চিন্তাসূত্রের নভেম্বর সংখ্যার বিশেষ আয়োজন ছোটগল্প। অর্থাৎ ছোটগল্প বিষয়ক প্রবন্ধ–নিবন্ধ, ছোটগল্প ও তরুণ গল্পকারদের ভাবনা। তরুণ গল্পকারদের ভাবনাপর্বে ছোটগল্পের বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন কথাশিল্পী মেহেদী শামীম।
চিন্তাসূত্র: আপনি কেন ছোটগল্প লিখছেন?
কেন ছোটগল্প লিখি—এই ‘কেন’-এর উত্তর দেওয়া একটু মুশকিল। সবসময় কোনো কোনো ‘কেন’-এর উত্তর দেওয়া যায় না। কিন্তু সব ‘কেন’-এর উত্তর খোঁজার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে। আর সেই আনন্দ-ই দেয় ছোটগল্প। ধরুন, জয়নাল পুকুরপাড়ে বসে কাঁদছে। একজন পুরুষ মানুষ পুকুরপাড়ে বসে কেন কাঁদছে? এখানের এই কান্নার কারণ খুঁজতে বের হলে বেরিয়ে আসবে হাজারও ঘটনা-অঘটনাসহ অনেক কিছু। সেই ঘটনাগুলোর ঠিকঠাক বুননই হলো ছোটগল্প। একজন কৌতূহলী মানুষ ছোটগল্প লেখে তার নিজের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য। আর সেই কৌতূহলই তাকে নিয়ে যায় জীবনের বিভিন্ন বাঁকে। মুখোমুখি করে হাজারও ভাঙা-আধভাঙা-মচকানো-সুঠাম মানুষের জীবনের সামনে।
চিন্তাসূত্র: আপনার গল্পের বৈশিষ্ট্য কেমন হওয়া উচিত?
গল্প লিখতে বসলে উচিত-অনুচিত বিবেচনা করার তেমন সুযোগ থাকে না। একটি সময়কে ধরে এবং ওই সময়ের মধ্যে প্রবাহিত হওয়া মানুষগুলোকে অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে থাকি। কোনো একটি প্রেক্ষাপটে গিয়ে থেমে যাই। কখনো ইচ্ছা করে থেমে যাই, কখনো গল্পের চরিত্রগুলো আমাকে থামিয়ে দেয়। আর তাই আমার গল্পে ওই সময়টুকুর চিত্রায়ণ হয় এবং ওই চরিত্রগুলোর গতি-বিধি তুলে ধরা হয়। কখনো যদি সেই চরিত্রগুলো উচিতের বাইরে গিয়ে কিছু করে, তখন লেখক হিসেবে সেই অনুচিতের বিষয়গুলোর দায় অনেক লেখকই নিতে চায় না। আমিও সেই দায় না-নেওয়াদের একজন। তবে গল্পের বৈশিষ্ট্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি একটু খুঁতখুঁতে স্বভাবের। কারণ ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে কোনো একজন লেখক যেই বৈশিষ্ট্য নিয়ে গল্প লিখে গেছেন, সেই বৈশিষ্ট্য নিয়ে গল্পের পুনঃনির্মাণ করে পাঠককে ঠকানোর সাহস আমার নেই। আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে মানবিক সর্ম্পক এবং অধিকারের রাজনীতি। আমার কাছে গল্পের বিষয়বস্তু অনেক গুরুত্ব বহন করে। গল্পের বয়ানের ক্ষেত্রে, বেশিরভাগ জায়গা রেখে দেই চরিত্রগুলোর কাছে। লেখকের বয়ানের ব্যাপারে আমি একটু কৃপণ। তবে আমি নিরিক্ষাধর্মী গল্প লিখতে বেশি পছন্দ করি। জানি না কতটুকু পারি। চেষ্টা করে যাই, গল্পটি পাঠকের সামনে জীবন্ত করে তুলতে।
চিন্তাসূত্র: ছোটগল্পে পাঠক কী কী পেতে চায়?
