শিশুদের সঙ্গে কাজী মোহিনী ইসলাম
চিন্তাসূত্র ডেস্ক
বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোরসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে সম্প্রতি বিনামূল্যে সৃজনশীল বই বিতরণ করেছে ‘মোহিনী সৃজনশীল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক একাডেমি’। বই বিতরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন একাডেমির চেয়ারম্যান, জনপ্রিয় কবি, গীতিকার, শিশু সাহিত্যিক ও সাংবাদিক কাজী মোহিনী ইসলাম।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ‘মোহিনী সৃজনশীল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক একাডেমি’ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, শিশু-কিশোররা বই পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো বই পড়ার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। বিনামূল্যে সৃজনশীল বই বিতরণের এমন শুভ উদ্যোগকে স্বাগত জানান রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মার্মা ও রুমা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শৈবং মার্মা। কাজী মোহিনী ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রুমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মংমং মার্মা বলেন, ‘বই শুধু শিশু-কিশোরদের জন্যই নয়, আমরা যারা অভিভাবক ও শিক্ষক, তাদেরও সাহিত্যের নানান বই পড়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমরা সেভাবে বই সংগ্রহ করে পড়তে পারি না। আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে ভালো হলো। আগামীতে আপনার সহযোগিতা নিয়ে আমি চেষ্টা করবো আমার স্কুলে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে তুলতে।’
শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে কাজী মোহিনী ইসলাম বলেন, ‘তোমাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, স্কুলের পাঠ্যবই ছাড়া তোমরা আর কোনো সৃজনশীল বই পড়ার সুযোগ পাও না। এমনকী তোমাদের জন্য দেশ-বিদেশে অনেক ভালো ভালো বই রচিত হয়, সেই নান্দনিক জগৎ সম্পর্কেও তোমাদের কোনো ধারণা নেই। তোমরা কি জানো, বই হচ্ছে এক আশ্চর্য ম্যাজিক, যা বন্ধু ভেবে ভালোবেসে পাঠ করলে তুমি নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা সত্যিকারের নিজেকে দেখতে পাবে? তোমরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তোমাদের মাঝেই লুকিয়ে আছে আগামী দিনের একজন কবি-সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী কিংবা একজন রাষ্ট্রনায়ক। তোমরাই আগামী দিনে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। তার জন্য অবশ্যই তোমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। আর বই তোমাদের সেই স্বপ্ন দেখতে শেখাবে এবং নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। তাই বড় বড় মনীষীদের লেখা ভালো ভালো বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।’
মোহিনী ইসলাম আরও বলেন, ‘‘ছোট্ট বেলায় সৃজনশীল বই পড়ার প্রতি আমার দুর্বার আকর্ষণ ছিল। তখন একটি বই হাতে পাওয়া ছিল আমার জন্য এক দুর্লভ উপহার। কিন্তু সে সময় এখানে কোনো পাঠাগার কিংবা লাইব্রেরি ছিল না। তাই ছোটবেলা থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতাম, বড় হয়ে আমার অঞ্চলে একটি পাঠাগার গড়ে তুলবো। যেখানে থাকবে দেশ-বিদেশের উল্লেখযোগ্য লেখকদের ভালো বই। আজও আমি একইভাবে সেই স্বপ্নটি দেখছি। এজন্যই শিশু-কিশোর সহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বই উপহার দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
এর মধ্য দিয়ে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে এবং তাদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে ‘মোহিনী সৃজনশীল পাঠাগার’ নামে একটি পাঠাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে আমি মনে করি, পাঠাগার গড়ে তোলার আগে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে এবং পাঠক তৈরি করতে হবে। তাই আমি পাঠাগার তৈরি করার আগে পাঠক তৈরি করার চেষ্টা করছি।’’
এই কবি বলেন, ‘বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বিভিন্ন পাড়ায় গিয়ে অনেক কষ্ট করে বই পৌঁছে দিতে হচ্ছে। আগামীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার পর প্রত্যেক প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল ও কলেজগুলোতে সরাসরি শিক্ষার্থীদের মাঝে নিয়মিত বই বিতরণ করবো।’ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, লেখক-প্রকাশক ও সাহিত্যানুরাগীদের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী তার এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।