যেভাবে বেড়ে উঠি-২
একজন লেখক কী করে তার লেখাগুলো শেষ করেন, তা তিনিই ভালো জানেন। এর কোনো ব্যাখ্যা হয় না। যদিও প্রতিটি লেখার পেছনে থাকে এর পেছনের কথাও। যা অপ্রকাশ্যই থেকে যায়। লেখা শেষে কোনো লেখকই তার ব্যখ্যা দেন না। কী করে একটি বই লেখা হয়, তার পেছনের ঘটনার বর্ণনা করেন না সাধারণত কেউই। তার প্রয়োজন হয় না। কারণ, লেখাই লেখকের পরিচয়। কী করে, কখন তা লেখা হলো—এ নিয়ে পাঠকের যেমন মাথাব্যথা নেই, লেখকেরও তা বলার আগ্রহ থাকে না। হয়তো প্রিয় মহলে, লেখক মৌখিকভাবে কোনো একটি লেখার পেছনের কথা বর্ণনা করেন। তবে, তা কালেভদ্রে, হয়তো কোনো উপলক্ষে। তবে শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ লেখার পেছনের কথাগুলো উহ্যই থেকে যায়।
সৈয়দ মুজতবা আলী আমার প্রিয় লেখকদের একজন। তার লেখায়, সোজাসাপ্টা বলে দেওয়ার, স্পষ্ট কথা জানিয়ে দেওয়ার ধরন আমার ভালো লাগে। সূক্ষ্ম রসবোধ, ভাষার গতি আমাকে টানে। সৈয়দ মুজতবা আলীর বিশাল রচনাভাণ্ডার তেরো খণ্ডে বাজারে পাওয়া যায়। এই রচনা ভাণ্ডার যখন সমগ্র হয়ে বের হয়নি, হবে—এমন সম্ভাবনাও হয়তো তৈরি হয়নি, ঠিক সেরকম একটি সময় এক ভক্ত সৈয়দ সাহেবের বাড়িতে গেছেন। তার বেজায় কৌতূহল। তিনি সৈয়দ সাহেবের রচনার পাঁড় পাঠক। সবই প্রায় পড়ে ফেলেছেন। তার জানতে আগ্রহ হলো, কী করে, কোন সময়ে সৈয়দ মুজতবা আলী এইসব লেখা লিখেছেন। তিনি যত বারই এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন, ততবারই সৈয়দ সাহেব এড়িয়ে যান। প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলেন। কিন্তু বারবারই ঘুরে-ফিরে সেই ভক্তের এক প্রশ্ন, কী করে, কোন পরিস্থিতিতে কখন বইগুলো লেখা হলো। শেষ মুহূর্তে কিছুটা বিরক্ত সৈয়দ মুজতবা আলী সেই ভক্তকে বললেন, দেখুন, আমরা আমাদের সন্তানকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি। কিন্তু সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি সবার সামনে উন্মুক্ত করতে পারি না। ঘটনাটি কোথায় পড়েছিলাম, মনে করতে পারছি না। হুবহু বর্ণনা না হলেও, মূল বিষয় এমনই ছিল। সেই ভক্ত সৈয়দ মুজতবা আলীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন কি না, তাও জানি না।
দুই.
লেখক হয়ে ওঠার গল্পও তেমনি। আর এক্ষেত্রে যখন নিজের কাছেই সন্দেহ থেকে যায়, আমি কি লেখক হয়েছি? হয়ে উঠতে পেরেছি? সেই সন্দেহকে পেছনে ফেলেই এখনো প্রতিনিয়ত কাগজে আঁক কেটে চলা। শৈশব থেকেই দেখেছি মা’কে বই পড়তে। একটু অবসর পেলেই মা বই পড়তেন। আমাদের রান্নাঘরে তরকারির ঝুড়ির ভেতরে, চুলার পাশে, মিটসেফর ভেতরে, কাপড়ের আলনার নিচে, যেখানে জুতো রাখা হতো (তখনো আলাদা জুতোর র্যাকের চল হয়নি। আর হলেও তার সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়নি) সেখানেও বই থাকতো। মা কাজের ফাঁকে বই পড়তেন। চুলায় ভাত বসিয়ে, পাশে বসে বই পড়তেন। আমাদের পড়াতে বসে মা নিজেও হাতে খুলে রাখতেন বই। ছেলেবেলা থেকে দেখে আসা এই দৃশ্যই আমাকে আগ্রহী করে বইয়ের প্রতি।