ছোটগল্প মানুষকে ছোট ছোট ভ্রমণ উপহার দেয়। আমার মতে, কোনো কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ছোটগল্প পড়তে না আশাই ভালো। বরং হারিয়ে যাওয়ার জন্য ছোটগল্প পড়া উচিত। ছোটগল্প মানুষকে কাঁদায়, হাসায়, অথবা ডুবিয়ে দেয় অতল জলের তলে।
ছোটগল্প থেকে প্রত্যাশা কম থাকা ভালো। কখনো ছোটগল্প একটা নদীর এপার-ওপারের দুজন মানুষের আলাপ-চারিতায় শেষ হয়ে যায়। বাকি রেখে দেয় অনেক কথা—যেই কথামালা পাঠকের মনের মধ্যে বুনন হয়। এই না লেখা কথাগুলোই পাঠককে নতুন স্বপ্ন দেখায়।
অনেক পাঠকই ছোটগল্পে যৌন সুড়সুড়ি দিতে চায়। কিন্তু একজন লেখক গল্পে যৌনদৃশ্য তখনই আনেন, যখন গল্পের চরিত্রের মাথায় সেক্সের তাড়না থাকে। কখনোই একজন লেখকের মাথার যৌন তাড়নাকে চিত্রায়ণ করে ছোটগল্পে যৌনদৃশ্যের নির্মাণ হয় না। এত আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছি, এই কারণে যে, মানুষ অতিমাত্রায় সৎ হয়ে ওঠে কলম হাতে সাহিত্য রচনা করতে বসলে। অন্য কোনো রচনাতে এতটা খোলামেলা সাহসী হয় না তারা।
পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ করতে লেখক লেখে না। লেখকের ভেতরে একজন নিরপেক্ষ মানুষ রয়েছে। ওই মানুষটার ইশারায় লেখক লিখে যায়। আর গল্পের নির্মাণ হয় আশে-পাশের পরিবেশ থেকে নেওয়া উপাদান থেকে, যা কোনো সাধারণ মানুষ দেখতে পায় না। কিন্তু একজন লেখক ঠিকই দেখতে পায়—সেই অদ্ভুত মানুষগুলোর চালচলন-কথাবার্তা। সবসময় যে অদ্ভুত মানুষগুলোকেই গল্পে জায়গা দেয়, তা কিন্তু না। কখনো কখনো খুব সাধারণ মানুষও জায়গা পেয়ে যায় কোনো কোনো ছোটগল্পে। কিন্তু সেই সাধারণ মানুষটিইও অসাধারণ হয়ে ওঠে গল্পের অক্ষরের বুননে।
চিন্তাসূত্র: একজন কবি যখন একজন গল্পকারও; তখন তার গল্পের কবির প্রভাব কেমন হতে পারে?
একজন কবির দক্ষতা থাকে ছোট বাক্যে একটা প্রেক্ষাপট নির্মাণ করার। শব্দ আর বাক্যের খেলায় একজন কবি উস্তাদ। সেই উস্তাদিই একজন কবিকে দক্ষ গল্প নির্মাণ করতে সাহায্য করে। একজন কবির ছোটগল্প পড়তে পাঠকের পরিশ্রম কম হয়। আবার একজন গল্পকারের গল্প পড়তে যে বেশি পরিশ্রম হয়, তাও কিন্তু বলছি না। তবে একজন কবি’র গল্প পাঠক একটা রিদমে পড়ে যেতে পারে। গল্পে বুননটা একটু মজবুত হয়।
আবার একজন কবি’র গল্পে কঠিন শব্দের ব্যবহারও অনেক থাকে। একজন কবি সবসময় তার বাক্যে প্রচুর ব্যঞ্জনা রাখেন, যা আবার সহজ-সরল পাঠককে কিছুক্ষণ ঝিম ধরিয়ে বসিয়ে রাখে। কখনো কখনো কবিকে গল্প লেখার জন্য নানানভাবে সমালোচনাও শুনতে হয়। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কবি’র লেখা গল্প-ই আমার বেশি ভালো লাগে। যেমন রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ দাশের গল্পের মধ্যে এক অসাধারণ গাঁথুনি রয়েছে।
আমার জীবনে প্রথম কাব্য এসেছে এবং তারপরে গল্প লিখতে শুরু করেছি । আমার গল্পগুলো খুব ভালোভাবে কবিতা দ্বারা প্রভাবিত, এটা আমি মেনে নেই। আর আমার গল্পের মধ্যে কবিতার প্রভাব রয়েছে নানানভাবে। যেমন: আমি যখন প্লট নির্মাণ করি, তখন বিভিন্ন অংশে ভাগ করি গল্পটাকে। যেমনটা কবিতার ক্ষেত্রে করতাম। আসলে প্রত্যেকটা মানুষ একেক একেক রকম করে তার শিল্প নির্মাণ করে। এই জন্ম প্রক্রিয়াটা অনেকটা ব্যক্তিগত।
চিন্তাসূত্র: একটি ছোটগল্পে যৌনতাকে কিভাবে নান্দনিক করা যেতে পারে?
