চিন্তাসূত্র ডেস্ক
কবীর সুমনকে চেনেন না, বাংলা গানের এমন শ্রোতা পাওয়া মুশকিল হবে। তার প্রতিষ্ঠা-সাধনা-জীবনাচারণ; এসব বিষয়েও বাঙালি শ্রোতামাত্রই ওয়াকিবহাল। এই শিল্পী ভিন্ন ধারার গান লিখে, সুর করে ও পরিবেশন করে বাঙালি শ্রোতার কাছে নিজের একটি স্বতন্ত্র ভাবমূর্তিও তৈরি করেছেন। সাফল্য-খ্যাতি, কী পাননি এই কিংবদন্তির শিল্পী? তবু যেন হতাশা তাকে গ্রাস করে চলেছে। নাহলে কেন তিনি হঠাৎ করেই নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে এমন হতাশা-উৎকণ্ঠাজনক পোস্ট দেবেন? শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) রাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে এত তথ্য জানিয়েছে।
জানতে অবাক হবেন, এই কিংবদন্তি শিল্পী শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) তার ফেসবুক টাইমলাইনে নিজের প্যাডে লেখা একটি ইচ্ছাপত্র প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, মৃত্যুর পর যেন তার সমস্ত সৃষ্টি ট্রাকে করে নিয়ে গিয়ে ধ্বংস করে কলকাতা পুরসভা।
‘সকলের অবগতির জন্য’ শিরোনামে লেখা এই ইচ্ছাপত্রে কবীর সুমন লিখেছেন, ‘আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনো স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থনাসভা যেন না হয়। আমার সব পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্বরলিপি, রেকর্ডিং, হার্ড ডিস্ক, পেনড্রাইভ, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পুরসভার গাড়ি ডেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, সেগুলি ধ্বংস করার জন্য। আমার কোনও কিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে। আমার ব্যবহার করা সব যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়। এর অন্যথা হবে আমার অপমান।’
এই পোস্টের নিচে কবীর সুমন আরও লিখেছেন, ‘জন্মস্বাধীন। স্বপরিশ্রমে ও স্বখরচায় স্বেচ্ছাচারী, কবীর সুমন।’
খ্যাতি-প্রতিপত্তির শিখরে থাকা এই শিল্পী কেন হঠাৎ এই ইচ্ছাপত্র প্রকাশ করলেন, তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। কেবল বলেছেন, ‘সজ্ঞানে, সচেতন অবস্থায়, স্বাধীন ভাবনাচিন্তা ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমি জানাচ্ছি, আমার কোনো অসুখ করলে, আমায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে, অথবা আমি মারা গেলে, আমার সম্পর্কিত সব কিছুর, প্রতিটি বিষয় ও ক্ষেত্রে দায়িত্বগ্রহণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকার থাকবে একমাত্র মৃন্ময়ী তোকদারের (মায়ের নাম প্রয়াত প্রতিমা তোকদার, বাবার নাম দেবব্রত তোকদার)। অন্য কারও কোনও অধিকার থাকবে না এই সব বিষয় ও ক্ষেত্রে।’
এদিকে, সুমনের পোস্টের নিচে মৃন্ময়ী লিখেছেন, তিনি সুমনের দেওয়া ওই দায়িত্ব স্বীকার করে নিচ্ছেন।
ইচ্ছাপত্রে কবীর সুমন আরও বলেছেন, ‘খুব জরুরি বিষয়। আবেগহীনভাবে সবাইকে জানিয়ে রাখছি, কারণ হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে কঠিন সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় অনুরূপ একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল ২০১২ সালে আমি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর। খোলাখুলি সবাইকে জানিয়ে রাখছি। অনুগ্রহ করে অভিমত দেবেন না। ভালোমন্দ কিছু লিখবেন না। এটা এক প্রবীণ মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি। অনেক অভিজ্ঞতার পর, অনেক ভেবেচিন্তে লিখছি। ফেসবুকে, যেন অনেকেই এটা জেনে যান। অনুগ্রহ করে আবেগের বশবর্তী হবেন না, উপদেশ পরামর্শ দেবেন না’। এরপর আরেক ধাপ এগিয়ে লিখেছেন, ‘আমার জীবনে কোনো হতাশা, দুঃখ, ব্যর্থতাবোধ, অবসাদ নেই। আমি সানন্দে বেঁচে আছি। আমার কাজ করে যাচ্ছি’।
এই পোস্টের নিচে কবীর সুমন আরও লিখেছেন, ‘জন্মস্বাধীন। স্বপরিশ্রমে ও স্বখরচায় স্বেচ্ছাচারী, কবীর সুমন।’