(ড. ইনামুল হক বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান অভিনেতা। পেশায় একজন শিক্ষক। অভিনয়ের পাশাপাশি নাট্যকার হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। টিভি নাটকের গোড়া থেকেই তাঁর সম্পৃক্ততা।
২০১৪ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের কথা। মোহাইমেন ফারুকী আনসারীর রচনা ও পরিচালনায় ‘রমজান আলীর সিয়াম’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেছেন ড. ইনামুল হক। সেই নাটকে অভিনয় করেছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদ। শুটিংস্পটেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা কথা বলেছেন। ড. ইনামুল হক এখন আমাদের মাঝে নেই। তরুণ নাট্যকর্মী সালাহ উদ্দিন মাহমুদের ওই সময়ে নেওয়া সাক্ষাৎকারটি চিন্তাসূত্রের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো। সম্পাদক)
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: কেমন আছেন স্যার?
ড. ইনামুল হক: ভালো আছি। তুমি?
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: জ্বি, ভালো স্যার। এখানে কার নাটকে কাজ করছেন?
ড. ইনামুল: মোহাইমেন ফারুকী আনসারীর রচনা ও পরিচালনায় ‘রমজান আলীর সিয়াম’ নাটকের নামভূমিকায় অভিনয় করছি। আগামী ঈদের জন্য নাটকটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: মিডিয়ায় আপনার উল্লেখযোগ্য কাজ কোনটি বলে মনে করেন?
ড. ইনামুল হক: কাজ তো অনেক। উল্লেখযোগ্য বলতে আসলে নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে ‘অয়ময়’ নাটকে নির্বাক চরিত্র ছিল আমার। ওই চরিত্রটার কথা এখনও মানুষ বলে। সেটাকেই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। আরও কাজ আছে। তবে এভাবে এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মুশকিল।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনাদের শুরুটা তো একমাত্র বিটিভি কেন্দ্রিক। তখন প্রতিযোগিতাও হয়তো বেশি ছিল। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
ড. ইনামুল হক: অবশ্যই। দেশে তখন মাত্র একটা চ্যানেল। সবার হয়তো ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ হয়নি কাজ করার। যারা সুযোগ পেয়েছেন, তারা ভাগ্যবান। এখন তো অনেক চ্যানেল। কাজেই শিল্পীও অনেক। এখন সব কিছুই বেশি বেশি, কিন্তু কেমন যেন আগের মতো আশানুরূপ হচ্ছে না।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: টিভিতে আপনার প্রথম কাজ কোনটি?
ড. ইনামুল হক: শুধু আমার নয়, বিটিভির প্রচারিত প্রথম টিভি নাটক ‘বাংলা আমার বাংলা’ আমার লেখা। তখন আমি লিখতাম। নাটকটি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রচারিত হয়।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আর কোন কাজ যা স্মরণীয়?
ড. ইনামুল হক: বিটিভির প্রথম একুশের নাটকটিও আমার লেখা। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ‘মালা এক শত মালঞ্চে’ নাটকটি রচিত হয়।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনার কাজের ক্ষেত্রে প্রথম কোন স্বীকৃতি বা পুরস্কার পেয়েছেন?
ড. ইনামুল হক: পুরস্কারের আশায় কখনো কাজ করিনি। রাস্তা-ঘাটে মানুষ যখন বলে, স্যার আপনার অভিনয় ভালো লাগে। শুনে মনে হয়, এর চেয়ে আর বড় কোন স্বীকৃতি নেই। তবুও বলি, ১৯৮৩ সালে ‘গৃহবাসী’ নাটকের জন্য বাচসাস পুরস্কার পেয়েছিলাম।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বর্তমানে টিভি নাটকে আঞ্চলিকতার আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী—
ড. ইনামুল হক: নাটকের ভাষা আঞ্চলিক হতে পারে। এতে ভালো লাগে। তার মানে জগাখিচুরি তো করা যাবে না। আমিই সর্বপ্রথম আঞ্চলিক ভাষায় টিভি নাটক লিখেছি। তবে এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া যাবে না।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বর্তমান নাটকের মান আপনার কাছে কেমন মনে হয়?
ড. ইনামুল হক: আগের চেয়ে অনেকটা উন্নতি হয়েছে বলা যায়। তবে আমাদের পড়াশোনার অভ্যাসটা কমে গেছে। এখন কেউ পড়ে না। দর্শক, নির্মাতা, অভিনেতা—কেউ তেমন পড়াশোনা করেন না। ফলে জানাশোনা কম। তাই তো নকল করে একটা কাহিনী দাঁড় করালেও বোঝা মুশকিল। নকলটা ধরা কঠিন।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: টিভিতে ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন সম্পর্কে কিছু বলবেন?
ড. ইনামুল হক: ভারত বলতে কলকাতার বাংলা সংস্কৃতির কথাই বলি। টিভিতে তারা আমাদের পূর্ববর্তী নন। বরং কলকাতায় টিভির প্রচলন আমাদেরও পরে। তারপরও তাদের সিনেমা, খণ্ড নাটক ও ধারাবাহিক নাটকে বৈচিত্র্য আছে। নিত্য নতুন কিছু দিতে পারলে দর্শক অবশ্যই তা সাদরে গ্রহণ করবে। আমরা দিতে পারি না বলেই তো আমাদের দর্শক ধার করা নাটক, সিরিয়াল দেখে। তাদের ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদেরও ভাবতে হবে। নাটকের মান আরও উন্নত করতে হবে। নাট্যকার, নির্মাতা, অভিনেতা, কলাকুশলী—সবাইকে ভাবতে হবে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: নবীনদের ব্যাপারে আপনার উপদেশ—
ড. ইনামুল হক: প্রথমেই বলতে হয়, টিভি নাটকে কাজ করতে এসে নবীনরা অনেকটা বঞ্চিত হন। তাদের ঠিকমতো সম্মানি দেওয়া হয় না। অনেক অবহেলাও করা হয়। ফলে সম্ভাবনাময় অনেক মুখ মিডিয়া থেকে হারিয়ে যায়। শিল্পী নতুন কি পুরান, বিখ্যাত কি অখ্যাত হোক না কেন, যথাযথ সম্মান করা উচিত। ওদের উৎসাহ দেওয়া উচিত।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: নবীনদের জন্য আপনার কিছু করণীয় আছে কি?
ড. ইনামুল হক: এ নিয়ে আমি অনেকবার প্রতিবাদ করেছি। কাজ হয়নি। সবাই একযোগে এগিয়ে না এলে এ সিস্টেম পাল্টাবে না। পরিচালকরা বিনা পয়সায় কাজ করাতে পারলে পয়সা খরচ করবে কোন দুঃখে। আসলে শিল্পী সম্মানির জন্য একটা নীতিমালা দরকার।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো। আপনার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল, দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
ড. ইনামুল হক: তোমাকেও ধন্যবাদ।