চিন্তাসূত্র ডেস্ক
‘চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার-২০২০’ উঠলো ৮ জনের হাতে। শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) চাঁদপুরের এলিট চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ৮ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন কবিতায় বীরেন মুখার্জী, কথাসাহিত্যে হামিদ কায়সার, সার্বিক সাহিত্যে কবি ও সম্পাদক জামসেদ ওয়াজেদ, গবেষণা সাহিত্যে জাহাঙ্গীর হোসেন, শিশুসাহিত্যে মকবুল হামিদ, সংগীতে আশিক কবির, শিক্ষায় আজমল হোসেন চৌধুরী ও বাচিকশিল্পে তানজিনা তাবাচ্ছুম।
এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘পুরস্কারপ্রাপ্তরা পুরস্কৃত হয়ে যে আনন্দ পেয়েছেন, তা দেখে আমি মুগ্ধ। এমন উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। গ্রামের আনাচে-কানাচে এ ধরনের যত প্রতিভা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, তাদের অন্তত জেলা পর্যায়ে এনে পুরস্কার দেওয়া হলে উৎসাহিত হবে। হয়তো তাদের মধ্য থেকেও একদিন স্টালিনের মতো লেখক বেরিয়ে আসবে। চাঁদপুর শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিতে যে কতটা সমৃদ্ধ, গত তিন বছর ধরে তা আমি নিজেই দেখে আসেছি। চাঁদপুরের যে ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আছে, তা দেখে আমি অভিভূত, দেশের নানা প্রান্তে চাকরি করেও তা দেখিনি।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কবি নুরুন্নাহার মুন্নির সভাপতিত্বে ও মহাপরিচালক কবি রফিকুজ্জামান রণির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দেশবরেণ্য কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। প্রধান আলোচক ছিলেন কবি আসলাম সানী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী লায়ন মাহমুদ হাসান খান।
আসলাম সানী বলেন, ‘বিজয়ের মাসে আমি সর্ব প্রথম বঙ্গবন্ধুসহ সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। দেশ বিদেশে যেখানেই যাই যখন তরুণ লেখকদের আলোচনা হয়, নিজেকে তখন গর্বিত মনে করি। আজকের চর্যাপদের যে আয়োজন দেখলাম এটি খুবই গর্ব করার মতো।’
পুরস্কার সম্পর্কে আসলাম সানী বলেন, ‘‘কবি নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি বড় মাপের লেখক না হতেন, তাহলে তাদের আমরা স্মরণ করতাম না। রবীন্দ্রনাথ লেখক হওয়ার কারণেই একসময় আমরা তার পূর্বপুরুষদেরও পরিচয় জানতে পেরেছি। তাদের মতো অনেকেই রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পায়নি। আপনারা লক্ষ করবেন, কোনো রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষক ও সরকারি চাকরিজীবী অবসরে গ্রহণ করলে তাদের নামের আগে ‘প্রাক্তন’ কিংবা ‘সাবেক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কিন্ত কবি-সাহিত্যিকের নামের পূর্বে কখনো সাবেক শব্দটি ব্যবহার করা হয় না। একজন কবির একটি কবিতা অথবা একটি লাইন হাজার বছর পরেও জীবন্ত থাকে।’’
সানি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে ও আরও হবে। এর কারণ হচ্ছে তিনি নিজে স্বপ্ন দেখেছেন এবং অন্যকে স্বপ্ন দেখিছেন। একইসঙ্গে মানুষের কল্যাণের জন্যে কাজ করেছেন। যার কারণে যুগযুগ ধরে মানুষ তাকে স্মরণ করবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব কবি খোরশেদ আলম বিপ্লব, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলা সভাপতি তপন সরকার, বিশিষ্ট কলামিস্ট আবদুল গনি, অ্যাডভোকেট ইমাম হোসাইন টিটু, কবি শিউলি মজুমদার, নিয়ন্ত্রণ পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুল্লা কাহাফ, লাইব্রেরী পরিচালক কবি আইরিন সুলতানা লিমা, অধ্যয়ন সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সাহিত্য সম্পাদক জহির মাহমুদ, গীতিকার রাসেল ইব্রাহীম ও নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল ইসলাম শান্ত।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত সংগীতশিল্পী নন্দিতা দাস। গিটার পরিবেশন করেন গিটারশিল্পী দিলীপ ঘোষ এবং কবিতা আবৃত্তি করেন মোখলেছুর রহমান ভূইয়া। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন কবি ফেরারি প্রিন্স, আবদুল বারেক খান ও নাজমুল ইসলাম।