যৌনতা নির্মাণ করার জন্য কখনো যদি কোনো লেখক ছোটগল্প লেখে, তবে সেই যৌনতা যতটাই ভয়াবহ হোক না কেন, তা নান্দনিক। যৌনতা যতক্ষণ না জোরপূর্বক হয়, ততক্ষণ অবধি এটা নান্দনিক থাকে। কিন্তু যখন এটা জোরপূর্বক হয়ে যায়, তখন এটা পৈশাচিক রূপে প্রতীয়মান হয়। তবে পৈশাচিক যৌনতা যে আবার নান্দনিক না, এটা নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকবে। শিল্প-নান্দনিকতা বিচার করা একটা জটিল অঙ্ক।
তবে লেখায় অনেক সময় যৌনতাকে অশ্লীল মনে করা হয়। যদিও আমি বিশ্বাস করি, শিল্প-সংস্কৃতিতে কোনো অশ্লীলতা নেই। সবকিছুর মধ্যেই শিল্প-সংস্কৃতি রয়েছে। শ্লীল-অশ্লীলতার প্রশ্ন আসে তখন, যখন সময় ও স্থান আপনার সামনে দেয়াল তৈরি করে। রবীন্দ্রনাথ এক নাটকে লিখেছিলেন, উলঙ্গের কোনো পরিচয় নেই, বানিয়ে তোলা কাপড়ে; কেউবা রাজা কেউবা ভিখিরি। তার মানে উলঙ্গ যদি কোনো কিছু থাকে, তার কোনো পরিচয় থাকে না। যখন আমরা কাউকে কাপড় পরাই, তখন সে শ্লীল হয় অথবা অশ্লীল হয়ে ওঠে।
এখন আসল কথায় আসি, আমার গল্পের কোনো চরিত্র যদি ‘বিডিএসএম’ পছন্দ করে এবং সে তার সঙ্গীকে আঘাত করে করে যৌনতায় লিপ্ত হতে চায়, তা অনেক পাঠকের কাছে নান্দনিক লাগবে না, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমি তার যৌনমিলনের বর্ণনা সঠিক রূপে না দিতে পারলে কিছুতেই গল্পটি নির্মাণ করতে পারব না। মানুষ বুঝবে না চরিত্রটির মানবিক দ্বন্দ্ব অথবা সামাজিক দ্বন্দ্ব। গল্পটির অতলে ডুব দিতে পারবে না। গল্পের ফাঁক-ফোঁকর থেকে যাবে।
একটি মানুষের ভাত খাওয়ার দৃশ্য যেমন নান্দনিক হতে পারে, তেমনি যৌনমিলনের দৃশ্যও। এখন বিষয়টি হচ্ছে কোনো চোখ দিয়ে আপনি দেখছেন। লেখক হওয়া আসলে যতটা কঠিন, তারচেয়ে বেশি কঠিন পাঠক হওয়া। মানুষ লেখক তৈরিতে কাজ করলেও পাঠক তৈরি করতে তেমন কাজ করে না। কারণ একজন পাঠক একটা লেখার ব্যঞ্জনা বের করে অসাধারণ বানিয়ে পড়তে পারে। যতটা না একজন লেখক লেখার সময়ে ভাবে। অনেক সময় একজন লেখককে ছাড়িয়ে যেতে পারে একজন পাঠক। দুজনের দুটা চোখই আলাদাভাবে সুন্দর এবং পবিত্র।
চিন্তাসূত্র: কোন শ্রেণীর ছোটগল্প সবচেয়ে বেশি পাঠকসমাদৃত হয় বলে মনে করেন?
