জয়দুল হোসেন—কবি, গবেষক ও সংগঠক। ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া’, ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস: ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা’, ‘অবিভক্ত বাংলার অসমাপ্ত বিপ্লব’, ‘জন্মশতবর্ষে: অদ্বৈত মল্লমর্বমণ’, ‘সমুদ্র তীরে একা’, ‘সাম্যবাদী মন’, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মারকচিত্র: নির্যাতন ও গণহত্যা’ ও ‘খান মোহাম্মদ ফারাবী’। সম্প্রতি এই কবি-গবেষক-সংগঠকের মুখোমুখি হয়েছেন তরুণ সাহিত্যকর্মী মানিকরতন শর্মা।
চিন্তাসূত্র: আপনার কবিতাপাঠ কখন থেকে শুরু হলো ?
জয়দুল হোসেন: শৈশব থেকেই। বাল্যশিক্ষা আমাদের পাঠ্য ছিল। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণীতে যেসব কবিতা পাঠ্য ছিল, সেসব কবিতা পড়তাম। ওই সময় বড়দের মুখে শোনা বিভিন্ন নীতিকবিতা আমাকে আলোড়িত করতো। যেমন: সকালে উঠিয়া আমি, আপনারে বড় বলে, কিংবা যে জন দিবসে মনের হরশে, বা আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’র মতো চরণগুলোয় আমি মুগ্ধ হতাম। বড়দের মুখে শুনে আমারও প্রায় মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে বিদ্যালয়ের ক্লাশের পর ক্লাশ ডিঙিয়ে পাঠ্যবইয়ে নতুন নতুন কবিতার সঙ্গে পরিচিত হলাম। পাঠ্য বইয়ের কবিতাগুলোই তখন ভালো লাগতো। এছাড়া গ্রামীণ আবহে প্রচলিত প্রবাদ-প্রবচন, ডাকের কথা ও খনার বচনগুলোও আমাকে প্রভাবিত করেছে। যেমন: ‘বারো হাত কাকুড়ের তেরো হাত বিচি’, ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজা পুণ্যি দেশ’, ‘আখে বান তেতুলে ধান’, অথবা ‘ষোল চাষে মুলা তার অর্ধেক তুলা, তার অর্ধেক দান, বিনা চাষে পান’ ইত্যাদি গ্রামীণ প্রবাদ-প্রবচন বা খনার বচনগুলোও আমাকে প্রভাবিত করেছে।
চিন্তাসূত্র: কবিতা লেখা শুরু করলেন কবে থেকে?
জয়দুল হোসেন: সময়টা গত শতকের আশির দশক। সারাদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। সেই আন্দোলনে আমিও শরিক হয়েছিলাম। আমাদের অংশগ্রহণটা ছিল অন্য রকমের। কেউ কবিতা পড়তো, কেউ গান গাইতো, কেউ কেউ নাটক করতো—স্বৈরাচারবিরোধী গান, কবিতা, নাটক। এরইমধ্যে আমরা প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়লাম। ওই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে জড়িত হওয়ার ধারাবাহিকতাই আমার কবিতা বা ছড়া লেখা শুরু হয়েছিল। প্রতিটি আন্দোলনকে সামনে অথবা পেছনে রেখে কবিতা লিখতাম। আর আন্দোলনের দিন সমাবেশে সেই কবিতা পড়তাম। কবিতা মানে গণ-কবিতা। অনেকটা গণসঙ্গীতের মতো। অন্ত্যমিল রেখে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা লিখে নিয়ে গিয়ে সমাবেশে পড়তাম। সম্ভবত এ থেকেই আমার কবিতা লেখা শুরু। ওই শুরুটাই পরবর্তী সময়ে আমাকে জাতীয়ভিত্তিক সংগঠন জাতীয় কবিতা পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলিন পরিষদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত করেছিল। এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাহিত্য একাডেমি নামে আমরা একটা সংগঠন গড়ে তুলেছিলাম। সাহিত্য একাডেমির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর থেকেই কবিতা লেখার বিষয়টা বেগবান হয়েছিল। তবে একথাও স্বীকার করতে হবে যে, আমার কবিতা লেখা শুরু হয়েছিল তারও আগে থেকে। মূলত কবিতাকে বিকশিত করা বা সাংগঠনিক রূপদানের লক্ষ্যেই সাহিত্য একাডেমি নামের এই সংগঠনটি গড়ে তুলেছিলাম। পরবর্তী সময়ে এই সংগঠনটি শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রায় সব শাখায়ই কাজ করেছে। এখনো করছে।
চিন্তাসূত্র: সংগঠন কি কবিতা বা সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বিকশিত করতে পারে?
