৫ মে ২০০০ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে একটা ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। তবে ২০১৭ সালের ৫ মে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেল সিনেমা হলের পর্দায়। কেননা, বহুল প্রতীক্ষিত প্রথম বাংলা সায়েন্স ফিকশন সিনেমা ‘পরবাসিনী’র পর্দা উঠেছে।
অতি প্রত্যাশা নিয়ে সিনেমাটি দেখতে গিয়ে হাসি মুখে অথবা মুখ বেজার করে যারা ফিরেছেন, তারা প্রায় সবাই হলিউড সিনেমার ভক্ত। হলিউড সিনেমাতে পৃথিবী ধ্বংস একটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে কখনো ঢাকার ওপর দিয়ে ইউএফও (UFO) বা ভিন্নগ্রহবাসীর আকাশযান ওড়েনি, ঢাকাকে ভিনগ্রহবাসীদের দ্বারা ধ্বংস করা হয়নি। আর সেই নতুন কাজটি করে দেখিয়েছেন সিনেমাটির পরিচালক স্বপন আহমেদ। অল্প বাজেট। দুই কোটি টাকা নিয়ে যুদ্ধ করতে নেমে আর কিই বা দেখাতে পারতেন এই নির্মাতা?
এরিস-৩২, নতুন একটি গ্রহ, যেখানে বাস করে মানব জাতির চেয়েও উন্নত একটি জাতি। তাদের সাথে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় মানবজাতির। একসময় তারা তিনজনকে সিলেটে মাধবপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাঠায়। যার ভেতর একজন নিশার শরীরে ভর করে। অনেকে অবাক হতে পারেন, কেননা এলিয়েনদের আমি কখনো কোনো মানুষের ওপর ভর করতে দেখিনি, অথচ পরবাসিনীতে সেটাই ঘটানো হয়েছে। অথচ এলিয়েনরা ভূত কিংবা প্রেত নয়।
একটা শক্তপোক্ত গল্প যেখানে দরকার ছিল পরবাসিনীতে, সেখানে সবকিছুই অস্পষ্ট। গ্রাফিক্স ডিজাইনের ব্যাপারটাকে ব্যর্থতা বলা যাবে না। কেননা, যে সিনেমার বাজেট দুই কোটি টাকা মাত্র সেখানে এর চেয়ে ভালো গ্রাফিক্স দেখানো সম্ভব নয়। বলতে গেলে বাংলা সিনেমায় সবচেয়ে ভালো এবং বেশি গ্রাফিক্সের কাজ এই সিনেমাটিতেই বিদ্যমান।
সিনেমাটিতে এলিয়েনের সঙ্গে মানুষের প্রেম আছে, ডিটেকটিভ কাহিনী আছে কিন্তু একজন সাহসী ডিটেকটিভ নেই। এখানে আছে এমন এক ডিটেকটিভ অর্ণব, যার সফলতা নেই। এখানে আছে বিচ্ছিন্ন প্রেম। সিনেমাটিতে সব থেকেও কিছু একটার শূন্যতা আছে, যা পূরণ করলেই সিনেমাটির গুণগ্রাহীর অভাব পড়ত না। সায়েন্স ফিকশন সিনেমাতে চরিত্র সৃষ্টিতে এবং কাহিনী বিন্যাসে লাল টিপের জন্য সমাদৃত পরিচালক স্বপন আহমেদ যে, একরকম হোঁচট খেয়েছেন, এটি মানতেই হবে। এছাড়া এলিয়েনের বাংলা ভাষায় কথা বলাটা একদিকে যেমন দৃষ্টিকটু, অন্যদিকে সিনেমার প্রায় ত্রিশ ভাগ অংশজুড়ে ইংরেজি কথোপকথন বাঙালি দর্শকদের দৃষ্টিতে খুব একটা স্বস্তিদায়ক ব্যাপার নয়। তবে, যে প্রচেষ্টা তরুণ পরিচালক স্বপন আহমেদ করেছেন, তা অসাধারণ। তিনি বাংলা সিনেমায় একটি মহাবিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছিলেন, এটিই তার উদ্যম।
সুতরাং, সায়েন্স ফিকশনপ্রেমীদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকটি বছর। আবার হয়তো কোনো এক স্বপন আহমেদ উদ্যোগী হয়ে আমাদের মাঝে নিয়ে আসবেন একটি স্বার্থক সায়েন্স ফিকশন।