আব্বা অফিস থেকে যখন বাড়ি ফিরতেন, তখন নিশুতি রাত। সেই নিশুতি রাত, হয়তো আজকের সময়ের সন্ধ্যা সাত অথবা আটটা হবে। কিন্তু আমাদের হিসেবে নিশুতি রাত। আশ-পাশের বাড়ির মানুষজন ঘুমিয়ে পড়েছে, রাতের খাবার পাঠ শেষ করে। তখন এত বিজলি বাতির ঝলক ছিল না। আবার কতটুকু সময় ঘরে বিজলি বাতি জ্বলতো, তারও ঠিক নেই। রাতের বেলা বেশিরভাগ সময়ে মা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রাখতেন। হ্যারিকেনের সলতেটা একটু নামিয়ে ঘরের এক কোণে রাখা হতো। বিদ্যুতের ঝলকানি হঠাৎ থেমে গেলেই সেই সলতে বাড়িয়ে দেওয়া হতো। দিনের বেলা হ্যারিকেনের কাঁচের চিমনি পরিষ্কারের দৃশ্যও ছিল মনে রাখার মতো। যেহেতু তখন সব বাড়িতে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি, আবার পৌঁছলেও রাতের বেলা অধিকাংশ সময় বিদ্যুতের দেখা মিলতো না, তাই আমরাও সন্ধ্যার পরপরই খেয়ে শুয়ে পড়তাম। আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল, বিজলি পাখাও ছিল। তবে তখনো টেলিভিশন আসেনি।
অফিস থেকে আব্বা সাইকেল চেপে ফিরে আসতেন। আমরা দুই ভাইবোন, (তখনো আমরা ভাইবোনের সংখ্যায় তিনজন হইনি) শুয়ে চুপচাপ অপেক্ষা করতাম, কখন আব্বা আসবেন। তিনি এসে রাতের খাওয়া শেষে আমাদের পাশে শুয়ে গল্প শোনাতেন। যত রাতই হোক, অফিস থেকে ফিরে তাকে গল্প শোনাতেই হতো। এমন রাত খুব কমই গেছে, যেদিন আমরা গল্প না শুনে ঘুমিয়ে পড়েছি।
বাড়িতে টিভি এলো, সাদাকালো ন্যাশনাল টিভি। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম টিভির পর্দায়। রাত বারোটায় টিভি স্টেশন থেকে সম্প্রচার বন্ধ হতো। তখন পর্দায় সাদা-কালো ডট এর সঙ্গে ঝিইইইইইইইইইইইই অনেকটা এরকম শব্দ হতো। সেই শব্দ এবং ডট না দেখা পর্যন্ত আমি সাধারণত ঘুমাতাম না। সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও, আমি রাত জেগে বসে থাকতাম। শীতের রাতেও। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে মা আমাকে হয়তো বকা দিতেন, অথবা দেখে টিভি বন্ধ করে দিতেন। রবিবারের দিনটা ছিল আনন্দের। ওই দিন সম্ভবত সকাল সাত অথবা আটটায় টিভি সম্প্রচার শুরু হতো। সকালের দিকেই দেখাতো দ্য ফল গাই, দ্য এ টিম-এর মতো জনপ্রিয় সিরিয়াল। এ রকম সিরিয়ালেই দেখেছিলাম, চুরুট। সেই থেকেই চরুটের প্রতি আগ্রহ। দাঁতের ফাঁকে ধরে থাকা চুরুটের আগ্রহ পরবর্তী সময়ে আরও বাড়িয়ে দেন আমার স্বপ্নের নায়কেরা। পরিচয় করিয়ে দেন হাভানা চুরুটের সঙ্গে।
দীর্ঘ পরিশ্রমসাধ্য প্রক্রিয়ায় ভেতর দিয়ে একজন লেখককে যেতে হয়, প্রবল কল্পনা ক্ষমতার অধিকারী হতে হয়, ভাষার ওপর দক্ষতা প্রয়োজন হয়, শব্দের নিয়ন্ত্রণে ঝড়ে পড়া নৌকার মাঝির মতো শক্ত হাতে বৈঠা ধরতে হয়, আজও সেই ক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি।
সে সময় বা তার একটু আগে-পরেই বাড়িতে রাখা শুরু হয় দৈনিক পত্রিকাও। তখন দিনের কাগজ আসতো পরের দিন বিকেলে। সেই বাসি খবরের কাগজই নতুনের স্বাদ এনে দিতো। সকালে ঘুম ভাঙার পরই যে দৈনিক পত্রিকা হাতে পাওয়া, এই দৃশ্য তখন আমার সূদরতম কল্পনাতেও আসেনি। সেসময়ের খবরের কাগজের পাতায় বড় বড় করে ছাপা হতো ছায়াছবির বিজ্ঞাপন। নতুন চলচ্চিত্র দেশের কোন কোন প্রেক্ষাপটে প্রদর্শিত হচ্ছে, তার তালিকা থাকতো। পত্রিকার পাতা খুলে আমি প্রথমেই বিজ্ঞাপনে নায়ক-নায়িকাদের ছবি দেখতাম। তারপর প্রেক্ষাগৃহগুলোর নাম পড়তাম। পত্রিকা পড়ার চেয়ে তখন পত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবি দেখেই আনন্দ পেতাম বেশি। ছবিগুলো দেখা শেষে আর ফিরেও তাকাতাম না খবরের কাগজের দিকে।