জয়দুল হোসেন: হ্যাঁ পারে। কবিতা বা সাহিত্য যদিও ব্যক্তি বিশেষের সৃষ্টি, তবু একে বিকশিত করার জন্য সংগঠনের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন প্রয়োজন রয়েছে পত্র-পত্রিকার। আর ওই পত্র-পত্রিকাও এক ধরনের সংগঠনই। ওই সময় প্রায় নিয়মিতভাবে আমরা সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশ করতাম। সংগঠন ও সাহিত্য পত্রিকাকে ঘিরেই আমরা সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা শুরু করেছিলাম।
চিন্তাসূত্র: সময়টা কখন? কারা কারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
জয়দুল হোসেন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য একাডেমির সঙ্গে তখন যারা জড়িত হয়ে ছিলেন, তাদের মধ্যে যাদের নাম মনে আছে, তারা হলেন অধ্যাপক হরলাল রায়, ডা. ফরিদুল হুদা, কবি খুরশেদুল ইসলাম, গল্পকার মুহাম্মদ সিরাজ, আলোকচিত্রশিল্পী প্রাণতোষ চৌধুরী, মিলি চৌধুরী, বেলী চৌধুরী, আশরাফ আজিজ, মানিকুর রহমান মানিক, মাহবুব পিয়াল, সরকার আমিন, মাহমুদ হাসান সিদ্দিকী, আরও কয়েকজন ছিলেন। তবে তাদের কেউ কেউ কয়েক মাসের মধ্যেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন, আবার কেউ কেউ খুবই সক্রিয় হয়ে সংগঠনের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে ডা. আহমদ আল মামুন, দীপক নাগ, চম্পা নাগ, আবদুন নূর, মফিজুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ (আবুল আজাদ), মারুফুল ইসলাম, নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর, রাজীব নূর, মানিকরতন শর্মাসহ অনেকেই জড়িত হয়ে সংগঠনকে গতিশীল করেছেন। তাদের অনেকের নাম এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না বলে দুঃখিত। তবে ডা. আহমদ আল মামুন সাহিত্য একাডেমির সঙ্গে জড়িত হয়ে এর নাট্য বিষয়ক কার্যক্রমকে গতিশীল করেছেন। এই নাট্যবিষয়ক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হয়ে অনেকেই বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাহিত্য একাডেমি তখন থেকেই নিয়মিত নাট্যচর্চা শুরু করেছে। এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।
চিন্তাসূত্র: আপনার প্রথম কবিতার বই ‘স্বরবৃত্তে স্বরাঘাত’ প্রকাশের গল্প শুনতে চাই।
জয়দুল হোসেন: সময়টা গত শতকের আশির দশক। সারাদেশে তখন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিল। ওই আন্দোলনে শরিক হতে গিয়ে কিছু কবিতা ও ছড়া লিখেছি। ওই কবিতা ও ছড়াগুলোকে একত্রিত করে ১৯৮৮ সালে ‘স্বরবৃত্তে স্বরাঘাত’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছি। গ্রন্থটি প্রকাশ করার ব্যাপারে ঢাকাস্থ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিস প্রেস-এর তৎকালীন ম্যানেজার বিশিষ্ট কবি, গবেষক ও লেখক আবুল আজাদ বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছেন। তিনি গ্রন্থটির প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ও অলঙ্করণ করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্টার। গ্রন্থটি তখন ওয়ার্ল্ড ইউনির্ভাসিটি সার্ভিস প্রেস থেকেই মুদ্রিত হয়েছিল। তখন যেহেতু কোনো প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না, সেহেতু গ্রন্থটি সাহিত্য একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সাহিত্য একাডেমির পক্ষে গ্রন্থটির প্রকাশক হয়েছিলেন মাহবুব আলম পিয়াল (মাহবুব পিয়াল)। তিনি তখন সাহিত্য একাডেমির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিপেন্ডন্ট ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ-এ অধ্যাপনা করেন। গবেষক হিসেবে তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। গ্রন্থটি প্রকাশের পর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছিল। পাঠকের কাছেও গ্রন্থটি প্রশংসিত হয়েছিল। সম্ভবত সময়ের প্রয়োজনেই তা সম্ভব হয়েছিল।
বাংলাদেশের মানচিত্রের আদলে ধীরাজ চৌধুরী অঙ্কিত প্রচ্ছদের মধ্যখানে একটি সিংহাসনে একটি শকুন বসা ছিল। অন্য একটি শকুন সিংহাসনের ওপরে অবস্থান করছিল। তার চারপাশে ছিল প্রতিবাদ ও আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি। এ থেকে বাংলাদেশের তৎকালীন স্বৈরাচারের চিত্রটাও ফুটে উঠেছিল। তাই গ্রন্থটির প্রচ্ছদও আকর্ষণীয় হয়েছিল।
চিন্তাসূত্র: ছন্দ ছাড়া কি কবিতা হতে পারে না?
