লতিফ জোয়ার্দার—কবি, কথাশিল্পী ও ছোটকাগজ সম্পাদক। সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের ছোটকাগজ চৌকাঠ। এই পর্যন্ত প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো কাব্য—এক সুন্দরের অপমৃত্যু, সে শহর অন্ধ বধির ও মন এক বেদনার কারখানা; ছোটগল্প—ভাত ও ভাতারের গল্প, প্যারিস রোড; উপন্যাস—নো মিসকল, আজ বৃষ্টির মন ভালো নেই। সম্প্রতি সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ নিয়ে চিন্তাসূত্রের মুখোমুখি হয়েছেন এই সাহিত্যিক-ছোটকাগজ সম্পাদক।
চিন্তাসূত্র: একসময় যারা দৈনিকের সাহিত্যপাতায় ঠাঁই পেতেন না অথবা যারা দৈনিকে লিখতে স্বস্তি বোধ করতেন না, তারা লিটলম্যাগ বের করতেন। সম্প্রতি লিটলম্যাগের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। বিপরীতে বেড়েছে অনলাইন সাহিত্যপত্রিকা বা ওয়েবম্যাগ। আপনি কি মনে করেন, লিটলম্যাগের জায়গাটাই এই ওয়েবম্যাগগুলো দখল করছে?
লতিফ জোয়ার্দার: আপনার প্রথম কথার সঙ্গে আমি একমত। অনেক ক্ষেত্রেই এমনটা হয় বা হতো। তবে তার ব্যতিক্রমও আছে। বর্তমানে লেখা প্রকাশের জায়গা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। দৈনিকের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি আমি মনে করি, তুলনামূলক লিটলম্যাগের সংখ্যাও বেড়েছে। কারণ অনেকেই সম্পাদনার বিষয়টা অনেক সহজ কাজ মনে করে। কপি পেস্ট করতে জানলেই সম্পাদনা করা যায়। তবে কারও জায়গা কেউ নিতে পারে না। ওয়েব ম্যাগাজিন সাহিত্যকর্ম প্রকাশের নতুন ও লেটেস্ট মাধ্যম।
চিন্তাসূত্র: লেখাপ্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে, পাঁছ থেকে দশ বা তারও বেশি ফর্মার লিটলম্যাগ বের হতো। এতে খরচও হতো বেশ। কিন্তু বর্তমানে ওয়েবম্যাগে সে খরচটি নেই। আপনি কি মনে করেন, অর্থব্যয়ের কারণ না থাকায় ওয়েবের দিকে ঝুঁকছেন সাহিত্যকর্মীরা?
লতিফ জোয়ার্দার: ওয়েব ম্যাগাজিন প্রকাশে অর্থ ব্যয় এক প্রকার নেই বললেই চলে। তবে অর্থের কারণে শুধু নয়। ওয়েব ম্যাগাজিন অতিসহজে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। লেখক ও পাঠকের সংযোগ দ্রুত ঘটে। পাঠক সরাসরি অভিমত প্রকাশ করেত পারে। সে কারণে অল্প সময়ে এর বিস্তার ঘটেছে।
চিন্তাসূত্র: কারও কারও মতে, বেশিরভাগ ওয়েবই সম্পাদনা ছাড়াই লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। এমনকী বানানও দেখা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
লতিফ জোয়ার্দার: নিম্নমানের ওয়েব ম্যাগাজিন তো অবশ্যই আছে। তেমনি সে রকম লিটলম্যাগও প্রচুর আছে, সেগুলো যেমন আসে, তেমনি আবার হারিয়েও যায়।
চিন্তাসূত্র: একসময় কারও পকেটে একহাজার/বারো শ টাকা থাকলেই তিনি একটি লিটলম্যাগ করার সাহস দেখাতেন। এখন ১৫/১৬ শ টাকা পকেটে থাকলেই কেউ কেউ ওয়েবম্যাগ করছেন, কেউ কেউ বিনেপয়সাতেই ব্লগজিন খুলছেন, লেখা সংগ্রহ করছেন। এ ধরনের ওয়েবজিন বা ব্লগজিন বের করার কারণ কী বলে মনে করেন আপনি? এটা কি নিছকই নিজের কর্তৃত্ব প্রকাশের উপায়, না কি সাহিত্যপ্রেমের জন্য?
লতিফ জোয়ার্দার: আমি কখনো এটাকে সাহিত্যপ্রেম বলব না। নিজেকে ভিন্ন রূপে উপস্থাপনের চেষ্টা মাত্র।
চিন্তাসূত্র: আপনি কি মনে করেন, ওয়েবম্যাগ-ওয়েবজিন-ব্লগজিন মানুষকে বইপাঠবিমুখ করে তুলছে?
লতিফ জোয়ার্দার: যারা পাঠ বিমুখ হয়, তারা এমনিতেই হয়। আমি মনে করি, বিনোদন সহজলোভ্যতা একটা বড় কারণ হতে পারে। সাহিত্য পাঠে আগ্রহী করতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে ওয়েবজিন বা ব্লগজিন।
চিন্তাসূত্র: আপনি নিজে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্যপাতা, না লিটলম্যাগ, না এই ওয়েবম্যাগে লিখতে /পড়তে পছন্দ করেন?
লতিফ জোয়ার্দার: সবগুলোই আমার পছন্দের। তবে লিটলম্যাগে লেখা প্রকাশে বেশি আগ্রহী আমি।
চিন্তাসূত্র: একটি ওয়েবম্যাগকে আপনি কিভাবে দেখতে চান? অর্থাৎ একটি ওয়েবম্যাগে আপনি কী ধরনের লেখা পড়তে চান?
লতিফ জোয়ার্দার: ওয়েবজিনে আমি সব ধরনের লেখার সঙ্গে অনুবাদ সাহিত্য দেখতে চাই। আমি চাই, কপি পেস্ট নয়, সঠিক সম্পাদনার মাধ্যমে সম্পাদক তার মুন্সিয়ানার পরিচয় ঘটাবেন এই মাধ্যমে।