পাঠকের মনের খবর জানা কঠিন। তবে একজন বেকারিপণ্য-বিক্রেতা যেমন তার ক্রেতার রুচি মাথায় রেখে রুটি বানায়, তেমনি গল্পকার গল্প লিখতে পারে না। যদিও খাদ্য তৈরিও এক ধরনের শিল্প। লেখালেখি এক ধরনের শিল্প। একজন ছোটগল্পকার গল্পের চরিত্র নিয়ে ভাবে, একটি সময়কে পুনঃনির্মাণ করে, কখনো পাঠকের কথা ভাবে না বলে আমার মনে হয়। কারণ একজন লেখকের কাছে ব্যবসায়িক লেনদেনের চেয়ে আর্দশিক লেনদেনটা বেশি। তবে আজকাল পাঠকের কথা ভাবতে শুরু করেছে লেখক। আর তাই লেখকের মধ্যেও দুই ভাগ দেখা যায়। একভাগ লেখক পাঠকের জন্য লেখে, অন্যভাগ নিজেদের জন্য লেখে। এটা আমাকে খুব আনন্দ দেয়। কারণ এই লোকগুলোই আবার শ্রেণীহীন সমাজের গল্প বলে।
মানুষ যখন তার লেখা নিয়ে অহঙ্কার করে অথবা দশক ধরে বিচার করতে শুরু করে, অথবা সাহিত্যপাতার বিভাজন করে, তখন ওই লেখকের লেখা তো সাময়িকীতেই আসা উচিত না। অথচ আসে। তখন আমার হাসি পায়। আর তাই গল্প লিখে আমি মানুষকে পাঠাই না। কেউ চাইলে তারপরে গল্প দেই। আসলে একজন লেখক যখন একটা গল্পে বিচার করে আর একজন পাঠক যখন একই গল্পের বিচার করে তখন ফলটা ভিন্ন হয়। তবে সৎ-সমালোচনা একজন লেখকের জন্য আশীর্বাদ।
চিন্তাসূত্র: একটি কাহিনী বা গল্পকে ছোটগল্পে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কোন কোন শর্ত পূরণ করতে হয়?
একটি কাহিনী অনেক অগোছালো অবস্থায় থাকে। ধরুন রহিম সকাল থেকে দুপুর অবধি চায়ের দোকানে বসেছিল। দুপুরে পুকুরে গোছল করেছে। সারাদিন তেমন কিছু খায়নি। তারপরে আবার মাঝরাতের জন্য অপেক্ষা করছে। যখন রাত হলো। চারপাশ ঘুমিয়ে পড়লো, তখন সে চুরির উদ্দেশ্যে বের হলো। এখানে আমি যদি সকালে চায়ের দোকান থেকে রাত অবধি চুলচেরা বর্ণনা দেই, তবে পাঠক হয়তো গল্পটি পড়তে চাইবে না। একটি কাহিনী নানাভাবে ছোটগল্পে পরিণত হতে পারে।
গল্পের বুনন থাকতে হবে। প্রতিটি চরিত্রের নির্দিষ্ট গন্তব্য থাকতে হবে। সেই গন্তব্য উদ্দেশ্যহীনও হতে পারে। কাহিনীর ভেতরে একটা অদৃশ্য বন্ধন থাকতে হবে। এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা থাকবে। কারণ একটি ছোটগল্প সব সময় একটা বড় গল্পের দিকে এগিয়ে যায়। আর সব মানুষই সমাপ্তি দেখতে চায়। আর সমাপ্তি খুঁজতে গিয়ে ভেতরে একটা না-পাওয়ার বেদনা থেকে যায়। ওইটাই ছোটগল্প।
চিন্তাসূত্র: ছোটগল্প নিয়ে আপনার নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ কেমন ফল দেয়?
