্যপাতাগুলো পড়ার মতো নেই তেমন। সব দায়সারা গোচের। এখন বেশি পড়া হয় ওয়েবম্যাগের সাহিত্যপাতা ও লিটলম্যাগের বিশেষ সংখ্যাগুলো। লেখার ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য পায় ওয়েবম্যাগ, লিটলম্যাগ ও সবশেষে দৈনিকের সাহিত্যপাতা।
চিন্তাসূত্র: একটি লিটলম্যাগ দুই থেকে তিন শ কপি প্রকাশিত হয়, দৈনিকের সাহিত্যপাতাও একটি সীমিত পাঠকের কাছে যায়। কিন্তু অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা যায় লাখ লাখ ইউজারের কাছে। সাহিত্যচর্চা, প্রসার ও প্রচারের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
মিলন আশরাফ: প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে সার্কুলেশন কম থাকায় দৈনিকের সাহিত্যপাতা এখন মৃতপ্রায়। এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা। এখানে বলা যায়, দৈনিকের সাহিত্যপাতার অভাব পূরণ করেছে ওয়েবম্যাগগুলো। এটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখি।
চিন্তাসূত্র: ওয়েবম্যাগের পরিমাণ আরও বাড়তে থাকলে একসময় কি দৈনিকের সাহিত্যপাতা গুরুত্ব হারাবে?
মিলন আশরাফ: এক সময় হারাবে কী, এখনই তো দৈনিকের সাহিত্যপাতার তেমন কোনো গুরুত্ব নেই।
চিন্তাসূত্র: একটি ওয়েবম্যাগকে আপনি কিভাবে দেখতে চান? অর্থাৎ একটি ওয়েবম্যাগে আপনি কী ধরনের লেখা পড়তে চান?
মিলন আশরাফ: একটি ওয়েবম্যাগে আমি দুই ধরনের লেখা পড়তে চাই। এক. সাহিত্যের চলতি অবস্থার আন্তর্জাতিক খবরাখবর। দুই. বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণামূলক তথ্য।