জয়দুল হোসেন: না, পারে না। ছন্দ ছাড়া কবিতা হতে পারে না, একথা সত্য। এখানে বুঝতে হবে ছন্দটা আসলে কী? ছন্দ কি কেবল অন্ত্যমিল? না। ছন্দটা কেবল অন্ত্যমিল নয়। এর বাইরেও ছন্দের অনেক কারসাজি আছে। কবিতার ছন্দটা অন্তর্নিহিত একটা বিষয়। ছন্দটা হলো এক ধরনের গতি বা প্রবাহ। এই গতি বা প্রবাহ ছাড়া পৃথিবীতে কোনো কিছুই হয় না। কবিতার শরীরে ছন্দটা রক্ত প্রবাহের মতো। মানুষের শরীরের রক্ত প্রবাহ যেমন পালস্-এ ধরলে বোঝা যায়, ঠিক তেমনি কবিতার ছন্দটা বোঝা যায় তা পাঠ করার সময়। কবিতা পাঠের সময় যে গতি বা প্রবাহ সৃষ্টি হয় সেটিই কবিতার ছন্দ। ছন্দটা কবিতা থেকে আলাদা কোনো বিষয় নয়। কবিতার অন্তর্নিহিত শক্তি এটা। অনেক সময় একে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যায় না, পাঠের সময় অনুভব করা যায়। এই অনুভব অনুভূতি যেখানে নেই সেখানে কবিতা থাকতে পারে না। ছন্দ বলতে যারা কেবল প্রচলিত স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত ছন্দ কিংবা পয়ার বা অন্তমিলকে বোঝেন, তাদের উদ্দেশে বলি, ছন্দ ছাড়া কবিতা হতে পারে। আর ছন্দ বলতে যারা কবিতার অন্তর্নিহিত গতি বা প্রবাহটাকে বোঝেন তাদের উদ্দেশে বলি, ছন্দ ছাড়া কবিতা হতে পারে না।
এই অন্তর্নিহিত গতি বা প্রবাহটাই কবিতার ছন্দ। তাই চূড়ান্ত বিবেচনায় ছন্দ ছাড়া কবিতা হয় না বা হতে পারে না—একথাই মানতে হবে। কবিরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ছন্দ আবিষ্কার করেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে, ওইখানে কোনো ছন্দ নেই, কিন্তু গভীরভাবে উপলব্ধি করলে বোঝা যায় যে, ওইখানেও ছন্দ রয়েছে। কেবল কবিতার ক্ষেত্রেই নয়, গদ্যের মধ্যেও এক ধরনের ছন্দ থাকে। গদ্য পাঠ করার সময় যে গতি বা প্রবাহ সৃষ্টি হয় সেটিই গদ্যের ছন্দ। যে গদ্য পাঠেরসময় সাবলীল গতি বা প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে, সে গদ্যই ছন্দময়। তার রচয়িতাকেই বলা হয়ে থাকে ছান্দসিক। কেবল কাব্যকারের ক্ষেত্রেই নয়; গদ্যকারের ক্ষেত্রেও এ অভিধাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি তা ছন্দময় হয়। তবে গদ্যের ক্ষেত্রে ছন্দটা অপরিহার্য না হলেও কবিতার ক্ষেত্রে তা অবশ্যম্ভাবী।
চিন্তাসূত্র: গদ্য কবিতার ক্ষেত্রেও কি ছন্দটা অপরিহার্য?
জয়দুল হোসেন: কবিতা তো কবিতাই। এখানে আবার গদ্য-পদ্য কী? কবিতাকে কবিতা হতে হলে তাকে ছন্দময় হতেই হবে। ছন্দটা কবিতার অলঙ্কার। ওই যে বললাম, ছন্দটা এক ধরনের গতি বা প্রবাহ। ওই প্রবাহটা থাকতেই হবে। পাশাপাশি উপমা, উৎপ্রেক্ষা, রূপক ইত্যাদিও থাকতে হবে। ওইসব মিলেমিশেই কবিতার আবহ সৃষ্টি হয়।
চিন্তাসূত্র: লেখালেখি বা সাহিত্যচর্চায় আড্ডার ভূমিকা কতটুকু?