গল্প নিয়ে কখনো নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ আমার তেমন করা হয়নি। আমি অলস প্রকৃতির অনিয়মিত লেখক। মনে আছে, স্কুলে আমি একটা মিনিম্যাগ প্রকাশ করতাম। নাম ছিলো: মিছিল। সেখানে স্লোগান দিয়েছিলাম ‘একটি অনিয়মিত কবিতার কাগজ’। নিজের প্রতি ভরসা ছিল না—নিয়মিত আসলেই প্রকাশ করতে পারব কি না মিনিম্যাগটা। তাই কাউকে ওয়াদা করতাম না।
আমি আসলে, যখন যা লিখতে ভালো লাগে, তাই লিখে ফেলি। আমি চরিত্র নিয়ে কাজ করি। কোনো চরিত্র ভালো লাগলে তাকে অনুসরণ করতে শুরু করি। তার পেছন পেছন ছুটি ও খুঁজে বের করি তার কাছে সুখ মানে কী। দুঃখ মানে কী। যখন আবিষ্কার করে ফেলি, তখন তার পেছন ছোটা বন্ধ করে লিখে ফেলি ছোটগল্প। কখনো আমি ছুটি গল্পের পেছনে আবার কখনো আমার পেছনে ছুটতে থাকে গল্প। আমাকে গল্প লিখতে সামর্থ্য দিয়েছে মানুষ আর প্রকৃতি।
চিন্তাসূত্র: আপনার ছোটগল্প নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমি একজন লেখক। জীবনের শেষ মুহূর্তপর্যন্ত লিখে যাওয়াই আমার একমাত্র পরিকল্পনা। লেখালেখি আমার কাছে পবিত্র কাজ। আমি আমার মুখোমুখি হতে পারি শুধু লিখতে বসলেই। যতক্ষণ কলম চলতে থাকে, ততক্ষণ মনে হয় আমি বেঁচে আছি। মনে হয়, আমি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি প্রকৃতির সঙ্গে।
চিন্তাসূত্র: মানুষের কল্যাণে আাপনার ছোটগল্প কেমন ভূমিকা রাখতে পারে?
মানুষের কল্যাণে আসতে পারে অথবা অকল্যাণেও আসতে পারে। যেকোনো বস্তু-সাহিত্য অথবা যেকোনো কিছু থেকেই মানুষের কল্যাণ অথবা অকল্যাণ দুটাই ঘটতে পারে। আমি একটা গল্প লিখলাম পরকিয়া নিয়ে, সেই গল্পে কহিনুর নামে একটা চরিত্র আছে। সে তিন-চারটে পুরুষের সঙ্গে প্রেম করে বেড়ায়। এখন কোনো একটা মেয়ে সমস্ত গল্প পড়ে শুধু কহিনুর চরিত্রটির ওপরে দুর্বল হয়ে পড়লো। নিজেকে কহিনুর হিসেবে তৈরি করতে শুরু করলো। এতে তার কল্যাণ হবে না কি অকল্যাণ হবে, এটা হিসাব করে বের করা কঠিন। একটা মানুষের কল্যাণ নির্ভর করে তার বিবেচনা শক্তির ওপরে। একটা ছোটগল্প মানুষকে বিবেচনা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সেই অর্থে আমার গল্প মানুষের কল্যাণে বেশি ব্যবহার হওয়ার কথা। কিন্তু মানুষ অসাধারণ ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে পৃথিবীতে। তারা যেকোনো ঘটনাকে একটা ভিন্ন রূপে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অকল্যাণ-ই হয়। এটা মানবজাতির দোষ না, এটা তার সৃষ্টিশীলতা।