চিন্তাসূত্র ডেস্ক
‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২৮’পেলেন প্রাবন্ধিক-গবেষক রঞ্জনা বিশ্বাস। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৪ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রঞ্জনা বিশ্বাসের ওপর লেখক, নির্মাতা ও সাংবাদিক তাপস কুমার দত্ত নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানটি শেষ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের পরিবেশনা দিয়ে।
অনুষ্ঠানে আলোচক আকিমুন রহমান বলেন, বেদেরাও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের আত্মত্যাগের কাহিনীর শেষ নেই। কিন্তু আমরা সেটা মানি না। রঞ্জনার গবেষণায় আমরা বেদেদের কথা জানতে পারি। মুক্তিযুদ্ধে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অবদান ও আত্মত্যাগের কথা জানতে পারি। বাংলা ঐতিহ্যবাহী পালকিবাহীদের জীবন ও অনালোচিত সেই ইতিহাসও আমাদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। তিনি লোকগীতি, লোকসঙ্গীতের কথাগুলোও তুলে ধরেছেন। তিনি আরও বলেন, রঞ্জনা শুধু গবেষক না, সৃজনশীল লেখকও। তিনি একাধারে কবি ও ঔপন্যাসিক। তার কবিতা ও উপন্যাস পড়ার সময় আমি অভিভূত হয়ে যাই। তিনি এ ক্ষেত্রে আলাদা করে পুরস্কৃত হওয়ার যোগ্য।
সভাপতির বক্তব্যে দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অন্যান্য সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, রঞ্জনা বিশ্বাস নতুন প্রজন্মের লেখক। তার দেখার দৃষ্টিও অনন্য। তিনি বাংলাদেশের অবহেলিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটিয়ে দিচ্ছেন। একুশ শতকে এসে মানুষ হিসেবে সমাজের এই শ্রেণীভেদ ভেঙে দিতে চাই আমরা। রঞ্জনা লোকধর্ম ও লোকায়াত জীবন নিয়ে কাজ করে সেই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন আমাদের কাছে। অনন্যা কখনো বয়স দিয়ে মানুষের যোগ্যতা বিচার করে না। রঞ্জনাকে তাই পুরস্কৃত করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছে অনন্যা।
পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে রঞ্জনা বিশ্বাস বলেন, ‘১৫ বছর আগে যে জীবনকে আমি অস্বীকার করতে চেয়েছিলাম, আজ সেই জীবন অনন্যা স্বীকৃতি পাচ্ছে। এই বিষয়ে ঘোর আমার কাটছে না। আমি সবাইকে বলতে চাই, ভালোবেসে শুধু জীবনকে উদযাপন করতে শেখো। যে সব নারী জীবনের অর্থ বোঝেন না, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, জীবনে প্রয়োজনের জন্য বাঁচুন। সমাজের প্রতিটি শ্রেণী-পেশা, ধর্ম-বর্ণের মানুষকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষ হিসেবে নিজেকে অতিক্রম করে যান।’
প্রসঙ্গত, এই পর্যন্ত রঞ্জনা বিশ্বাসের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৪।
উল্লেখ্য, বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৩ সাল) থেকে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিবছর একজন নারী সাহিত্যিককে বাংলাদেশের সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ২৬জন নারী সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।