গল্প শোনা, পড়া এবং দেখা থেকেই হয়তো আমার ভেতরে কখনো জেগে উঠেছে লেখার আগ্রহ। তবে ঠিক কখন, কোন বয়সে লেখার আগ্রহ মনের ভেতরে দানা বাঁধলো, মনে করতে পারি না। সম্ভবত সপ্তম অথবা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। থাকতাম দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কোয়ার্টারের পাশেই ছিল বিরাট বস্তি। সেখানে নানান রকম মানুষ। সেই মানুষদের দেখে, ওই সময়ে নিজস্ব কয়েকটি লাইন লিখেছিলাম। ‘আমার বাড়ির পাশের বস্তিগুলোতে অনেক লোকই থাকে’, প্রথম লাইনটা এরকমই। সেই আমার নিজস্ব প্রথম লেখা। পড়ার টেবিলে লেখাটা খুঁজে পেয়ে সেজমামা বলেছিলেন, ‘তুমি লিখেছো’? আমার হ্যা সূচক উত্তর পেয়ে তিনি তার বন্ধুদেরও পড়ে শুনিয়েছিলেন। আমি লজ্জায় দৌঁড়ে পালিয়েছিলাম। এরপর আর লেখা হয়নি। স্কুল পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলাম। তখন পত্রিকায় হঠাৎ করেই চিঠিপত্র লেখার সখ হলো। নানান বিষয় নিয়ে যা ভাবতাম লিখে পাঠাতাম। প্রথম চিঠি ছাপা হয় ‘দৈনিক সংবাদে’। সংবাদ-এর পুরো একপাতাজুড়ে সে সময়ে সপ্তাহে একদিন চিঠি ছাপা হতো। সেই পুরো পাতার ভেতরে আমারও একটি চিঠি? প্রতি মাসেই একটা, দুটো স্থান পেতো। ‘মামুনুর রশীদ, রায়বাহাদুর সড়ক, জলেশ্বরীতলা, বগুড়া’ শব্দগুলো দেখে যে ভালো লাগার বোধ তৈরি হতো, আমার লেখার পেছনে এও এক প্রেরণা। কাগজে ছাপার অক্ষরে নাম দেখার লোভ জাগিয়ে তোলে। কলেজে পড়ার সময়েই প্রকাশ পেলো নতুন দৈনিক ভোরের কাগজ। সেখানেও চিঠিপত্র কলামে ছাপা হয়েছে আমার লেখা চিঠি। চিঠি লেখার এই হাত, আমাকে গদ্য লেখায় সহায়তা করেছে। চিঠি ছাপা হওয়ার পর আবার মিলিয়ে দেখতাম, লেখায় কী কী পরিবর্তন করেছে? কয়টা লাইন বাদ দিয়েছে? শব্দগুলো কেন এবং কিভাবে পরিবর্তন করেছে? একটা খাতায় আমার লেখার সঙ্গে ছাপানো চিঠিটা আঠা দিয়ে লাগিয়ে রাখতাম। লাগানো চিঠি এবং লেখার পার্থক্যগুলো লাল কালিতে দাগিয়েও রাখতাম তখন। আফসোস, অনেক কিছুই রয়ে গেছে, কিন্তু সেই খাতাটা নেই। বারে বারে বাড়ি বদলের ধাক্কায়, কোথায় হারিয়ে গেছে।
কলেজ পর্ব শেষ করি, তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্র। কিন্তু আমার বিদ্যা এবং চেষ্টার দৌড়, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। ভাগ্যিস তার আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অনার্স পড়ার সুযোগ হলো, স্নাতকোত্তরও। অনার্স পড়ার সময়েই-ডিপার্টমেন্টে আমাদের নির্ধারিত ক্লাস রুমে দেখতাম ছেলেমেয়েরা কবিতা পড়ছে। তখনো কারও সঙ্গে পরিচয় হয়নি। শিক্ষক ক্লাসে ঢোকার আগে চুপচাপ ঢুকে, ক্লাস শেষে আবার বেরিয়ে আসতাম। ক্লাসে এই যাওয়া-আসার ফাঁকে লক্ষ করতাম, টিচার ঢোকার আগে যেটুকু সময়, তা কাজে লাগিয়ে ছেলেমেয়েরা