জয়দুল হোসেন: আড্ডা লেখক সৃষ্টি করে না। তবে লেখক সত্তাটাকে বিকশিত করে। চিন্তার দ্বার-খুলে দেয়। লেখকরা যখন আড্ডায় বসে তখন একে অপরের যুক্তি খণ্ডন করতে চায়। এই যুক্তি খণ্ডনের মধ্যেদিয়েই নতুন নতুন যুক্তির সৃষ্টি হয়। এখানেই লেখকের সৃজনশীলতার কোনো একটা মতবাদকে আঁকড়ে ধরে রাখার মধ্যে নতুনত্ব নেই। যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে নতুন নতুন মতবাদ বা ধারণাকে আবিষ্কার করার মধ্যেই সৃজনশীলতা নিহিত। লেখক আড্ডার মধ্যদিয়ে এ ধারাটিই বিকশিত হয়।
চিন্তাসূত্র: আমাদের সমাজে কবি-সাহিত্যিকদের ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলুন।
জয়দুল হোসেন: আমাদের সমাজে কবি-সাহিত্যিকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কবি-সাহিত্যিকরা প্রায় সবাই বিবেকবান। বিবেক না থাকলে কেউ কবি বা সাহিত্যিক হতে পারেন না। বিবেকের তাড়নায়ই তারা সমাজের অসঙ্গতিকে কবিতা বা সাহিত্যের মধ্যে তুলে ধরেন। সব ধরনের অন্যায়-অনিয়ম, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ইত্যাদি থেকে কবি-সাহিত্যিকরা সব সময়ই দূরে থাকেন। কেবল দূরেই থাকেন না শুধু, ওই সবের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করেন। আন্দোলন গড়ে তোলেন। লেখালেখির মাধ্যমে সমাজকে সবেচতন করেন। ধর্মের নামে জঙ্গি বা মৌলবাদী, রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী দেখা যায়, কিন্তু কবিতা বা সাহিত্যের ওই সবের কোনো অস্তিত্ব নেই। কাজেই একথা সহজেই বলা যেতে পারে যে, কবি-সাহিত্যিকরা তাদের সাহিত্যকর্মের মধ্যদিয়ে সুন্দর সমাজ বির্নিমানে কাজ করেন।
চিন্তাসূত্র: তরুণ কবিদের উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কী হতে পারে?
জয়দুল হোসেন: সাহিত্যে পীরবাদ বা পীরালি বলে কিছু নেই। দাদাগিরিও না। ওস্তাদি বা মাতব্বরি তো নয়ই। তরুণ কবি বা লেখকরা নিজেরাই নিজেদের পথ আবিষ্কার করে নেবেন। এক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশে কিছু বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। যুগে যুগে তরুণরাই নতুন নতুন পথ আবিষ্কার করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। এপথের সন্ধান যারা পারেন তারাই নমস্য। সাহিত্যের ক্ষেত্রে এ পথ স্ব-আবিষ্কৃত। অনুকরণীয় বা অনুসরণীয় কোনো পথ নয় এটা। কবিতা সঙ্গীতের মতো গুরুমুখী বিদ্যা নয় যে, গুরুর নিকট থেকে তালিম নিতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্বসূরিদের অনুকরণ বা অনুসরণ নয়, আত্মস্থ করে ধাপে পর ধাপ এগিয়ে যেতে হবে। নতুন নতুন পথ আবিষ্কার করতে হবে।
চিন্তাসূত্র: কবিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলুন।
জয়দুল হোসেন: কবিতার মৃত্যু নেই। কবিতা চিরকালীন, সর্বকালীন এবং সর্বজনীনও বটে—যদি তা কবিতা হয়। হাজার বছর আগে এবং তারও আগে রচিত কবিতা এখনো পঠিত হচ্ছে, ভবিষ্যতেও পঠিত হবে। বিশ্বসাহিত্যের আদি নির্দশন কবিতা। অনাদিকালের নিদর্শন হিসেবেও কবিতাই বেঁচে থাকবে।
চিন্তাসূত্র: তবে যে প্লেটো বলেছেন আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
জয়দুল হোসেন: এ ব্যাপারে আমি বলতে চাই, প্লেটো যে আদর্শ রাষ্ট্রের কথা বলেছেন, সে আদর্শ রাষ্ট্র এখনো সৃষ্টি হয়নি। ভবিষ্যতে হবে কি না, জানি না। হলেও কবিতা থাকবে। কারণ আমি আগেই বলেছি, কবিতা বেঁচে থাকবে অনাদিকাল পর্যন্ত। এক্ষেত্রে প্লেটোর বক্তব্যকে চিরন্তন বলে মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই।