(সময় সম্ভবত ২০১৪ বা ২০১৫ সাল। কাজী নাসিরের পরিচালনায় ‘এবার জমবে খেলা’ নামের একটি ধারাবাহিকের সেট থেকে নেওয়া। ওই নাটকে অভিনয় করেছেন সালাহ উদ্দিন মাহমুদও। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তারা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি ওই সময়ে একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছিল। এটিএম শামসুজ্জামান এখন আমাদের মাঝে নেই। তার স্মৃতির উদ্দেশে সাক্ষাৎকারটি পুনরায় পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।-সম্পাদক)
এটিএম শামসুজ্জামান বাংলাদেশের একজন শক্তিমান অভিনেতা। অভিনয় জীবনের শুরু থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক চলচ্চিত্রে সফলতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন একটি চলচ্চিত্রও। মিডিয়া জগতে এ যাবতকালে সবার মাথার ওপর ছায়ার মতো রয়েছেন তিনি। প্রবীণ এই অভিনেতার সাথে কথা হয় পুবাইলের শুটিংস্পটে। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তরুণ নাট্যকর্মী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনি কেমন আছেন? বয়স তো কম হলো না—
এটিএম শামসুজ্জামান: শরীরটা বেশি ভালো নেই। এখন বয়স হয়েছে। কানে কম শুনতে পাই, চোখেও কম দেখি। তবু কাজ করি। অভিনয় ছাড়া আর কী করবো? যতদিন বাঁচি, এটাই করে যেতে হবে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এ বয়সে কাজ করতে কেমন লাগে?
এটিএম শামসুজ্জামান: মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয়। তারপরও একদম কাজ না করে আবার থাকা যায় না। কারণ অভিনয়টাও একটা নেশার মতো। মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়তো আর বেশিদিন কাজ করতে পারবো না? তবে কাজের মধ্যে থাকলে একটু ভালো লাগে। একদিন হয়তো হাসতে হাসতে চলে যাবো।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: মিডিয়াতে এ মুহূর্তে আপনার বিকল্প কেউ আছে বলে মনে করেন?
এটিএম শামসুজ্জামান: শুনুন, পৃথিবীতে কেউ কারো বিকল্প নয়। মিডিয়ায় তো অবশ্যই না। সবাই যার যার জায়গায় স্বমহিমায় উজ্জ্বল। আর শূন্যতা পূরণ হয়ে যায়। হতে বাধ্য। এটা জগতের নিয়ম। না হলে কবেই সবকিছু থমকে যেত। তবে মনে আশা জাগে, কারণ সমসাময়িক অনেকের মধ্যেই আমি সে সম্ভাবনা দেখেছি।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনি একটি সিনেমা পরিচালনা করেছেন। পরিচালনার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
এটিএম শামসুজ্জামান: আমি একটা কাজই করেছিলাম পরিচালক হিসেবে। ‘ইবাদত’ নামে একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলাম। ২০০৯ সালে সেটি মুক্তি পেয়েছিল। তাতে অভিনয় করেছে ডলি জহুর, প্রবীর মিত্র, রিয়াজ ও শাবনুরসহ অনেকেই। আমি যেভাবে নির্মাণ করেছিলাম; সেভাবে দেখাতে পারিনি। কারণ সেন্সর বোর্ড অনেক কিছুই বাদ দিয়ে দিয়েছিল। ফলে মূল কাহিনি অনেকটা ব্যাহত হয়েছে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: অভিনয়ের বাইরে ব্যক্তি এটিএম শামসুজ্জামান কেমন?
এটিএম শামসুজ্জামান: সর্বোপরি আমি একজন মানুষ। মানবীয় কিছু দোষ-গুণ অবশ্যই আমার আছে। আমি একজন সমাজ সচেতন মানুষ। আবার রাজনীতি সচেতনও বলতে পারেন। যেমন- এবছর আমি এক টুকরো ফলও মুখে দেইনি। আমি ফরমালিনের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছি। বাকিটা আপনারা বলতে পারবেন, আমি কেমন। আমার দর্শক, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা জানেন আমি কেমন।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: নবীন অভিনয় শিল্পীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী—
এটিএম শামসুজ্জামান: মূলত নবীনরাই আমাদের শক্তি। আমিও একসময় নবীন ছিলাম। কাজ করতে করতেই এতদূর এসেছি। বয়স আর অভিজ্ঞতা বাড়লেই তো মানুষ প্রবীণ হয়। নবীনরা অনেক ভালো কাজ করছে। নির্মাণেও অনেক পরিবর্তন এনেছে। সর্বোপরি নবীনদের ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী। ভবিষ্যতেও ভালো ভালো কাজ হবে। অনেকেই উঠে আসবে। ইন্ডাস্ট্রি আলোকিত করবে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এখন কী কাজ করছেন?
এটিএম শামসুজ্জামান: দেখতেই তো পাচ্ছেন। তারপরও বলছি, কাজী নাসিরের রচনা ও পরিচালনায় একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছি। নাটকটির নাম ‘এবার জমবে খেলা’। নাটকে অনেক গুণি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজ করছে। এর মধ্যে খায়রুল আলম সবুজ, আহসান হাবীব নাসিম, সাঈদ বাবু, রুনা খান, শাহেদ, অহনাসহ অনেকেই আছে। এছাড়াও আরও কয়েকটা কাজের কথা চলছে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এই নাটকে আপনার চরিত্রটি কেমন?
এটিএম শামসুজ্জামান: এবার জমবে খেলা নাটকে আমি এলাকার চেয়ারম্যান। চব্বিশ ঘণ্টা গ্রাম্য রাজনীতি করা লোক। জায়গা-জমি, টাকা-পয়সা ভালোই আছে। তাই আমার অনেক সাঙ্গ-পাঙ্গ আছে। মাঝে মাঝে খারাপ কাজও করি। বিরোধীদের দমানোর জন্য নোংরামীও করি। বলতে গেলে আমাদের গ্রাম্য রাজনীতিতে যেসব হয়ে থাকে আর কি।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: ইদানিং আপনাকে বেশিরভাগ সময় কমেডি চরিত্রে দেখা যায়। এখানে মনে হয় একটু সিরিয়াস আপনি?
এটিএম শামসুজ্জামান: আসলে আমার অভিনয়ের শুরুটা তো সিরিয়াসই ছিল। সিরিয়াস অনেক কাজ করেছি। প্রধান খলচরিত্রে অভিনয় করেছি। বাস্তবেও মানুষ আমাকে দেখলে ছি-ছি করতো। খারাপ মানুষ ভাবতো। পরে আস্তে আস্তে কীভাবে যেন হাস্যরসাত্মক চরিত্রে ঢুকে গেলাম। সময়ের প্রয়োজনে করতে হলো। আর বের হতে পারলাম না। এ জন্যই এই সেটে বসে একটু আগে অহনাকে বললাম, তুমি নোয়াশালটা আর করো না। তুমি এই চরিত্র থেকে বের হতে পারবে না। তোমার নায়িকা হওয়ার সম্ভাবনাটা নষ্ট করে দিও না। নিজে বুঝতে পেরেছি, তাই অনেককে বলে থাকি। তবে কাউকে না কাউকে তো কমেডি করতেই হবে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। আপনার দীর্ঘায়ূ ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
এটিএম শামসুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনার সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।