নিজেদের লেখা কবিতা পড়ে শোনাতো উপস্থিত সবাইকে। আর বাদশাহি দরবারের মতো ছেলেরা, মেয়েরা হাততালি দিয়ে মারহাবা ধ্বনি ছুড়ে দিতো। ভালো করে কান পেতে লেখাগুলো কিছুদিন শুনলাম। মনে হলো, আমিও চেষ্টা করলে হয়তো লিখতে পারবো। এর মাঝে আমরা বন্ধুরা মিলে ‘সুহৃদ’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করি। সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি পত্রিকাও বের করার সিদ্ধান্ত হয়, আমি পত্রিকার সহকারী সম্পাদক (তিন বা চারটি সংখ্যা সম্ভবত বের হয়েছিল)। পত্রিকায় সবার লেখা যাচ্ছে, আমার লেখা নেই। মনটাই খারাপ। কয়েক রাতের চেষ্টায় এক রাতে লিখে ফেললাম কবিতার মতো করে কয়েকটি লাইন। পরদিন সুহৃদ সম্পাদক সৈকত ভাইকে দেখালে তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে। এটা দেওয়া যাবে’। উত্তেজনায় আমার অবস্থা খারাপ। পত্রিকার প্রথম সংখ্যা বের হলো। সবুজ কালিতে ছাপা। ‘সুহৃদ’। পত্রিকা বেরুনোর পর স্বজনদের দিতে লজ্জা লাগলো। কারণ, নিজের ছাপা হওয়া লেখাটা আমার একেবারেই ভালো লাগছিল না। মনে হচ্ছিল এটা যদি লুকিয়ে ফেলা যেতো। এই প্রথম ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখেও লজ্জা পাচ্ছিলাম। কী লিখেছি, এই লজ্জা আমাকে গ্রাস করছিল (যা আজও প্রতিটি লেখা ছাপা হওয়ার পর সেদিনের মতো করেই একটি লজ্জা, একটি আড়ষ্টতা আমাকে ঘিরে ধরে। কী লিখেছি, এ কি কারও পাতে দেওয়া যায়? এ আমাকে বিব্রত করে, লজ্জার ভাবটা এখনো তাড়া করে। এড়াতে পারি না। এখনো প্রতিটি লেখা প্রকাশের পর লজ্জা পাই। প্রতিটি বই প্রকাশের পর লজ্জা পাই।) তবু শুধু ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখার যে মোহ তৈরি হয়েছে সেই লোভ থেকে উৎপাদন করে যাই লেখা নামে অখাদ্য। সুহৃদ করার স্বপ্ন, আমার যে বন্ধুর মাথা থেকে এসেছিল, কিছুদিন পর নানা কারণে সে সরে দাঁড়ায় সংগঠন থেকে। ওর সরে যাওয়ার পর, আমিও। তারপর একে একে সবাই। ভেঙ্গে গেল সুন্দর হৃদয়ের দল-সুহৃদ। কিন্তু এর আগেই আমার ভেতরে তৈরি হয়ে গেলো লেখা এবং লজ্জার সমন্বয়।
১৯৯৫-এর শেষে এসে লেখায় মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করতে থাকলাম। মনে হলো, লেখক হওয়ার চেষ্টা করা যায়। সেই চেষ্টা করার তাগিদ থেকেই আজও কলমকে সঙ্গী হিসেবে রেখেছি। দীর্ঘ পরিশ্রমসাধ্য প্রক্রিয়ায় ভেতর দিয়ে একজন লেখককে যেতে হয়, প্রবল কল্পনা ক্ষমতার অধিকারী হতে হয়, ভাষার ওপর দক্ষতা প্রয়োজন হয়, শব্দের নিয়ন্ত্রণে ঝড়ে পড়া নৌকার মাঝির মতো শক্ত হাতে বৈঠা ধরতে হয়, আজও সেই ক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি। তবু লেখার চেষ্টা করছি। লিখে যেতে চাই। আমি উপলব্ধি করি, নাম ছাড়া আমার আর কোনো পরিচয় নেই।
ছেলেবেলায় কোথাও বেড়াতে গেলে, বড়-সড় গাছ দেখলে সেই গাছের শরীরে নাম লিখে আসতাম। মনে হতো, এই নামের মধ্য দিয়ে মানুষ আমাকে চিনুক, মনে রাখুক। যদিও আজ, গাছের শরীরে ক্ষত তৈরির জন্য অনুশোচনা হয়, পাপবোধ জাগে। তবু আজও আমার লেখা নামের অখাদ্য সেই গাছের শরীর কেটে তৈরি কাগজেই ক্ষত হয়ে থাকে। আমার লেখক হয়ে ওঠা হয় না।
চলবে…